![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবার সরকারি চাকুরির সুবাদে শৈশব কৈশোর-স্কুল কলেজ সবই চট্টগ্রামে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাংবাদিকতা করি। পরের জন্মে মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই।
৮ মে রোববার বিশ্ব মা দিবস। মাকে হারানোর আড়াই বছর হতে চলেছে। সাংবাদিকতা করার কারণে সারাদিনই অনেক ব্যস্ত থাকতে হয়। মাকে যেটুকু সময় দেওয়ার দরকার ছিলো দিতে পারিনি। তবে মা যে আমার জীবনের কি ছিলো সেটা অনেক বেশি বুঝেছি মা মারা মারা যাওয়ার পর। বিশ্ব মা দিবসে আমার প্রিয় মাকে স্মরণ করছি..
২০০৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আমার মা মারা যান। আড়াই বছর হয়ে গেলো। কিন্তু আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মা নেই। ঢাকা ছেড়ে বাসায় গেলে মা আর ছুটে আসবে না, আমাকে রান্না করে খাওয়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে না ভাবতে খুব কষ্ট লাগে।
২০০৮ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তায়, কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে আমরা মাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। সুস্থ্য একজন মানুষ, সামান্য একটি সমস্যার কারনে হাসপাতালে। আমরা কেউই বুঝতেই পারিনি এভাবে হুট করে মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। হাসপাতালে তিনদিন সবই ভালো। কিন্তু ১ ডিসেম্বর কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ আইসিইউতে নিতে হয়। দুদিন সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে থাকার পর আমার মা চলে গেলেন আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে। আমরা কোনভাবেই মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তার এই হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না।
আমার মা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ার সুযোগ তার হয়নি বিয়ের কারনে। মার সহপাঠীরা আমাদের বলতেন, তোরা লেখাপড়ায় ভালো, কারণ তোর মা ক্লাসের সেরা ছাত্রী ছিলেন। অনেক আদারে কেটেছে তাঁর ছোটবলা। তাঁর পরিবার ছিলো ফরিদপুরের এককালের শীর্ষ কয়েকটি পরিবারের একটি। মায়ের মনটা ছিলো বিশাল।
চট্টগ্রামে আমার বাবার সরকারী চাকুরি। সরকারী কলোনীতে আমরা যে বাসায় থাকতাম সেখানে একবার যে গেছে সে মায়ের রান্না খেয়ে, তার আন্তরিকতা দেখে ভক্ত হয়ে গেছে। মা মানুষকে খাইয়ে খুব আনন্দ পেতেন। সবসময় তিনি বাসায় অনেক লোকজন, উৎসব দেখতে পছন্দ করতেন। আমরা দিন নেই, রাত নেই বাসায় বন্ধুবান্ধব নিয়ে যেতাম। মা কখনো বিরক্ত হয়ে বলতেন না অসময়ে কেন এতো বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসিস? এমন অসাম্প্রদায়িক মানুষ, উচ্চ মনের মানুষ আমি জীবনে খুব কম দেখেছি।
মা কখনো গরীব বা ভিক্ষুকদের না বলতেন না। কলোনীতে থাকার কারনেই বাসায় সবসময় ভিক্ষুক আসতো। আমরা খুব বিরক্ত হতাম। কিন্তু মা হাসিমুখে কিছু না কিছু দিয়ে তাদের বিদায় করতেন। তাঁর জীবনে এমন দিন খুব কমই গেছে যেদিন তিনি কোন গরিব বা ভিক্ষুককে খাওয়াননি। মানুষের জন্য তাঁর ছিলো চরম সহমর্মিতা। কারো কোন কষ্টের কথা শুনলেই মা কাঁদতেন। তাদের স্বান্ত্বনা দিতেন।
মা মারা যাওয়ার পর আমার ছোট বোন জানালো, কয়েকদিন আগে নাকি সকাল ১১ টার দিকে এক ভিক্ষুক আমাদের বাসায় এসে মাকে বললো তার খুব খিদে লেগেছে। ১১ টার সময় রান্না থাকার কথা নয়, তাই বাসায় ভাত নেই। কিন্তু আমার মা গরম ভাত রান্না করে তাকে খাইয়ে বিদায় করলেন। এমন হাজারো ঘটনা আছে আমার মায়ের জীবনে। ছুটিতে বাসায় গেলেই মা আমার কাছে বলতেন হাসান টাকা দে তো। আমি বলতাম মা কি করবে? তিনি হাসতেন। সেই টাকা চলে যেতো গরীবদের কাছে। আমরা বাসায় আছি-ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছি-হঠাৎ দেখি কোন এক ভিক্ষুক। আমরা তাকে বলি মাফ করো। সে বলে, তোমার মাকে ডাকো। তোমার মা আমাদের কখনো খালি হাতে বিদায় করে না। আমরা চুপসে যাই তখন। মাঝে মাঝে এ নিয়ে মায়ের সাথে ঝগড়াও বাঁধে। বলি মা ভিক্ষকু-গরিব এরা কি তোমার বান্ধবী? সবসময় এতো জ্বালাতন করে কেন? মা হাসে। প্রতিবেলা রান্নার আগে মা পুরনো ভাত বাইরে কাক বা শালিককে দিতেন। মার রান্না করার সময় রান্নাঘরের সামনে সবসময় পাখি থাকতো। মা প্রচুর বই পড়তেন। তাঁর কারনেই ছোটবেলা থেকে আমরা ভাই বোন প্রচুর বই পড়তাম।
