![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিমুল মুস্তাফার আবৃতি ভালোলাগে, ভালোবাসি ঘুরতে । চাকরি ভালোলাগেনা যদিও সেটাই করি ।
১।
আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ছেলেটির নাম ছিল ইসমাঈল। সদ্য এস,এস,সি পাশ করা ছেলেরা স্কুলের বাধা ধরা জীবন থেকে কলেজ লাইফের হঠাৎ পাওয়া স্বাধীনতায় কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ইসমাঈল ছিলো দিশেহারাদের সর্দার টাইপের কিছু একটা।
নিরস দুপুরে আমরা যখন ক্লাসে স্যারের লেকচার শোনায় মনোযোগী থাকতাম তখন তাকে পাওয়া যেত প্রশাসনিক ভবনের অদুরে গাছের নিচে হাফ ডজন মেয়েবন্ধুর সাথে আড্ডারত অবস্থায়।
পড়াশোনায় মোটেও তার মনোযোগ ছিলোনা, কখনও কলেজে অনুপস্থিত থেকেছে এমনটা ঘটে নি, তবে ক্লাসে উপস্থিত থেকেছে এমনটা কালে ভদ্রে ঘটতো।
দেখতে সুন্দর স্মার্ট বলে মেয়েদের মাঝে তাকে নিয়ে আলাদা আগ্রহ ছিলো। কোন আসর জমিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে সে সত্যিকার অর্থেই পারদর্শি ছিলো।
ইসমাঈলের সাথে আমার কখনও কথা হয় নি। সে তার মত ব্যাস্ত ছিলো আমি আমার মত। তবে মনে মনে আমি তাকে চরম হিংসা করতাম, কেন আমি তার মত না এমন কথা অসংখ্যবার ভেবে বিধাতাকে অভিষাপ দিয়েছি।
২।
ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষায় প্রথম হয়ে সবার সাথে সাথে ইসমাঈলের মনোযোগ আকর্ষন করতে সক্ষম হলাম (হলফ করে বলতে পারি এর পূর্বে সে আমাকে কোন দিন লক্ষ্যও করেনি)।
পরিক্ষার খারাপ ফলাফল তার ভেতরে একটা পরিবর্তন এনে দিল। বন্ধু আড্ডা কমিয়ে ক্লাসের দিকে মনোযোগী হতে আরম্ভ করলো। সাজেসন্স কিংবা পড়াশোনার বিষয়ে দু-একটা কথা বলতে বলতে আমরা একসময় ভালো বন্ধুতে পরিনত হলাম।
দিন গুলো এভাবেই কেটে যেতে পারতো যদি না ফাস্ট ইয়ারে সদ্য ভর্তি হওয়া একটি মেয়ে ইসমাঈলের আকর্ষেনর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হতো।
মেয়েটির নাম "বন্যা" অসাধারণ সুন্দর মেয়েটির রুপের বন্যায় ইসমাঈল প্রায় ভেসে যায় আর কি।
নিজের ক্লাস বাদ দিয়ে ফাস্ট ইয়ারে ক্লাস করে।
বন্যার চিন্তায় নাওয়া খাওয়া, পড়াশোনা বন্ধ। সাহস করে ভালোলাগার কথাটা সে কোন ভাবেই বলতে পারছে না। যে ছেলের কাজ ছিলো ৪/৫ টা মেয়ে নিয়ে আড্ডা দেয়া সে আজ একটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে সাহস পাচ্ছে না ভাবা যায়!
বন্ধু হিসেবে বন্ধুর এহেন বিপদে পাশে দাড়ানো কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যা থাকে কপালে ওর হয়ে আমি কথা বললাম মেয়েটার সাথে।
প্রায় ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে কথা বলে অনেক অনুনয় বিনয় করেও বন্যাকে রাজি করাতে পারলাম না, কোন মতেই সে সেইম এজের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করবে না। ব্যাপার টা আমার কাছেও যৌক্তিক মনে হলো। অল্প বয়সের এই আবেগ শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু বয়ে আনেনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
তবে বন্যার কথাগুলো আমি মেনে নিলেও ইসমাঈল সেটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারলো না।
প্রচন্ড আক্রোশ নিয়ে সে নিজেই কথা বললো বন্যার সাথে, লাভ হলোনা তাতেও, মেয়েটা তার কথাতে অনড়।
আমাদের সমাজে এই বিষয়টি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে এবং এখনও বিদ্যমান " কোন মেয়ে প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে সে পরিনত হয় মহা শত্রুতে,কোন না কোন ভাবে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়"।
দিন দুয়েক কলেজে অনুপস্থিত থেকে এক সকালে বেশ আগে ভাগে কলেজে এলো ইসমাঈল। মেস কলেজের পাশে হওয়াতে আমি প্রায়শই সবার আগে পৌছতাম।
ক্লাসরুমের অদুরে একটা টিনশেড ঘরছিলো যেটাতে আমরা টি টি খেলতাম সেখানে যেয়ে বসলাম দু'জন।
হাত থেকে ব্যাগটা রেখে চাপাস্বরে ইসমইল বলল " শালীকে আজ একটা উচিত শিক্ষা দেব, আজীবন আমার নাম মনে রাখবে"।
ওর কন্ঠস্বর এতটা ভয়ানক ছিলো যে ভয়ে কেপে উঠলাম।
প্রশ্ন করলাম-
"কি করতে চাস"?
ক্রুর হেসে সে ব্যাগের পকেট থেকে যা বর করলো তা দেখে আমার ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেল।
সে সময়ে গ্রাম অঞ্চলে এখনকার মত বিদ্যুত ছিলোনা, টিভি কিংবা ক্যাসেট চালাতে ব্যাটারি ছিলো ভরসা। হাটে, বাজারে যেখানে বিদ্যুত ছিলো সেখানেই ব্যাটারি চার্যের দোকান ছিলো, সেসব দোকানিরা সালফিউরিক এসিড ব্যাটারির কাচামাল হিসেবে রাখত। কোন এক দোকান থেকে এক বোতল এসিড যোগাড় করে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে ভালোবাসার মানুষটার কাছে নিজের নাম চিরস্মরনিয় করে রাখতে। কি ভয়ংকর চিন্তা।
আমি তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবেই হোক ওকে এই কাজ আমি করতে দিবো না। মেয়েটার ইসমাঈলের দু'জনের জীবনই নষ্ট হবে এটা ঘটলে। একজন থাকবে হাসপাতেলে অন্যজন হাজতে অথবা পলাতক।
আমাকে দেখানোর পরে ওর হাতেই ছিলো বোতলটা, ঘটনা কিভাবে ঘটাবে তার বর্ণনা দেয়ার যখন ব্যাস্ত এই ফাঁকে খপ করে বোতলটা ছিনিয়ে নিতে গেলাম।
হোমিওপ্যাথের শিশির থেকে একটু ব্ড় সাইজের বোতলটা আমার হাতে চলে এল কিন্তু সেখান থেকে সেটি নেবার জন্য চরম চরম জোরাজুরি আরম্ভ করলো ইসমাঈল। জোরাজুরি টা একজনের বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হতে পারতো কিন্ত এমনটা ঘটলো না। অব্যাহত বল প্রয়োগে এক পর্যায়ে বোতলের মুখ খুলে বেশ কিছু তরল আমার ডান হাতের কব্জির ইঞ্চিখানেক উপরে ছড়িয়ে পড়লো।
ইসমাঈলের মধ্যে মনুষত্য দ্রুতই ফিরে আসলো, ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে সাথে সাথেই আক্রান্ত অংশ ধুয়ে দিলো, কলপাড়ে গিয়ে অনেক সময় ধরে পানি ঢেলেও শেষ রক্ষা হলো না।
অবর্ণনীয় সেই যন্ত্রনার কথা লিখতে গেলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। এক যুগের ও বেশি সময় ধরে সেই চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছি। লং স্লিভ শার্ট ছাড়া বাইরে বের হতে পারি না আজ অবধি।
ইসমাঈলের সাথে আমার বন্ধুত্ব আগের মতই ছিলো, এখনও আছে, তবে ওই ঘটনার পরে তার মুখে আর কোনদিন বন্যার নাম শুনি নি। বউ, বাচ্চা নিয়ে বহাল তবিয়তে আছে। প্রায়শই বাসায় আসে।
চিকিৎসা চলাকালিন সময়ে সে যেভাবে আমার সেবা করেছে ক্ষমা তার প্রাপ্য।
হাতটি ধরে অঝোরে কেদেছে কত দিন। আমি শুধু হাসতাম কারণ ওর এই কান্নার থেকে আমার এক বোনের কান্না অনেক বেশি কষ্ট দিত আমাকে, আমার কিছুটা কষ্টের বিনিময়ে তার সুন্দর জীবন তো আর কষ্ট ময় হয়ে যাই নি ।
আর জেলে বসে অনুশোচনার কান্না কাদতে দেখার চেয়ে প্রিয় বন্ধু হাত ধরে সামনে বসে কাদছে এই দৃশ্য খুব একটা খারাপ লাগতো না আমার।
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৯
সাইলেন্স বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৬
প্রফেসর মরিয়ার্টি বলেছেন: হুম, আমরা অনেক সময় রাগের মাথায় বিবেচনাবোধ হারিয়ে ফেলি এবং পরবর্তীতে আফসোস করি। আপনি এই অনুশোচনার হাত থেকে আপনার বন্ধুকে রক্ষা করেছেন, যদিও এতে আপনাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।
আচ্ছা, মেয়েটা কি পরে এই ঘটনার কথা জেনেছিল? জেনে থাকলে তার প্রতিক্রিয়া কি ছিল?
