নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এরশাদের রাজনৈতিক বক্তব্যের গত দুই মাসের খতিয়ান....

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ সাহেবকে চেনেন না, এমন কেউ বাংলাদেশে নেই। উনাকে আর নতুন করে চেনানোর প্রয়োজন নেই। এই পোষ্টের মুখ্য উদ্দেশ্য গত দুই মাসে এই আলোচিত ব্যক্তির মুখের কথাগুলো এক সঙ্গে তুলে ধরা।

এ জন্য আজ ১৯ নভেম্বর দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদের উপর নির্ভর করা হয়েছে।



এবার মূল কথায় আসা যাক। কত কিছুই না বদলায়। শুধু তিনি বদলালেন না। যদিও কথা দিয়েছিলেন এবার বদলাবেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সে অঙ্গীকারই করেছিলেন তিনি। পীর হাবিবুর রহমানের বর্ণনায়, ‘এরশাদ তার স্বভাবসুলভ ভদ্রতায় দরজা পর্যন্ত বিদায় জানাতে এসে বললেন, এবার আমি কথা রাখবো। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবো না।’ এখানেই থেমে থাকেননি। গত কয়েকদিনে এমনও বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে বেহেশতেও যাবেন না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে জনগণ থুতু দেবে। দালাল আর বেঈমান হয়ে মরতে চান না সে কথাও জানাচ্ছিলেন বারবার। এত কিছুর পরও অনেকে তার ওপর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। তারা জানতেন ওপারের ডাক এলেই এরশাদ খেলা দেখাবেন। সে খেলা তিনি দেখালেন অতিদ্রুতই। ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে প্রয়াত শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের এমন কার্টুন জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছিল। আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তবে কি বলতেন এরশাদ সম্পর্কে- এ কৌতূহল থেকেই যাবে।



যখন যা বলেন: গত ১১০ দিনের এরশাদের নানা বক্তব্যের পর্যালোচনা করেছি আমরা। এটা অবশ্য সত্য, গত ৩-৪ দিন ছাড়া এর আগের সময়ে তিনি প্রায় একই কথা বলেছেন। যদিও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসবই ছিল আসলে পাতানো খেলা। নিজেকে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বানাতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন একটি অংশ অবশ্য সব সময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়ার বিরোধিতা করে আসছিল। পরে তৃতীয় একটি পক্ষ চাপ সৃষ্টি করে কাজী জাফরের ওপর। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এরশাদের মন্তব্যগুলো ছিল নিম্নরূপ:

১৭ই নভেম্বর: হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসায় ছুটে যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আল্লামা শফীর সঙ্গে দেখা শেষে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে, সর্বদলীয় সরকারেও যোগ দেবে। সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবো।

১৬ই নভেম্বর: মহাজোটে থেকে নির্বাচন করলে লোকে আমাকে বেঈমান বলবে। আবার যদি নির্বাচন না করি তবে পরবর্তী সরকার কিভাবে আসবে?

১৩ই নভেম্বর: বর্তমান পরিস্থিতিতে একতরফা নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেবে না জাতীয় পার্টি। এটিই আমার শেষ কথা। আমি তো অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি, সব দল অংশগ্রহণ না করলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও অংশগ্রহণ করবে না।

১১ই নভেম্বর: সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভাল।

৯ই নভেম্বর: দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আতঙ্কিত। শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন।

১১ই সেপ্টেম্বর: ইউনূসকে হেনস্তা করতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।

২১শে সেপ্টেম্বর: রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে যান এরশাদ। সেখানে বলেন, সব দল যদি নির্বাচনে যায়, আমিও নির্বাচনে যাবো।

২২শে সেপ্টেম্বর: ক্ষমতায় থাকার জন্যই সংবিধান সংশোধন। কারসাজি করে ক্ষমতায় থাকতেই সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।

২৭শে সেপ্টেম্বর: আওয়ামী লীগ ৬০ আসন পাবে: নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন না হলে নির্বাচনে যাবো না।

২৯শে সেপ্টেম্বর: ঝিনাইদহ সফরে যান এরশাদ। বলেন, দেশে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

৩রা অক্টোবর: দলভিত্তিক নির্বাচনের প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।

৭ই অক্টোবর: রংপুর সফরে যান এইচ এম এরশাদ। বলেন, দু’নেত্রীর রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি চায় জনগণ।

১৫ই অক্টোবর: জনগণের চিন্তা করেই মহাজোট ছাড়িনি।

২১শে অক্টোবর: গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে।

২২শে অক্টোবর: সৈয়দ আশরাফের বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করেন এরশাদ। ১৯শে আগস্ট: শেষ বয়সে কলাবরেটর হতে চাই না। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টিও যাবে না।

২৫শে আগস্ট: এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবো না।

পুরনো চরিত্র: এরশাদের অবশ্য সকাল-বিকাল চরিত্র বদল নতুন কিছু নয়। যদিও কিছু কিছু পর্যবেক্ষক সব সময়ই দাবি করে আসছেন, এরশাদ নিজেকে আনপ্রেডিক্টেবল হিসেবে চিত্রিত করলেও তিনি আসলে তা নন। সব সময়ই একটি দেশের প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে আসছেন তিনি। রাজনীতিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে কিছু কিছু অভিনয় করেছেন এই যা। প্রয়াত মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী তার লেখা ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য’ গ্রন্থে এরশাদ প্রসঙ্গে লিখেছেন, একজন দক্ষ, চৌকস ও বিচক্ষণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে যদিও তার সুনাম ছিল না, কিন্তু চতুর সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার প্রচুর দক্ষতা ছিল। সেই বইয়ের তথ্যমতেই পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মাত্র সাত বছরে লে. কর্নেল থেকে তরতর করে লে. জেনারেল ও সেনাবাহিনী প্রধান হয়ে যান। আর আট বছরের মাথায় সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান। বিরোধী জোটের যৌথ আন্দোলন আর সেনাবাহিনীর সমর্থন প্রত্যাহারে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার পতন হয়েছিল। কারাগারেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এরশাদই মনে হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র স্বৈরশাসক পতনের পরও যিনি আবার মঞ্চে আবির্ভূত হন। প্রধান দু’টি দল বিস্তর টানাটানি করেছে তাকে নিয়ে। কখনও তিনি ঝুঁকেছেন আওয়ামী লীগের দিকে, কখনও বিএনপির দিকে। যদিও সব সময় তার চূড়ান্ত সম্পর্ক আওয়ামী লীগের সঙ্গেই হয়েছে। ‘দুধের অগ্র, ঘোলের শেষ, কচি পাঁঠা, বৃদ্ধ মেষ’ সবই খেতে চাওয়ার রাজনীতি তাকে টিকিয়ে রেখেছে এখন পর্যন্ত।



তথ্যসূত্র:

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.