আমাদের পরিবারে দুঃখ কষ্ট সেভাবে ছিল না। বেশিরভাগ সময়েই ছিল আনন্দ উচ্ছলতা। কিন্তু এতো আনন্দের মধ্যেই আমার মাটা চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। আমরা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি সে এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল সোয়া সাতটায় আমার মা মারা যায়। সেন্ট্রাল হাসপাতালে আমার ছোটবোনটার কান্না দেখে আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারনে ওই বাসায় বেশি থাকতো। ওর কতো আফসোস মাকে নিয়ে। ও হাসপাতালে মাকে সুস্থ্যে দেখে, রাতে খাইয়ে বাবার সাথে চট্টগ্রাম গিয়েছিল ভর্তি হতে। এসে দেখে মা আর নেই।
এসএসসি পাস করার পর বাসা ছেড়ে কলেজ হোস্টেল, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যলেয়ের হল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পেশা আবার সাংবাদিকতা। তাই বছরের খুব কম সময় বাসায় গিয়ে থাকতে পারতাম। কিন্তু যখন যেতাম মা আমায় নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠতেন। কি খাওয়াবেন কি করবেন দিশা পেতেন না। আমি ফেরার সময় মায়ের চোখ ছলছল করতো। ভাবতে কষ্ট হয়, সেসব দিন আর কখনো ফিরে আসবে না।
মায়ের কথা মনে করে আমার বাবা কখনো আমাদের সামনে মন খারাপ করেন না। আমরা বুঝি প্রতিমুহুর্তে কতোটা কষ্ট তিনি পান। আমি আমার ছোটবোনের সামনে কাঁদতে পারি না মাকে নিয়ে। কিন্তু আমি বুঝি আমরা সবাই কাঁদি সবাই সবাইকে আড়াল করে। এই কান্না কখনোই হয়তো শেষ হবে না।
ফরদেপুরের বালিয়াডাঙ্গী ঈদ গা মাঠের কবরে এখন আমার মা শুয়ে আছেন। তিনি এখন সব কিছুর উর্ধ্বে। মা কি দেখছে তাঁর সাজানো পরিবারের এখন কি অবস্থা। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনভাবেই মায়ের হঠাৎ চলে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারিনা। ভাবলেই তাই কষ্ট হয়। আমার খুব চিৎকার করে তোমাকে ডাকতে ইচ্ছে করে মা। আল্লাহ তাকে শান্তি দিক। মা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি ভালো থাকো মা। ভালো থাকো।
২| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:১১
শামীম শরীফ সুষম বলেছেন: Click This Link
৩| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:১৩
হেডস্যার বলেছেন:
লেখাটা পড়ে চোখে পানি এসে গেল।
৪| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:১৭
ভারসাম্য বলেছেন: পোড়া কাঠ মেঘ হয় !
শুনেছ কখনো ?
আমিতো শুনেছি শুধু
পৃথিবীর জল
পুড়ে পুড়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে
উড়ে উড়ে দূরে গিয়ে
ভারী হয়ে মেঘ হয় । ===> এরপর এখানে
৫| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:২১
বাক স্বাধীনতা বলেছেন: আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইলো। নিশ্চয়ই তিনি শান্তিতে আছেন।
৬| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:২৩
লাল চাঁন বলেছেন: আপনার মা বেহেশত বাসী হোন
৭| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:২৭
েমাজািহদুল ইসলাম িটটু বলেছেন: Ma
Ati Shudu Shobdo Noy
Jeno Nejei Akta Prithibi. . . .. .. . . .. . . . . .. .
৮| ০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:৪০
কষ্ট - ১ বলেছেন: আপনার মায়ের জন্য দোয়া রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:১০
শারমিন সোনালী বলেছেন: আমার মা আমার চোখের মণি। আমার মাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভাল বাসি এবং প্রতিটা মা বয়সী মহিলাকে আমার মা মনে করি । মা দিবসে প্রতিটা মাকে আমার সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই।