নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারা ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যা অপরাধীদের ভাল না করে বরং খারাপই করে...

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৪

যখন কারা ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে লিখতে বসেছি, তখন বেশ কয়েকবার ভাবলাম, এতো এতো বিষয়ের মধ্যে কারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে লিখছি কেন?

আসলে আপনি নিজের চোখে কারাগার দেখে আসলে বেশ কিছু বিষয় আপনার দৃষ্টিতে পড়বে। আসলে কারাগারে অপরাধী বা আসামীকে পাঠানো হয় সংশোধন করানোর জন্য। কিন্তু ওখানে এতো এতো অসঙ্গতি, কোনো অপরাধী আরো বেশি এগ্রেসিভ হতে বাধ্য! এটা নির্ধিদ্বায় বলা যায়।



অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ:

কারাভ্যন্তরের পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং বন্দীদের জীবনযাত্রা মানসম্মত নয়। ব্যাপক সংখ্যক বিচারাধীন বন্দী থাকায় কারাগারে জনসংখ্যাধিক্য হওয়ায় যার উল্লেখযোগ্য প্রধান কারণ। কারাগারে দুই ধরনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষ আবাসন ব্যবস্থা এবং সংলগ্ন ওর্য়াড বা ডরমেটরিতে আবাসন ব্যবস্থা।

কক্ষ আবাসন ব্যবস্থা বিশেষ শ্রেনীর কারাবন্দীদের কারাদণ্ড কার্যকরী করণ, দোষ স্বীকার করা বন্দীদের অন্যদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখাসহ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের জন্য বরাদ্ধ করা হয়। সংলগ্ন ওয়ার্ড সমূহ পেশাদারী অপরাধী,হত্যা অপরাধে অপরাধী বন্দী এবং তরুন অপরাধীসহ সব ধরনের অপরাধীর জন্য ব্যবহৃত হয়। ডরমেটরিতে অবস্থানরত কারাবন্দীরা একটি ডরমেটরিতে ১০০ থেকে ১৫০ জন একত্রে রাত্রি যাপন করে।

মুক্ত হবার পর গুরুত্বর অপরাধে লিপ্ত হওয়ার বাসনায় আকস্মিক অপরাধ করা ব্যক্তি ও তরুন অপরাধীরা সাধারণত কারাগারে দল গঠন করে থাকে। সে ক্ষেত্রে পেশাদার অপরাধীদের অবস্থান তাদেরকে প্রভাবিত করে থাকে। সে কারণে কারাগারগুলো অপরাধী তৈরীর আস্তানা হয়ে উঠছে।

তাছাড়া, মেঝেতে জায়গা বরাদ্ধ দেওয়ার বিষয়টি কারাগারে বাসস্থানের ক্ষেত্রে অনেক বেশী অব্যবস্থাপনার প্রমাণ দেয়। ডরমেটরির নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক কারাবন্দী মেঝেতে ৩৬ বর্গফুট জায়গা লাভের অধিকারী;কিন্তু কারাবন্দীর সংখ্যাধিক্যের কারণে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রাপ্তিসাধ্য/ প্রাপ্য জায়গার পরিমান ১৫ বর্গফুটে কমিয়ে এনেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়ার্ডে জায়গার ঘাটতি/ স্বল্পতার কারণে বন্দীদের পালাক্রমে ঘুমাতে হয়। তবে কারা কর্মকর্তাদের আর্থিকভাবে খুশি করলে ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা বরাদ্ধ করা হয়।

সর্বোপরি, কার্বন ডাই অক্সাইড, নিকোটিন,ঘাম ও ঢাকনাহীন মূত্রাগার থেকে গড়িয়ে আসা প্রসাবের গন্ধ কারা-জীবনকে দূর্বীসহ করে তোলে। যা জনাকীর্ণ ওয়ার্ড সমূহে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এসব কারাগারে বন্দীদের আইনী অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার যন্ত্রণাদায়ক উদাহরণ।



খাদ্য:

কারাবিধি অনুসারে সাধারণ বন্দিরা দৈনিক ২৮০০ থেকে ৩০০০ ক্যালরি খাদ্য পায়, যা জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউট কর্তৃক সন্তোষজনক বলে গণ্য হয়েছে। তবে তথাকথিত বিশেষ বন্দীরা কিছুটা অতিরিক্ত পরিমান খাদ্য পেয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে কারা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে সরবরাহকৃত খাদ্যের অধিকাংশ প্রাপ্তি থেকে বন্দীরা বঞ্চিত হয়। তবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা নিজ খরচে কারা ক্যান্টিন থেকে খাবার ক্রয় করে খেতে পারে। তদুপরি, বৃষ্টি কিংবা রোদে খোলা আকাশের নীচে মাটিতে বসে যে পদ্ধতিতে কারাবন্দীরা তাদের খাবার খায় তা সমর্থনযোগ্য নয়।



পোষাক ও শয্যা:

সাধারণ কয়েদিদের পরিধেয় ডোরাকাটা মোটা কাপড়ের পোষাক তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেবার জন্য সর্বাপেক্ষা দায়ী। ২টি কম্বল দিয়ে কারাগারে একটি শয্যা তৈরী হয়, যার একটি মেঝেতে বিছানোর জন্য এবং অন্যটি বালিশ হিসেবে ব্যবহারের জন্য, যা একই সঙ্গে অপর্যাপ্ত ও মর্যাদা হানিকর। এরূপ শয্যা ব্যবস্থা কারাবন্দীদের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এবং মানবাধিকার লংঘন হিসেবে বিবেচিত।



চিকিৎসা সেবা:

সারাদেশের ৬৮ টি কারাগারের মধ্যে ৫৬ টিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য কারা হাসপাতাল নেই। যদিও ১২ টি কারাগারে কারা হাসপাতাল রয়েছে, তবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য কারা অধিদপ্তরের অধীনে কোন মেডিক্যাল কর্মী নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মেডিক্যাল কর্মী ধার নিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ফলে অসুস্থ কারাবন্দীদের যথার্থ চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বর পশ্চাদপদতা সৃষ্টি হয়।

তাছাড়া কারা হাসপাতালগুলোতে কোন বেতনভুক্ত সেবক বা সেবিকা নেই। অল্প শিক্ষিত অপরাধীরা প্রশিক্ষণ ছাড়া হাসপাতালের সেবক-সেবিকা হিসেবে কাজ করে। রাতের বেলা জরুরী পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য কোন চিকিৎসক নেই। তদুপরি কারাগারের জনসংখ্যা অনুযায়ী ডাক্তারের সংখ্যাও যথেষ্ট অপ্রতুল। তাছাড়া, কারাগারে কোনরূপ প্যাথলজিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল বা বায়োলজিক্যাল সুবিধা নেই।

একমাত্র কাশিমপুর মহিলা কারাগার ছাড়া কারাগারের মহিলা শাখায় মহিলা রোগীদের দেখাশোনার জন্য কোন মহিলা চিকিৎসক বা সেবিকা নেই। পুরুষ চিকিৎসকরা মহিলা রোগীদের চিকিৎসা করেন। ফলে এসব মহিলা কারাবন্দীদের অনেক সময় সম্ভাব্য যৌন নিপীড়ন বা সহিংসতার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। সংবিধানে প্রদত্ত নিশ্চয়তা অনুসারে যা গুরুত্বর নারী অধিকার লংঘন হিসেবে বিবেচিত।

যেসব কারাগারে কারা হাসপাতাল নেই, সেসব কারাগারে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ অসুস্থ কারাবন্দী সেসব কারা হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর অপরাধী ও তথাকথিত ভিআইপি কারাবন্দীরা তাদের ক্ষমতা ও অবৈধ টাকার জোড়ে সেসব কারা হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র দখল করে থাকে।



কারাগার পরিবীক্ষণ:

কারাবিধির ভলিউম ১৩০ বিধি ৪৮ এর অধীনে জেলা মাজিস্ট্রেট এবং /বা সহকারী কর্মকর্তাদের সপ্তাহে একবার করে কারাগার সমূহ পরিদর্শন করে কারা ব্যবস্থাপনা যাচাই করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ প্রায়শ: তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। ফলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট বা বিচারকদের কাছে কারাবন্দীদের দুঃখ দুর্দশার কথাসমূহ তুলে ধরার অধিকার অগ্রাহ্য করে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়।

তাছাড়া, কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পর্কে পরিদর্শন কর্মকর্তা ও পরিদর্শকের কাছে কাছে কারাবন্দীদের অভিযোগের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগকারী কারাবন্দীকে নির্যাতনসহ চরম দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়,যা কারা পরিস্থিতিকে আরো বেশী রকম দুর্বিসহ করে তোলে। সে কারণে বর্তমানে খুব কম সংখ্যক কারাবন্দী পরিদর্শন কর্মকর্তা ও পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ জানাতে সাহস পায়।

কল্যাণমূলক পদক্ষেপ ও সংশোধন কার্যক্রম:

কারাবন্দীদের মঙ্গলার্থে সেবামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না বললেই চলে। কারাভ্যন্তরে অবকাঠামোগত বিষয়গুলো যেমন: খাদ্য,বস্ত্র,চিকিৎসা সেবা, পয়:নিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ইত্যাদি পরীক্ষা করার জন্য কারাগারে কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজ সেবা কর্মকর্তা নেই।

কারাবন্দীদের মনস্তাত্বিক চাহিদা সমূহ পূরণের জন্য কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমাজ কর্মী বা মনোচিকিৎসকও নেই। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের কারাগারে অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের জন্য কোন কর্মসূচী নেই। এ বিষয়টি অপরাধ হাড় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এবং অধিকাংশ অপরাধীই সংশোধিত ব্যক্তি হিসেবে বরং পেশাদার অপরাধী হিসেবে সমাজে প্রত্যাবর্তন করে।



পরিশেষে, বাংলাদেশে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মনে হয় কারাবন্দির সংখ্যা বেশি। সে হিসেবে, এসব বিষয়ের প্রতি নজর দেয়ার সময় এসেছে বৈকি..।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৩১

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
ভাল পোস্ট


আপনে কি ছিলেন নাকি কারাগারে ;) =p~ =p~ =p~

১১ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯

এম এ হাসান মাহামুদ বলেছেন: না ভাই আমি ছিলাম না।
পেশাগত কারণে এবং অন্য কারো সাথে কয়েকবার গিয়েছিলাম..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.