নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বযুদ্ধের শুরু ও শান্তি

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৩৬


২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯। সকাল ৪ টা ৪৫ মিনিট। দেড় মিলিয়ন জার্মান সৈন্য পোল্যান্ডের ১৭৫০ মাইল সীমান্ত বরাবর আক্রমণ করে বসে। এবং মুহুর্তের মধ্যেই পোল্যান্ড বর্ডার জার্মান- সেনা নিয়ন্ত্রিত চৌকি দ্বারা পেট্রোলিং শুরু হয়। অর্থাৎ পোল্যান্ডের সীমানা দখল হয়ে গেছে। একই সাথে, জার্মান বিমান ও নৌ সেনারা পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে সকল পোলিশ এয়ারফিল্ড ও বাল্টিক সাগরে মোতায়েন করা পোলিশ যুদ্ধজাহাজেও বোমা বোমাবর্ষণ করে। নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের পরিকল্পনা ছিল পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে ব্যাপক আক্রমণ ও একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কিন্তু ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই আক্রমনের বিষয়টা প্রাথমিক ভাবে অবগত ছিল না। কারন হিটলারের ছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে অনুগত, গেস্টাপো ও এস এস। সংবাদ লিক হবার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। এর পরে ফান্স ও ব্রিটিশদের গোয়েন্দারা জানতে পারে পোল্যান্ড আক্রান্ত হয়েছে। এবং ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ তারা জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

হিটলারের পোল্যান্ড বিজয় জার্মান মানুষের মনে হিটলারকে একজন জীবন্ত কিংবদন্তীর স্থানে নিয়ে যায়। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, "বর্ণবাদী উচ্চতর" জার্মানরা ইউরোপীয় অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করবে এবং নেটিভ দাসদের দ্বারা অন্য কলোনী গুলো গড়ে উঠবে। বিশ্বযুদ্ধ শুরুরও অনেক আগে জার্মান সাম্রাজ্যবাদ অস্ট্রিয়া দখলের মাধ্যমে ১৯৩৮ সালে শুরু হয়েছিল।

জার্মান সমর বিভাগ ভেবেছিলো যে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়তো পোল্যান্ডকে যুদ্ধ সহায়তা দিতে পারে। এই মিত্রতা সামলাবার জন্য, জার্মানি ২৩ আগস্ট, ১৯৩৯ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে অনাক্রমন চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির একটি গোপন দফা অনুযায়ী মতাদর্শগত মিত্ররা পোল্যান্ড বিভক্ত করতে সম্মত হয়। হিটলার ২৬ আগস্ট পোল্যান্ড আক্রমণের জন্য আদেশ দেন, কিন্তু ২৫ আগস্ট হামলা বিলম্বিত করে দেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে ব্রিটেন, পোল্যান্ডের সঙ্গে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং এই মুহুর্তে সামরিকভাবে আক্রমণ করা উচিত হবে না। একটি ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ আটকানোর জন্য, হিটলার শেষ মুহুর্তে তার মত পরিবর্তন করেন। আসন্ন আক্রমণের ভয়ে, পোল্যান্ড তার সেনাদের কল আপ করে, কিন্তু ব্রিটেন ও ফ্রান্স সম্ভাব্য আক্রমন ঠেকানোর জন্য জার্মানির সাথে শেষ পর্যন্ত বৈঠক চালাতে সম্মত হয়েছিল। পোল্যান্ড এর সাথে প্ররোচিত যুদ্ধ থেকে জার্মানিকে ফিরিয়ে আনার একটি শেষ প্রচেষ্টায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাধারণ সংহতি স্থগিত করতে পোল্যান্ডকে উব্দুদ্ধ করে।

৩১ আগস্ট দুপুরের কিছুক্ষন পরেই, হিটলার পরদিন ভোর ৪ টা ৪৫ মিনিট থেকেই পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর আদেশ দেন। ৩১আগস্ট দুপুর ৪টার টার মধ্যেই পোলিশ ইউনিফর্ম পরা নাৎসি এস এস সৈন্যরা জার্মানির সীমান্তে একটি অপ্রকৃত আক্রমণ করে। যা মূলত ভয় দেখানোর জন্যই করা হয়েছিল। যাতে করে বোঝানো গেছিল পোলিশরাই জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে।

১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪ টা ৪৫ মিনিট থেকেই জার্মান বাহিনী আক্রমণ শুরু করে। নাৎসি কূটনীতিক ও প্রচারকরা পশ্চিমাদের সঙ্গে ব্যাপক ভাবে যুদ্ধ ছড়িয়ে যাত্তয়া বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। কারন জার্মান কূটনীতি চাচ্ছিল আস্তে আস্তে পুরো ইউরোপ কব্জা করে ফেলতে। কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স দাবি করে যে জার্মানি ৩ সেপ্টেম্বরের ভিতরে যদি পোল্যান্ড থেকে সৈন্যপ্রত্যাহার না করে তবে ব্রিটিশ ও ফান্সের সেনারা জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করবে। ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার মধ্যেই , ব্রিটিশ চরমপত্রের মেয়াদ শেষ হয়। এবং ১৫ মিনিট পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিন জাতীয় রেডিওতে গিয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত তার ঠিক পরেই ব্রিটেনকে অনুসরন করে কারন এই দেশ গুলো তখন ব্রিটিশ রাজের অর্ন্তভূক্ত ছিল। বিকাল ৫ টায় ফ্রান্স ও জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

