নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ভো নিগুয়েন গিয়াপের জন্মদিন

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:১১


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে কর্ণেল ওসমানির কথা বাঙ্গালিরা ভুলবে না। সমগ্র বাংলাদেশের ১১ টা সেক্টরের যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন এই বীর যোদ্ধা। বীর কিন্তু সব দেশেই জন্মায়, এই ধরুন কিউবার ক্যাস্ট্রো ভ্রাতৃদ্বয়, আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, জার্মানির বিসমার্ক, ভারতের সুভাস বোস। যাই হোক বীরের তালিকা করতে গেলে বিশাল লম্বা তালিকা করা লাগবে। এই বীরেরা মূলত স্বাধীনতা বিপ্লবী। দেশের স্বাধীনতার জন্য অকাতারে প্রান বিলিয়ে দিতেও তাদের দ্বিধা ছিল না। আসেন সেই রকম এক বীরের গল্প বলি আজ।

১৮ শতকের মাঝামাঝি। ভিয়েতনাম।সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্সের স্থায়ী উপনিবেশে পরিণত হয় দেশটি। শত চেষ্টা করেও দখল মুক্ত করতে পারছিল না স্থানীয় ভিয়েতনামিজরা। ভো নঘিয়েম ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৯১৯ সালের কোন এক বিকালে সাম্রাজ্যবাদী ফ্রান্সের উপনিবেশিক সরকার ভো নঘিয়েমকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। গ্রেফতার করার দুই সপ্তাহের ভিতরে নির্যাতনের কারনে নিহত হয় ভো নঘিয়েম। কিন্তু এক বিপ্লবী জেলে মারা গেলেও তখনো হাজার বিপ্লবী জেলের বাইরে ছিল। আর জেল হত্যার শিকার হওয়া আসামীর পরিবার তো থাকলই।

আমি যে বীরের কোথা বলতে যাচ্ছি, তিনি হলেন ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর নায়ক ভো নিগুয়েন গিয়াপ। ভো নঘিয়েম ছিলেন নিগুয়েন গিয়াপের বাবা। ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদী সরকারের দ্বারা বাবা হত্যার প্রতিশোধ ও নিজ স্বদেশকে মুক্ত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ভো নিগুয়েন গিয়াপকে স্বাধীনতা বিপ্লবী করে তুলেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তৎকালীন আরেক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি জাপান, এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো ভিয়েতনামেও অগ্রাসন চালায়। ফ্রান্সের রাজত্বের দিন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু না। এক সাম্রাজ্যবাদীর হাত থেকে মুক্ত হতে গিয়ে ভিয়েতনাম পড়ে যায় আরেক দুষ্টু সাম্রাজ্যবাদীর হাতে।

যাই হোক, ১৯৪৫ সালের আগস্টের ৬ ও ৯ তারিখে আমেরিকা জাপানের দুটো শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে। উদ্দেশ্য ছিল তড়িঘড়ি করে বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ করা। ঘটনায় তাৎক্ষনিক নিহত হয় প্রায় এক লাখ মানুষ আর পরবর্তিতে আরো কয়েক লাখ। জাপানে বোমা ফেলার পর বিশ্বযুদ্ধে এশিয়া অংশের যুদ্ধ সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। জাপান যে সমস্ত দেশে আগ্রাসন চালিয়েছিল তারা একে একে মুক্ত হতে থাকে। ভিয়েতনামিজরা একটা সুযোগ খুজছিল। এতে করে তারা দুই সাম্রাজ্যবাদীকেই ঝেটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম। ফ্রান্স আবার ফিরে এসে তাদের পুরানো রাজত্ব দাবি করে বসে। এদিকে ভিয়েতনামে তখন জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক শক্তি গুলো মুটামুটি শক্তিশালি হয়ে উঠেছিল।

মূল ঘটনা শুরু হয় ১৯৪১ সালের ১৯ মে ভিয়েত মিন নামক রাজনৈতিক এলায়েন্সের জন্ম হবার পর। ভিয়েতনামে এই জো্টের আহ্বান দাবানলের মতো স্বাধীনতা আন্দোলনকারী দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছিল এই স্বাধীনতার আন্দোলন।

ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদীদেরকে হটাতে এরপর শুরু হয়েছিল গেরিলা যুদ্ধ। যার পুরো ঘটনা ভো নিগুয়েন গিয়াপ তার " পিপলস ওয়ার, পিপলস আর্মি" বইতে উল্লেখ করেছেন।গেরিলা যুদ্ধের একটা সময়ে গেরিলারা তাদের স্ট্রেটেজি চেইঞ্জ করতে থাকে। কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়ে, নিজ নিজ এলাকার ক্যাডাররা বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে। এবং চূড়ান্ত ভাবে ১৯৫৪ সালে ভো নিগুয়েন গিয়াপের কমান্ডে পরিচালিত "দিয়েন বিয়েন ফু" ব্যাটলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পরাজিত হয়। এবং ১৯৫৪ সালে ১৭ ডিগ্রি অক্ষ রেখা বরাবর জন্ম নেয় দুটো নতুন রাষ্ট্রের। সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম বা উত্তর ভিয়েতনাম আর ফ্রান্সের চরম আজ্ঞাবহ পুতুল সরকার দিয়ে পরিচালিত স্টেট অফ ভিয়েতনাম।

এরপর শুরু হয় নতুন আরেক যুদ্ধের। বিপ্লবী যোদ্ধাদের এখন খাবার, পানি, প্রশিক্ষনের জন্য জায়গা এবং মাথা গোজার ঠাই আছে। তারা দুই ভিয়েতনামকে এক করা ও গাদ্দারদের শাস্তি দেয়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। এরপর মাটিতে ট্রেঞ্জ খোড়া শুরু হয়, প্রায় ৬০০ কিমি পর্যন্ত ট্রেঞ্জ পাওয়া গেছিল যুদ্ধের শেষে। ভিয়েত কং দের প্রচন্ড আক্রমনে ফ্রান্স টিকতে না পেরে ১৯৬৫ সালে তার বহুদিনের পরীক্ষিত মিত্র আমেরিকাকে ডেকে নিয়ে আসে। যুদ্ধের নতুন মাত্রা যোগ হয়, আমেরিকা ভিয়েতনাম অভিযানে নামার পর। শয়ে শয়ে আমেরিকান সৈন্যের মৃত্যু ও যুদ্ধ সরঞ্জামের ক্ষতি হতে থাকে।

এই যুদ্ধের পুরো সময়ে সমরক্ষেত্রের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল ভো নিগুয়েন গিয়াপ। ১৯৭২ সালের দিকে গিয়াপের ভিয়েত কং রা অনেক ভালো অবস্থান তৈরী করে।আমেরিকান দের সকল মিলিটারি সাপ্লাই তারা বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়। ভিয়েতনামের পুতুল সরকারের বিরুদ্ধে চালানো প্রোপাগান্ডা কাজে দেয়। অবশেষে.১৯৭৫ সালে সায়গনের পতনের মাধ্যমে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। দুটো সত্ত্বা এক হয়ে যায়। আবার জন্ম নেয় ভিয়েতনাম রাষ্ট্রের। এ যেন রাষ্ট্রের পুনঃমিলন। ছেড়ে আসা বন্ধুর সাথে অনেক দিন পরে দেখা। রাস্তায় রাস্তায় আনন্দের বন্যায় ভেসেছিল সেদিন সায়গন।

যুদ্ধের পরে ভো নিগুয়েন গিয়াপের অনেক গৌরবময় অধ্যায় চেপে গেছিল সম্মিলিত সরকার। তাকে শত্রু ভাবতে থাকে, রাজনীতিবীদেরা। তার অনেক সাফল্যকে অবজ্ঞা করেছিল, সে সময়ের সমাজতান্ত্রিক সরকার। তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে কুন্ঠিত ছিল ভিয়েতনাম।

বীরেরা কখনোই সম্মান পাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে না। তার বেলায় ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। দেশের জন্য যেটুকু করার দরকার সেটুকু তো তিনি করেছেন।

আর কি লাগে একজন বীরের? এটাই তো তার সবচেয়ে বড় পাওয়া। ভিয়েতনামিজরা মনে রাখেনি, তাতে কি হয়েছে? হাজার মাইল দূরে পৃথিবীর নীভৃত কোনা থেকে কেউ না কেউ তো তাকে মনে করছেই। যেমন আমি এই বীরকে স্বরণ করলাম।

আজ ২৫ আগস্ট। আজ এই বীরের জন্মদিন। ১৯১১ সালের এমনই এক দিনে তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন, ভিয়েতনামিজ জাতির মুক্তির সনদ নিয়ে। যুদ্ধ জয়ের নেশা নিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাস্ত করেছিলেন।

ভো নিগুয়েন গিয়াপের জন্মদিনে স্বরণ করছি ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত ও আহত হওয়া সকল মুক্তিযোদ্ধা ভিয়েত কং কে। জাতিকে স্বাধীনতা সুখ পাইয়ে দেবার জন্য যারা সংগ্রাম করেছিলেন। প্রান দিয়েছিলেন।

আমার প্রিয় সমর নায়ক ভো নিগুয়েন গিয়াপের জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

বীরদের জয় হোক, জয় হোক সকল যোদ্ধার।

শুভ জন্মদিন কমরেড।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.