নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্তান হত্যা কেন? সাইকোলজিটা কি?

৩০ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:২৯


রাজধানী ঢাকার উত্তর বাসাবো এলাকায় এক বাসার ছাদের চিলে কোঠার ঘর থেকে পুলিশ দুই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হলো এই শিশু দুটোর ঘাতক হলো তাদের গর্ভধারিণী, জন্মদাত্রী মা স্বয়ং। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই রকম ঘটনা।

আমি নিজে দেখেছি, মা পাগলি কিন্তু তার কোলের সন্তান কে সে বাচিয়ে রাখতে চায়। এটুকু বোঝে যে, এ তার খুব কষ্টের ধন। এ তার নাড়ি ছেড়া ধন। পাগলি নিজে না খেয়ে, নিজের সন্তানকে খাওয়াতেও দেখেছি।

বাসাবোর ঘটনা এতটাই মর্মান্তিক যে আমি ক্ষণিক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। এই ঘটনায়ও আমার দেখা পাগলির মত শিশু দুটোর মা মানসিক ভারসাম্যহীন। শিশু দুটোর বাবা, ঢাকা ওয়াসাতে চাকরি করে। পুলিশ সন্দেহের জন্য তাদের বাবাকে তাৎক্ষনিক গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। এবং সকাল ৯:৩০ এর দিকে পুলিশ ঘাতক মাকে ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পুলিশ ধারনা করছে, ১২ জুলাই রাত ৬:৩০ থেকে ৮:৩০ এর ভিতরে শিশুদুটোকে মা ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে জবাই করে। প্রতিবেশিরা ও আত্নীয়রা জানাচ্ছে যে, ঘাতক মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং আন্ডার মেডিসিনাল ট্রিটমেন্ট এ ছিলেন।

এখন বিষয় হলো, একজন মানসিক রুগী যে কিনা আবার একজন মা, তাকে তার সন্তানের সানিধ্যে রাখা যাবে কি না?

উত্তর হলো, হ্যা যাবে। কারন লক্ষ লক্ষ উদাহরণ রয়েছে। এবং আমাদের দেশে সেরকম কোন আইন ও নাই যে মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মা তার সন্তানকে কাছে রাখতে পারবেন না। কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটছে?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইরকম ঘটনা ঘটেছে। সাইকো বাবা অথবা মা তাদের পরকীয়া বা সাংসারিক ঝামেলা গুলা সন্তানদের হত্যা করে মিটানোর চেষ্টা করে। এটা এমন এক ধরনের মানসিক বিকৃতি যে এই সমস্যার কোন ডেফিনেট সমাধান নাই। তবে বাসাবোর ঘটনার ক্ষেত্রে এই পরকীয়া বা সাংসারিক ঝামেলা নাই বলেই পারিবারিক ও প্রতিবেশী সূত্র বলেছে।

মায়ের কোলকেই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আবাস বলে ধরা হয়। কিন্তু সেই মা যখন সন্তান হত্যায় মেতে ওঠে তখন নিরাপত্তা কোথায়?

অভিভাবক দ্বারা শিশু হত্যা বাংলাদেশে একদম নতুন একটা বিষয়। কিছু দিন আগেও এভাবে মা কতৃক সন্তান হত্যা বাংলাদেশের জনগন দেখেছে। পরকীয়া ও সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর কারনে মা তার সন্তানকে হত্যা করেছেন।

কিন্তু কেন? কেন এরকম হত্যা কান্ড হচ্ছে?

হত্যাকান্ড গুলোর মোটিভ জানা গেলেও সাইকোলজিটা অজানা থেকে যাচ্ছে। আমেরিকা বা অন্যান্য উন্নত দেশে এরকম ঘটনা হওয়া মাত্রই সাইকোলজিস্টরা কারন অনুসন্ধানে নেমে পড়েন। রোগীকে অবজার্ভ করে পৃষ্টার পর পৃষ্টা রিসার্চ আর্টিকেল লেখেন। রোগীকে আরো ভালোভাবে জানার জন্য মেন্টাল কেয়ারে নিয়ে চিকিৎসা করেন এবং একসময় রুগীকে সুস্থ করে তোলেন।

আমি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সমস্যার কিছু কারন বের করার চেষ্টা করেছি। আমি নিজে সাইকোলজিস্ট না। তবে মানুষ হিসাবে মানুষের সাইকোলজি বোঝাটা অনেক জরুরি বলে মনে করি।

