নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংগীত মানুষকে পরম সূখী করতে পারে

হাসানমনজু

পৃথিবীতে ভাল গান শুনার জন্য বেঁচে আছি।স্রষ্টা যদি কান আর চোখ এ দুটির যে কনো এক জোড়া ফেরত চায় আমি চোখ জোড়া ফেরত দেবো। হাসান মাহমুদ মনজু

হাসানমনজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাগুনের দিন : হাসান মনজু

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫

নীলার নীচের ঠোঁটে উপরের দাঁত চেপে বসেছে। চোখের কোন মূক্তো। কান্না সংবরন করার ব্যর্থ প্রয়াস। কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলায় নিজের উপর রাগ হলো মারুফের তারপর অনেকটা স্বগোতক্তির স্বরে অপরাধী গলায় বললো,
আমি কিন্তু অতোটা ভেবে বলিনি। কথাটা একটু বেশী ভেবে নেয়া হলো।
কান্না ভেজা কন্ঠ নীলার,
সব সময় মানুষকে আঘাৎ দিয়ে খুব আনন্দ হয় আপনার না?
হেসে বললো মারুফ,
এরকম ফিলমী ষ্টাইলে আর কতক্ষন চলবে আপনি তুমি?
চলো রোদে দাঁড়িয়ে না থেকে সামনে হাঁটা যাক। সুবোধ বালিকার মত কথা শুনলো নীলা। হাঁটা শুরু করে বললো।
এবার হাতটা ছাড়ুন।
এতক্ষন হাত ধরে আছে মারুফের খেয়াল ছিলোনা। নীলার কথা শুনে লজ্জা পেল, তবে মূখে বললো,
উঁহু! ছাড়ুন বললো ছাড়ছিনা, বল ছাড়ো।
হঠাৎ চোখে চোখে তাকিয়ে এক অদ্ভুত মায়াময় চাহনীতে মারুফের অন্তর ভরিয়ে দিল নীলা। ফিসফিসে গলায় বললো,
ছাড়োনা কেউ দেখে ফেলবে যে।
কথাটা বলার ভঙ্গিমায় এবং স্বরে এমন আবেস ছিলো, শুনে মারুফের বুকের মধ্যে অজস্র ঝরনা ধারা বয়ে গেল।
মারুফের মনে হলো, এ হাত তার হাত থেকে কেউ কোন দিন ছাড়িয়ে নিতে পারবেনা। এ হাত সে ছুঁয়ে থাকবে জন্ম জন্মান্তর। কিছুদূর হাঁটতেই ইট বিছানো রাস্তা শেষ হয়ে গেল। পাহাড়ী ধুলোমাখা পথে আরো কিছুদূর এগিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে টিলার উপর উঁচু একটা জায়গায় উঠে এলো তারা। এখানে আগেও দু’তিন বার এসেছে মারুফ। কিন্তু আজ জায়গাটাকে নূতন মনে হলো। এখান থেকে পাহাড়ী পথটা বাঁক নিয়ে চলে গেছে লেকের ধারে। লেকের স্বচ্ছ স্থির নীল রঙের পানিতে গুলছে মধ্য দিনের সূর্য। বাতাসে একটা ছন্নছাড়া ভাব। বাউলের মত নেচে উঠছে প্রান্তরের যত্রতত্র।আকাশের নীল ঝরছে শুকনো গুঁড়োর মত। সামনে অনেক দূর পানির বিস্তার। পেছনে সারি সারি ঝাঁকড়া মাথা বহেরা, হরিতকি, আর বিহোলা একেকটা বিশাল বিশাল গাছ। এক গাছ থেকে আরেক গাছে বাচ্ছা বুকে নিয়ে পার হয়ে খেলা করছে এক ঝাঁক বানর। লেকের পানিতে ঝাঁক ঝাঁক অথিতি পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে। এমন একটা পরিবেশে এসে দু’ জনেই ভাবাবেগে তন্ময়। সহসা কারো মূখে কোন কথা জোগালো না। অনেকক্ষন পর মারুফ মৌনতা ভাংলো।
সত্যি আজ তোমাকে নীল শাড়ীতে নীলার মতই লাগছে।নীলা একটু ভারী গলায় বললো,
