নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একসঙ্গে ৬জনের বেশি মানুষকে খুনের যত ঘটণা (পূর্ণ বিবরণসহ); বিচার হয়নি কোনটির!!

২০ শে মে, ২০১৪ রাত ১:৩১

ক্রমাগত যে হারে মানুষ খুন করা হচ্ছে, তাতে কোনদিন বাংলাদেশটাই খুন হয়ে যায়, এই সংশয় নিয়েই লিখতে বসেছি। মূলত এ সকল ঘটণা সংগ্রহে রাখতেই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে। সামুর বন্ধুদের জন্য ব্লগে দেয়া হলো:



এর বাইরেও কিছু ঘটণা থেকে যেতে পারে। পাঠক বন্ধুদের কাছে আশা করবো, জানা থাকলে মন্তব্য অন্তত ঘটণাটা জানাতে। বিস্তারিত আমি সংগ্রহ করে নিব।



আমরা সাধারনত কী দেখি? দেখি, বড় ধরনের খুনোখুনির ঘটনা ঘটলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। চলে একের পর এক তদন্ত। কখনো তদন্দ স্থানান্তর করা হয় পৃথক সংস্থায়। আবার অনেক ঘটনারগভীর তদন্ত শেষে ফল শুন্যও লক্ষ করা যায়। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রতিদিনের নতুন ঘটনায় চাপা পড়ে পুরনো ঘটনাগুলো। পুরনো কোন লোমহর্ষক ঘটনার কথা মনে করে কেউ তাৎক্ষণিক আঁতকে উঠলেও পরে আবার ভুলে যায়। তবে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যদের চাপা কষ্ট রয়েই যায়। এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি ওঠে চারিদিক থেকেই। কোন কোন ঘটনায় অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়। আবার অনেকে পলাতকও থাকে। এছাড়াও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বেরিয়ে যায় প্রকৃত অপরাধীরাই।





বাঁশখালিতে ১১জনকে পুড়িয়ে হত্যা

২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর। সাধনপুর শীলপাড়ার তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাতে গানপাউডার দিয়ে শিশু-নারী-পুরুষসহ ১১ জনকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে হত্যা করেছিল। ওইদিন ৪ দিন বয়সের শিশু কার্তিকও রক্ষা পায়নি দুর্বৃত্তদের হাত থেকে। এ জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিচার দীর্ঘ ১১ বছরেও শেষ হয়নি। হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে এসে প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। মামলার বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে। মামলায় ৩৯ আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে ১৯ জন জামিনে এসে প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে নিহতের পরিবারের সদস্যদের।





চট্টগ্রামের এইট মার্ডার

১৪ বছর আগে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ছাত্রলীগের আট নেতা-কর্মীকে হত্যার (এইট মার্ডার) দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চার আসামি আপিলের রায়ে খালাস পেয়েছেন। কারাবন্দি ওই আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদন্ডাদেশের অনুমতির আবেদনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার বিচারক মো. আব্দুল হাই ও বিচারক কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ এই রায় দেন। ২০০০ সালের জুলাই মাসে সড়কে একটি মাইক্রোবাসে থাকা ছাত্রলীগের আট নেতা-কর্মীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। শিবির কর্মীরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে তদন্তে বলা হয়। ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। ওই চারজনই আপিলের রায়ে খালাস পেলেন। হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও কারা, কাকে গুলি করেছে, সেই চাক্ষুস সাক্ষী না থাকায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন বলে আইনজীবীরা মনে করছেন। খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন খান ওরফে সাজ্জাদ, আলমগীর কবির ওরফে মানিক, আজম ও মো. সোলায়মান। তারা সবাই শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। চারজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার পাশাপাশি বিচারিক আদালত তিন আসামি এনামুল হক ওরফে এনাম, মো. আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ওরফে রিমন ওরফে ইমন ও হাবিব খানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। যাবজ্জীবন দন্ডাদেশ নিয়ে পলাতক এই তিন আসামির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে তাদের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।





পল্লবীর সিক্স মার্ডার

২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর পল্লবী আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে যায় একদল দুর্বৃত্ত। ওই সময় তাদের চিনে ফেলায় ওই বাড়ির ছয় জন গৃহকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। হত্যাকান্ডের শিকার হন- গৃহকর্মী খাদিজা (১৫), আন্না (১৪), মনির (১২), প্রাক্তন ভৃত্য রিজিয়া (৪২), তার ছেলে তোফেল (১৭) ও দারোয়ান মিলন বকশিকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক কাজী সিরাজুল হক পরদিন ১৪ অক্টোবর পল্লবী থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এক বছর পর পুলিশ ওই বাড়ির সাবেক ড্রাইভার মাসুম মাতব্বরকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তিনিসহ মো. আজিম, মো. জাকির হোসেন বাহার ও মো. কামরুজ্জামান এ চারজনের বিরুদ্ধে মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এএইচএম মোশতাক আহমেদ এ চার জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেন।





