নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
১.
মাঝরাতের প্রায় ঘুমিয়ে পড়া এই শহরের বুক চিরে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা টু চিটাগং রুটের বাসটি। শেষ রাতের এই বাসে চড়ে রফিম মিয়া তার ব্যবসার কাজে যাচ্ছে চিটাগং, ভোর বেলা সেখানে পৌঁছে কাজ সেরে আবার দুপুরের দিকেই রওনা দিবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাসের এসিটা মনে হয় স্পীড বেশি বাড়িয়ে দেয়া আছে, বেশ শীত শীত করছে। রফিম মিয়া আবার এইসব বাসের কম্বল গায়ে তোলেন না। বারো ভূতে ব্যবহার করা এইসব কম্বল তার মত ছুঁচিবাই সম্পন্ন মানুষ ধরতেও ঘেন্না করে। কে জানে কতদিনে একবার এগুলো ধুয়ে দেয়? রফিম মিয়া ভালো করে জানেন পাইকারি দরে পলিপ্যাক কিনে তাতে করে সুন্দর প্যাকেট করে আধোয়া এইসব কম্বল যাত্রীদের সাপ্লাই দেয়া হয়, খুবই নোংরা জিনিশ। মাথার উপরের ঠাণ্ডা বাতাস কন্ট্রোল করার বাটনটা আবার নষ্ট। মেজাজ খারাপ লাগছে, রাতের এই সময়টুকু ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারলে কাল আরাম করে সব কাজ শেষ করা যাবে। কিন্তু কিসের কি, ঠাণ্ডা খুব যন্ত্রণা করছে, নন-এসি টিকেট করলেই ভালো ছিল। ধুর, কিছু ভালো লাগে না... রফিম মিয়া জানালার পর্দা সরিয়ে কাঁচের ভেতর দিয়ে রাতের নিয়ন আলোর প্রায় ঘুমন্ত শহর দেখতে লাগলো, গাড়ী এখন কারওয়ান বাজার পার হচ্ছে। ফুটপাথের উপর মাথার নীচে টুকরি দিয়ে কিছু লোক ঘুমিয়ে আছে, একটু পর ট্রাকে করে মালামাল আসলে পরে কুলিগিরি করে চারটি পয়সা রোজগারের আশায়। কেউ কেউ আবার টুকরির ভেতরেই শুয়ে আছে। বাইরে আকাশে বিজলির খেলা চলছে, বৃষ্টি হবে বুঝি খুব করে।
২.
ইকবাল মাস তিনেক হল ঢাকায় এসেছে, কোথাও কোন কাজ না পেয়ে অবশেষে সে এই কুলিগিরির কাজ বেছে নিয়েছে। ডিগ্রী পাশ করেও কোন কাজ না পেয়ে ঢাকায় এসেছিল সে, যে কোন ধরণের একটা চাকুরীর আশায়। কিন্তু কোথাও চাকুরী পাচ্ছিল না, আবার চাকুরী ছাড়া রিকশা চালানো বা অন্য কিছু করতেও লজ্জা লাগে। কে আবার দেখে ফেলে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ডিগ্রী পাশ দিয়েছিল গ্রামে থেকে, পড়ালেখা করে শেষ পর্যন্ত এসব করা কি যায়? তখনই তার পূর্ব পরিচিত একজন এই কাজের খোঁজ দিল। রাতের বেলা, সবজি আর মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত ছাড়া আর কেউ জেগে থাকে না এই ঢাকা শহরে সে সময়। তাই তখন তার সাথে ইকবাল কুলিগিরি করতে পারে, এতে পরিশ্রম কম আর টাকাও ভালোই আয় হয়। সবদিক ভেবে ইকবাল রাজী হয়ে গিয়েছিল, সেই থেকে গত দুই সপ্তাহ হল, ইকবাল রাতের বেলা এই কারওয়ান বাজারে এসে কুলিগিরি করে। রাত বারোটার পরে এখানে শুরু হয়ে যায় এক অন্যভুবনের কর্মকাণ্ড। আজ নিজের টুকরি’তে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে দেখতে ইকবাল ভাবছিল একটা ভালো চাকুরী কি তার কপালে জুটবে না? ছোট কোন অফিসের পিয়নের চাকুরী হলেও চলবে, কিন্তু তাও তো ভালো এই কুলিগিরি করার চেয়ে। পড়ালেখা করে এই জীবন কি চেয়েছিল? গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা কত স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে তার দিকে চেয়ে। একফোঁটা বৃষ্টির পানি চোখে পড়তে ইকবাল উঠে বসল, বৃষ্টি হবে বুঝি। ঘনঘন বিজলি চমকাচ্ছে আকাশে।
৩.
