![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।
হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের উত্তরে টিনের ছাপড়া ঘরে রহিমা দুই ছেলে-মেয়ে রুহুল, ফাতেমা আর শ্বশুড়কে নিয়ে বসবাস করে। ক্ষুদ্রঋণ সমিতি থেকে আনা সুদের ঋণ দিয়ে কেনা গাভী দেখাশোনা করে রহিমা। ছেলে রুহুল বেকার, মেয়ে ফাতেমা গার্মেন্টসে চাকুরি করে চার সদস্যের পরিবার চালায়। যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে মানুষ ফিরে আসছে বাংলাদেশে তখন ভিটেমাটি বিক্রি করে রুহুলের বাবা গেছে মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সন্ধানে। দাখিল শ্রেণী পর্যন্ত পড়লেও শহরে আসায় আর পড়াশুনা আগায়নি।
রুহুল মামা'র সাইবার ক্যাফেতে ইন্টারনেট চালানো শিখে, যদি কোন চাকরি পাওয়া যায় সেই আশায়। সেই ক্যাফেতেই পরিচয় হয় আরিফের সাথে। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব। চিন্তা-ভাবনা বিনিময় করতে গিয়ে ইসলাম কায়েম করতে রুহুলকে উদ্ধুদ্ধ করে আরিফ। নিয়ে যায় আফগানিস্তান ফেরত 'উর্দু ভাই'র কাছে। এয়ারপোর্টে চাকুরি দেয়ার টোপ দিয়ে সহজেই রুহুলকে বশ করা সম্ভব হয়। জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে জিহাদের আহ্বান জানায় উর্দু ভাই। রুহুল আল্লাহ'র পথে ঘর ছাড়ে, হতভাগা মা, বোন আর দাদার চেয়ে উর্দু ভাইয়ের জিহাদী চেতনাই তার কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়। রাজনৈতিক মতবিরোধে আরিফের সাথে ডিভোর্সের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যায় তার একসময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা স্ত্রী।
ময়মনসিংহ শহরের চারটা সিনেমা হলে যেদিন বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল সেদিন আমি ছিলাম ময়মনসিংহের পথে। আমার সাথে আরো দুই বন্ধু। উদ্দেশ্য ছিল ময়মনসিংহ গিয়ে সিনেমা দেখা। কিন্তু কারণবশত গৌরীপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে আর ময়মনসিংহ যাওয়া হয়নি, গৌরীপুরেও সিনেমা দেখা হয়নি। স্টেশনের এক দোকানে বসে টিভিতে দেখেছিলাম সালমান শাহ্'র 'প্রিয়জন', ঈদের পরের দিন সম্ভবত। পরে শুনেছি সিনেমা হলে বিস্ফোরণের খবর। কত বড় বাচাই না বেচেছিলাম সেদিন!
যাক, উর্দু ভাই'র মুখোশ উন্মোচন করতে শতভাগ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তারেক মাসুদ। ধরা পড়ার ভয়ে সবাই যখন বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লীদের সাথে মিশে যায়, তখন ইজতেমায় বয়ান হয় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। বিধর্মীদের পাতা ফাদে পা না দিতে সতর্ক করে দেয়া হয়। সব শুনে রুহুল। নির্জন চরে জিহাদী প্রশিক্ষণে গিয়ে উর্দু ভাই তার সাগরেদকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দ্রুত চলে যায়, পেছনে দৌড়ায় সবাই। ধরা পড়ে উর্দু ভাইয়ের স্বার্থপরতা। এরপর দেখা যায়, ইসলাম কায়েম না ছাই, এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় এতদিন এসব করেছে তারা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতার সাথে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে। বিচারকদের উপর হামলা না করতে অনুরোধ করলেও উর্দু ভাই হামলার পরিকল্পনা করে। জিহাদের পথে এগিয়ে যায় আরিফ সহ তিন জন। সাইকেল বোমা ফাটিয়ে আহত অবস্থায় ধরা পড়ে আরিফ। সাগরেদদের অসহায় অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায় উর্দু ভাই। সবাই চলে গেলেও রাতে ঝুকি নিয়ে আস্তানায় থাকে রুহুল। বোঝাপড়া করে নিজের সাথে।
পরিবারের সদস্যদের ভালো মন্দের কথা চিন্তা না করে নিজের বেহেশত লাভের আশায় আত্মঘাতী হামলা করে মরে যাওয়ার পক্ষে নয় সে। বেচে থেকে অন্যায়ের সাথে লড়াই করা উত্তম। লড়াই হয় তার মনের সাথে। যে তার ভালোবাসার মানুষকে নেশাখোরের হাত থেকে বাচাতে পারে না সে কিভাবে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করবে?