নওগাঁর আত্রাইয়ে সিক্স মার্ডার

২০০৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাত তিনটার দিকে নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার নৈদীঘি গ্রামের সাদিয়ার রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেনকে (২৮) পাশের বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা নৃশংসভাবে জবাই করে। এছাড়া একই সময়ে ওই গ্রামের সমজান আলী শাহর দুই ছেলে শুকবর মেম্বার ও আবদুল জব্বার, মৃত রহিমুদ্দিনের ছেলে শাহাজাহান এবং মৃত জহর আলীর দুই ছেলে মোজাম্মেল হক ও বিদ্যুৎক জবাই করে। জমি দখল ও নৈদীঘিতে মাছ চাষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। পরদিন ২৫ এপ্রিল নিহত জাহাঙ্গীরের বাবা সাদিয়ার রহমান বাদী হয়ে এক-দেড়শ’ অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে আত্রাই থানায় মামলা করেন। মামলায় মোট ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতবছর ১৬ মে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক এ রায়ের দিন ধার্য করেন। ৪৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন বিচারক।





গোপীবাগে সিক্স মার্ডার

২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গোপীবাগের রাম কৃষ্ণ মিশন রোডের ১ নাম্বার লেনের ৬৪/৬ নাম্বার ভবনের দোতলায় ৬ জনকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন কথিত পীর ও ইমাম মাহদীর সেনাপতি পরিচয় দানকারী লুৎফর রহমান ফারুক এবং তার ছেলে মনির হোসেন, ওই বাসার কেয়ারটেকার মঞ্জুর আলম ওরফে মঞ্জু এবং লুৎফর রহমানের মুরিদ সাইদুর রহমান (৩০), মজিবর (৩২) ও রাসেল (৩০)। এ ঘটনার পর অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় মামলা করেন লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল ফারুক। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা এখনো ক্লুলেস।





নিদারাবাদ হত্যাকান্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিদারাবাদ গ্রামের শশাঙ্ক দেবনাথের পরিবার ছিল একেবারেই নিরীহ। তিনি মুড়ির মোয়া বিক্রি করতেন। ১৯৮৭ সালে শশাঙ্ক দেবনাথ যেদিন অপহƒত হন, সেদিনই তার স্ত্রী বিরজাবালার ঘরে জš§ নেয় এক পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় সুজন দেবনাথ। দুই বছর পর ১৯৮৯ সালে সেই দুর্বৃত্তরাই শশাঙ্ক দেবনাথের স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবারের ছয়জনকে রাতের অন্ধকারে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সেই সদস্যদের মধ্যে ছিল সুজন দেবনাথও। তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র দুই বছর। এই শিশুকে হত্যা করতেও হাত কাঁপেনি ঘাতকদের। বরং হত্যার পর ড্রামে ভরে পরিবারের অন্য সবার সঙ্গে তার লাশও চুন দিয়ে ডুবিয়ে রেখেছিল খুনিরা। ১৯৮৭ সালের ১৬ অক্টোবর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার (বর্তমান বিজয়নগর উপজেলা) নিদারাবাদ গ্রাম। কুয়াচ্ছন্ন ভোর। শশাঙ্ক দেবনাথকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় পূর্ব পরিচিত তাজুল ইসলাম। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে গুড় নিয়ে ফিরে আসার কথা বলে বের হন মুড়ির মোয়া বিক্রেতা শশাঙ্ক দেবনাথ।



এরপর কয়েক দিন চলে গেলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। তার স্ত্রী বিরজাবালা দেবনাথ আত্মীয়স্বজনসহ অনেকের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান পাননি। এরপর তিনি তাজুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন। এরই মধ্যে শশাঙ্ক দেবনাথকে অপহরণের পর মেরে ফেলার বিষয়টি স্পষ্ট হতে থাকে। মামলায় সাজা হয়ে যেতে পারে এমন শঙ্কায় ঘৃণ্যতম পরিকল্পনা নেয় তাজুল ইসলামরা। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি দুই বছরের শিশুও।



১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে ৩০ থেকে ৪০ দুর্বৃত্ত হামলা চালায় শশাঙ্কের পরিবারের ওপর। তারা অপহরণ করে নিয়ে যায় শশাঙ্কের স্ত্রী বিরজাবালা (৪৫), মেয়ে নিয়তি বালা (১৭), প্রণতি বালা (১০), ছেলে সুভাস দেবনাথ (১৪), সুপ্রসন্ন দেবনাথ সুমন ও সুজন দেবনাথকে (২)।