ইজমত মোল্লা জায়নামাজে বসে অশ্রুসজল চোখে আল্লাহ্ তায়ালার নিকট তার ছেলে ইকবালের জন্য দোয়া করছেন, তার ছেলেটা যেন একটা ভালো চাকুরী পেয়ে যায়। আজ তিনমাস হতে চলল সে ঢাকায় গেছে, এখনও কিছু ব্যবস্থা করতে পারে নাই। জিজ্ঞাসা করলে বলে, এইতো বাজান, দেখতাছি... ইজমত মোল্লা জানে ছেলে শত কষ্টেও ভেঙ্গে পড়বে না, কিন্তু বাবা’র মন ঠিকই বুঝে ছেলে কষ্টে আছে। তাইতো তাহাজ্জুতের নামাজ শেষে ইজমত মোল্লা ছেলের জন্য দু’হাত তুলে আল্লাহ্’র দরবার প্রতিরাতে ফরিয়াদ জানান। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে আশেপাশে কোথাও বাজ পড়ল, ইজমত মোল্লা চমকে উঠলেন। পাশের রফিক জোয়ারদারদের বাড়ী হতে বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসছে, জোয়ারদারের মেয়ে-মেয়ে জামাই এসেছে গতকাল ঢাকা থেকে বেড়াতে, তাদের ছোট্ট বাচ্চাটার কান্নার শব্দ। ইজমত মোল্লা জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, গোয়াল ঘরের দিকে ছুটলেন গরুটাকে উঠোনের ছাউনির নীচে নিয়ে আসার জন্য।
৪.
মিলি ছোট বাবুটাকে কিছুতেই থামাতে পারছে না। বাজ পড়ার শব্দে খুব ভয় পেয়েছে ছেলেটা। এক বছরের ছোট্ট বাবুটা তার, একটু জোরে কথা বললেই কেমন কেঁপে ওঠে, আর এতো প্রচণ্ড শব্দের বাজ! সে নিজেই খুব ভয় পেয়েছে, এখনও বুকটা ধরফর করছে। আর তার স্বামী জুয়েল আরামে ঘুমুচ্ছে, এই শব্দেও তার ঘুমে কোন সমস্যা হয় না। অবশ্য মিলি ডাক দিলেই উঠে যাবে, বাবুকে নিয়ে হাঁটবে, কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করবে। কিন্তু মিলি তাকে ডাকল না, ঘুমাক লোকটা। মিলিকে বাবুর কান্না থামানোর চেষ্টার ফাঁকে হাস্যকর একটা ভাবনায় পেয়ে বসল, আচ্ছা তার ফ্ল্যাটের বেডরুমের লাগোয়া জানালাটা কি বন্ধ করে এসেছিল? উফ, রতন যদি খেয়াল করে জানালাটা বন্ধ করে। মিলি আর জুয়েল মোহাম্মদপুরের একটা ফ্ল্যাটে থাকে, গ্রামের বাসায় সপ্তাহখানেকের জন্য বেড়াতে আসার জন্য সেখানে ভার্সিটি পড়ুয়া তার খালাতো ভাই রতনকে রেখে এসেছে। ঢাকা শহরের যে অবস্থা! কোথাও কোন সিকিউরিটি নাই; সপ্তাহখানেকের জন্য বেড়াতে বের হয়েছে, তাই ভাইকে রেখে আসা।
৫.
রতন চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে ক্লান্ত হয়ে গেল, ধুর কোন চ্যানেলে সেইরকম কিছু দেখাচ্ছে না। এমন কি ক্যাবল অপারেটর এর মুভি চ্যানেলেও এই রাত দুটো’র সময় রগরগে কিছু নাই! এই এলাকার মুভি অপারেটর কি আবাল নাকি? এই ভেবে রতন মনে মনে কিছু গালি দিল। ধুর অরন্য’র কাছ থেকে কিছু সিডি নিয়ে এলে ভালো হত, এই বর্ষণমুখর রাতে জমত ভালো। অরন্য হল রতনের ভার্সিটির ফ্রেন্ড, ওর রয়েছে পর্ণ সিডির এক বিশাল আর্কাইভ। ধুর, আজ সবাই গেছে বনানী এগারো নাম্বারের “ইয়ো ইয়ো ডিজে পার্টি”তে, আর তাকে কি না পাহারা দিতে হচ্ছে এই শুন্য ফ্ল্যাট বাড়িটি। এইটা কিছু হইল মামা... ধুত্তরি ছাই। ফ্লোর গড়িয়ে পানি আসতে দেখে রতনের মেজাজ আরও বিগড়ে গেল। ড্রইং রুম থেকে উঠে গিয়ে খোঁজ করতে দেখতে পেল মিলি আপুর বেডরুমের লাগোয়া জানালা খোলা, সেখান থেকে বৃষ্টির পানি ভেতরে ঢুকছে। জানালা বন্ধ করে পানি পরিস্কার করতে করতে রতন ভাবতে লাগলো রাহুল’রা কত না মজা করছে ডিজে পার্টিতে।
৬.
