নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১
কেরালা ট্রিপ প্ল্যানিং এর সময়ই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ট্রিপটা এক্সটেন্ড করার। যেমনটা করেছিলাম কাশ্মীর ট্যুর এর সময় সিমলা-মানালি এড করে। হাতে অপশন ছিল চেন্নাই-উটি এড করারা, কিন্তু নানান দিক বিবেচনা করে শেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কেরালা ভ্রমণ শেষে গোয়া হয়ে মুম্বাই গিয়ে শেষ হবে আমাদের এবারের ভারত ভ্রমণ এর পালা। আর তাই কেরালার নয়দিনের ট্যুর শেষ করে আমরা এরনাকুলাম রেল স্টেশনে এসে বিদায় দিয়েছিলাম আমাদের নয়দিনের সফরসংগী মিঃ বিনয় পি যোশ এবং তার সেভেন সিটার টয়োটা ইনোভা গাড়ীটিকে। স্টেশনে ঢুকে ক্লকরুমে আমাদের ব্যাগ জমা রেখে আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম, কারণ আমাদের ট্রেন রাত সাড়ে দশটায়।
এরনাকুলাম শহরের খুব একটা দেখার সুযোগ মিলল না এই দু’আড়াই ঘন্টার ভ্রমণে। কিছুটা হেঁটে, শপিং করে, টুকটাক খাবার চেখে দেখে সময় পার করে আমরা আবার এরনাকুলাম রেল স্টেশনে ফেরত চলে এলাম। স্টেশনে এসে আমার মন চাইল একটু স্নান সেরে নেই। ভারতীয় রেলস্টেশনে নাকি ভাল ব্যবস্থাপনা আছে বিশ্রাম, গোসল এসবের। তো প্রথম শ্রেণী যাত্রীদের বিশ্রামাগারের গোসলখানায় গিয়ে দেখি একটা ট্যাপ এর কল ছাড়া কোন কিছু নাই। নোংরা ফ্লোর, চারিপাশ। এসব দেখে গোসলের চিন্তা বাদ দিয়ে চলে আসলাম। একটা ফাস্টফুডের দোকান হতে রাতের খাবার কিনে নিয়ে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমাদের রাতের গোয়া হয়ে যাওয়া “রাজধানী এক্সপ্রেস” এর। রেল ষ্টেশনের চার্জার পয়েন্ট হতে সবাই ব্যস্ত ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস সব রিচার্জ করতে।
রাত দশটা নাগাদ রেলগাড়ী প্ল্যাটফর্মে ঢুকলে আমরা সবাই উঠে পড়লাম আমাদের নির্দিষ্ট বগীতে। যদিও সিট পড়েছে বিক্ষিপ্তভাবে ভিন্ন ভিন্ন কূপেতে। আমার সিট পড়েছে এক জৈন ধর্মাবলম্বী ফ্যামিলির সাথে। প্রথমে খুব পজেটিভলি নিলাম, তারা উপবাস আছে শুনে, আমার রাতের খাবার অন্য কূপেতে আমার ভ্রমণসঙ্গীদের সাথে গিয়ে খেয়ে এলাম। কিন্তু এদের বিশাল বহর মনে হয় পুরো ট্রেনেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কেননা, আমি আমার সিটে ফেরত এসে দেখি, আমার সিট দখল করে তাদের নানান আত্মীয় স্বজন এসে বসে পড়েছে, চলছে দেদারসে গল্প। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, ভাবলাম জরুরী কথা হয়ত চলছে, কথা শেষ করে চলে যাবে। আমি প্রায় মিনিট দশ-পনের অপেক্ষা করে শেষে বললাম, “ইয়ে মেরা সিট হ্যায়...”। উত্তরে বলল, “ও... আপ বায়ঠিয়ে গ্যা...”, ভাবখানা এমন আমি সারারাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনাদের গল্প শুনতে ট্রেনে উঠেছি।
যাই হোক, সারারাত উনাদের আরও নানান যন্ত্রণা দাঁত কামড়ে সহ্য করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। ভোরের আলো ফুটতে ঘুম ভাঙ্গল, ট্রেন গোয়ায় প্রবেশ করেছে। গোয়া’র দুটি প্রধান রেল ষ্টেশন, ‘মারগাও’ আর ‘ভাস্কো-দ্যা-গামা’ দুটোই পড়েছে দক্ষিণ গোয়ায়। ও হ্যাঁ, গোয়াকে দুটো ভাগে ভাগ করে সকল কিছু গড়ে উঠেছে, উত্তর গোয়া আর দক্ষিণ গোয়া। তো ইন্টার সিটি যত রেল, সব এই দুই ষ্টেশনে থামে। আমাদের ট্রেন আমাদের নামিয়ে দিবে মারগাও স্টেশনে। আমরা ফ্রেশ হয়ে নিজ নিজ ব্যাগপত্তর গুছিয়ে নিলাম। এরপর ট্রেনের এটেন্ডেন্ট নাস্তা নিয়ে এলে নাস্তা করে অপেক্ষা করতে লাগলাম মারগাও পৌঁছানোর।