অপহরণের ঘটনার ১০ দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর অপহƒত ছয়জনের লাশ মেলে তাদের বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে ধুপাজুরি বিলে। বিলে ভেসে ওঠা দুটি ড্রাম থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি লাশই ছিল কয়েক টুকরো। লাশে দ্রুত পচন ধরায় ঘাতকরা ড্রামের ভেতর চুন দিয়ে রাখে। শ্বশুরবাড়িতে থাকায় বেঁচে যান শশাঙ্কের আরেক মেয়ে সুনীতি।



নৌকায় করে ধুপাজুরি বিল দিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা ছিল ওই গ্রামের শিক্ষক আবুল মোবারকের। কিছু উড়ো কথা তাঁর কানে আসছিল। সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তিনি নৌকার গতিপথটা একটু ঘুরিয়ে নেন। হঠাৎ নৌকার তলদেশে কী একটা আটকে যাওয়ার শব্দ হয়। আবারও মাঝির বৈঠায় খটখট শব্দে সবারই একটু সন্দেহ হয়। খোঁচাখুঁচি করতেই ভেসে ওঠে ড্রাম। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেওয়া হয়। ড্রাম খুলতেই স্তব্ধ সবাই। এটিতে তিনজনের লাশ। সাধারণ ধারণা থেকেই আরেক ড্রামের সন্ধান চালানো হয়। মিলেও যায়। আরেকটি ড্রামেও টুকরো টুকরো করে রাখা আরো তিনজনের লাশ! গ্রামবাসী রাতভর পাহারা দিয়ে রাখে ড্রাম। পরদিন পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।



১৯৮৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিল থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের পর এই খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামে। হাজার হাজার মানুষ মর্মান্তিক সে ঘটনা জানতে ও লাশ দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। আসে খুনের সঙ্গে জড়িতদের একজনও। সে হত্যাকান্ডের হোতা তাজুল ইসলামের বোনজামাই হাবিবুর রহমান। সে একা বড় একটি নৌকা নিয়ে লাশ দেখতে এলে এলাকাবাসী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাকে পুলিশে দেওয়া হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামি করা হয় তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, এনু মিয়া, ফিরোজ মিয়া, ফিরোজ মিয়া (২), হাবিব মিয়া, আবুল হোসেন, জজ মিয়া, বাদশা মিয়া, মো. কাজল, ফারুক মিয়া, আবুল কাশেমকে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য (মেম্বার) মো. ধন মিয়া চৌধুরী বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় ৩৮ জনকে দায়ী করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয়।



১৯৯০ সালের জুন মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালত এক রায়ে ৯ জনের ফাঁসি, ২৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দুজনকে বেকসুর খালাস দেন। পরে উচ্চ আদালত খুনি তাজুল ইসলাম, বাদশা মিয়ার ফাঁসি ও আটজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ বহাল রাখেন। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে আবুল হোসেন নামে একজন এখনো পলাতক। তাজুল ইসলাম ও বাদশা মিয়ার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। সেই খুনিদের মধ্যে তাজুল ইসলাম ও বাদশা মিয়ার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এক আসামি এখনো পলাতক। অন্যরা কেউ খালাস পেয়ে এলাকায় আছে। তাদের ভয়ে আজও ওই ঘটনা নিয়ে অনেকেই কথা বলতে ভয় পান। তাদের আশঙ্কা, বাড়াবাড়ি করলে তাদের অবস্থাও হতে পারে শশাঙ্কের মতো।





ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত সেভেন মার্ডার

১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে সেভেন মার্ডার সংগঠিত হয়। এই সেভেন মার্ডারের অন্যতম ফাঁসির আসামি ছিলেন তখনকার ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতি হয়ে শফিউল আলম প্রধানসহ অন্যদের ফাঁসির দন্ডাদেশ মওকুফ করেন। ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে রাজনৈতিক উত্থান হলেও তিনি বর্তমানে বিএনপি’র সঙ্গে একাত্মতা পোষন করেছেন।





নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডার

চলতি বছর গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহƒত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার। এ ঘটনায় র‌্যাব-১১ এর সিওসহ তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই তিনজনই এখন পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।



সর্বশেষ (১৯ মে ২০১৪) আপডেট হলো; ঘটনায় অভিযুক্ত র‌্যাব-১১ এর সাবেক তিন কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নানা কৌশলে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। আটকের পর থেকে র‌্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তার নির্ঘুম সময় কাটছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে রিমান্ডে থাকা তিন র‌্যাব কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বলে তদন্ত সূত্র জানিয়েছে। তবে র‌্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেনকে চিনতেন বলে জানিয়েছেন।