রাহুল আজ চরম মৌজে আছে। 'বাবা'র সাথে শুকনা, আহ... আজ কোন লিকুইড ছোঁয় নাই সে... ডিজে’র তালে তালে নাচতে নাচতে মনে হচ্ছে ও যেন আকাশে উড়ছে, আহ কি মজা এই জীবনে। পেছন হতে তন্বী বা শ্বেতা কে যেন জড়িয়ে ধরছে বাহু ডোরে, নাচের তালে তালে এক গোপন আহবান। কিন্তু আজ যে, ঐসবে তার মন টানছে না। নেশাটা আজ বহুদিন পর জমেছে, তার সাথে আজ ডিজে প্লে করছে সেইরাম... শালা... এরে না বলে লাইফ... আহ... নাচের তালে তালে টলছে আর থেকে থেকে স্টীকে টান দিচ্ছে... এটাই লাস্ট স্টীক... ধুর, মুন শালা আজ যে কেন এল না, ও আবার স্টীক বানাতে খুব এক্সপার্ট। শালা এমন দিনেই ও মিস দিল পার্টি। ধুর...
৭.
মুন নিজের বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। আজ কি আকাশও তার বুকের কষ্ট বুঝতে পেরেছে। কান্না হয়ে ঝরে পড়া এতো বৃষ্টি নয়, এগুলো তার বুকের একগাদা কষ্ট। লামিয়া আজ তার সাথে ফাইনালি ব্রেকআপ করে ফেলল। তার নেশা করাটা সে আর টলারেট করতে রাজী নয়। লামিয়া’র একই কথা, হয় নেশা নয় লামিয়া, যে কোন একটা’কে বেছে নিতে হবে। কিন্তু এ কি করে সম্ভব? মুন যে দুটো’র কোনটা ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারবে না। শরীরের ভেতরের জ্বলুনিটা শুরু হয়ে গেছে, প্রতিটি রক্ত কণিকা সেই বিষসুধা'র জন্য নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। ধুর সিরিঞ্জ দেখি শেষ হয়ে গেছে, ইউজ করা সিরিঞ্জ মুন ব্যবহার করে না। প্রতিবার নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার শেষে সেটা নিয়ে গোপনে বড় রাস্তার ওধারের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসে। আজ ঘরে একটাও সিরিঞ্জ নাই। শরীরের ভেতরের কিড়াগুলো কিড়মিড় করছে, কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। সিরিঞ্জ দরকার এই রক্তকনিকার ঝড় থামাতে।
৮.
লামিয়া অনেক অনেক ভেবেছে, কিন্তু কিছুতেই সে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছে না। এই জীবনের সব স্বপ্ন সে দেখেছিল মুন’কে ঘিরে। ভেবেছিল তার ভালবাসা মুন’কে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে সেই অভিশপ্ত জীবন থেকে। কিন্তু না, দিন দিন মুন ডুবেছে অতল থেকে গভীর অতলে, হারিয়েছে সর্বনাশা নেশার চোরাবালিতে, যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব না কখনো। কিন্তু লামিয়াতো এই মুন’কে চায় নাই। মুনের সাথে আজ ফাইনালি ব্রেকআপ করার পর থেকে নিজেকে সে কোন মতেই সামলাতে পারছে না। বড় নিঃস্ব লাগছে, সারাটা জগত জুড়ে এক অসহ্য নিঃসঙ্গতা যেন ছেয়ে আছে, বেঁচে থাকাটাই আজ বড় অর্থহীন, যন্ত্রণাদায়ক। আত্মহত্যা করা ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। সেই কখন থেকে সে বারো তলা ফ্ল্যাট বাড়ীর ছাঁদে একাকী দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা ধীরে ধীরে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাকে কিন্তু তার কোন হুশ নেই। প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ায় যেন চৈতন্য ফিরে পেল লামিয়া। একটু সরে গিয়ে সিঁড়িঘরের ছাউনির নীচে এসে দাঁড়ালো। কেমন শীত শীত লাগছে তার, একটু দেয়ালের সাথে ঘেঁষে এসে দাঁড়ালো। এখান থেকে নিয়ন আলোয় রাস্তাটা দেখা যায়, পার্কের গেটটা অবধি। ঐ গেটটায় প্রায় রাতেই নিশিকন্যাদের আনাগোনা থাকে, আজও লামিয়াকে অবাক করে দিয়ে একটা মেয়েকে এই ঝড়-বৃষ্টির রাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল সে। মেয়েটা ছোট্ট একটা ছাতা মাথায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানটায়। ঘোলাটে অশ্রুসজল চোখে মেয়েটাকে দেখতে লাগলো সে...