কিন্তু জানতো, নীলা সবার সয়না,
জানি কিন্তু যাদের সয় তাদের জীবন ভরিয়ে দেয়।
এমনি এক দ্বিপ্রহরে দেবদাসের ভাগ্য নির্ধারন করেছিলেন শরৎ বাবু। আর সৃষ্টি কর্তা বুঝি আজ একটু মুচকি হেসে ভাগ্য নির্ধারন করলেন মারুফের।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল দশটায় নববর্ষ প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন করেছে রাঙামাটী সরকারী কলজে ছাত্র সংসদ।বিশাল ষ্টেজ করা হয়েছে। অনুষ্টান হবে দুই পর্বে। প্রথম পর্বে স্থানীয় এবং কলেজের শিল্পীরা আর দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা অংশ নেবেন। নীলা নজরুল গীতি গাইবে। মিতু গাইবে লালন গীতি। মারুফ অবৃত্তি করবে নবারুন ভট্টচার্য্যরে “এই মৃত্যু উপত্যাকা আমার দেশ না” আর নির্মলেন্দুগুনের ” হুলিয়া ” কাঞ্চন আবৃত্তি করবে শামসুর রাহমানের ”কালো মেয়ের জন্য পংতি মালা”। নীলা খুব ধরেছে যে মারুফকেও গাইতে হবে। স্কুলের ফাংশানে দু’ একবার গেয়েছিল ও। তার পর অনেক দিন আর কোন রেওয়াজ করা হয়নি। গান খুব ভালবাসলেও মারুফ এখন অন্যদশজন বাথরুম সিঙ্গারদেরই দলে।
ঠিক সাড়ে দশটায় অনুষ্টান শুরু হয়েছিলো। অনেক ভাল ভাল শিল্পীরা তাদের কন্ঠ শৈলী দিয়ে শ্রোতাদের নিবিষ্ট করে রেখেছেন। প্রথম পর্বের শেষ পার্যায়ে নীলার নাম ঘোষানা হলো মাইক্রোফোন। প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছে। তাদের করতালীতে বিষ্ফোরিত হলো যেন চারদিক। নীলার কন্ঠস্বর শুনে কোনদিন মারুফের মনে হয়নি এই মেয়ে অন্ততঃ কোন গানরে সভায় গাইতে পারে। কিন্তু মারুফের অবিশ্বাসী মনকে সর্ম্পূনই অন্য এক ভাব গম্ভীর সুরের জগতে পৌঁছে দিল নীলার কন্ঠ। একটি একটি স্বরের নিখুঁত উচ্চারনে প্রথমে তান করলো নীলা। তারপর বানীতে এলো।
হাড়ানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
কুড়াই ঝড়া ফুল একেলা আমি
শুধু হারমোনিয়াম দিয়েই প্রিল্যূড বাজালো নীলা। তবুও গানটা অসাধারন হলো। প্রচুর করতালীর মধ্যে গান শেষ হলো। নীল কতদিন সাধনা করেছে কে জানে। আজই প্রথম গায়ীকা হিসেবে স্বীকৃতি পেলো বুঝি। গান শেষ করে দর্শকদের সারীতে এসে মারুফেল পাশে বসলো নীলা। বসে জিজ্ঞাসা করল কেমন হয়েছে বলো?
অসাধারন! তুমি যে এত সূন্দর গাইতে পার বলোনিতো?
না না এয়ার্কি করোনা প্লিজ, সত্যি সত্যি বলো
নীলার কন্ঠে অনুনয়,
সত্যিই বলছি। আমার বলার অপেক্ষা রাখে? এতগুলো অডিয়েন্সের “ওয়ান মোর” শোনানি?
ওখান থেকে কিছু শোনা যায়না।
এবার বলো এই ডিভোশনাল গানটা বেঁছে নিলে কেন।
কি জানি। আমার গাইতে এবং শুনতে সেড মুডের গান গুলোই ভাল লাগে বেশী।
সত্যি কন্ঠ শুনে তোমাকে খুব দূঃখী দূঃখী মনে হচ্ছিল।
সত্যি তো আমি দূঃখী।
কেন তোমার আবার দূঃখ কিসের?
