নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরব কথামালা

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে আসতেই হয়, ভাবনা প্রকাশে......!

এম এ হাসান মাহামুদ

লেখালেখির মোটামুটি ইচ্ছে থেকেই ব্লগে ঢু মারি। ভাল লাগে বই পড়তে আর নিজের ইচ্ছে মতো লিখতে।

এম এ হাসান মাহামুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিহারী ক্যাম্পের ১০ খুন নিয়েও রাজনীতি হয়ে গেল..!!

১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৮

রাজধানীর মিরপুরে বিহারী ক্যাম্পে সংঘর্ষে একই পরিবারের ৭ জনসহ ১০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কেন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, কারাই বা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তা তদন্ত করে বের করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু লাশ দাফনের আগেই এই ১০টি লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে।



ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্নও জেগেছে জনমনে। যে আতশবাজিকে ঘিরে এই সংঘর্ষের ঘটনা বলে বলা হচ্ছে সেই আতশবাজি এই ক্যাম্পে প্রতি বছরই ঘটে থাকে। কিন্তু একে কেন্দ্র করে এত লাশের ঘটনা এবারই প্রথম। আবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই হত্যাকান্ড আওয়ামী লীগের কারণে।



পুলিশ বলছে, বিহারীদের মধ্যে অনেক গ্রুপিং-কে ঘিরে প্রায়ই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং এবারও আতশবাজিকে ঘিরে সংঘর্ষের সূত্রপাত। এতে পরে যোগ দেয় স্থানীয় বাঙ্গালীরা। এক পর্যায়ে আগুন লেগে যায়। আর স্থানীয় বাঙ্গালীরা বলছেন, শবে বরাতের রাতে গত বছরও আতশবাজিতে বাধা দিলে বাঙ্গালীদের সাথে বিহারীদের সংঘর্ষ হয়। এবারও শবেবরাতকে ঘিরে শুক্রবার রাতে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে আতশবাজি করা হয়।



শনিবার ভোরে স্থানীয়রা বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে একাধিক বিহারী বলেছেন, তাদেরকে ওই ক্যাম্প থেকে উচ্ছেদের জন্য পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। একজন জানান, চাপাতি হাতে শতাধিক লোককে আসতে দেখেছেন তিনি। তার দোকান লুট করেছে তারা। এসময় পুলিশও তাদের সাথে ছিল বলে তার অভিযোগ। বিহারী বা আটকে পড়া পাকিস্তানীরা আরও অভিযোগ করেছেন, তিন দিন আগে কালাপানি ক্যাম্প এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া হয়। একারণে পানির সংযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এব্যাপারে তারা স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আর দেয়া হবে না। তিন দিন আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘটনায় বিহারীদের মনে নানা প্রশ্ন। আগুন নেভাতেও কেন এত সময় লেগে যায়, পুলিশই বা কেন সময় মত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সে প্রশ্নও তাদের। ঘটনাস্থলের অদূরে মিরপুর ১০ নম্বর থেকেও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সময়মত যায়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।



এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিহারী ক্যাম্পে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘœকারী দোষীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পুর্নবাসনেরও জোর দাবি করেন তিনি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত কিংবা যাদের উস্কানিতে এই ঘটনা ঘটেছে তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।



ঘটনা তদন্তে ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, গতবারের শবেবরাতের তুলনায় এবারের শবেবরাতে আতশবাজি পোড়ানো অনেক কম ছিল। সামনের শবেবরাতে আতশবাজির কোনো চিহ্নই থাকবে না। বিহারী ক্যাম্পের এই ঘটনার তদন্তের আগেই লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে।



প্রচার মাধ্যমগুলোর প্রধান সংবাদ এখন এটিই। টক শোগুলোর মুখ্য বিষয়ও এখন এই ১০ খুনের ঘটনা। চলবে আরও কিছুদিন। নেপথ্যের অনেক ঘটনাও বেরিয়ে আসবে হয় তো। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনায় একই পরিবারের যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সেই পরিবারের কান্না কি সহজে শেষ হবে? প্রতি মৃত্যুর পেছনে যে ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেই ২০ হাজার টাকা কি কোন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে? পবিত্র শবে বরাতের রাতে যে নৃসংশ ঘটনা ঘটে গেল তার শিকার বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী যারাই হন না কেন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।



আর তদন্তের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পুলিশের যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেয়া, আগুন নেভাতে বিলম্ব এমন সব ঘটনাই বিবেচনায় আনতে হবে। কিন্তু সঠিক বিচারের পথে না গিয়ে যদি এই লাশ নিয়ে রাজনীতি করা হয় তাহলে একে একে যে খুনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার নেপথ্য নায়করা পুর্ণ উদ্যমে অপরাধ ঘটিয়ে যাবে। আর এ থেকে এক সময় রেহাই পাবেন না লাশের রাজনীতির নায়করাও।



এদিকে রাজধানীর মিরপুরে বিহারী ক্যাম্পে অগ্নিকা- ও হতাহতের ঘটনায় এখন কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্যাম্প বাসিন্দাদের মাঝে। পুলিশ কেন উভয় পক্ষকে শান্ত না করে ক্যাম্প বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো? আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন প্রশাসনের গড়িমস্তি তিনদিন আগে থেকে কেন তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিলো? এ ধরণের বিভিন্ন প্রশ্ন তাদের মাঝে। তারা বলছেন, কোনো ভাবেই স্থানীয় এমপি আর পুলিশ এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।



