নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপ্লবী ধারায় লিখতে পছন্দ করি।

গিলগামেশের দরবার

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র গবেষক (দক্ষিণ চীন সাগর)

গিলগামেশের দরবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লাসিক বনাম মর্ডানঃ সঙ্গীত, সাহিত্য ও গবেষণা

১৫ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১



প্লট-১

সকাল সকাল কুয়ালালুমপুর থেকে তেরেনগানু যাচ্ছি। প্রফেসর গাড়ি চালাচ্ছেন, আমি তার পাশের সিটে বসা। নড়াচড়া করতেছি না, আর্মি স্টাইল। মনে হচ্ছে, গাড়িতে ফিল্ড মার্শাল রোমেল বসা। নড়লেই গুলির নির্দেশ (মজা করলাম)। কিছুদুর যাবার পর প্রফেসর মিউজিক অন করলেন। সম্ভবত উর্দু গান, হিন্দিও হতে পারে। আমি পরে ইউটিউবে খুজেও গান গুলা পাই নাই। গানের ডিটেইলস প্রফেসরের কাছে চাইতে লজ্জা করে।

তো, আমি সাধারানত ধুম ধাড়াক্কা মিউজিক পছন্দ করতাম মাঝে মাঝে রবিন্দ্র সংগীত, কিন্তু গাড়ির ভিতরে বাজতেছিল, তার প্রতিটা শব্দ (হিন্দি উর্দু কাছাকাছি ভাষা যার দুইটাই আমি বুঝি সম্ভবত) রক্তে একধরনের শীতলতা এনে দিচ্ছিল। আগের রাতের ফ্লাইটের ধকল টের পেলাম না। মজার ব্যাপার হলো, ৬-৮ ঘন্টার ড্রাইভের পথ মনে হলো ১-২ ঘন্টা। বুঝলাম আমার বয়স হচ্ছে, হেভি মিউজিকের দিন শেষ। ভাগ্যিস প্রফেসরের কালেকশনে গান গুলা ছিলো।

ভারতীয় উপমহাদেশে, অনেক গায়ক এসেছেন যারা দুই দিন লাফ দিয়ে হারিয়ে গেছে, কিন্তু টিকে গেছেন, মোহাম্মদ রফি, অনুপ জালোটা, নচিকেতা, লতা মোংগেশকর, নুসরাত ফাতেহ আলী খান। সম্ভবত তাদের এই গান গুলার আবেদন ১০০ বছর পরেও থাকবে (অন্তঃত আমি বিশ্বাস করি)।

প্লট -২

ছোট বেলা থেকে, বাঙলা সাহিত্যের প্রচুর আউট বই পড়তাম। আউট বলতে, কারিকুলামের বাইরের কারিকুলাম। গল্প, উপন্যাস, কবিতা; এককথায় যা পেতাম তাই পড়তাম। একটা নির্দিষ্ট বয়সে এসে, বিদেশি ভাষার বাঙলা অনুবাদ পড়তাম। সেসময় অনেক বইয়ের অনুবাদ বাঙলায় ছিলোনা (এখন আছে কিনা জানি না), সেক্ষেত্রে, ইংরেজি বই কিনে পড়া শুরু করেছিলাম।

মজার ব্যাপার হলো, আমার মতে বাঙলা সাহিত্যের সবচেয়ে হ্যাংলা লেখক হলো "হুমায়ূন আহমেদ" ("দেয়াল" বাদে, দেয়াল মূলত রাজনৈতিক চরিত্রধারার উপন্যাস; যার হয়ত ঐতিহাসিক মূল্য আছে)। হুমায়ূন আহমেদের অবদান অন্য জায়গায়, তিনি আসলে একটা পাঠক গোষ্ঠী তৈরী করে গেছেন। কিন্তু তার লেখা একবার পড়ার পর দ্বিতীয়বার পড়তে গেলে বিরক্ত লাগে। হেবি ওয়েট লেখকদের মধ্যে প্রথমে থাকবেন, "ডঃ হুমায়ুন আজাদ", "মানিক বাবু", "শরৎ বাবু", "আহমদ ছফা", "রবীন্দ্র বাবু", "কাজী নজরুল ইসলাম" ইত্যাদি। আপনি এদের লেখা আজ থেকে ১০০ বছর পরে পড়লেও মনে হবে নতুন। একই লেখা বার বার পড়লেও বিরক্ত হবেন না।

এদের ভিতরে ডঃ হুমায়ুন আজাদের লেখা গুলা এতো ক্লাসিক যে, সেগুলো আপনি রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ কেউ হুমায়ুন আজাদকে চোর নকলকারী, অনুবাদকারী বলে গালাগাল করেন। আরে ভাই, সে যদি নকল করেই থাকে তবে সমস্যা কোথায়, বাঙলা ভাষা অন্য ভাষার সাহিত্য দিয়ে সমৃদ্ধ হলো।