বলব একদিন সময় করে।
না এখনি বল। আমার না শোনা পর্যন্ত অস্বস্থি হবে।
এমন সময় অনুষ্টানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। মঞ্চে এলেন ফরিদা পারভিন। প্রচুর করতালী পড়লো। দর্শকদরে মধ্য থেকে বিভিন্ন গানের অনুরোধ আসছে। মারুফ চিৎকার করে বললো।" পাবে সামান্যে কি তার দেখা"
গান ধরলেন তিনি, কি সূন্দর সাধনা করা গলা। আর কি চমৎকার গায়কী। নীলার পাশে বসেছে কাঞ্চন,হারুন । কাঞ্চনের চোখে জল দেখা গেল। এমনি তার স্বভাব। ভাল গান কিংবা কবতিা লাইভ শুনলে অশ্র সাংবরন করতে পারেনা সে। উপস্থিত এত গুলো দর্শক যেন মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছে। কোথাও কোন রা-শব্দ নেই। শিল্পী নিজেও যেন আবিষ্ট হয়ে গাইছেন।
স্রষ্টা কখনও কখনও যেমন সাধকদের উপর ভর করেন। তেমনি আজ যেন গান ভর করেছে শিল্পীর উপর। গান শেষ হতেই চারধার থেকে রব উঠলো। ওয়ান মোর! ওয়ান মোর॥
শিল্পী বিনীত ভাবে বললেন,
না, আজ আর সম্ভব নয়। কারন আপনারা সবাইতো জানেন একজন কত রড় মাপের শিল্পী অপেক্ষা করছেন আপনাদের গান শোনাবেন বলে। তারপর বললেন, আমি সুবীর নন্দীকে অনুরোধ জানাচ্ছি মঞ্চে আসার জন্য। প্রচন্ড শব্দে হাজার হাজার করতালী যেন বিস্ফোরিত হলো। হাসি মূখে মঞ্চে প্রবেশ করলেন শিল্পী। দর্শদের অভিনন্দনের জবাব দিলেন। তার পর হারমোনিয়াম নিয়ে খুব নীচু স্বরে স্বরগম শুরু করলেন। কিছুক্ষন আরোহী তারপর নামলেন অবরোহীতে। সা ধ নি মগ মরে সা........আহা! একেই বলে সাধনা। মাধুর্য আর ঔদার্য স্বাতন্ত্র গায়গীর সাথে মিশে শিল্পীকে পৌঁছে দিয়েছে অনেক উঁচু একটা স্থরে। একে একে শিল্পী সাবলীল মুন্সিয়ানায় গেয়ে গেলেন, “আমার এ দু’টি চোখ,” “পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই,” “পাহাড়ের কান্ন দেখে” গলার মিষ্টত্বে, গায়কীর সাতন্ত্রে আর রাগের আরোহী অবরোহীর যাদুতে শোতারা যেন মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লেন, আকাশ থেকে গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে যেন শিল্পী আর শোতাদের গায়ে মাথায় আদর বুলিয়ে দিতে লাগল। আহা এমন নির্বিবাদ, স্বার্থহীন, পবিত্র, পুন্য আনন্দ পৃথিবীতে আর কি হতে পারে। ভাল গান শোনা এবং বুঝা আর তার তারিফ করার মত আনন্দ? যারা এই নির্মল আনন্দের কথা জানেন না তাদের কাছে পৃথিবীর একটা মহার্য বিষয় অনুন্মেচিতই থেকে যাবে চিরদিন।
অনুষ্টান শেষ হতেই নীলা নীচু স্বরে কানের কাছে মূখ এনে বললো,
সময় থাকলে চলো আজ তোমাকে একটা নূতন জায়গায় নিয়ে যাবো।
বলে নীলা মারুফের মূখের দিকে চেয়ে রইল সম্মতির আশায়।
কোথায়?
আহা কোন জরুরী কাজ না থাকলে চলোইনা, গেলেই দেখতে পাবে।
ঠিক আছে চলো। তুমি সাথে থাকলে নরক যাত্রাতেও আমার অরুচী নেই।
ঠিক আছে দেখাযাবে সময়মত।
ক্যাম্পাসের বাইরে এসে একটু দাঁড়াতেই খালি টেক্সী পেলো ওরা। উঠে বসে নীলা বললো,
কই এসো।
নীলা এমন ভাবে মূখে হাসি ধরে রাখলো, মারুফের মনে হলো, যেন ওর ইতস্তত ভাব দেখে নীলা খুব মজা পাচ্ছে। নীলা সীটের মাঝ খান টায় এমন ভাবে হাত পা ছড়িয়ে বসেছে, মারুফ এক পাশে উঠে বসতেই নীলার শরীরের সাথে স্পর্শ হলো। মারুফ বল্লো,
“একটু সরে বসো”। এমন সময় টেক্সী চলতে শুরু করলো।
কেন অস্বস্তি হচ্ছে? আমি ইচ্ছে করেই বসেছি এভাবে। উঠার আগে বাইরে কিছু উৎসুক দৃষ্টি লক্ষ করোনি? আচ্ছা তোমরা পূরুষরা এমন কেন?
পূরুষদের দোষ দিচ্ছ কেন? ওখানে তো মেয়েদের উৎসুক দৃষ্টিও আমি দেখেছি।
তবুও মেয়েরা একদিক থেকে স্বস্তিকর।
কিভাবে?
কারন মেয়েদের দৃষ্টি পূরুষদের মত লোভাতুর নয়। মেয়েদের দৃষ্টিতে থাকে শুধু ঈর্শা বা হিংসা
অহ! স্বজাতি বলে একে তুমি দোষ হিসেবে নিচ্ছনা।
না, তা নয়। হিংসা অপরের কোন ক্ষতি করতে পারেনা। হিংসুক মানুষ নিজেই মনে মনে জ্বলে পুড়ে মরে। আর লোভ হচ্ছে বৈধ ভাবে হোক, অবৈধ ভাবে হোক কূট কৌশলে হোক আর জোর পূর্বকই হোক দখলদারীত্ব নেওয়ার অন্যায় আকাংখ্যা। তার পর ভোগ করে বাসি করে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার বাসনা। বাববা এই বয়সেই পূরুষ সম্পর্কে এত নেতীবাচক ধারনা।
ধারনা হবে কেন? বাস্তব অভিজ্ঞতা। সিমা, ইয়াসমীন, বুশরা, শেহনাজ এরা কি নাটক সিনেমার চরিত্র না কল্প কাহিনী। নারীর লোভের শিকার হয়ে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ক’জন পূরুষ আত্নাহুতি দিয়েছে বালো?
