নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত কেন শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিলো না?

০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:২৪

ছবি-১

প্রেক্ষিত-১

ভারত ও শ্রীলঙ্কার দ্বিপাক্ষিক মিত্রতা তুঙ্গে ছিল, যখন প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রজিব গান্ধী [১] শান্তিরক্ষার নামে ভারতীয় সেনা শ্রীলঙ্কাতে ডিপ্লয় করেছিলেন ১৯৮৭ সালে। এল টি টি ই (LTTE), অথবা লিবারেশন তামিল টাইগার ইলম দের দমানো তো দূরে থাক, বেচারী প্রধানমন্ত্রী রজিব গান্ধী বেঘোরে প্রাণটাই হারিয়েছিলেন [২]। একটা দেশের সরকার ও তার সেনাবাহিনী আরেকটা দেশে ডিপ্লয় করার অর্থ হইলো, উক্ত দুই দেশের সরকারী আধিকারীক ও মন্ত্রানলয়ের সাথে এক টেবিলে মদ পানের সম্পর্ক আছে। ২০০৯ সালে এল টি টি ই এর পতন ও গণহত্যার জন্য ভারত সরকারের অনেক নীতি নির্ধারক ও টেকনিক্যাল লোকজনের সহায়তা ও নীতিগত সমর্থন ছিল [৪,৫,৬]। যাইহোক, উক্ত ঘটনাতেই প্রমান করে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা হলো সহযোগিতার সম্পর্কে, "এক মায়ের দুই ছেলে"।

প্রেক্ষিত-২

আসল কথায় আসি। শ্রীলঙ্কা গতবছর (২০২০) সালে ভারতের কাছে ১.১ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ঋণ এর জন্য আবেদন করেছিল [৭], কিন্তু নরেন্দ্র মোদি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) [৮] এর প্রশাসন উক্ত আবেদনের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোন সাড়া শব্দ করেন নাই। ঠিক এই একটা ব্যাপারে, "নিরবতা প্রত্যাখ্যাত হবার লক্ষন" হিসাবে ধরা দেয়। সেই একই আবেদন শ্রীলঙ্কা বাঙলাদেশকেও করেছিল (দেশটির ফরেন রিসার্ভের দিকে লক্ষ রাখতেছিল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিবিদেরা), এবং বাঙলাদেশ সরকার ও এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋন শ্রীলঙ্কার আবেদনের প্রেক্ষিতে মঞ্জুর করে। উক্ত ঋন প্রদানের ঘটনা সারা পৃথিবীতে এবং বিশেষ করে দক্ষীন এশিয়াতে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গরম বিষয়। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বড় গনমাধ্যম গুলো, এই বিষয়টাকে ফলাও করে প্রচার করতে উঠে পড়ে লেগে গেছে [৯,১০]।

যাই হোক, এখানে তিনটা ঘটনা একসাথে ঘটেছে; প্রথমত, একক দেশ হিসাবে বাঙলাদেশ যে দক্ষীন এশিয়াতে খুব বড় প্রভাব বলয় তৈরী করবে, তার প্রথম ভিত রচনা হলো শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়ে। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে বাঙলাদেশ যে দক্ষীন এশিয়ার আরো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা করতে পারবে তার মেসেজটা এখান থেকে অনেক দেশ পেয়ে গেলো। তৃতীয়ত, দক্ষীন এশিয়াতে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়াও যে প্রভাব বলয় তৈরী করা যায়, সেটা বাঙলাদেশ অন্যান্য দেশ গুলোকে মেসেজ দিচ্ছে। একজন বাঙলাদেশী হিসাবে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ সহায়তা দিতে পারায়, তাদের (আমাদের প্রতিবেশীর; আমরা বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের বাসিন্দা) দুঃসময়ে পাশে দাড়াতে পেরে নিজেকে খুব কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে।

প্রেক্ষিত-৩
যেহেতু ফিসারীজ ও মেরিন সায়েন্স আমার টুল এবং অস্ত্র, আমি চেস্টা করব শ্রীলঙ্কাকে ভারতের ঋণ সহায়তা না দেয়ার ফিসারীজ রিলেটেড সম্ভাব্য কারন গুলো তুলে ধরতে।
২০২০ সালে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, রানিল কুলারাত্নে [১১] তার Ocean & Coastal Management জার্নালের প্রকাশিত আর্টিকেল "Unregulated and illegal fishing by foreign fishing boats in Sri Lankan waters with special reference to bottom trawling in northern Sri Lanka: A critical analysis of the Sri Lankan legislation" [১২] তে দেখান যে ভারতের জেলেরা সারাদিন ভারতের ইইজেড (EEZ, exclusive economic zone) এলাকায় থাকলেও মাঝরাতে জেলেরা শ্রীলঙ্কার জলসীমায় প্রবেশ করে। সারারাত মাছ ধরে ভোর বেলায় আবার তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় ফেরত যায় (ছবি ১-৪)। উক্ত খবরটি মূলত প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার সানডে টাইমস পত্রিকাতে [১৩]। সংবাদ প্রকাশের ৯ বছর পর সেটার আইনগত ব্যাপারগুলো উনি (রানিল কুলারাত্নে) আবার সামনে আনেন এবং ভারতের জেলেদের এবং প্রশাসনকে পরোক্ষভাবে চুরির দায় দিতে চেয়েছিলেন। এই ব্যাপারটাই ছিল, আগুনে ঘি ঢালার মত।
ছবি-১
ছবি-২ ছবি-৩ ছবি-৪

