নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বোকা মানুষের কথায় কিই বা আসে যায়

বোকা মানুষ বলতে চায়

আমি একজন বোকা মানব, সবাই বলে আমার মাথায় কোন ঘিলু নাই। আমি কিছু বলতে নিলেই সবাই থামিয়ে দিয়ে বলে, এই গাধা চুপ কর! তাই আমি ব্লগের সাহায্যে কিছু বলতে চাই। সামু পরিবারে আমার রোল নাম্বারঃ ১৩৩৩৮১

বোকা মানুষ বলতে চায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষার প্রতিবেশীরা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৪৬



২০১৮ সালের ডিসেম্বর এর এক ভারত ভ্রমণের শেষে দেশে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট লাউঞ্চে বসে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিল। বৃহত্তর বাংলা’র কথা প্রায়শই নানান জায়গায় শোনা যায়। এর বাস্তবতার এক ভিন্ন রূপ সেবার ধরা দিয়েছিল বাংলা ভাষার উৎসমূলের ব্যাপ্তি এবং প্রভাব এর কথা চিন্তা করে। সেবারের দুই সপ্তাহের ট্যুরে গন্তব্য ছিল ভারতের চারটি প্রদেশঃ পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, আসাম এবং নাগাল্যান্ড। অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করছিলাম পশ্চিমবঙ্গ’র বাইরে উড়িষ্যা, আসাম এবং নাগাল্যান্ড এর কথ্য ভাষার প্রায় শব্দই বাংলার খুব কাছ ঘেঁষা। ইতিহাস বা সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম না বিধায় আগে এতটা ধারণা ছিলো না। উৎসুক হয়ে এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, এদের সবার আঁতুড়ঘর বাংলার সাথেই। সবাই একই বংশের সন্তান। পশ্চিমবঙ্গ’র বাংলা, উড়িষ্যা’র ওড়িয়া, আসাম এর অসমিয়া আর নাগাল্যান্ড এর নাগামিজ; সকল ভাষার কথা শুনে মনে হবে যেন বাংলা ভাষার কথা শুনছেন; কিন্তু অনেকটাই বুঝতে পারছেন না। এর কারন অনুসন্ধানে যা জানতে পারলাম তা নিয়ে আজকের এই পোস্ট, সাথে বাংলা ভাষাভাষী নিয়ে গঠিত অঞ্চলের ব্যাপ্তি নিয়ে অবাক হওয়া।

পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার ভাষা প্রচলিত রয়েছে। এই ভাষাসমূহের মধ্যকার উৎপত্তিগত সাদৃশ্যতা বিবেচনা করে এদের কয়েকটি মূল ভাষা শ্রেণীতে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলঃ

(১) ইন্দো-ইউরোপীয়
(২) সেমিটিক-হেমিটিক
(৩) বান্টু
(৪) ফিন্নো-উগ্রিক
(৫) তুর্ক-মোঙ্গল-মাঞ্চু
(৬) ককেশীয়
(৭) দ্রাবিড়
(৮) অস্ট্রিক
(৯) ভোট-চীনীয়
(১০) উত্তর-পূর্ব সীমান্ত বংশীয়
(১১) এসকিমো

আজকের বাংলা ভাষার জন্ম এই ইন্দো-ইউরোপীয় শ্রেণী হতে, যার শেকলটা অনেকটা এরকমঃ ইন্দো-ইউরোপীয় > আর্য > ভারতীয় > প্রাচীন ভারতীয় আর্য > প্রাচীন ভারতীয় কথ্য আর্য > সংস্কৃত হয়ে মাগধি প্রাকৃতের (খ্রি.পূ ৬০০-খ্রি ৬০০) পরবর্তী স্তর মাগধি অপভ্রংশ এবং তৎপরবর্তী স্তর অবহট্ঠের মধ্য দিয়ে নব্যভারতীয় আর্যভাষারূপে বাংলার উদ্ভব হয়। ভাষা পরিবার হিসেবে সংক্ষিপ্ত রূপ এমনঃ ইন্দো-ইউরোপীয় > ইন্দো-ইরানীয় > ইন্দো-আর্য > পূর্ব ইন্দো-আর্য > বাংলা-অসমীয়া > বাংলা। আর এর সঙ্গেই উদ্ভূত হয় পূর্বমাগধীয় আরও দুটি ভাষা ওড়িয়া ও অসমিয়া। যে কারণে এই ভাষাগুলোর সাথে অনেক মিল বাংলা ভাষার। কিন্তু অসমীয় বর্ণমালার সাথে বাংলা বর্ণমালার অনেক মিল থাকলেও অমিল ওড়িয়া ভাষার সাথে। এর কারণ দক্ষিণ ভারতীয় প্রভাব। ওড়িয়া ভাষার বর্ণমালাগুলো গোলাকার যার কারণ হিসেবে এর সৃষ্টিকালীন সময়ে গোলপাতায় ধারালো কলম-সদৃশ বস্তু দিয়ে লেখা হত বলে সরলরেখার ব্যবহার এই বর্ণমালায় পরিলক্ষিত হয় না। ওড়িয়াতে ২৮টি ব্যঞ্জনধ্বনি ও ৬টি স্বরধ্বনি আছে। অপর দিকে অসমীয় ভাষার অসমীয়া ভাষা বর্তমানে পূর্ব নাগরী লিপিতে লিখা হয়। বাংলা বর্ণমালার একটি সামান্য পরিবর্তিত সংস্করণে "অসমীয়া বর্ণমালা" তৈরি করা হয়েছে। বাংলা বর্ণমালার মতই এতে ১১টি স্বরবর্ণ আছে। তবে ব্যঞ্জনবর্ণ ও অন্যান্য চিহ্ন আছে ৫৪টি। যেগুলোর সাথে বাংলা ভাষার রয়েছে প্রচুর মিল। অপরদিকে নাগামিজ ভাষার সৃষ্টিই হয়েছে অসমীয় ভাষা থেকে। নাগামিজ নাগাল্যান্ড এ প্ৰচলিত একটা মিশ্ৰ ভাষা যা অসমীয়া ভাষাকে ভিত্তি করে এর সৃষ্টি হয়েছে। তার সাথে বাংলা, হিন্দী, বিভিন্ন নাগা ভাষা এবং অন্যান্য ভাষারো কিছু মিল দেখা যায়। অল্‌ ইণ্ডিয়া রেডিও ' স্টেশনের কর্মীরা "নাগামিজ" (Naga+Assamese) শব্দটির উদ্ভাবন করেন; যা এই মিশ্র ভাষার একটি স্বতন্ত্র নাম প্রদান করে। যদিও এর বর্ণমালা’র সাথে বাংলা বা অসমীয় বর্ণমালা’র লিখিত রূপের মিল পাওয়া যাও না।

পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ এর বাইরে ত্রিপুরায় বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিহার এবং ঝাড়খণ্ড এ বাংলা ভাষার প্রভাব এবং বিস্তার রয়েছে প্রচন্ড রকম। তাই সকল বিভাজন একক ভুলে গিয়ে কল্পনা করতে মন চায়, বাংলা ভাষা ভিত্তিক অঞ্চলের বিশালতাটুকু... ত্রিপুরা, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা, নাগাল্যান্ড ... ভাবা যায়!!!

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এর প্রাক্কালে সকল বাংলা ভাষাভাষী এবং এর আঁতুড়ঘর এর প্রতিবেশী ভাষাভাষী’দের জন্য ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর শুভেচ্ছা রইবে

হুট করেই, অতি সম্প্রতি বাংলা বর্ণমালা'র এই ক্রমবিবর্তন এর ছবিটি সংগ্রহে পেয়ে গেলাম, তাই এই পোস্টে সংযুক্ত করে দিলামঃ

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলা ভাষার একটা গুণ হলো, যারা বাংলায় কথা বলেন, তারা একটু বেশী অকারণ বিপ্লবী।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এই সমস্যাটি মনে হয় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশ এর বেশীরভাগ জনগোষ্ঠীরই, বাংলা ভাষাভাষীদের হয়তো কিছুটা বেশী।

আচ্ছা আমার লেখায় কিছু বিপ্লবী ফ্যাক্ট থাকলে বোধহয় ভালো হতো ;)

=p~ =p~ =p~

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৩

নীল আকাশ বলেছেন: খুব সুন্দর একটা পোস্ট। অনেক কিছু জানা গেল। আপনাকে ধন্যবাদ।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:২৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। পাঠ এবং মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট।

০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ রাত ৮:০৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৩৫

মা.হাসান বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে। তবে পশ্চিমবাংলায় বাংলার প্রচলন থাকলেও কোলকাতায় বাংলা বলার লোক মনে হয় কম

০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ রাত ৮:১২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: আসলে কলকাতায় আমরা বেড়াতে গিয়ে যে সকল লোকদের মুখোমুখি হই, যেমনঃ নানান দোকানদার, ট্যাক্সি/অটো/রিকশা চালক, বাস কন্ডাক্টর, নানান ফুটপাথের দোকানী ইত্যাদি; এদের বেশীরভাগই বিহার, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, আসাম সহ আশেপাশের নানান এলাকা থেকে আসা নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে কলকাতার বাসিন্দাদের সাথে তেমন দেখা বা কথাবার্তা'র সুযোগ কম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না, কলকাতায় বাংলা বলার লোক কম। হিন্দি'র ব্যাপক আগ্রাসনের ফলে এখন বেশীরভাগ কলকাতা'র ছেলেমেয়েরাই বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজী তিনটিতেই ফোকাস করছে।

ধন্যবাদ মা.হাসান ভাই। মাঝখানে একটু ব্যস্ত ছিলাম, তাই প্রতিত্তর দিতে একটি দেরী হয়ে গেল। ভালো থাকুন সবসময়।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাষা দিবসে ভাষার ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও দারুন একটা পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ বোমাবচা ;) ভায়া

আমাদের মিডিয়াতে এগুলো হাইলাইটস করা উচিত নানা ভাবে
শেকড় সন্ধানী চেতনা না জাগালে জলে ভাসা শেওলার মতো ভেসে যাবে নতুন প্রজন্ম!

ভাষা দিবসে আপনার দারুন নৈবদ্যে আবারো ধন্যবাদ

+++

৬| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২১

অনেক কথা বলতে চাই বলেছেন: মানচিত্রে রোহিংগাদের বাংলা বলাটা বাদ পড়েছে। তারা বাংলা বলে তাই বলা হয় তারা বাংলাদেশি। আসলে, মায়ানমারের ঐ অংশে যে বাংগালি থাকে এটা মায়ানমারের মোটা বেড়ালগুল না মানলেও আমাদের promote করা উচিত।

৭| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: বোকা মানুষ বলতে চায়,




ভাষা দিবসের যোগ্য পোস্ট। নিজেকে খুঁজতে হলে এসব জানা উচিৎ।

৮| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: খুবই ইনফরমেটিভ একটা পোস্ট। আপনার ভাবনাটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং বলতেই হচ্ছে, মহান ভাষা দিবসে আপনি একটা যথার্থ পোস্ট লিখেছেন। বাংলা মায়ের সকল সন্তান মায়ের আঁচলাশ্রয়ে ফিরে আসুক!

পোস্টে চতুর্থ লাইক! + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.