পোল্যান্ডে, জার্মান বাহিনীর আক্রমন ছিল একটি সামরিক ঝটিকা অভিযান, বা "থান্ডার ওয়ার," নামে পরিচিত কৌশল। জার্মানদের দ্বারা নিযুক্ত সাঁজোয়া ডিভিশন গুলো শত্রু লাইন এবং শত্রুকে পেট্রোলিং করে বেড়াতো। এদিকে, অত্যাধুনিক জার্মান বিমানবাহিনী পোলিশদের বিমান বন্দর ও অ্যাটাকিং ফোর্স ধ্বংস করার জন্য পোল্যান্ডের অভ্যন্তরে ও সীমানা বরাবর বোম্বিং করতে থাকে যাতে পাশের রাষ্ট্রও এটুকু বোঝে যে সেও আক্রান্ত হতে পারে। এতে করে পোলিশ বিমান বাহিনীর পুরো সামর্থ্য, জার্মান ঝটিকা অভিযান দ্বারা ব্যর্থ হয়ে যায়। এবং যুদ্ধলব্ধ পোলিশ বিমান গুলোকে পরবর্তী ব্রিটিশ ও ফ্রান্সের আক্রমন ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।

পোলিশ সেনাবাহিনীর এক মিলিয়ন সৈন্য যুদ্ধ করতে সক্ষম ছিল। তাদের কে ব্যাটেলের ফ্রন্ট লাইনে নিয়ে রাখা হতো। যাতে জার্মান সেনাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। জীবনহানি কম হয়। ৪ সেপ্টেম্বর নাগাদ জার্মান বাহিনী ওয়ারশ উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল, আক্রমণের প্রথম সপ্তাহে তারা প্রায় ১৪০ কিমি রেডিয়াসে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য আরো এগিয়ে ইউরোপ দখল করা।

পোলিশ সশস্ত্র বাহিনী জার্মান বাহিনীকে ঠেকাবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত লাল বাহিনী পোল্যান্ডকে পূর্ব দিক থেকে আক্রমণ করে বসে এবং পোল্যান্ডের যুদ্ধ জয়ের সব আশা হারিয়ে যায়। পরের দিন, পোল্যান্ডের সরকার ও সামরিক নেতারা দেশ থেকে পালিয়ে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর, ওয়ারশ গ্যারিসন একটি নিষ্করুণ জার্মান অবরোধের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ঐদিন জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি চুক্তি করে তাদের নিয়ন্ত্রন অঞ্চলের আউটলাইন ঠিক করে ফেলে। ইতিহাসের চতুর্থ বারের জন্য, পোল্যান্ড তার চেয়ে আরো শক্তিশালী শক্তি দ্বারা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায়।

ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরকার জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা সত্ত্বেও সামরিকভাবে দুর্বল পোল্যান্ডের সাহায্যার্থে তারা এগিয়ে আসে নি। ৪ সেপ্টেম্বর জার্মান যুদ্ধজাহাজ ব্রিটেনে বোমাবর্ষণ করে। যাই হোক এই সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসে খুবই ঘটনা বহুল একটা মাস। আজ থেকে ৭৭ বছর পূর্বে এমনই এক দিনে জার্মান ইনভেশনের মাধ্যমে শুরু হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধ। নিহত হয় প্রায় ৬ থেকে ১০ কোটি মানুষ। যুদ্ধ খুবই ভয়াবহ। তারচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধে অংশ নেয়া দেশের সাম্রাজ্যবাদ নীতি।

আমি যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদ দুটোই ঘৃণা করি। যুদ্ধ যদি শান্তি স্থাপনের মাধ্যম হয় তবে সেই যুদ্ধের দরকার নাই। আমি শান্তি চাই, তবে যুদ্ধ করে শান্তি স্থাপনের শান্তি আমার লাগবে না।

আজকের এই দিনে ২য় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সকল মানুষকে স্বরন করছি। স্বরন করছি সকল বীর সেনানীদের কে। তাদের আত্নত্যাগ ও শান্তির বার্তাকে ঘরে ঘরে পৌছে দেবার সংগ্রামে লিপ্ত থাকা সকল মানুষকে।

যুদ্ধের অবসান হোক, শান্তির বিস্তার হোক।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:




হিটলার জানতো যে, এসব সহজ বিজয় জামর্মান জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের শুরু ছিল মাত্র।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:০১

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: হয়ত জানতো অথবা জানত না।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৭

নাইম রাজ বলেছেন: ভালো লিখছেন ।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৮

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.