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪
সাইলেন্স বলেছেন: এই ঘটনাটা কলেজের কাওকে না জানানোর কারণ ছিল ইসমাঈলের ছাত্রত্ব বাতিল হবার আশংকা।
কোন এক অজানা কারনে মেয়েটা এর মাস তিন চারেক পরে আর কলেজে আসেনি বিয়ে কিংবা ট্রন্সফার কোন একটা হবে হয়তো।
৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৫
তুষার কাব্য বলেছেন: চমত্কার কাজ করেছেন আপনি...শুভেচ্ছা ...
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২১
সাইলেন্স বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৪
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আপনি ভালো মানুষ জানতাম, এতো ভালো মানুষ কল্পনা করি নি।
হ্যাটস অফ ভাই।
২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫০
সাইলেন্স বলেছেন: আর ভালো।
আত্ব সমালোচনা ঠিকমত করতে পারিনা তাই হয়তো খারাপ দিক গুলো পাওয়া হয় না।
তবে ভালো মানুষ হবার বেদনা অনেক,আমার পরবর্তি পোস্ট হবে সেইরকম একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে।
আশা করি পড়বেন এবং মন্তব্যও পাবো।
অনেক ধন্যবাদ।
৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৪
খেলাঘর বলেছেন:
অদ্ভুত বড় কাজ
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪
সাইলেন্স বলেছেন: হ্য়তো, ভাবতে ভালো লাগে সেই দিন গুলোর কথা।
৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯
খেলাঘর বলেছেন:
সামু আমাকে কমেন্ট করার ক্ষমতা দিয়েছে; মনে হয়, সাময়িক; আজকাল কমেন্ট কেহ করে না, হয়তো সেই কারণে।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
সাইলেন্স বলেছেন: আশা করি এবার আর ব্যান করার মত কিছু ঘটবে না।
হুম, আপনি একজন সিরিয়াল কমেন্টার।
৭| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
ডি মুন বলেছেন: ++++
আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো
আপনার প্রতি
ভালো থাকুন।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৮
সাইলেন্স বলেছেন: ধন্যবাদ এবং শুভকামনা থাকল আপনার প্রতি।
৮| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১১
চাঁদগাজী বলেছেন:
মানুষ যখন সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না, তখন সাহায্য কোন কাজে আসে না।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৮
সাইলেন্স বলেছেন: একমত আপনার সাথে।
ঠান্ডা মাথায় যে কোন বিষয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যেটা আমরা বেশিরভাগ সময়ই করি না।
ভালো আছেন নিশ্চয় ?
৯| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভালো আছি।
এখন সাময়িক ব্যানে।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৭
সাইলেন্স বলেছেন: আবারো ব্যান। আপনার কপালটাই খারাপ।
১০| ০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আবার লিখতে দিচ্ছে! হবুর দেশ।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৪০
সাইলেন্স বলেছেন: এই কমেন্টটা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিলো, আশাকরি আর কোন সমস্যা হবেনা, আপনাকে লিখতে দিবে নিয়মিত।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১০
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা, নিজের জীবনের উপর দিয়ে হলেও একটা মেয়ের জীবন রক্ষা করেছেন।