গ্রেপ্তারের পর গত শনিবার র‌্যাব-১১ এর সাবেক সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর আরিফকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আর গতকাল আরেক কর্মকর্তা র‌্যাব-১১ এর সিপিসি-১ এর সাবেক কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার এম এম রানাকে সাত দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় এমপিকেও আটকের দাবি তুলেছেন তারা।



তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানা যায়, রিমান্ডে থাকা এই তিন সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তাকে জেলার পুলিশ লাইনের ম্যাগাজিন গার্ডে রাখা হয়েছে। তিনটি পৃথক কক্ষে আছেন তিন কর্মকর্তা। সেখানেই জেলা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। শনিবার রিমান্ডে নেওয়া তারিক ও আরিফকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গতকালও একইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও এডভোকেট চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের সময় তাদের অবস্থানের কথা জানতে চান। র‌্যাব কর্মকর্তারা নিজেদের অবস্থানের কথা জানান। ঘটনার সময় লে. কর্নেল তারিক তার নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন। তারা বারবার এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন।



জিজ্ঞাসাবাদকারী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এক প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ বলেছেন, তিনি নূর হোসেনকে চিনতেন। তবে তার সঙ্গে সখ্য ছিল না। তার জুরিডিকশনের জনপ্রতিনিধি বলেই নূর হোসেনকে চিনতেন। ওই সূত্র জানায়, রিমান্ডে নেওয়ার আগেই প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডের পর তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।



নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, রিমান্ডে থাকা র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঘটনাটি অনেক সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলা সম্ভব নয়।



জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে র‌্যাবের সাবেক দুই কর্মকর্তার কাছে সাতজনকে অপহরণের পর তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তারা দাবি করেছেন, ঘটনা জানার পর তারাও সাতজনকে উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর ছিলেন। ওই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিকটিম পরিবারগুলো ও গণশুনানিতে দেওয়া কয়েকজন সাক্ষির বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। ওই সূত্রটি জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় প্রত্যাহার হওয়ার পর সেনাবাহিনী থেকে সদ্য অকালীন অবসর নেওয়া লে. কর্নেল তারিক উত্তেজিত হয়ে উঠেন। এসময় জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তারা সেভেন মার্ডারের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সহযোগিতা চান। তারেক এসময় নিশ্চুপ ছিলেন। সূত্র জানায়, নিহতদের লাশের সঙ্গে পাওয়া ইট, রশি, বস্তার কথা উল্লেখ করা হলে তারা বলেন এ বিষয়টি তাদের জানা নেই।



গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের পর র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে জেলা পুলিশ লাইনের ম্যাগাজিন গার্ডের পৃথক তিনটি কক্ষে রাখা হয়েছে। কক্ষগুলিতে ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও নেই ঘুমানোর ব্যবস্থা। অনেকটা থানার হাজতখানার আদলে এই কক্ষগুলো তৈরি। এর পাশেই জেলা পুলিশের অস্ত্রাগার। কক্ষের সামনের অংশ গারদখানার মতো লোহার রড দিয়ে ঘেরা। উš§ুক্ত থাকায় তারা কখন কী করছেন তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তাদের স্বাভাবিক খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর অব ইন্টারোগেশনের আদলেই তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।



এদিক, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পুলিশ সদর দপ্তরের তিন জন কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন কর্মকর্তা, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবি আই)-এর তিন কর্মকর্তা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের তিন কর্মকর্তা রয়েছেন। এরই মধ্যে শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন কর্মকর্তা তারিক সাঈদ ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। গতকাল পিবি আই কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।



গ্রেপ্তারের পর রানাকেও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনের ম্যাগাজিন গার্ডের একটি কক্ষে রাখা হয়। একই ঘটনায় আদালত তারেক ও আরিফের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করলেও গতকাল রানাকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রানাকে নেভাল হেডকোয়ার্টার ক্যান্টনমেন্ট থানার মাধ্যমে তুলে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনীর অকালীন অবসর পাওয়া দুই কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর রানার পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জনটি আরও জোরালো হয়। পরে নেভাল ইন্টিলিজেন্স রানাকে খুঁজে বের করে নৌ-সদর দপ্তরে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রাখে। পরে নৌ-সদর দপ্তর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জেলা পুলিশের একটি দল শনিবার মধ্যরাতে ক্যন্টনমেন্ট থানায় যায়। ক্যান্টনমেন্ট থানার সহযোগিতায় তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।





লেখাটি তৈরি নির্ভর করা হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের ওপর।





আমার ফেসবুক পেজ:

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.