নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
থিক্কাদি এসে সন্ধ্যের আগে আগে হোটেলে যখন চেকআউট করেছিলাম, আমার শরীরের তখন রাজ্যের ক্লান্তি আর আলস্য। তাই ভ্রমণসাথীদের সাথে শহর পরিভ্রমণ আর শপিং এ না গিয়ে আমি রুমে রেস্ট নেয়াই শ্রেয় মনে করলাম। কিন্তু মিনিট পনের পরেই কেমন অস্বস্তি লাগছিল, অগ্যতা রুম লক করে হোটেলের বাইরে চলে এলাম। বাইরে আসতেই দেখি আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড বিপিন, বন্ধুও বলা যেতে পারে, কারন এই কয়দিনে তার সাথে বেশ ভালই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ওর সাথে গত দুইদিনের কিছু তথ্য লেখালেখির কাজ বাকী ছিল। আমি প্রতিবার ভারত ভ্রমণে সকল তথ্য দিন শেষে ড্রাইভারের সাথে বসে নোট নিয়ে নিতাম। গত দুইদিনের ব্যস্ততায় তা করা হয় নাই, তাই বিপিনকে নিয়ে চলে গেলাম পাশের রেস্টুরেন্টে। সেখান ধোসা আর চা অর্ডার করে কাগজ কলম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
রাত আটটার পর একএক করে সবাই হোটেলে ফিরে এল, হাত ভর্তি কেরালা লোকাল চকলেট, চা-পাতা, মসলা। রাতের খাবার পর আমিও তাদের সাথে গিয়ে কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরে এলাম। কেরালার চা-পাতা একটু অন্যরকম; আমাদের বাংলাদেশের মানুষের স্বাদের সাথে কেমন একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রথমে ভেবেছিলাম আমারই এরকম মনে হচ্ছে, কিন্তু পরে অন্য যারা কেরালা ভ্রমণে এসে চা-পাতা কিনে নিয়ে এসেছে, সকলেই এই কথা বলেছে। তাই কেরালা ভ্রমণে চা-পাতা একটু বুঝে শুনে কেনাই শ্রেয়।
রাতের খাবার শেষে বিপিনকে জিজ্ঞাসা করলাম, আগামীকালের শিডিউল টাইম কয়টায়? ও বলল, ভোর ছয়টার মধ্যে হোটেল থেকে রওনা দেব। আগে থেকেই জানতাম, আজকের প্রথম গন্তব্য কেরালার বিখ্যাত পেরিয়ার লেকে বোট ক্রুজ, উদ্দেশ্য ভুবনখ্যাত ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংকচুয়ারি দর্শন। কিন্তু সেখানে তো সাড়ে সাতটায় প্রথম বোট ছাড়ে আর লেকও আমাদের হোটেল হতে মাত্র তিন কিলোমিটার মত দূরে। তাহলে এত সকালে কেন? ওকে জিজ্ঞাসা করতে বলল, আগামীকাল সকালেই বলব কি কারণ। অগ্যতা কি আর করা? সবাই ঘুমাতে গেলাম, ভোর পাঁচটার এলার্ম দিয়ে। মনে হচ্ছে এখন থেকে প্রতি দিনই ভোর পাঁচটায় উঠতে হবে অথবা হোটেল থেকে চেক আউট করতে হবে, সেক্ষেত্রে তো ঘুম থেকে উঠতে হবে ভোররাতে, চারটার দিকে।
যাই হোক পরদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে ছয়টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়তে হল, গন্তব্য কেরালা'র ভুবনখ্যাত পেরিয়ার লেকে বোট রাইডিং করে ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংকচুয়ারি দর্শন। হোটেল থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে এই লেক, বোট রাইড সকাল সাড়ে সাতটায়, কিন্তু আমাদের রওনা দিতে হল যথারীতি সকাল ছয়টায়। কিন্তু পেরিয়ার লেকের প্রবেশদ্বারে পৌঁছতেই দেখি গাড়ীর বিশাল লাইন! সোয়া ছয়টা নাগাদ গেট ওপেন হতেই দেখি সব দে দৌড়, লোকাল ইন্ডিয়ান, ফরেনার, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব, এমন কি ছোট বাচ্চা কোলে নিয়ে মায়েরা পর্যন্ত। ঘটনা হল, প্রতি শিডিউল টাইমে মোট পাঁচটা বোটে শ'তিনেক দর্শনার্থী উপভোগ করতে পারে এই ট্যুর। প্রথম শিডিউল সকাল সাড়ে সাতটা, এর পরেরটা সাড়ে নয়টায়। আর বনের পশুগুলো প্রায়ই সকালের প্রথমভাগে লেকের জলে জলপান করতে আসে। ফলে অনেক বেশী সম্ভাবনা থাকে বন্য পশুগুলো দেখার। তাই সবাই চায় প্রথমটায় যাত্রা করতে। ফলে গাড়ী থেকে নেমে এই ভোঁ দৌড়....