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আমাদের নামিয়ে দিল গোয়ার মারগাও স্টেশনে। ষ্টেশন হতে বের হয়ে আমরা একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে রওনা হলাম গোয়ার রাজ্য রাজধানী ‘পাঞ্জিম’ এর উদ্দেশ্যে।
আয়তনে ভারতের ক্ষুদ্রতম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ ক্ষুদ্রতম রাজ্য গোয়া। গোয়ার উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্বে ও দক্ষিণেকর্ণাটক এবং পশ্চিমে আরব সাগর পরিবেষ্টিত গোয়ার রাজধানীর নাম পানজিম বা পনজী। গোয়ার প্রাপ্ত নানান শিলালিপি এবং অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বিশ্লেষণ করে বুঝা যায়, ভারতবর্ষের প্রাচীনতম মানব বসতী’র নিদর্শন গোয়া। আদি গোয়েন সমাজের সাথে ইন্দো-আর্য এবং দ্রাবিড় অভিবাসীরা মিশে গিয়ে গোয়ার প্রারম্ভিক সংস্কৃতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গোয়া ছিল মৌর্য সাম্রাজ্যের অংশ যার শাসনকর্তা ছিলেন বৌদ্ধ সম্রাট মগধের অশোক। সেই সময়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের হাত ধরে গোয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রসার ঘটেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতক হতে খ্রিষ্টাব্দ ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময় পর্যন্ত গোয়া শাসিত হয় ভোজা (Bhoja)দের দ্বারা। পরবর্তীতে এর শাসনভার কোলাহপুরের সাতবাহানা থেকে বাদামির চালুক্যদের কাছে চলে যায়। এরা শাসন করে ৫৭৮ থেকে ৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এর পর ৭৬৫ থেকে ১০১৫ সাল পর্যন্ত কোনকান এর (বর্তমান মহারাষ্ট্র) সিহারা শাসনের কেটে যায়। এর পরের কয়েক শতক কাদম্বাদের শাসনে থেকে গোয়ায় জৈন ধর্ম বিস্তার লাভ করে; যা চলে প্রায় ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত। ১৩১২ সালে গোয়া চলে আসে দিল্লী সালতানাতের অধীনে। প্রায় দুইশত বছর পর ১৫১০ সালে পূর্তগিজরা তৎকালীন ক্ষমতাসীন সুলতান ইউসুফ আদিল শাহকে পরাজিত করে দখল নেয় গোয়ার। প্রায় চারশতক স্থায়ী পূর্তগীজ আমলের চিহ্ন এখনো রয়েছে গোয়ার অলিতে গলিতে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও গোয়া রয়ে যায় পূর্তগীজ কলোনি হিসেবেই। ১৯৬১ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গোয়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে এবং ১৯৮৭ সালের ৩০শে মে, ভারতের ২৫তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে গোয়া স্বায়ত্তশাসন লাভ করে।
তো আগামী দিন তিনেক এর ট্যুরে এই ঐতিহাসিক গোয়ার অলিগলিতে খুঁজে বেড়ানো হবে সেই হারানো ইতিহাসের অংশ বিশেষ; পাঠক সেই ভ্রমণের গল্প শুনতে সাথেই থাকুন। এবার, আর খুব বেশী অপেক্ষায় রাখবো না, নিয়মিত হব খুব শীঘ্রই।
১৩ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:১০
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, ভাল থাকুন সবসময়
অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪
জোকস বলেছেন: অনেক দিন পর! মঙ্গল গ্রহে ছিলেন নাকি?