আরেকজনের কথা না বললেই নয়, সেটা বাঙলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল। যার লেখা বুঝতে গেলে, শুধু বাঙলা ভাষা জানলে কাজ হবে না, পুরো একটা ভাষা গোষ্ঠী সম্পর্কে আপনার ভালো ধারনা থাকতে হবে। নজরুলের প্রত্যেকটা লেখাই ক্লাসিক, সময় নিয়ে পড়লে বুঝবেন। আপনি বোঝেন না বলে নজরুল পড়েন না হয়তো, নজরুল কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে রবি ঠাকুরের চেয়ে বেশি মাত্রার ক্লাসিক।

কালের বিবর্তনে ১০০-২০০ বছর পর হয়তো হুমায়ূন আহমদরা হারিয়ে যাবেন কিন্তু ক্লাসিক, হুমায়ুন আজাদ, রবিন্দ্র, নজরুল, ইভেন লালন টিকে যাবেন।

প্লট-৩

যেহেতু আমি রিসার্চ করি, কিছু ক্লাসিকাল রিসার্চের কথা না বললেই নয়। ১৯৫১ সালে ডঃ লাউরি ও তার কলিগস প্রোটিন অ্যাসেইর (Lowry protein assay) উপর কাজ প্রকাশ করেন [১]। তিনি সেজন্য বিখ্যাত না হতে পারেন, তবে তথ্য উপাত্ত বলছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার পেপারটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বার সাইট করা হয়েছে। আজকের দিনে সেটা তিনলক্ষেরও বেশি বার [২]। আপনাকে সারাজীবন ধরে অনেক অনেক কাজ করার দরকার নাই, জীবনে একটা কাজের মত কাজ করলেই, সারা জীবনের জন্য মানুষ আপনাকে ক্লাসিকের সম্মান দিয়ে দিবে। প্রোটিন আপনি যেভাবেই নির্নয় করতে যান না কেন, আপনাকে লাউরি ইট অ্যাল এর সাহায্য নিতেই হবে। নতুবা নতুন কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। আর এজন্যই লাউরির এই পেপারটাকে আমার কাছে সবচেয়ে ক্লাসিক মনে হয়েছে।

আবার ধরেন, প্রফেসর অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কারের প্রকাশনাটা "On the antibacterial action of cultures of a penicillium, with special reference to their use in the isolation of B. influenzae" [৩]। এই পেপারের গুরুত্ব যে কত, যারা এই সম্পর্কিত কাজ করেছে তারাই কেবল জানে। তিনি এই রিসার্চের মাধ্যমে পৃথিবীকে গোটা এক নতুন দুনিয়াতে নিয়ে গেছিলেন। আজও এর গুরুত্ব কোন অংশে কম না।

শেষ করি আমার একটা পছন্দের উক্তি দিয়ে, বিলাসী গল্পে শরৎ বাবু বলেছিলেন, "অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে"। যদি পৃথিবীতে মজুদ সকল পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনের পর জীবনের অস্তিত্বের বিলোপ ঘটে, আমার ধারনা সেক্ষেত্রে বিবর্তনের নিয়ম অনুযায়ী, ক্লাসিক তেলাপোকা টিকে যাবে।

বিঃদ্রঃ উক্ত লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত, সাহিত্যিকদের র‍্যাংকিং এর ব্যাপারে, কারো অনুভূতিতে আঘাত করলে, আপনার জানা বোঝাতে ঘাটতি আছে মনে করে আবার বাঙলা সাহিত্যের ১-৫০০ র‍্যাংকিং উপন্যাস পড়তে বসে যান। বাকিটা পরে বুঝবেন।

সূত্রসমূহঃ


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:২১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হুমায়ূন আজাদ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আহমদ ছফার লেখা বোঝার মানুষ কমে যাচ্ছে। ফলে ১০০ বছর পরে এই লেখাগুলির পাঠকও কমে যাবে। হুমায়ূন আহমেদের লেখা সহজ ফলে এখন যেমন পাঠক বেশী ভবিষ্যতেও তেমন কমবে বলে মনে হয় না। তবে পাঠকের সংখ্যা আর শুধু জনপ্রিয়তা দিয়ে এই সব বিখ্যাত লেখকের মূল্যায়ন করলে ভুল করা হবে।

২| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:২০

কামাল১৮ বলেছেন: বিপ্লবী ধারাটা বলতে কি বুঝতে চেয়েছেন ঠিক বুঝতে পারলাম না।সত্তুরের দশকের গোড়ার দিকে চারুমজুমদারে লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম।সমাজ পরিবর্তনের জন্য এমন বিপ্লবী লেখা আমার চোখে পড়ে নাই।হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে মূল্যায়ন ঠিক মনে হলো।তার কোন বইতেই সেই সময়কার একটা সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায় না।যেটা উপন্যাসের একটা প্রথান দিক।

১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:০৬

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, কামাল১৮, বিপ্লবী ধারা বলতে, "বিপ্লবী ধারা"ই বুঝিয়েছি। প্রথমত, এই প্রশ্নের খোলাখুলি উত্তরে, আমি অস্বস্তি বোধ করছি; দ্বিতীয়ত, আমার মনে হয় আপনার করা প্রশ্নের উত্তরও আপনার জানা। জানা না থাকলে আপনি যার নাম নিয়েছেন, তাকে চেনার কথা এই যুগের ছেলেরদের কথা না (বা চিনতে পারে কিন্তু সেটা বিরল [rare])। আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। লেখা পড়ার জন্যও ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৩৭