৯.
চুমকি আজ ম্যাডামকে না করেছিল এই খ্যাপটার ব্যাপারে, গতকাল রাত থেকে শরীরটা ভালো নেই তার, কেমন জ্বর জ্বর লাগছে। আর মাত্র দুইদিন হল সে প্রতিমাসের খারাপ সময়টা পার করেছে। কিন্তু আজকের কাস্টমার নাকি ভালোই মাল ছাড়বে, তাই চুমকি ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু নাগরের কোন দেখা নাই। ধুর, বাসা থেকে বের হওয়াটা বুঝি ভুল হয়েছে। তারচেয়ে বাসায় থাকলে ফোনে রুপমের সাথে ভালো আড্ডা দিতে পারতো। রুপম পোলাটা আসলে একটা গাধা। ও যা বলে তাই বিশ্বাস করে, জানু...জান বলে হয়রান। চুমকি যে একটা বেশ্যা তা যদি গাধাটা জানত? চুমকিকে রোজই কত আবদার করে বলে একটু দেখা করতে টিএসসি’র দিকে, চুমকি কৌশলে সবসময় তা এড়িয়ে যায়। রুপম থাকে ঢাকা ভার্সিটির মহসিন হলে, কোন সাবজেক্টে যে পড়ে মনে থাকে না চুমকির। রুপম জানে চুমকি এনএসইউ’তে পড়ে, এনএসইউটা যে কি চুমকি নিজেও জানে না। একবার এক কাস্টমার পেয়েছিল, যে ঐ জায়াগায় পড়ে। মিসকল মিসকল খেলতে খেলতে একদিন রুপমের সাথে পরিচয়, তারপর থেকে যে রাতে খ্যাপ থাকে না, সেই রাতে রুপমের সাথে আড্ডা দেয় চুমকি, ভুলে যায় নিজের আসল পরিচয়, তখন সে এনএসইউ’তে পড়ুয়া এক সুন্দরী যুবতী। চুমকি সুন্দরী এইটা কিন্তু মিথ্যা না... প্রচণ্ড জোরে বাজ পড়ার শব্দে চুমকি ভয় পেয়ে গেল, বুকে থুথু ছিটিয়ে একটু ধাতস্ত হয়ে হাঁটা শুরু করল বাস স্ট্যান্ডের দিকে, আজ বুঝি আর কাস্টমার আসলো না... এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেশ্যার খোঁজে কে আসে?
১০. রুপম প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছে লুবনার উপর। একটা খ্যাঁত মার্কা মাইয়া, কি যে কথাবার্তার স্টাইল! ভুল হইছে আজ ফেসবুকের চ্যাট অপশন অন কইরা। চুমকি’র মোবাইল আজ বন্ধ, আজও নিশ্চয়ই ওর আব্বু বাসায় আছে। যেদিন ওর আব্বু বাসায় থাকে সেদিন ও মোবাইল বন্ধ রাখে। চুমকির সাথে কথা বলে অন্যরকম আরাম পাওয়া যায়। কোন পড়ালেখা বা অন্য কোন আলাপ নাই, শুধু প্রেম-ভালবাসা-আর নিষিদ্ধ আনন্দদায়ক সব রসালো কথা-বার্তা... আসলে চুমকি একটা মাল... আর এই লুবনাটা একটা আবাল... ধুর... চ্যাট করতে ভালো লাগছে না... আবার কেটে দিতেও পারছে না রুপম... ইমো দিয়ে দিয়ে পার করছে সব কথোপকথন... কেন যে ফেসবুক আজ ওপেন করতে গিয়েছিল?