২০১১ সালের ঘটনা এতদিনে মানুষ ভুলে গেছে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এই আকাড়ের জিনিস ভাগাড়ে আনার কাজটাই শ্রীলঙ্কার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আন্তজার্তিক কমিউনিটির কাছে তথ্য উপাত্তসহ যখন ভারতকে চোর বলা হবে, সেটা দেশটি নিশ্চয় ভালো ভাবে নিবে না! এই আর্টিকেলটা পড়ার আগে আমি সানডে টাইম বলে শ্রীলঙ্কাতে যে একটা পত্রিকা আছে সেটা জানতাম না, এবং আমার বিশ্বাস শ্রীলঙ্কা ব্যাতীত অধিকাংশ দেশের মানুষই এই পত্রিকার নাম জানতো না।

প্রেক্ষিত-৪

যাইহোক, আপনি যে দেশের লোকেদের চোর বলবেন আবার তাদের সরকাররের কাছে বিলিয়ন ডলার ঋন চাইবেন তা তো হয় না। আমার কাছে দক্ষীন এশিয়ার সকল দেশই আমাদের প্রতিবেশী এবং ব্যাক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যায়ে এই সকল দক্ষীন এশীয় যেকোন দেশের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো, অনুভূতিতে আঘাত দেয়া, আক্রমন করে কথা বলা এবং অসম্মান করা অত্যান্ত খারাপ কাজ বলে বিবেচিত হয়। কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো যে প্রমাণ গুলো সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন, সেটা অন্য ভাবে, অন্য ডাইমেনশনে, আঘাত না করেও দেখানো যেতো। আর ২০১১ সালের ডাটা নিয়ে সে ২০২০ সালে কি প্রমান করলেন সেটা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়।

ভারত যে বর্তমান কোভিড-১৯ এর মারাত্বক সমস্যার কারনে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিতে ব্যার্থ হয়েছে, সেটা ভাবা মোটেও উচিত হবে না। আঞ্চলিক ক্ষমতা, প্রভাব বলয়, ও শক্তি প্রদর্শনের জন্য অনেক রাষ্ট্র অনেক অসম্ভব কাজও করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন না করে, বাঙলাদেশ যে তার প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কাকে তার দুঃসময়ে সাহায্য করতে পেরেছে, সেটাই বাঙলাদেশের সক্ষমতা ও সৌহার্দ্য, এটাই বিবেচনা করা অধিক যুক্তিযুক্ত।

যারা বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করেন, তাদের শব্দ চয়ন, ভাষার ব্যবহার, নিজের দেশকে ছোট না করা, এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় অনেক বিষয় গুলো মাথায় নিয়ে লেখা উচিত। নইলে আপনার দেশ, শ্রীলঙ্কার ঋণ আটকানোর মত অনেক ঘটনার সাক্ষী হতে যেতে পারে।

Picture copyright: Elsevier Ltd. AND Sunday times, Sri Lanka.

The attached pictures may have a copyright issue, please use these with your own credential.

সূত্রসমূহঃ









১০
১১
১২
১৩


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

জুন বলেছেন: ভারত বর্তমানে ভয়াবহ করোনা সংকট সেই সাথে অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। তারপরও তারা ক্ষমতার বলয় বজার রাখার জন্য ৫০ হাজার কোটি রুপি দিয়ে ছয়টি সাবমেরিন কিনছে। থাইল্যান্ডে করোনাকালে মানুষ কাজ হারিয়ে না খেয়ে প্রতিদিন কয়েকজন করে সুইসাইড করছে। তারপরও এই বাজেটে স্বাস্থ্যসেবার চেয়া সামরিক ব্যায়ে অধিক বরাদ্দ। জনগণ চিল্লাচ্ছে তাদের কানে যায় না। তারা চীন থেকে তিনটা পুরনো না নতুন আল্লাহ জানে ট্যাংক কিনছে।
যাক আমাদের সরকার তবুও এই ফালতু টাকা খরচ না করে এই বিপদে মানুষকে সাহায্য করছে তার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

২| ০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভারত বর্তমানে নিজেরাই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে।
ভারত একটি মানবিক দেশ।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০৬

গফুর ভাই বলেছেন: ভালো লাগল। যদি বাংলাদেশ সরকার এই প্ল্যান করে সামনে আগায় তাহলে ঠিক আছে।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২১ সকাল ১১:২৫

পদ্মপুকুর বলেছেন: এই বিষয়ে গত কয়েকদিনে যে কটি পোস্ট এসেছে, সবগুলোই ছিলো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির। আপনার পোস্টে যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে, তাতে আশান্বিত হওয়ার সুযোগ আছে। ভালো লাগলো আপনার ব্যাখ্যা। সবকিছুতে ইতিবাচকতা দেখতে পাওয়াটাও একটা ক্ষমতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.