টেক্সী, সিও, অফিস, সার্কিট হাইজ ছাড়িয়ে ভেদভেদী এসে পরলো। ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করলো,
স্যার কোন দিকে যাবো?
নীলা ঝটপট বললো,
মনোঘর।
টেক্সী মনো ঘরের উদ্দেশ্যে পাহাড়ী পথ ধরলো। রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল, জায়গায় জায়গায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানা খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ঝাকি খেতে খেতে মন্থর গতিতে এগুচ্ছে টেক্সি। মারুফকে গম্ভীর দেখে নীলা বললো,
কি চুপচাপ কেন? কি ভাবছো?
ভাবছি তসলিমা নাসরিনের সাথে যোগাযোগ হলো কি ভাবে?
থাকলে দোষ কি? আমরা আমাদের অধিকারের কথা বললে তোমরা নানা রকম অযৌক্তিক দোষ চাপাতে চাও আমাদের মাথায়। মারুফ নিরুচ্চারে বিরবির করল,
বাব্বা! এ মেয়ে দেখছি নারীবাদী উপাদানে ভরপুর।
কি বললে?
না কিছু না।
নীলা চেহারায় কাঠিন্য এনে কপট রাগে চোখ পাকালো,
কিছু না মানে, আমি স্পষ্ট শুনলাম আমাকে নারীবাদী বললে।
বললেই বা তাতে দোষের কি? নারীরাতো নারীবাদী হবেই।
শোন তোমরা কিন্তু নারীবাদী কথাটাকে পূরুষ বিদ্ধেষী হিসেবে মিন করো। এটা মোটেই ঠিক নয় কিন্তু। আমি তসলিমা আপার যাবনা কেন যাব। “লজ্জা” “নির্বাচিত কলাম”সম্প্রতি “ক” ও পড়েছি।
বাঃ খুব আপন কেউ মনে হচ্ছে?
মানে ?
না যেভাবে “আপা” সম্ভোধন করলে মনে হলো আপন কেউ।
আপন নয়? উনি নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আজ দেশান্তরী
শোন ওনার লেখা গুলো। আমিও পড়েছি উনি নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এতটাই পূরুষ বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিলেন আর র্ধমান্ধতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে এতটাই ধর্মহীনতায় সোচ্ছার হয়েছিলেন যার কারনে মোল্লারা সাংঘাতিক রকম ক্ষেপে উঠে ছিলেন ওনার উপর।
তবুও উনি মিথ্যেতো কিছু বলেননি। হয়তো ওনার প্রকাশ ভঙ্গিটা একটু আপত্তিকর ছিল। শোন সমজের সুবিধা ভোগী মানুষেরা কখনো পবিবর্তন চায় না। চায়না ভাগের উপর অন্য সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। তাতে তাদের অন্যায্য ভাগে টান পরবে। ছেলে আর মেয়ের প্রতি বৈষম্যটা দেখো। পৈত্রিক সম্পত্তি ছেলে যা পাবে মেয়ে পাবে তার অর্ধেক না হয় কিছুই পাবেনা এর করন কি?
টেক্সী মনোঘর এর নীচের রাস্তায় এসে থামলো। এখান থেকে হেঁটে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে হবে। সেখানেই বিশাল কম্পে­ক্স। দ্রুত হাতে নীলা ভাড়া মিটাল। মারুফ আপত্তি জানাতে যাচ্ছিল। নীলা হাত উঁচিয়ে নিবৃত্ত করল। শান বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে ওরা পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে পা বাড়ালো।
নীলা বললো,
কই প্রশ্নের জবাব দাও?
এ প্রশ্নের জনাব বহুবার বহু ইসলামিক চিন্তাবিদ রেডিও, টেলিভিশনে এবং খবরের কাগজে দিয়েছেন। তুমি শুনোনি?
এবার তুমি ইসলামের শরনাপন্ন হলে। আরে বাবা অমিত সব ধর্মের কথাই বলছি। হিন্দু ধর্মে দেখো, কি পিতার বলো কি স্বামীর বলো নারীরা কারু সম্পদেরই অধিকারী হতে পারেনা।
এটা অন্যায় নয়?