========================================
এরপর আরও বেড়েছিল ঝড়ের বেগ, আরও চমকেছিল বিজলি’র দল, আরও ঝরেছিল বারিধারা... আর সেই বেড়ে যাওয়া ক্ষণে রফিম মিয়া’র চিটাগংগামী গাড়ী মাঝ পথে থেমে গিয়েছিল ঝড়ের কারণে, ইকবাল সে রাতে কোন কাজ পায় নাই... ট্রাকগুলো এসে পৌঁছয় নাই কারওয়ান বাজারে... তার বদলে বিদ্যুতের একটা তার ছিঁড়ে গিয়ে পড়েছিল তার উপর... বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে মরে গিয়েছিল কি না তা জানা যায় নাই, ইজমত মোল্লা ছেলেকে হারিয়েছে কি হারায়নি তা জানা নেই, তবে জানি হারায় নাই তার গোয়ালের গরুটি। মিলি আর জুয়েল রাত জেগে কাটিয়ে দিয়েছিল তাদের ছোট্ট বাবুটি’র কান্না থামাতে... কিন্তু কান্না থেমেছিল কিনা জানিনা, জানা হবে না সেই বর্ষণমুখর রাতে তারা অপার্থিব ভালোবাসায় নিজেদের জড়াতে কোন সুদূর পাণে হারিয়ে গিয়েছিল কিনা? রতন হয়ত মেটাতে পারে নাই তার বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষাটুকু এতটুকু একটু নিষিদ্ধ বিনোদনের অভাবে। রাহুলের নেশার ঘোর বিঘ্নিত করে ট্রান্সফরমার ব্লাস্টের শব্দের সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল উন্মাতাল করা ডিজে মিউজিক। মুন সারা শরীরে খিচুনি নিয়ে কাটিয়েছে সারা রাত একটা সিরিঞ্জের অভাবে... বজ্রের শব্দে না হোক, কেঁপেছে রক্তকণিকায় বিষের নীল প্রবাহ না দিতে পেরে। লামিয়া আত্মহত্যা করতে না পারলেও পেরেছিল নিউমোনিয়া বাঁধাতে, চুমকি সর্দি-জ্বরে ভুগে সপ্তাহখানেক খেপ নিতে পারে নাই কোথাও, রুপমের চ্যাট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পিসি শাটডাউন হয়ে যাওয়াতে, বন্ধ হয়েছিল লুবনা'র আবাল মার্কা কথাবার্তার অত্যাচার... আরও অনেক কিছুই ঘটে যাওয়ার পর থেমেছিল ঝড়-বিজলি-বৃষ্টি’র খেলা... কিন্তু সেই ঝড়ের পর হয়ত অনেক...অনেক কিছুই আর আগের মত ছিল না... হয়ত ছিল... কেননা সব ঝড়ের শেষের চিত্রনাট্য কিন্তু এক রকম হয় না।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ, হুট করেই এই গল্পটি গতকাল রাতে লিখে ফেলা, টানা লিখে সাথে সাথে পোস্ট... আমি আবার গল্প, কবিতা কোনটাই ভালো লিখতে পারি না। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি
খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটি পড়ে, সুন্দর মন্তব্যে +++
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা জানবেন।
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫১
মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার লিখছেন, আসলেই প্যারালাল কত লাইফ যে চলে আমরা কি তার হিসেব রাখি। কেউ কারো খবর রাখি।
লেখায় ভালোলাগা
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা আপু।
আসলেই প্যারালাল কত লাইফ যে চলে আমরা কি তার হিসেব রাখি। কেউ কারো খবর রাখি। ভালো বলেছেন।
পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: একটা বাজ এসে জানান দিয়ে গেলো কিছু সমান্তরাল জীবনের সম্পর্কযুক্ত আখ্যান। যেন শিকলে বাঁধা আছে সবাই। একটা গিঁট খুলতে গেলে বাকিসবও বেসামাল হয়ে পড়ে।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:১১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ হাসান মাহবুব ভাই। আপনার কাছ থেকে এতো সুন্দর মন্তব্যে আরও গল্প লিখতে আগ্রহী করে তুলবে। পাঠ এবং উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা রইল।
ভালো থাকুন সবসময়, অনেক অনেক ভালো।
৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০
নেক্সাস বলেছেন: দার্শনিক কিছু আবহ পেলাম। ভালো লাগলো।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ নেক্সাস। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
দার্শনিক আবহ কি লেখায় চলে এসেছে? আমি আসলে খুবই সাদামাটা শব্দে সাদামাটা ভাব প্রকাশ করে গল্প লেখার চেষ্টা করি। যাক আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুবই খুশী হলাম।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা রইল।
৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০১
পাজল্ড ডক বলেছেন:
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন:
৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: বোকা মানুষ বলতে চায় ,
ষ্টাইলটা অনবদ্য ।
বোকা মানুষ অনেক কিছুই বলতে চেয়েছেন । আর বলেছেনও নতুন আঙ্গিকে ।
তবে ঝড়ের শেষ যেন, শেষ হয়েও হলোনা শেষ .....