অনেক গুলো কারনের ভিতর প্রথম কারন হলো, পারিবারিক বন্ধনের শিথিলতা। যৌথ পরিবারের ভাঙন এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি। আগেকার যৌথ পরিবারে থাকা শিশুর মানসিক ও শারিরিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো ছিল। এখনকার বাবা মা ও শিশুরা একক পরিবারে বড় হবার কারনে তাদের ভিতরে পারিবারিক বন্ধনের মূল্যবোধ নাই বা খুব কম বিদ্যমান। তারা নিজেরটা ছাড়া আর কারোটাই বোঝে না। সেখান থেকে মানসিক ডিপ্রেশন এবং নানা ধরনের অপরাধ মূলক কাজে তারা জড়িয়ে যাচ্ছে।

তারপর, অতিমাত্রায় শিল্পায়ন ও পুঁজিবাদী চিন্তাধারাকে দোষা যায়। এখন মানুষ টাকা কামানোর জন্য এত ব্যাস্ত যে, নিজের পরিবারের প্রতি কোন দৃষ্টি দেবার সময় হয়তো তাদের মিলছে না।

অসুস্থ আকাশ সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে আমাদের মহিলা ও শিশুদের মনঃস্তত্তে। মহিলারা এখনকার বাজে অনুষ্ঠান গুলো দেখে তাদের নিত্যদিনের কাজের ভিতর তার প্রয়োগের নানা ধরনের দৃষ্টান্ত রাখছে। এতে করে পরকীয়া থেকে শুরু করে স্বামী হত্যা বা সন্তান হত্যা করতে তাদের বাধছে না। আর শিশুরা তাদের বাবা-মা কে অনুসরণ করে সেই অনুষ্ঠান গুলাই আরো বেশি ভক্তি নিয়ে দেখছে।

তারপর আসেন, নানা ধরনের সহজলভ্য মাদকদ্রব্যের প্রচলন। ঐশি তার বাবা মাকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছিল। সে ঘটনার সময় ও নেশাগ্রস্ত ছিল এবং তার বাবা মাকে নির্দ্বিধায় হত্যা করেছিল। ঐশি ইয়াবা নিতো। ইয়াবা এমন এক ধরনের মাদক যা ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজিদের সেবন করার জন্য হিটলার ব্যবহার করেছিল। অক্লান্ত যুদ্ধ ও জেগে থাকার জন্য। প্রথমে ভালো ফল পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে হিটলারের সেনারা একে অপরকে হত্যা করতে থাকে। এই ইয়াবাও হিটালারের পতনের আর এক ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছিল।

বিচ্ছিন্ন সামাজিক পরিবেশ হলো এসব অপরাধের আরো একটা কারন বলে আমি মনে করি। এখনকার বাবা-মায়েরা মনে করেন তাদের সন্তান অন্য ছেলে বা মেয়েদের সাথে মিশলে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি বাবা-মারা তাদের সন্তানদের দাদা-দাদী কিংবা নানা-নানীর কাছে যেতেও বাধা দেন। এর কারন হিসাবে দেখান, সেখানে নাকি তারা গ্রাম্য অশিক্ষিত সংস্কৃতি শিখে যেতে পারে।

২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া "মার্টিন স্কোরসেজি"র পরিচালনায় "লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও" র অভিনয় করা "সাটার আইল্যান্ড" মুভিটা দেখলে বুঝতে পারবেন। এই ছবিটাতেও আজকের ঘটনার একটা রুপ তুলে ধরা হয়েছে।

আমেরিকানদের মারাত্মক পুঁজিবাদী মনোভাব ও একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পিতামাতার ব্যস্ততা কারনে ঘটা মা কতৃক তিন শিশু হত্যার অপরাধের কাহিনী দিয়ে ছবিটার প্লট তৈরী করা হয়েছে।

যদিও এই ধরনের ঘটনা লাখ বা কোটিতে একটা ঘটে তবে এর ছাপ পুরো সমাজেই পড়ে যায়। বাংলাদেশে এই ধরনের অপরাধের কেবল শুরু হয়েছে। যদি সঠিক কারন ও সাইকোলজিটা এখনই উদ্ধার করা যায় তবে হয়তো আগামীদিনের অনেক পারিবারিক ও সামাজিক অপরাধ রুখে দেয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশী সাইকোলজিস্টরা এগিয়ে আসুন, কারন অন্য দেশের সাইকোলজিস্টরা আমাদের দেশের মানুষের সাইকোলজিটা ঠিকঠাক বুঝবে না। সমস্যাটা যতটা না অপরাধ তার চেয়ে বেশি অসুস্থ সামাজিক মনস্তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রকাশ বলে আমি মনে করি।

আর আজকের ঘটনায় নিহত দুই শিশু ও তাদের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি। শিশু দুটোর আত্নার শান্তি কামনা করছি এবং মায়ের সুস্থতা কামনা করছি।

তাই বলছি, এখনই সময়। আমাদের মা দের কে বাঁচান। আমাদের শিশুদের কে বাঁচান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.