রানার ব্লগ বলেছেন: হুমায়ূন আজাদ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আহমদ ছফা এনারা এক ধরনের লেখক হুমায়ুন আহমেদ অন্য ধরনের লেখক। শরতচন্দ্র যখন লেখালেখি শুরু করেছিলেন সেই সময়কার যুগ ছিলো রবীন্দ্র যুগ তখনকার লেখকেরা রবীন্দ্রনাথ কে অনুকরন করতেন তো শরতের লেখা দেখে এরা বিভিন্ন সভা সমিতিতে বেশ গর্ব ক্ক্রে বলতেন শরতের লেখা হলো আম জনতার এই গুলা কোন ইন্ট্যালেকচুয়াল মানুষ পড়ে না, এমন কি তারা রবী বাবু কেও নালিশ করেছিলো যে শরত বাংলা উপন্যাসের সমুহ ক্ষতি সাধন করছেন, রবী বাবু অবশ্য তাদের গুরুত্ব দেন নাই। আজ দেখুন তাদের কেউ চেনে না আর শরতচন্দ্র চট্রপদ্ধায় কে বাংগালীরা মাথার মুকুট করে রেখেছেন।

৪| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:০৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: ক্লাসিক হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য বোধহয় ১০০ বছরও লাগে না। প্রফেসর লাউরির কাজের বয়সও তো ১০০ বছর হয়নি।

৫| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:২১

আমি মাছরাঙ্গা বলেছেন: পড়া অথবা শোনার অভ্যাস না থাকেল ভালোর সন্ধান কখনই পাওয়া যাবে না । বয়সতো অবশ্যই একটা গুরুত্তপূর্ন ব্যাপার। অনেকটা পড়তে পড়তে অথবা শুনতে শুনতে ভালো চেনার ক্ষমতা তৈরী হয়। আবার ভালোর সঙ্গাতেও মানুষে মানুষে ভিন্নতা আছে, যেখানে আমরা খুব কমক্ষেেত্রেই সহিষনুতা দেখাতে পারছি।

আমার মনে হয় বিভিন্ন লেখকের চিন্তার বিচরনক্ষেত্র এবং সক্ষমতা বিভিন্ন । আর এখানে তূলনার ব্যাপারটাও অনেকটা কষ্টকর। ব্যাপারটা প্রাইমারী স্কুল পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে প্রাইমারীর শিক্ষকের তুলনা করার মত!! প্রাইমারীর শিক্ষক চিন্তার অথবা পড়াশুনার একটা অভ্যাস তৈরী করতে পেড়েছিল বলেই হয়তোবা আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার সক্ষমতা তৈরী হয়েছে।

আমার মনে হয়, যতক্ষন হুমায়ন আহমেদর পাঠক থাকেব, ততক্ষন আমরা আশা করতে পারি কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ন আজাদ অথবা আহমেদ ছফাকে বোঝার মত একটা পাঠক শ্রেনী হয়তো তৈরী হবে। ১০-১৮ বছরের আমাদের মন কতটুকু কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ন আজাদ অথবা আহমেদ ছফাকে সঠিকভাবে বোঝার মত ক্ষমতা রাখে ?

আমার আশংকাটা অন্যখানে, এখনকার জেনােরশনের পড়ার দিকে (উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প অথরা কবিতা) আগ্রহট দিন দিন কমছে। একটা সময় হয়তো হুমায়ন আহমেদ, কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ন আজাদ অথবা আহমেদ ছফা তাদের সৃষ্টি থাকেব কিন্তু বোঝার মত পাঠক থাকেব না !!

অতিসাম্প্রতিক, কাজী নজরুল ইসলামের লিখা পড়া শুরু করেছি, যত পড়িছ তত অবাক হচ্ছি। কি অসাধারন চিন্তার মাত্রা সৃষ্টি করে গেছেন এই লোকট।

৬| ১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:২৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ল্যাসিকাল গান আমার বেশ ভালো লাগে। তবে ইদানীং সুফী গানের রানী আবিদা পারভীনের গান বেশ শোনা হচ্ছে। তবে একটা বিষয় না বলে পারছি না, আপনি এত গুণীজনের নামের বানানে বেশ কিছু ভুল করেছেন। যেমন "হুমায়ুন আহমদ" হবে "হুমায়ুন আহমেদ", "রবিন্দ্র" হবে "রবীন্দ্র", "আহমদ সফা" হবে "আহমদ ছফা"। বিষয়গুলো সাধারন মানুষের চেয়ে "গবেষকদের" ক্ষেত্রে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার মনে হয়। লিখার জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৫৭

গিলগামেশের দরবার বলেছেন: সংশোধিত। ধন্যবাদ। এক বসাতে লেখা, ড্রাফটই পাবলিশ করে ফেলেছি :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.