ঘটনার পর বেলা দুইটার দিকে কথা হয় ক্যাম্পের বাসিন্দা আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে তাদের বিরোধ চলে আসছে। সর্বশেষ তিনদিন আগে কালাপানি ক্যাম্প এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের কলোনীর প্রায় ৪শ’ পরিবারের বসবাস। বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলতে গেলে স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সাফ জানিয়েছিলেন, ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ আর দেওয়া হবে না।



এছাড়া তাদের নেতা জালাল আহমেদ ভন্ডুসহ কয়েকজনের নামে মামলা করা হয়েছে। এমপির মদদেই এ মামলা করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।



তিনদিনের মাথায় শনিবার সকালে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ ঘটনাকে সম্পূর্ণ পরিকল্লিত উল্লেখ করে ক্যাম্পের বাসিন্দা ইউনুস খাঁন শীর্ষ নিউজকে বলেন, আতশবাজি শুধুমাত্র একটি স্যাম্পল। নেপথ্যে রয়েছে অন্য কাহিনী।



কী কাহিনী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা পরে বলবো। তিনি বলেন, ঘটনা সকাল ৬ টায়, বেলা ২ টার পরও আগুন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হলো না। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে না আসার কারণ কী ছিলো? ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বিহারী কলোনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি স্রেফ মিথ্যা।



ক্যাম্পের অপর বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ছিলো। কিন্তু তারা বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে।



পুলিশ এমপির লোকজনের পক্ষালম্বন করে আমাদের লোকজনকে গুলি করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা, সেন্টু ও শরিফুলের নেতৃত্বে কলোনীতে পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে তারা জানান।



আরেকজন ক্যাম্প বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমাদের কতজন সদস্য আহত আর তাদের (স্থানীয় এমপির সমর্থক) কতজন আহত খবর নিলেই জানা যাবে কারা হামলা চালিয়েছে। পুলিশ আর এমপির লোকেরা যৌথভাবে বিহারী ক্যাম্পে হামলা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।



কলোনীর বাসিন্দাদের মাঝে প্রশ্ন- কেন তিনদিন আগে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো? সবকিছুর পেছনে এমপি ইলিয়াছ মোল্লা নিজেই কলকাঠি নেড়েছেন। আর এতো বড় একটি ঘটনার পরও কেন ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লা এলাকায় আসেনি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।



সমগ্র ঘটনাই ছিল পরিকল্পিত এমনটা দাবি করে স্টান্ডেজ পাকিস্তানিজ জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটির (এসপিজিআরসি) নেতা আব্দুল জব্বার খাঁন শীর্ষ নিউজকে জানান, এ ঘটনার জন্য স্থানীয় এমপি ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লাই দায়ী। জায়গা দখলের জন্য তিনি এ ধরণের ষড়যন্ত্র করেছেন।



তিনি আরো বলেন, তার যদি জায়গা দখলের এতোই খায়েস হয়ে থাকে তবে আমাদেরকে জানালে এখান থেকে চলে যেতাম। কিন্তু এতোগুলো মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে মারা হলো কেন? তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইলিয়াছ মোল্লার ন্যাক্কারজনক এ হত্যাকা-ের বিচার দাবি করেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদেরও বিচার চেয়েছেন।



উল্লেখ্য, শনিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আতশবাজিকে কেন্দ্র করে মিরপুর কালশির ১২ নম্বর বিহারী ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই শিশুসহ ৯ জন মারা যায়। এছাড়া পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজাদ নামের আরো একজনের মৃত্যু হয়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৫৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ফায়ার ব্রীগেড যথাসময়েই এসেছিল, নতুবা সুধু তিনটা ঘর পুড়তনা, সমস্ত ক্যাম্প পুড়ে ছাই হয়ে যেত।


বিম্পি-জামাতিরা বিহারিদের সমর্থন করবেই, কারন রহিংগাদের মত এদেরকে দিয়েও অল্প পয়শায় সন্ত্রাসি বানানো যায়, বিনা পয়শায় গুন্ডামি হাংগামা করানো যায়।

বিহারিদের এখনো নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি বলেই জানি। ২০০৮ এ তাদেরকে ন্যাশানাল আইডির মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেয়ার অফার প্রত্যাক্ষান করেছিল। তাদের ক্যাম্পে এখনো পাকি সাইনবোর্ড, পাকি পতাকা উড়ে।
এদেশের বিহারিরা নাগরিক না হয়েও এদেশে যে অবাধ চলাচল ও কাজের সুবিধা পায়, অন্যকোন দেশে এটা কল্পনাও করা যায় না। অতচ তারা ৭১এ ব্যাপক গণহত্যায় জরিত ছিল।

উৎপাতকারি বিহারিদের দমন করার জন্য যথাযত ব্যাবস্থা নেয়া উচিত।
অগ্নিকান্ডে নিহতদের ঘটনায় তদন্ত করে ক্ষতিপুরন ও দোষিদের শাস্তি দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.