মারুফ যুক্তিতে বুঝাবার ডংএ বলল,
শোন মেদেরতো বিয়ের আগ পর্যন্ত বাবাই ভরন পোষন করেন তার পর বিয়ের পর স্বামীর দায়িত্ব। তাদের সম্পদের দরকার কি? নীলা এক আশ্চার্য্য অবিশ্বাস ভরা অবাক দৃষ্টিতে মারুফের চোখে চোখে চেয়ে বলল,
তুমি এতটা সহজ ভাবে বলতে পারল ?
তারপর অহ! একটা স্পষ্ট আশা ভঙ্গের শব্দ করে বললো,
আমার ই ভূল, তুমিও তো আবহমান কালের একজন পুরুষ জাতিরই প্রতিনিধি। তোমরা এখনো রক্তে বহন করো গুহামানবরে উত্তরাধীকার। স্ত্রীকে শয্যাসঙ্গিনী ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনা। স্ত্রীর কাছে থেকে কেবলই আশা করো বশ্যতা, মুগ্ধতা, প্রত্যুত্তর হীন নতশীর দাসত্ব একবারও ভাবলেনা যদি কোন কারনে সংসার ভেঙ্গে যায় কিংবা স্বামী মারা যায় আর বাপের বাড়ীতে বাবাও মারা যায়? তখন ভাই আর ভারীর দাসী বৃত্তি ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে? জানো কাল একটা উপন্যাসে পড়েছি। ভাগ্য বানের নাকি স্ত্রী মারা যায়, কী সাংঘাতিক সংলাপ। ভাবতে পারো কী জঘন্য দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এ ধারনা প্রতিষ্টা পেতে চলেছে।
মারুফ হালকা রসিকতায় বলল,
ওটা হয়তো কোন মারকুটে স্ত্রী কতৃক নির্যাতিত
স্বামী স্ত্রী বিয়োগের পর প্রচার করেছিলেন।
বুঝলাম সেটা না হয় একজন নির্যাতিতর উপলদ্ধি।
কিন্তু এভাবে ঢালাও ভাবে বলতে তোমাদের লাজ্জা করেনা?
এখানে কি আমাকে আজ ঝগড়া করতেই নিয়ে এসেছো?
তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমিই যেন একমাত্র তাবত পূরুষ জাতির প্রতিনিধিত্ব করছি।
অবশ্যই প্রতিটি পূরুষ কিংবা নারীই তাদের স্ব স্ব জাতির প্রতিনিধি।
মারুফ হতাস কন্ঠে বলল,
নারী অধিকার নিয়ে তুমি কতটুকু কি ভাবো? আমাদের দেশে এখনো সেই চেতনাই জাগেনি মেয়েদের মধ্যে যে, পারিবারিক অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়। সতীত্ব নামের পূরুষদের মনগড়া এক নিগড় দিয়ে আজো তোমাদের বেঁধে রেখেছে প্রাগৈতিহাসিক যুগে। কিন্তু এ কালের মেয়েদের বোঝা উচিৎ যে, এই নিষ্টুর সমাজে সতীত্বের এক কানাকড়ি মূল্য নেই। একজন তসলিমা নাসরিন এক কোটি বই লিখলেও কোন লাভ হবেনা যদিনা তোমরা সবাই তোমাদের ভালটা বুঝতে পেরে একসাথে জেগে না ওঠো। বেগম রোকেয়া সেই আঠারোশ' সাতানব্বই সালেই এক নারী সম্মেলনে বলেছিলেন, ভগিনী গন আপনারা আপনাদের নাক, কান, হাতে, গলায় যে অলংকার পরে নিজেদের শোভা বর্ধন করছেন সেগুলো আসলে অলংকার নয়, সেগুলো হচ্ছে পূরুষ কতৃক সৃষ্ট শৃঙ্খল। অনেক কথা বলার আছে কিন্তু আর বেশী বললে মোল্লাারা আমাকে মুরতাদ ঘোষনা করবে। আপনারা বুঝে নেন্, ধর্ম এবং সমাজের আইন সৃষ্টি করেছেন পূরুষরা সুতরাং সেটা তারা তাদের সুবিধা মতোই করে নিয়েছেন। এসব এক পেশে আইনের বিরুদ্ধে যতদিন তোমরা সোচ্ছার না হচ্ছো, ততদিন তোমাদের মূক্তি নেই।
আমাদের আসল সমস্যটা কি জানো?
আমরা সব কিছু শুনি, বুঝি উপলদ্ধিও করি। কিন্তু সমস্যার মূখোমূখী হলে পাশ কাটিয়ে যাই। সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ নিজেকে সমস্যায় জড়াতে চায় না।
হঠাৎ মারুফ খেয়াল করল নীলা মস্ত্রমূগ্ধের মত তার মূখের দিকে তাকিয়ে কথা শুনছে। চোখের তারায় অপার বিস্ময়।
মারুফ স্মীত হেঁসে বলল,
“কি” হলো?