তারেক মাসুদ ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়েছেন। ছোট বেলার চিন্তা চেতনা উঠে এসেছে সেলুলয়েডের ফিতায়। মাটির ময়না ছবিতেও এর ছাপ পাওয়া গেছে। ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে গল্পটি এগিয়ে চলে। যে বিচক্ষণার সাথে গল্পটিকে নাট্যরূপ দেওয়া হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গন সমৃদ্ধই হয়েছে। যার প্রমাণ স্বরূপ রানওয়ে পেয়েছে বহু পুরস্কার, কোটি মানুষের ভালোবাসা। তারেক মাসুদরা বেচে থাকলে একটা সময় তাদের ছবি অস্কারে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতো না, পুরস্কারও ছিনিয়ে আনতো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য। ততদিন সময় পেলেন না তারেক।
একজন তারেক এই দেশে তৈরি হতে লেগেছে বেয়াল্লিশ বছর,
কিন্তু এই বেয়াল্লিশ বছরে তৈরি হয়েছে লাখ লাখ জঙ্গি,
তার "রানওয়ে" জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামের প্রকৃত পার্থক্য বুঝিয়ে দেয় আর এ কারণেই জঙ্গিবাদী সংগঠন জামাত শিবিরের চক্ষুশূল হন তিনি।
তার শিক্ষা জীবন মাদ্রাসা কেন্দ্রিক হলেও অনেকেই তাকে ধর্মদ্রোহী সম্বোধন করে আমোদ পান।
তারেক মাসুদকে বলা হয় চলচ্চিত্রের ফেরীওয়ালা।
কাঁধে চলচ্চিত্রের ঝুলা নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত।
তার হৃদয়ে ছিল শুদ্ধ-সুন্দর-শান্তিপ্রিয়-মৌলবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ; চেতনায় মুক্তির গান।
সেই গান মানুষকে তিনি শুনিয়েছেন সেলুলয়েডের রঙ্গীন ফিতায়, চলমান গল্পের আশ্রয়ে।
গতানুগতিক গল্প আর নির্মাণের বাইরে গিয়ে তিনি তৈরী করে নিয়েছিলেন নিজের মত করে আপন এক জগত।
আর এভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অনন্য এক রূপকার।
এই পোড়া দেশে আশার প্রদীপ জ্বালানোর অগ্রপথিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তারেক মাসুদ ...
আমরা বড়ই দুর্ভাগা... আমাদের সকল আশা আমরা এভাবেই নষ্ট করে ফেলি অবহেলায়...
আজকে যাদের বড়ই প্রয়োজন ছিল রাজাকার জানোয়ারদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে, তাদের আমরা শেষ করে ফেলেছি নিদারুন অবহেলায় অতি জঘন্যভাবে...
জানি আমাদের কোন ক্ষমা হয় না... তবুও পারলে আমাদের ক্ষমা করে দেবেন...
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আমাদের দুর্ভাগ্য তারেক মাসুদদের মত চলচ্চিত্র নির্মাতার অকালে চলে যাওয়া।
পোষ্টে +++
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৮
চলতি নিয়ম বলেছেন: আমরা বড়ই দুর্ভাগা... আমাদের সকল আশা আমরা এভাবেই নষ্ট করে ফেলি অবহেলায়...
++