পরবর্তী পর্বে বেশি করে ছবি দেবেন।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫২
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: মঙ্গল গ্রহে রওনা হয়েছিলাম, কিন্তু কক্ষপথে আটকে গিয়ে ফিরে এলাম।
৩| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১১
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: আপাতত গোয়ার ইতিহাস জানা হলো....
পরে আরো গোয়ার ছবি চাই !
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:১৫
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ শাহরিয়ার কবীর ভাই। পরের পর্বগুলোতে আশা করি আরো ছবি সংযোজিত হবে। সাথেই থাকুন, ভাল থাকুন।
৫| ০২ রা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:১৯
সোহানী বলেছেন: জোকস বলেছেন: অনেক দিন পর! মঙ্গল গ্রহে ছিলেন নাকি? .....
আরে নাহ মঙ্গল এ নয়, নেপচুনে ছিল তাইতো এতো দেরীতে আসা।
তা দোস্ত ব্লগার কি খবর, পৃথিবীর সব জট কি একাই খুলছেন যে এতো সময় নিচ্ছেন ব্লগে আসতে..............
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: কোন উত্তর জানা নেই...
৬| ০৬ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: গোয়াতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। গেলে আপনার পোষ্টটা কাজে আসবে।
চমৎকার পোষ্ট, তবে কয়টা ছবি দিলে পারতেন!!!
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: পরবর্তী পোস্টগুলোতে ছবি থাকছে। ধন্যবাদ ভ্রাতা।
৭| ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৬
যাযাবর চখা বলেছেন: দারুন লাগলো। প্রিয়তে নিলাম।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই; বোকা মানুষের ব্লগে স্বাগতম।
৮| ০৯ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৭:২৮
টারজান০০০০৭ বলেছেন: পর্তুগিজ জাতির গোয়া ইন্ডিয়া কিভাবে দখল করিল ? এতোদিনেও উহা অক্ষত আছে দেখা যায় !
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: সে এক বিরাট ইতিহাস। গুগল করে নিলে বহু তথ্যই পেয়ে যাবেন।
৯| ২৫ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮
রানা আমান বলেছেন: এই এরনাকুলাম রেলস্টেশনেরই বিশ্রামাগারের গোসলখানা নিয়ে আরেকজনের লেখা পড়লুম সম্প্রতি , তিনি তো প্রশংসায় পন্চদশমুখ এই গোসলখানার , এমন সুব্যবস্থা নাকি উনি বিমোহিত । কি জানি কেমনে কি !! তবে আপনার পোস্ট দারুন লাগলো। প্রিয়তে নিলাম।
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪৬
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: লেখকও বলছেনঃ কি জানি কেমনে কি !!
ধন্যবাদ রানা আমান ভাই।
১০| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬
চাঙ্কু বলেছেন: গোয়া সমুদ্র সৈকত একটু লেইখেন! বাড়ির পাশে এইটার কথা এত শুনলাম কিন্তু কোনদিন যাওয়া হল না!
০৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আসলে গোয়া'র সমুদ্রতট প্রায় বিশের অধিক ছোট ছোট নানান বৈচিত্রের সৈকত নিয়ে বিরাজমান। এই সিরিজের সাথেই থাকুন, গোয়ার নানান সৈকত এর কথা লেখা হচ্ছে।
ভাল থাকুন সবসময়।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৬
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম আপনার পরবর্তী পর্বের জন্য।