নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার ব্লাস্ট ও দুই কোরিয়ার একীভূতকরন

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০৭


১৮ মে ১৯৭৪, পোখরান, ইন্ডিয়ান নিউক্লিয়ার টেস্ট সাইট, রাজস্থান, ইন্ডিয়া

১৮ মে ১৯৭৪, ইন্ডিয়া তার ইতিহাসের প্রথম শান্তিপূর্ন নিউক্লিয়ার উইপন টেস্ট করে। যে রকেটে করে ইন্ডিয়া তার প্রথম নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সহ মিসাইল লঞ্জ করে সেটা মিসাইল ম্যান খ্যাত এ পি জে আবুল কালাম আজাদের টেস্ট প্রজেক্ট ছিল। মিসাইল টার নাম ছিল " স্মাইলিং বুদ্ধা"। ১২ কিলোটন ক্ষমতা সম্পন্ন মিসাইলটা পরীক্ষা করা হয়েছিল মাটির নীচে। ইন্দিরা গান্ধী যে দিন সকালে এই নিউক্লিয়ার টেস্টের কথা ঘোষনা করেন সেদিন থেকেই ভারত পারমানবিক শক্তিধর দেশের ক্লাবে প্রবেশ করে। কিন্তু সমস্যা বাধে অন্য জায়গায়। পশ্চিমারা এই পারমানবিক পরীক্ষা ও ভারতের নিউক্লিয়ার শক্তি অর্জনকে ভালো চোখে দেখে নি। অর্থনৈতিক অবরোধ সহ সকল সাহায্য সহযোগিতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পশ্চীমারা। গল্পটা আমি লিখছি না। এটা এ পি জে আবুল কালাম আজাদ তার " দ্যা উইংস অফ ফায়ার" বইতে দারুন ভাবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি পশ্চীমা দেশগুলো থেকে কিছু বছর ভারত একটা পিন পর্যন্ত আমদানী করতে পারে নি। পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান জায়ান্ট বুল ইকোনোমির লাগাম কেউ টেনে না ধরতে পেরে তার সাথে সন্ধি করে পশ্চীমারা।

২৮ মে ১৯৯৮, রাস কোহ, বেলুচিস্থান, পাকিস্থান

আব্দুল কাদিরের নাম শুনেছেন? দ্যা ম্যাড সায়েন্টিস্ট বলে ডাকত তার দোস্তরা। তিনি যখন নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে " ফিজিক্স ডিনামিক্স রিসার্চ ল্যাব" এ কাজ করতেন তার পাগলামির অত্যাচারে তার সহকর্মী ও সিনিয়র রিসার্চাররা মারাত্বক শংকিত থাকতেন। না জানি কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন। বাস্তবিক পক্ষে তিনি ছিলেন, বাংলায় যাকে বলে "অঘটনঘটন পটিয়সি"। ১৯৭১ সালে তার ল্যাব ছেড়ে তিনি পাকিস্থানে চলে আসেন যখন জুওলফিকার আলী ভূট্ট তার এক গোপন ইচ্ছার কথা এই পাগলা বিজ্ঞানীকে বলেছিলেন। ১৯৭২ সালেই সেই টপ সিক্রেট ইচ্ছার প্রজেক্ট "ক্রাশ প্রোগ্রাম" চালু হয়। যার অন্তরালে আসলে চলত নিউক্লিয়ার বোমা ও ইউরোনিয়ামের শোধনের কাজ। যাই হোক সারাটা জীবন তিনি যতগুলো দূর্ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তার ভিতর সবচেয়ে কাজের দূর্ঘটনাটা তিনি ঘটিয়েছিলেন ২৮ মে ১৯৯৮। যেদিন বেলুচিস্থানের এক নিভৃত স্থান রাস কোহ থেকে পাকিস্থান তার প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মিসাইল "চাগাই-১" এর টেস্ট করেছিল। সাথে সাথে পাকিস্থানের চির প্রতিদ্বন্দী ভারতের সাথে শক্তির সমতা এসেছিল। সারা বিশ্বের সাথে কাদিরের ল্যাব কলিগরাও তাকে প্রচন্ড চিয়ার্সে ফেটে পড়েছিল। তাদের মেসেজটা ছিল, " পাগলাডা একটা কিছু করে দেখিয়েছে"।

১৯৯৯, কোন এক সন্ধ্যা, লাহোর বিমানবন্দর, পাকিস্থান

লাল নীল পতাকা মার্ক করা মাঝারি সাইজের একটা বিমান লাহোর বিমানবন্দরের টারম্যাকে যখন নামে তখন প্রায় সন্ধ্যা। বিমানে করে এসেছে বিশ্বের কাছে নিষিদ্ধ এমন একটা দেশের কিছু পদার্থ বিজ্ঞানী যাদের দিনের আলোতে বেরোনো নিষেধ। দেশটা উত্তর কোরিয়া। একজন জেনারেল সহ ৫০ জনের একটা টিম এসেছিল। লাহোর বিমান বন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন স্বয়ং আব্দুল কাদির। দুটো বড় বড় সিল করা কেসের অদল বদল হয়। আব্দুল কাদিরের হাসি মুখই বলেছিল আজ রাতের ঘুমটা দারুন হবে। এবং আরো চার দিন ইরান, দক্ষীন আফ্রিকা, মালেশিয়া ও লিবিয়ান চারটা বিমান আসলে একই রকমের কেসের আদান প্রদান হয়েছিল। একটা কেসে ছিল ১০০ মিলিয়ন করে ডলার আর অন্যটাতে ছিল নিউক্লিয়ার মিসাইলের ব্লুপ্রিন্ট ও স্যাম্পল ফিউজ।