নারী অধিকার নিয়ে তুমি এভাবে চিন্তা করো?
বিস্ময় মেশানো কন্ঠে নীলা বলল
“তোমার কি মনে হয়?”
তবে যে তুমি সম্পদ বন্টন নিয়ে এমন উদ্ভট মন্তব্য করলে ?
মারুফ হেসে বলল,
সেটা তোমাকে ক্ষেপাবার জন্য। আসলে তুমি দেখো, একই মা বাবার সন্তান, একজন ছেলে একজন মেয়ে। মেয়েদের শারীরিক শক্তি কিছুটা কম হতে পারে ছেলেদের তুলনায়। কিন্তু এখন বহুমূখী জীবিকায় শারীরীক শক্তির প্রশ্ন অবান্তর। অথচ দেখো কি সাংঘাতিক বৈষম্য মূলক জঘন্য আইন! তুমি জানো বাংলাদেশের মায়েরা এখনো
মাছ মাংশের বড় টুকরাটা ছেলের পাতে দেয়।
নীলা বললঃ
আর বাংলাদেশের দোষ দিচ্ছো কেন? আমেরিকাকে দেখোনা। যারা সারা বিশ্বে নিজেদের গনতন্ত্র, প্রগতি আর নারী অধিকারের ধ্বজাধারী, সোল এজেন্ট মনে করে তাদের দশেে কোনোদনি নারী রাষ্ট্রপ্রধান দখেছেো ? কোনোদনি দখেবওেনা ।
বিরক্ত কন্ঠে নীলা বললঃ
ওদের কথা বাদ দাও। আর ভাল কোন উদাহরন পেলে না। ওরা হচ্ছে জলে না নেমে যারা সাঁতার সর্ম্পকে জ্ঞান দেয় তাদরে দলে ।
মারুফকে অনেক্ষন চুপচাপ দেখে নীলা বলল,
কি ভাবছো?
মারুফ আপন ভাবনায় আনমনা ছিল একটু দেরীতে বলল,
হুঁহ?
কি ভাবছো?
কিছু নাতো।
আমি একটু বেশী কথা বলি তাই না?
মারুফ সত্য কথাটা বলতে চেয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, না না মোটেই নয়। এটা অবার কে বলল, তোমাকে?
মোটেই শব্দটা বলার ভঙ্গিতে যে হালকা খোঁচা টুকু ছিল সেটা কান এড়ালো না শমীর। একটু যেন লজ্জা পেয়ে লাজুক নীলা সংকুচিত গলায় বলল,
অ্যাম আই এ বোর?
মারুফ নীলার কথায় প্রথমে অবাক হয়ে পরে হেসে বলল,
নো ইউ আর ভেরী ইন্টারেষ্টিং।
রিয়েলী?
পাগলী
এই পাগলী শব্দটাই বুঝি আর এক পা কাছে এনে দিল দু’জনকে। এই পাগল শব্দটার অন্তঃনির্হীত অর্থ যাই হোক, ভালবেসে যখন কেউ আপন জনকে পাগল বলে ডাকে তখন ভাললাগায় সেই পাগলের পৃথিবী অন্যরকম হয়ে যায়।
আমি তোমার সম্পর্কে অনেক কথাই শুনেছি। তুমি নাকি খুবই সাহসী যে কেথাও অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়ও, তার প্রতিবাদ করো। মনে সাহস নিয়ে চলা ভাল, এ পৃথিবীটা ভীতুদের জন্য নয় তবে আমাদের দেশের আর্তসামাজিক অবস্থা এখনো এতোটা উন্নত হয়ে উঠেনি। মেয়েরা এখনো সন্ধ্যার পর বাইরে একাএকা
চলেফেরা করতে পারেনা।
আমার সম্পর্কে এত কিছু বাড়িয়ে তোমাকে কে বলেছে?
আমাদের পাড়ার এক ছোট ভাই।
কি বলেছে।
চিটাগাং যাওয়ার পথে ড্রাইভার থেকে চাঁদা নিচ্ছিল বলে তুমি পুলিশ সার্জেন্ট কে চ্যালেঞ্জ করেছিলে । সেই বাসে ও ছিল।
ও নিশ্চই বাড়িয়ে বলেছে।
মোটেই বাড়িয়ে বলেনি। শুনে আমার খুব ভাল লেগেছে। ইউ আর রিয়েলি কারেজিয়াস এন্ড বিউটিফুল ইন ইউর য়োন ওয়ে। ইউ হ্যাভ এ রেয়ার পারসোনালিটি।
নীলা হেসে বললো,
সেটা কি রকম?
