নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষানীতির আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা (গবেষণাপত্রের অংশ বিশেষ)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৩

স্বাধীনতার দীর্ঘ তিন যুগ পরও মর্মন্তুদ সত্য হল আমরা এখনো একটি পশ্চাৎপদ জাতি। যদিও রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিভাষায় আমাদের একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বলা হয়। আমাদের এ পশ্চাৎপদতার মূল কারণ অনগ্রসর শিক্ষাব্যবস্থা এবং সর্বগ্রাসী দারিদ্র্য। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিতে শিক্ষা ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন নিয়ে দিক-নির্শেনাও রয়েছে। যদিও এরই মধ্যে এই শিক্ষানীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।



শিক্ষানীতির ৩-নম্বর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্ববোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো।’ (পৃ-১) অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন ও চাহিদা নিরুপণ শীর্ষক গবেষণার আলোকে শিক্ষাক্রম উন্নয়নের নীতিমালার প্রথমটি হলো, ‘ভাষা আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশপ্রেম বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি’ করা।

ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে ১৮টি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর ৩ ও ৪ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং সম্ভাবনাময় নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীর মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সুসংহত জ্ঞানের ভিত রচনা তথা এর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার প্রতি আগ্রহ ও যোগ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের প্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম করে গড়ে তোলা।’



কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি চূড়ান্তভাবে যে শিক্ষাক্রম অনুমোদন করেছে তার সঙ্গে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ব্যাপক ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীতে সকল ধারার জন্য আবশ্যিক বিষয় আছে ১০টি, নবম-দশম শ্রেণীতে আবশ্যিক বিষয় আছে ৭টি, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে সকল ধারার জন্য বাংলা, ইংরেজি ব্যতীত ১০০ নম্বরে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি অবশ্যিক করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস জানার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। কেবল নবম-দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার জন্য ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ পত্রটি আবশ্যিক করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র একটা অংশের কাছে ইতিহাস পৌঁছুতে পারছে। মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৮২০ জন। এ বছর নবম-দশম শ্রেণীর মানবিক শাখার জন্য ইতিহাস গ্রন্থের ৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৪ কপি ছাপা হয়েছে যা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। শতকরা হিসেবে মাত্র ৭ ভাগ। কিন্তু বিরাট সংখ্যক শিক্ষার্থী যাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে গড়ে তোলার কথা শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল। কারণ ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থে ইতিহাসসহ ৬টি বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। প্রতিটি গ্রন্থে ১২/১৩টি অধ্যায়ের মধ্যে ২/৩টি অধ্যায় ইতিহাসের জন্য বরাদ্দ। এত স্বল্পপরিসরে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংগ্রামের ঘটনা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। নিদেনপক্ষে ১৯৪৭-১৯৭১ পর্বের ইতিহাস না বললেই নয়; সেটাও এ পরিসরে অসম্ভব। ফলে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে নতুন প্রজš§ বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না।

নবম-দশম শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা শাখার জন্য ‘বিজ্ঞান’ আবশ্যিক বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে। ঐচ্ছিক তালিকায় ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ আছে। একই শ্রেণীর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বাধ্যতামূলক হলেও ব্যবসায় শিক্ষার জন্য তা ঐচ্ছিক। ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়বে এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস তাদের জন্য অপ্রয়োজনীয় থেকে গেল।

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাক্রমে আরো ভয়াবহ অবস্থা। এ পর্যায়ে ৬টি শাখার কোনো শাখার জন্যই ইতিহাস অবশ্যিক বিষয় নয়। সঙ্গীত বিভাগের জন্য ইতিহাস ঐচ্ছিক হিসেবে রাখা হয়েছে। মানবিক শাখায় ইতিহাস/ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি/ইসলাম শিক্ষা পাঠদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ অভিনব ব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিকে ইতিহাসপাঠের যে নূন্যতম সুযোগ ছিল তাও মুছে ফেলা হলো। ইতিহাস/ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি হতে পারে। কারণ দুটি বিষয়ের মধ্যে কিছু মিল তো অস্বীকার করা যাবে না।

(পুরো অংশ ছাপা হচ্ছে ‌'সাহিত্য কাঁথা' সাহিত্য সাময়িকীতে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.