![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাসান হামিদ একজন তরুণ কবি, গবেষক ও কলামিস্ট। তাঁর জন্ম ১৯৮৮ সালের ২৪ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেন। বাংলাদেশের বাইরে তাঁর লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্টিকেল প্ল্যানেট, ফিলিপাইনের জেওডি ও বেলজিয়ামের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের জার্নালে। সাহিত্যে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার (২০১৮), ডায়লগইন গ্লোবাল বেঙ্গলি লিট ফেস্ট কবিতা পুরস্কার (২০২১) এবং পাললিক সৌরভ তরুণ লেখক সম্মাননা (২০২১)। প্রকাশিত বই চেহেল সেতুন, দাগাল, কালো অক্ষরের ক্লোরোফিল, অজস্র আলোর পেরেক এবং জলছাপ অন্তরজলে।
মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন,
“To enjoy life, one should give up the lure of life”
সত্যিকারের মানুষ এমনই হওয়া উচিত। আর সাধারণ মানুষের মাঝে থেকে উদার মানসিকতা নিয়ে জন-সাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে মহান হয়েছিলেন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণের প্রিয় নেতা, সাদা মনের মানুষ প্রয়াত জনাব আব্দুজ জহুর এমপি সাহেব। সারা জীবন নিজের কথা, পরিবারের কথা না ভেবে শুধু দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন তিনি।
নেতৃত্ব সম্পর্কে Dwight D. Eisenhower এর একটি লেখায় পড়েছিলাম,
“Leadership is the art of getting someone else to do something
you want done because he wants to do it.”
আর নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষের খুব কাছে থেকে তাদের সেবা, ন্যায্য দাবী পাইয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের খুব আপন হয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে সবার মধ্যমনি হয়ে এক বর্ণাঢ্য সেবকের জীবন অতিবাহিত করেছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ জনাব আব্দুজ জহুর । ক্ষমতা পেয়েছেন অনেকবার কিন্তু তা দ্বারা কখনো ক্ষমতাবান হয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার চিন্তা করেননি। খুব সাধারণ হয়ে অসাধারণ এক স্বচ্ছ রাজনৈতিক জীবন কাটিয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেতা । সম্পর্কে তিনি আমার নানাজান। আজ কিছু লিখবো তাঁকে নিয়ে।
কিছুদিন আগে একটা দরকারে আমি বেশ কয়েকবার আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম । আমার পরিচয় জেনে একটা কথা উনি কয়েকবার বলেছেন, “আব্দুজ জহুর সাহেব অনেক সৎ ছিলেন”। আমার গর্ব হয়েছিলো । আর ভাবছিলাম নানাজান Professor Warren G. Bennis এর সেই কথাটি বোধহয় লালন করেছিলেন,
“Leaders are people who do the right thing;
managers are people who do things right.”
নিজের যতটুকু ছিল তা দিয়ে সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধ করেছেন,প্রতিবাদ করেছেন প্রয়াত জনাব আব্দুজ জহুর সাহেব । তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। একজন সভাপতি হিসাবে তাঁর কোন কালিমা ছিলোনা, অবহেলা ছিলনা দলের প্রতি বা দেশের প্রতি। সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন দেশ সেবায়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে তাঁর অশেষ ভুমিকা লক্ষ করা যায়, তিনি ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। মাতৃভাষার প্রতি টান থেকেই তিনি ছাত্রজীবনেই ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৫ সালে ৯২(ক) ধারা জারী হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং কারান্তরালে যান। কিছুদিন কারাভোগ করে বের হয়ে এসে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি এই দলের সাথেই ছিলেন,সময়ে অসময়ে তিনি দলের জন্য,দেশের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন,হাল ছাড়েননি।
১৯৭০ সালে তিনি সুনামগঞ্জ উত্তর এবং তাহিরপুর থেকে এমপিএ নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সক্রিয় ভাবে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। দেশ স্বাদীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি একই আসন থেকে আবার দ্বিতীয়বারের মতো এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের হয় ও তিনি কারাগারে অন্তরীন হন। এ মামলা দু টির মধ্যে বিচারে একটিতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন ও অন্যটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একজন সৎ নির্ভীক নেতা হিসাবে আবার তিনি সবার মাঝে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সাধারণ মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। মানুষের ভালবাসা আস্থা অর্জন করতে থাকেন। সবার শ্রদ্ধাভাজন এই নির্লোভ ব্যক্তিটি ১৯৯১ সালে তৃতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সুনামগঞ্জের মানুষের কান্ডারী হয়ে কাজ করে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন ।
কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে সুনামগঞ্জ জেলা বাসীর বহুল প্রতিক্ষিত সুনামগঞ্জ সুরমা সেতুর নামকরণ নিয়ে, চলছে নানা জল্পনা কল্পনা । বেশ কিছু পত্রিকায় ফলাও করে আসছে এ বিষয়ের খবর । মানুষ চায় তাদের স্বপ্নের সেতুর নামকরণ একজন সৎ নির্ভীক নেতা হিসাবে প্রয়াত জনাব আব্দুজ জহুর এমপি সাহেবের নামে হোক । সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ এই সত্যের পরম পতাকাবাহী নেতার নাম আজও শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করে । মানুষের এই স্বপ্ন যেন বাস্তবতার সমান্তরাল হয়, এই সেতু যেন “আব্দুজ জহুর সেতু” নামে করা হয় ।
সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর “সুপ্রভাত” কবিতার সেই লাইনগুলো--
“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
ভয় নাই, ওরে ভয় নাই-
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৭
জাকারিয়া জামান তানভীর বলেছেন: সাধারণ মানুষের জন্য তার ভালোবাসার দরজা ছিল খোলা। ভাটি অঞ্চলের অবহেলিত মানুষের ভাগ্য ফেরানোই ছিল তার রাজনৈতিক দর্শন। সময় আজ উনাকে আমাদের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষের মন থেকে তার স্মৃতিগুলি সরাতে পারেনি। এখনও সুরমার দুই পারের মানুষের মনে গেঁথে আছে তার সৎ কর্ম।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দাবি করে তার নামে একটি সেতুর নামকরণ করতে হচ্ছে। অথচ এটা তার প্রাপ্য। একজন সৎ, নির্লোভ রাজনীতিবিদ হিসাবে আমরা তার জীবদ্দশায় তাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারেনি। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত এসব চাইতেনও না। আজ তিনি আমাদের থেকে অনেক দূরে। আমাদের সামনে একটি সুযোগ এসেছে তার কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর। আমাদের উচিত এই সুযোগটি গ্রহন করা। তার কর্ম ও রাজনৈতিক দর্শনকে বাঁচিয়ে রাখতে সুরমা নদীর উপর নির্মীয়মাণ সেতুর নামটি যেন আব্দুজ জহুর সাহেবের নামে নামকরণ করা হয়।
এতে ভবিষ্যত তরুণ রাজনীতিবিদেরা লোভ লালসার উর্ধে থেকে মরহুম আব্দুজ জহুর সাহেবের মত জনসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে উৎসাহিত বোধ করবেন।
সময়োপযোগী এই পোস্ট দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।