পারসোনালিটি মিনস ষ্ট্রং লাইকস এন্ড ডিজলাইকস্।
সেদিন ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টি এসে দু’জনকে ভিজিয়ে একসা করলো। মেঘের ছায়ার বৃষ্টির ঘোরে চারদিকটা ছাইরঙ ধরলো। ভেজা জামা তার উপর ঠান্ডা বাতাসের তোড় নীলার কাঁপন ধরিয়ে দিলো। টেক্সীতে মারুফের খুব ঘনিন্ট হয়ে বসে দু’বার হাঁচি
চেপে বলালো,
তুমি তো আমার অনেক স্তুতি গাইলে, ডু ইউ নো সামথিং এবাউট ইউর সেল্ফ?
কি বলোত ?
ইউ আর এ ভেরী বিউটিফুল এন্ড হেন্ড সাম ম্যান বলে হি হি করে হাসল নীলা তারপর হাসি থামিয়ে গম্ভির স্বরে বলল,
আই এডোর ইউ।
টেক্সিী নীলাদের গেটের কাছে পৌঁছার আগে
বিকেল বেলাতেই রাতের আধার নেমে এলো।
গ্রীষ্মের দাপটে বর্ষা কাঁদলো। শরৎ এলো কাঁশ ফুলের উপহার নিয়ে। বর্ষার অভিমান ভাঙ্গাতে সময়ের গায়ে হেমন্ত পড়ালো শিশিরের গয়না। শীত ঢেকে দিলো সেই গহনা কুয়াশার আঁচলে। বসন্তের দক্ষিনা বাতাস ফুঁ মেরে উড়িয়ে দিলো আবার সেই আঁচল। গ্রীষ্ম ফিরে আসে বার বার আর জীবনের সময় নদীর স্রোতের মতো বুঝি একমূখী চলেই যায়। শুধু এই আবর্তনের স্বাক্ষী হয়ে গ্রীষ্মের দূরন্ত দ্বিপ্রহরে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো মারুফ আর নীলা। ফিজিক্সের অংক, গতির সূত্র, ই সমান এমসি স্কোয়ার আর কেমিষ্ট্রার সমীকরন সব তালগোলে পাকিয়ে তলিয়ে যেতো তাদের ভাবনার কাছে। দুই উন্মাদ সবার অলক্ষে অভিসারে বেরিয়ে পরতো জ্ঞানের পাঠশালা থেকে পালিয়ে জীবনের পাঠশালায়। এমনি ভাবে গড়িয়ে গেলো দু’টো বছর। সময় তাদের ঘনিষ্টতা বাড়িয়ে দিলো আরো অনেক। সম্ভোধনটা পৌঁছালো তুই তুকারিতে। আগামী বাইশে মার্চ থেকে এইচ, এস,সি ফাইনাল পরীক্ষা। রুটিন দিয়েছে গতকাল। ডিগ্রী পরীক্ষার জন্য কলেজ চব্বিশ দিনের ছুঠি। নীলার সাথে দেখা হচ্ছেনা মারুফের আজ প্রায় পনেরো ঘোল দিন। মারুফের এখন প্রাত্যহিক রুটিন পড়া, জগিং, হালকা ব্যায়াম, আর ঘুম । দূপুর বেলা খাওয়া দাওয়া সেরে মারুফ ফিজিস্কের বই খুলে বসেছে এমনি সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে নীলা এলো। সঙ্গে তার ছোট বোন নীশু। ক্লাস নাইনে পড়ে। নীলার মতোই সূন্দরী। তবে সৌর্ন্দয্যরে ধারটা এত বেশী যে সেখানে লাবন্য প্রলেপ বুলাতে পারেনি। দুকানে দু’টো সুতো, নাকে একটা বেল কাঁটা। পরিপূর্ন নারী হয়ে ওঠার আয়োজন। দু’বোনের কথা বার্তা এতো স্বচ্ছন্দ যে, মারুফের মনে হলো মারুফ আর নীলার সম্পর্কে আদ্যোপান্ত কিছুই জানতে বাকী নেই এই মেয়ের । মেয়েরাই বুঝি পারে শুধু দু’বোনের মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়তে। নীলা নীশুর সামনেই বললঃ
“মারুফ তোকে একটা জরুরী কথা বলতে এসেছি”।
মারুফ রসিকতা করে বললো,
“ধানাই পানাই রেখে বলে ফেল ঝটপট”।
“তোকে বলতে ভয় হচ্ছেরে”
নীলার গলায় বিষন্নতা।
আচ্ছা বাবা বলিস না, ভয়ের কথা শোনতে আমরও ভয় করে।
নারে, ঠাট্ট নয়। তোকে যে কি ভাবে বলি
“রিয়েলী ? বেশ ডিভোশনাল মূড পাচ্ছিতো গলায়। এক কাজ করনা..