৯ অক্টোবর ২০০৬, পাংগাইরি, উত্তর হ্যামগিয়ং, উত্তর কোরিয়া

দীর্ঘ ৬ বছর আব্দুল কাদিরের দেয়া ব্লু প্রিন্ট ও ফিউজের ডেভেলপমেন্টের কাজ শেষে উত্তর কোরিয়া তার প্রথম নিউক্লিয়ার মিসাইলের পরীক্ষা করে। কাদির মিয়া হুশিয়ার করে বলে দিয়েছিলেন যে, তার হুবহু নকশার ফিউজ যেন ব্যবহার না করা হয়। তাতে তিনি ধরা পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু আই এ ই এ (IAEA) এর এল বারাদি সাহেব অত বোকা ছিলেন না। আন্তর্জাতিক তদন্তে কাদির মিয়া যে এই টেকনোলজি বেচা বিক্রির সাথে জড়িত ছিলেন তা প্রমান করে দিয়েছিলেন। যাই হোক উত্তর কোরিয়াও নিউক্লিয়ার ক্ষমতাশালী দেশের ক্লাবে ঢুকে পড়ে। সময়টা ছিল কিম জং ইলের। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী নীতির একমাত্র সামরিক থ্রেট ছিলেন এই কিম জং ইল। প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড নিউক্লিয়ার টেস্টের পর আমেরিকার চেহারাটা দেখার মত ছিল। ২০-৩০ টা চড় মারার পর প্রেমিকার চেহারা যেমন হয় ঠিক তেমন হয়েছিল বেচারী আমেরিকার চেহারা। প্রথম বিস্ফোরনের শক্তিমাত্রা ছিল "১ কিলোটন"। শক্তি কম ছিল কিন্তু এই মাত্রার বোমাই ছোট খাট শহর যেমন হা্ওয়াই হাওয়া করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। অবরোধ এমনিতেই ছিল, এই নিউক্লিয়ার টেস্টের ঘটনার পর আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের দেশ ভ্রমনে বের হন তখনকার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট মিঃ বুশ সাহেব। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একটা সামরিক বলয় তৈরী করা। কিন্তু কিম জং ইলের ক্রমবর্ধমান থ্রেটের জন্য তিনি একপ্রকার চুপসে যান এবং ইরাক ও আফগান যুদ্ধে মনোনিবেশ করেন।

১৭ ডিসেম্বর ২০১১, পিয়ংইয়ং, উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়ার কোটি মানুষের প্রানের স্পন্দন ও প্রানের নেতা কিম জং ইল বার্ধক্যের কারনে মারা যান। এবং উত্তর কোরিয়া ও কমিউনিস্ট প্রোটোকলে উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম লিডার হয় তারই ছোট ছেলে কিম জং উন। সে সুপ্রিম লিডার হবার পর আমেরিকা ভেবেছিল ইলের অধ্যায়ের অবসান হয়েছে। কিন্তু নেতা মারা গেলেও তার আদর্শ তো কালে কালে বহমান হয়। কিম জং উন ও তার পিতার দেখানো পথে দেশটির পররাষ্ট্র নীতিকে চালিত করেছে। আমেরিকাকে ভয় করা তো দূরে থাক, উল্টো থ্রেটের উপরে রেখেছে সে সময়। মিসাইল টেস্ট, যুদ্ধ মহড়া, হুমকি, দক্ষীন কোরিয়ার নৌবহর কে থ্রেট সহ যতভাবে আমেরিকা ও তার মিত্রদের কষে রাখা যায় তার মাথায় সবসময়ই সেই চিন্তার মহড়া চলে। সাথে তার সহচর ও জেনারেল গুলাও মারাত্বক বিশ্বাসী। বিশ্বাসী না হয়ে উপায় নেই। কিম জং উন ক্ষমতায় এসেই তার নিজের আপন ফুফাকে কুকুর দিয়ে খাইয়ে মৃত্যু দন্ড কার্যকরের ঘটনা যারা দেখেছে তাদের ক্ষেত্রে বেঈমানী করা হয়তো সম্ভব না। যে তার নিজের ফুফাকেই কুকুর দিয়ে খাইয়ে দিতে পারে, অন্য লোকের বেলায় তো ব্যাপারটা নস্যি।

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, পাংগাইরি, উত্তর হ্যামগিয়ং, উত্তর কোরিয়া