যাই হোক, পরিচয় পত্র দেখিয়ে দুবার টিকেট করে, ফর্মফিলাপ শেষ করে হাতে টিকেট পেলাম, বোটের নাম এবং সিট নাম্বার সহ। এর পর ঘাটে থাকা পরিপাটি ওয়েটিং লাউঞ্জে অপেক্ষা। সোয়া সাতটা নাগাদ বোটে চড়ে মন ভাল হয়ে গেল, সাইডে সিট পেয়েছি, মন ভরে দেখা আর ছবি তোলার সুযোগ পেলাম, পাশের সিটে এক ইউরোপিয়ান, সামনে তার আরও পাঁচ সাথী। যাই হোক, জনা পনের ইউরোপিয়ান এবং জনা চল্লিশ উপমহাদেশিয় পর্যটক নিয়ে সাড়ে সাতটায় যাত্রা শুরু।
আমার পাশে বসা ইউরোপিয়ান বয়স পঞ্চাশোর্ধ ভদ্রলোকের স্ত্রী ছিলেন পেছনে সিটে। ভদ্রমহিলা’র দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা অন্যরকমের। সবুজ গাছে ফাঁক গলে কিভাবে যেন সব প্রাণী তিনি ঠিকই খুঁজে বের করে ফেলেন এবং সামনে বসা স্বামীকে তা জানিয়ে দেন। মাঝখানে লাভ হয় আমার, আমিও আমার ক্যামেরার লেন্স দিয়ে খুঁজে নেই সেই প্রাণীকে। এমনও হয়েছে, আমরা কোন একটা নির্দিষ্ট প্রাণী দেখে ছবি তুলে ক্যামেরা গুটিয়ে নিচ্ছি, তখন আমাদের ভেসেলের গাইড তার মাইকে (অবশ্যই মৃদু ভলিউমে)যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ঐ প্রাণীকে দেখার জন্য। ভাগ্য এদিন সুপ্রসন্ন ছিল সকলের, দেখা মিলল হরিন, কালো হরিন, বাইসন, হাতি, বানর, হনুমান সহ অসংখ্য পাখীর।
এই ভ্রমণে একটি ব্যাপার না বললেই নয়, তা হচ্ছে আমাদের উপমহাদেশীয়দের অতিরিক্ত বাচালতা। পেরিয়ার লেকে প্রায় নিঃশব্দে ঘুরে বেড়ানো হয় বোটে করে যেন, বন্য প্রাণীর দর্শন পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় পর্যটকেরা যেন গল্প করার জন্য এর চাইতে আর ভাল কোন কিছু খুঁজে পায় নাই। প্রায় তিনটি গ্রুপ ছিল, প্রতিটিতে কমপক্ষে দশজনের বেশী হবে, এরা সবাই উচ্চস্বরে গল্পে মশগুল। আমায় ঘিরে থাকা ইউরোপীয়গুলো ভ্রু কুঁচকানো আর বিরক্তি দেখে মজা পাচ্ছিলাম। সবচেয়ে বেশী গল্প করছিল, কলকাতার একটি বিশাল পারিবারিক গ্রুপ। কবে কার বিয়েতে কি হয়েছিল, কি খেয়েছিল, সেই গল্প করতে তারা যেন এসেছে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরের এই পেরিয়ার লেকে! হায়রে মোর কপাল...