হঠাৎ নীলার মূখের উপর দৃষ্টি পরতে আরষ্ট হয়ে গেলো মারুফ। বুকের সব রক্ত যেন জমাট বেঁধে গেলো। পৃথিবীর তাবৎ দূঃখ যেন এসে ভর করেছে নীলার মূখে। দু’ চোখে জল গড়াচ্ছে অবিরত। এমন দৃশ্যের উপর বেশীক্ষন চোখ রাখতে পারলোনা মারুফ। নীলা কান্না ভজো গলায় বললোঃ
“আমি শেষ হয়ে গেছি, আমার সব শেষ হয়ে গেছেরে
নীশুর মূখের দিকে তাকিয়ে মারুফ প্রশ্ন বোধক মাথা নাড়লো উপর নীচে। কিন্তু নীশু কোন সাড়া দিলোনা। তার নিশ্চল মূখে যেন খোঁদাই হয়ে আছে বিষন্নতা। নীলা তেমনি ভাবে বলে চলেছে,
“তোকে কি করে বলি - তোর প্রতিষ্টিত হতে এখনো কত বাকী
শুনতে শুনতে মারুফ অর্ধৈয্য হয়ে বলল,
কিছুই বুঝতে পারছিনা”।
আমার অজান্তে, আমার অমতে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন বাবা”।
“কোথায়”?
নিজের কন্ঠের যান্ত্রীকতায় নিজেই আশ্চার্য্য হলো মারুফ। ভীষন নিঃস্ব, সহায় সম্ভলহীন মনে হলো নিজেকে তার। নীলা তেমনি ধরা গলায় বললোঃ
“চিটাগাং ভার্সিটীতে পড়ে”।
এবার নীশু কথা বলল,
জুলোজী,মার্ষ্টাস ফাইনাল ইয়ারে ।আমাদরে দূর সর্ম্পকরে আত্নীয় ।
নীশুর ভাবলশেহীন গলায় বলা কথাগুলো মারুফের কানে বিবৃতির মত শোনালো।
এবার নীলা যেন কিছুটা স্বাভাবিক গলায় বললোঃ
“তুই বিশ্বাস কর মারুফ, আমার কোন উপায় নেইরে বাবা একেবারে এডামেন্ট। নীলার কন্ঠস্বর শুনে মারুফের মনে হলো নীলা যেন কয়েক সেকেন্ডেই নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিতে পেরেছে।
নীশু এখন জানালার গ্রীল ধরে উদাস চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। আকাশে কালো মেঘ জমেছে। ঠান্ডা দমকা হাওয়া জানালার পর্দাগুলো তথৈবচ করে দিচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে। ল্যাম্প পোষ্টের তারে বসে বিষন্ন গলায় ডাকছে দু’টো কাক। দূরের ডাক। নীলা মারুফের ডান হাত আঁকড়ে ধরে নীচু গলায় বললোঃ “তুই বিশ্বাস কর মারুফ সে আমার দেহ পাবে কিন্তু কোন দিন মন পাবেনা”
মারুফের মনে হলো নীলা যেন তাকে শান্তনা দিচ্ছে। মারুফের তিলে তিলে গড়ে তোলা ভালবাসার স্বর্গ নিমেষেইে চুরমার হয়ে ভেঙ্গে পড়লো যেন চোখের পলকে। মনে হলো বুকের ভেতর কোথাও যেন রক্তপাত হচ্ছে । ভাবলো নীলা একবারও কেন বলল না, আমি সব ছেড়ে তোর কাছে চলে এসেছি। পরক্ষনে ভাবলো সত্যিই যদি নীলা অমন করে বলতো তবে তার কি করার ছিল? সেতো এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। তবুও সব ছাপিয়ে মারুফরে মনে এই দুঃখটাই উত্তাল হয়ে উঠলো, নীলা কেন মুখ ফুটে বললো না আমি সব ছেড়ে তোর কাছে চলে এসেছি। প্রেম যখন অন্ধ হয় তখন ভবিতব্যের ধার ধারেনা।
মারুফের মনে হলো সে এতদিন একটা মিথ্যে স্বপ্নের মোহে আচ্ছন্ন হয়েছিলো। নীলা নিশ্চই তার চাইতে উপযুক্ত বর পেয়ে ব্যপারটা এমন সহজ সরল ভাবে মেনে নিলো। পৃথিবীর সব কিছুকে মারুফ তার মত সহজ সরল মনে করতো। বুঝতে পারেনি একটি নারীর ভেতর অনেক গুলো নারীর অধিবাস। নারীদের সেই সূক্ষ্ণ জটলি জটায়ুগুলো বুঝার মত অভজ্ঞিতা তখন তার হয়নি । নতুন এক উপলদ্ধিতে মারুফ আবস্কিার করলো নারী জাতির ভিন্ন একটা নূতন পরচিয়, একটি নারীর একধিক মুখাবয়ব। নীলা নামের সূপ্ত বাসনা আর হৃদয়ে অবলুপ্ত আকাংখার কনা গুলো মারুফের মনের অন্ধকার কুপে চাপা পড়ে রইল সেই থেকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.