পূর্বের অস্ত্রের উন্নয়ন ও ফিউজ এবং ওয়ার হেডের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উত্তর কোরিয়ার সরকার স্থানীয় সময় সকাল ৮ঃ৪৫ মিনিটে আন্ডারগ্রাউন্ড মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালায়। এবং এই ব্যাপারটা সারা পৃথিবী ব্যাপী এত প্যানিক ছড়ায় তা আর বলার না। আমার বহু দিনের দোস্ত ও কলেজের মেট Riaz Mahmud Himel এর প্যানিকটা ছিল সবচেয়ে বেশি। রাতেই টুইটারে দেখেছিলাম যে উত্তর কোরিয়া আন্ডারগ্রাউন্ডে নিউক্লিয়ার মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুশির। কারন আমেরিকা সচারচার সবাইকে ভয় দেখায়, থ্রেট করে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার বেলায় নিজেই ভয়ে মুত্রবিসর্জনে (হেগে মুতে) অস্থির হয়ে থাকে। তাৎক্ষনিক ভাবে রয়টার, বিবিসি, এপি, আল জাজিরার ওয়েব সাইটে দেখাচ্ছিল "ডাটা আনঅ্যাবেইলোবল"। পরে ইউ এস জি এস (USSG) অর্থাৎ আমেরিকার ভূ পরিসংখ্যান বিভাগ জানায় আন্ডারগ্রাউন্ড ব্লাস্টের কারনে পাংগাইরি এলাকায় ছোট খাট একটা ভূমিকম্প হয়েছে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.৩। এই বোমাটার শক্তি মাত্রা ছিল উত্তর কোরিয়া দ্বারা পরীক্ষাকৃত এযাবৎ কালের সকল ব্লাস্টের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছে এর মাত্রা ছিল ১০-৩০ কিলোটন। যা আমেরিকার শহর সানফ্রান্সিসকোকে ছাই করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাইলে এবার বুঝুন উত্তর কোরিয়াকে আমেরিকা কেন ভয় পায়?

অবশ্যই ভয় পাবে। ভয় পেতে হবে। কারনে অকারনে ভয় পাওয়া লাগবে। আমেরিকা মাঝে মাঝে দক্ষীন কোরিয়াকে সাথে নিয়ে উত্তর কোরিয়ার বর্ডারে যৌথ সামরিক মহড়া চালায়। এই মহড়া গুলো বন্ধ করার জন্য হলেও প্রতি বছর একটা করে নিউক্লিয়ার মিসাইলের টেস্ট জরুরি।

উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিন কোরিয়াকে আমি কখনোই আলাদা ভাবে দেখিনা। এই দুটো দেশ মনে হয় এক মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া দুই সহোদর। যারা যুদ্ধ বিরতির নামে দুটো দেশকে আলাদা করে রেখেছে, দুই ভাইয়ের আবেগের মিলনে বাধা দিচ্ছে ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইকে যুদ্ধ করার জন্য লেলিয়ে দিচ্ছে তারা এই পৃথিবী থেকে নিপাত যাক।

কিম জং উন তার আতস বাজি, নিউক্লিয়ার বোমা, কামানের গোলার উৎসব চালু রাখুক। আমেরিকা এইসব বোমাবাজি দেখে ভয় পেয়ে শিটকে পড়ে মরে যাক। দুই কোরিয়া আবার এক হোক।

কিম জং উনের জয় হোক, দুই কোরিয়া এক হোক, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হোক।

সূত্র সমূহঃ

১।http://www.reuters.com/article/us-northkorea-nuclear-idUSKCN11F02N
২।http://books.jakhira.com/2015/01/wings-of-fire.html
৩। Click This Link

৪। Click This Link
৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Kim_Jong-un
৬। Click This Link
৭। https://en.wikipedia.org/wiki/Pokhran-II
৮। Click This Link
৯।https://en.wikipedia.org/wiki/Abdul_Qadeer_Khan

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



উত্তর কোরিয়া বাঘের লেজ দিয়ে কান চুলকাচ্ছে; ২ কোরিয়া এক হয়ে যাবে ১১ বছরের ভেতর

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:৫৬

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: আপনি জানলেন কি করে?

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৪

পথিক শোয়েব বলেছেন: আমরা মানি আর না মানি আমেরিকা বাঘ ই.। আরো ৫০ বছর বিশ্ব শাসন করবে আমেরিকা। দুই কোরিয়া এক করবে আমেরিকা।আর তার শাসক বসাবে তাদের পছন্দ মত।কারন আমেরিকা একটা চিজ.।.।.।.।।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫০

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: আমরা উত্তর কোরিয়া ও দক্ষীন কোরিয়ার একীভূতকরনের জন্য আসলেই কিছুই করতে পারি না। তবে তারা নিজেরা যদি এগিয়ে আসে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত মিলে যাওয়াটা নিজ জীবদ্দশায়ই দেখে যেতে পারব। আমি নিজে অন্তত সেই বিশ্বাস আর কামনা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.