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আহমেদ জী এস ভাই। সুন্দর মন্তব্যে ভালোলাগা জানবেন।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা জানবেন।
৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:২৭
মুদ্দাকির বলেছেন: পড়ব
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পড়ে কেমন লাগলো জানিয়া যেতে ভুলবেন না যেন
কেমন আছেন মুদ্দাকির? আশা করি ভালো। অনেক দিন পর...
ভালো থাকুন সবসময়।
৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৪০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: ভালো লাগা জানবেন!
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ অভি। খুব ভালো লাগলো আপনাকে দেখে। রন্তু সিরিজ নিয়ে আবার শুরু করছি দুয়েকদিনের মধ্যে, আশা রাখি আপনাকে সাথে পাবো। মিস ইউ ব্রো...
ভালো থাকুন সবসময়। শুভকামনা নিরন্তর।
৯| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার গল্প বলার স্টাইলটাতে আমি চমৎকৃত হয়েছি। একটা সিকোয়েলের ভিতর পরের গল্পটার বীজ বোনা রয়েছে। ১০টা সিকোয়েলে প্রায় ১০ ঘরানার জীবন।
চুমকির জীবন আমাকে ব্যথাতুর করেছে। জীবন খুব নির্মম।
অসাধারণ।
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:২৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ভাইয়া। গল্পের মূল থিমটা আপনি সুন্দর একটা লাইনে বলে দিলেন, ভালো লাগা রইল।
একটা সিকোয়েলের ভিতর পরের গল্পটার বীজ বোনা রয়েছে। ১০টা সিকোয়েলে প্রায় ১০ ঘরানার জীবন।
এই গল্পের চুমকিকে নিয়ে ভবিষ্যতে একটা গল্প লেখার ইচ্ছা আছে...।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা জানবেন।
১০| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩
জুন বলেছেন: দশটি ছোট ছোট আখ্যান কিন্ত প্রতিটি মন ছুয়ে গেল বোকামানুষ। বিশেষ করে চুমকি ।
+
০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ জুন আপু। সবার এই গল্পটা ভালো লাগছে দেখে আমিও উৎসাহ পাচ্ছি ভবিষ্যতে আরও ভালো কোন গল্প লেখার।
ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা নিরন্তর।
১১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: গল্প সূতোর গিট্টু গুলো খুব ভাল ভাবেই বেঁধেছেন । একটা খুলে গেলে পুরো বাস্তব জীবনের একটা চিত্র এলোমেলো হয়ে যাবে । অনেক ভাললাগা ।
ইদানিং বুঝি গল্প লেখা হচ্ছে খুব !!
শুভ কামনা ।
০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:০৭
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ কলমের কালি শেষ, ভাই বুঝি গিট্টু খুব ভালা পান?
গল্প লেখার চেষ্টা হচ্ছে আর কি
ভালো থাকুন সবসময়।
১২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৫
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ৭ম ভালোলাগা। এত এত গল্প , তাও বুনোট যথেষ্ট মজবুত লাগলো। শুভেচ্ছা।
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রেজওয়ানা আলী তনিমা, ভালো থাকা হোক সবসময়।
শুভকামনা জানবেন।
১৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:১৬
এনামুল রেজা বলেছেন: মুগ্ধতা। চমৎকার হয়েছে গল্পটা...
১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ এনামুল রেজা, ভালো থাকুন সবসময়।
১৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:১৭
ইসিয়াক বলেছেন: বাহ! চমৎকার গল্প।
ভালো লাগলো।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:২৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ, আগ্রহ নিয়ে পুরাতন পোস্টটি পড়া এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মন্তব্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:৩৪
আমি সাজিদ বলেছেন: একই সমান্তরালে দশটি ভিন্ন ভিন্ন গল্প, না বলা যায় দশটি ভিন্ন ভিন্ন ঘুড়ি, একই নাটাইয়ের সাথে বাঁধা।
মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম। ভালো লেগেছে। অসাধারণ।