নয়টায় শেষ হল এই ভ্রমণ। বোট হতে নেমে আরেক দফা বিনোদন, নাম ভূমিকায় বিখ্যাত বানর এবং হনুমান বাহিনী। তার মধ্যে সবচেয়ে ডানপিটে একটা বানর, তার আবার এক পা নেই। তিন পে’য়ে এই দস্যুর দাপট ছিল দেখার মত। এক ভদ্র মহিলার ব্যাগ নিয়ে দৌড়, আরেক বাচ্চার হাত থেকে কোকাকোলার বোতল, কারো ক্যামেরা, কারো বা হ্যাট... সবচেয়ে বিনোদন হল, যখন এক বিলেতি মেম সাহেবের হাতে থাকা ছোট্ট ব্যাগ নিয়ে দিল দৌড়। সাবধানে এই দস্যু বাহিনীর ফটো তুলতে তুলতে আমরা ফিরে এলাম পার্কিং এরিয়াতে। এরপর হোটেলে ফিরে নাস্তা করে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা হলাম কুমারোকম এর উদ্দ্যেশে। বিকেলের শুরুতে সেখানে পৌঁছে কেরালার বিখ্যাত ব্যাকওয়াটারে শিকারা রাইড করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা... (চলবে)
আগের পর্বগুলোঃ
যাত্রা শুরুর গল্প (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০১)
ট্রানজিট পয়েন্ট কলকাতা... অন্যরকম আতিথিয়তার অভিজ্ঞতা (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০২)
অবশেষে কোচিন - তৃতীয় রাতে যাত্রা শুরুর স্থানে (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৩)
ডেস্টিনেশন মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৪)
মুন্নার টি মিউজিয়াম (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৫)
মুন্নার ভ্রমণ - মাতুপত্তি ড্যাম এবং ব্লোসম পার্ক (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৬)
ইকো পয়েন্ট এবং টপ ষ্টেশন অফ মুন্নার (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৭)
ট্রিপ টু কুলুক্কুমালাই... (ট্রিপ টু কেরালা ২০১৬) (পর্ব ০৮)
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:০৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: প্রথমেই ক্ষমাপ্রার্থী অতিদীর্ঘ বিরতিতে প্রতিত্তর দেয়ার জন্য। ব্যক্তিগত কর্মজীবনে অতিমাত্রায় ব্যস্ততার দরুন ব্লগে আসা হয় না। আজ প্রায় দেড়মাস পর ব্লগে ঢুকলাম, ছুটির দিনে একখানি পোস্ট দিলাম, তাও এই রাত এগারোটায় দিতে পারলাম।
বসার জায়গাটা সাফারি'র জেটি সংলগ্ন ওয়েটিং এরিয়ায়।
আমার ইউরোপিয়ানদের সাথে তেমন মেশার সুযোগ হয় নাই, তাই স্বভাব চরিত্র জানা নেই। তবে সাফারিতে পশুপাখি দেখাটা মুখ্য, এটা বোঝাটা মুখ্য।
২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩৩
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: এক ছবিতেই অনেক কিছু উঠে এসেছে
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮
কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
চমৎকার ছবির সাথে অনন্য বর্ণনা!!!
ব্লগে অনিয়মিত হয়ে আপনার লেখাগুলো মিস করি!!
শুভকামনা নিরন্তর!!!
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ বীথি আপা, আমি আপনার চাইতেও বেশী অনিয়মিত।
৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩
হাসান রাজু বলেছেন: .... ভ্রমণে সকল তথ্য দিন শেষে ড্রাইভারের সাথে বসে নোট নিয়ে নিতাম।
আমি ও ভাবি এই কাজটা করব । কিন্তু কখনই করা হয় না । পরে যায়গার নাম ভুলে যাই । তথ্য ভুলে যাই ।
সুন্দর ও ভালো লাগা একটা পোস্ট ।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান রাজু, পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৫৯
নেক্সাস বলেছেন: এই যে ভাই ছবি তোলা শিখাবেন?
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ভাই এটা কি বলিলেন!!! আমার তো একটা ক্যামেরা পর্যন্ত নাই...
একটা ক্যামেরা কিন্না দিবেন?
৬| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯
নীল-দর্পণ বলেছেন: বরাবরের মতই আপনার ছবি এবং বর্ণনা দারুন
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:১৯
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ নীল-দর্পণ।
৭| ৩০ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০১
কম্পমান বলেছেন: Some of our friends want to go Silong then Darjiling. If u give me some advice about the tour its very helpful for me.
1. Name of Silong's Sopts, where we can visit.
2. Way to go Darjiling from Silong.
3. Name of Dargilin's Spots, where we can visit.
4. Advice for the tour.
Thanks in Advance.
২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অত্যন্ত দুঃখিত, আজ ব্লগে ঢুকে দেখলাম এই মন্তব্য। যদি এখনো ভ্রমণ না করে থাকেন, তাহলে প্লিজ মন্তব্যে জানাবেন। যথাসাধ্য তথ্য দিয়ে সহায়তা করব।
ভাল থাকুন সবসময়, অনেক অনেক শুভকামনা।
৮| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২৫
সৈয়দ মেহবুব রহমান বলেছেন: খুব ভালো লাগলো
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৪৩
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৯| ১৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৪
কম্পমান বলেছেন: We completed our tour of Shilong. But want to go next Darjiling...... Plz give us some advice about Darjiling & also Shilong.
১০ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আপনার মন্তব্যগুলো সবসময় এত দেরীতে দেখা হয় কেন যে, জানি না। কি কি জানতে চান, বলবেন প্লিজ। চেষ্টা করবো সংক্ষেপে সব তথ্য দিতে।
কেমন আছেন? ভাল থাকুন সবসময়। অনেক অনেক শুভকামনা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:১২
কালীদাস বলেছেন: ছবিগুলো সুন্দর বসার জায়গাটা কোথায়? সাফারিতেই নাকি?
ইউরোপিয়ানরা তো ভালই আড্ডাবাজ এবং মিশুক। হয়ত সবাই সবাইকে চিনত না, তাই চুপ ছিল!