নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

টুকরো কথা

হিসলা সিবা

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।

হিসলা সিবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পাথর চাপা ঘাস..."; ছোট গল্প

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

ইদরিস মিয়ার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।

প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ এই রিকশা চালানো। তিন দিন কাজ করলে দুই দিন বিশ্রাম নিতেই হয়; কিন্তু সেই দুই দিন যে সংসার চলে না। ইদরিস মিয়ার ছেলেটা ভালো ছাত্র ছিলো, ছোট বেলা থেকেই এই বৃত্তি সেই বৃত্তি দিয়ে মোটামুটি নিজের খরচ নিজেই চালাতো। বড় হয়ে কোচিং টিউশনী করে ভালোই উপার্জন করতো। মাঝখানে তো ইদরিস মিয়া রিকশা চালানোই ছেড়ে দিলেন। ছেলেটা এত কম বয়সে সংসারের হাল ধরবে ইদরিস মিয়া স্বপ্নেও ভাবেননি।



গত বছর হঠাৎ কমনওয়েলথের স্কলারশিপ পেয়ে সুমনটা আমেরিকা চলে গেলো; তাই আবার ইদরিস মিয়াকে রিকশা নিয়ে নামতে হল। কয়েকদিন সুখে থেকে কষ্ট আর গায়ে সয় না, মাস খানেক ধরে হাঁপানির টানও বেড়েছে। তবে ছেলে মাসাল্লাহ খবর রাখে, মাঝে মাঝে টুকটাক টাকা-পয়সা পাঠায়; মাসে মাসে ফোন করে, ঐ দেশে নাকি অনেক খরচ; বাসা ভাড়াই নাকি তিরিশ হাজার টাকা। ইদরিস মিয়ার চোখ কপালে ওঠে !!!

কি লাভ এত খরচ করে পড়ালেখা করার ... ছেলেটা যে কবে দেশে ফিরবে ...



মিরপুর বারো নাম্বারে রিকশা থামালেন ইদরিস মিয়া; একটা বিড়ি ধরাবেন...



রুমকি বাসা থেকে মাত্র নামলো,

"চাচা যাবেন ?"



"না মা... এট্টু জিরামু অহন"



"চলেন না চাচা, একটু সামনেই নামিয়ে দেবেন..."



"আপনি একলাই ...?? আইচ্ছা উঠেন"



রিকশা চলছে, ইদরিস মিয়া বলে উঠলেন

"আইচ্ছা আম্মা, আমেরিকা এইখান থেইকা কত দূর ? পেলেনে যাইতে কয়দিন লাগতে পারে ... ??"



"কেন চাচা... আপনার কেউ থাকে না কি ?"



"হ; আমার পোলাডা। ভার্সিটি থেইকা বৃত্তি লইয়া গ্যাসে মাস ছয়েক হইলো..."



রুমকির বুকটা হঠাৎ ধক করে উঠলো

"আপনার ছেলের নাম কি চাচা ... ?"



"সুমন আহাম্মেদ... ক্যান আম্মা..."



"ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তো ...? "



"হ, আপনি ক্যাম্নে জানলেন...? চিনেন নাকি আমার পোলারে ... !!!"



রুমকি খুব ভালো করেই চেনে সুমন কে। সুমন রুমকি কে পড়াতো কলেজে থাকতে। ছেলেটা খুবই ভদ্র ছিলো, খুব আন্তরিক আর হাসতো খুব সুন্দর করে।কলেজে থাকতে আরো অনেক স্যারই ছিলো ওর, কিন্তু এই ছেলেটা যেন একটু অন্য রকম। কখনই পড়তে বলতো না, উল্টা গল্পের বই পড়তে বলতো। ওনার অনেক বই নিয়ে আর ফেরত দেয়নি রুমকি। চোখের সামনে জগতের জানালাটা যেন খুলে দিলো কেউ। প্রতি মাসে পরীক্ষা নিতেন, পরীক্ষায় আশির উপরে মার্ক পেলেই "জাফর ইকবালের" বই। কত টাকাই বা দিতো মা সুমন ভাই কে, সব তো বইতেই যেতো। ওর জন্মদিনে দিয়েছিলেন "জোছনা ও জননীর গল্প";

পড়ে দুই দিন ভেউ ভেউ করে কেঁদেছিলো রুমকি।



টেস্টের আগে আগে রুমকি হঠাৎ বুঝতে পারল সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। সুমন ভাইয়ের প্রেমে ভালোভাবেই ফেঁসেছে ও। স্কুলে বিতর্ক করা তুখোড় মেয়েটা খুব সাবলিল ভাবেই একদিন সুমনকে বলে দিলো তার মনের কথাটা।



সুমন কিছুক্ষন স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলো,



"আমাকে একটু সময় দাও..."



তিন দিন কোন খবর নাই চার দিন পরে এসে স্বাভাবিক গলায় পড়ালেন এনট্রপি, পড়া শেষে উঠে যেতে যেতে বললেন



"দেখো মেয়ে, তুমি এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এখনো অনেক ছোট; আর সবার জীবনতো এক রকম না। আর আমিও একটু ব্যাস্ত

তুমি ভালো করে পড়; পরীক্ষাটা দাও, তারপর তোমায় নিয়ে বসবো একদিন। অনেক কথা বলবো সেদিন,

আমার কথা গুলো তে কি তোমার মন খারাপ হচ্ছে ... ??"



রুমকি মাথা নাড়লো "না..."



"আরেকটা কথা বলি শোন, তুমি যদি কাউকে "ভালোবাসি" বল;

আমি বিশ্বাস করি এমন কেউ নেই পৃথিবীতে যে তোমাকে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে...।"



এরপর সুমন কোনদিন ফেরেনি।



রুমকির বড় অভিমান হয়েছিলো সেদিন সুমনের ওপর...



......ইদরিস মিয়া তাড়া দেয়, "কতদূর যাইবেন আম্মা ?"



রুমকি ভেজা গলায় বলে



"চাচা; আমি সুমন ভাইয়ের ছাত্রী, আমার নাম রুমকি,

আমাকে একটু আপনাদের বাসায় নিয়ে যাবেন ?

চাচীকে একটু দেখতাম......"



ইদরিস মিয়ার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। রিকশা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে প্যাডেলে চাপ দিলেন। একবার পেছনে ঘুরে মেয়েটাকে দেখে নিলেন,মেয়েটার চোখের জল গালে এসে পড়েছে...।



সুমনটা ওর মায়ের মত হয়েছে, চাপা স্বভাবের; কাউকে কিচ্ছু বলে না।



ইদরিস মিয়া সুমনের মা কে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। এই মেয়েটাকে তিনি এত কষ্ট পেতে দেবেন না।

ইদরিস মিয়া দ্রুত প্যাডেল চালাচ্ছেন।



সন্ধ্যা হলো বলে......

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: ইদরিস মিয়ার ছেলে সুমনের চরিত্রটা ভালো লেগেছে। এই রকম মেধাবী একটা ছেলে স্কলারশিপ পেয়ে বিদেশ যাওয়ার পর বাপে রিকসা চালায়-ব্যাপারটা গল্পের মতো মনে হলো। হয়তোবা হতেও পারে।

"গত বছর হঠাৎ কমনওয়েলথের স্কলারশিপ পেয়ে সুমনটা আমেরিকা চলে গেলো"- এই স্কলারশিপে কি আমেরিকা যাওয়া যায়?

রিকসা ড্রাইভারের প্রতি রুমকির মমতা, চাচা বলে ডাকা- খুউব ভালো লেগেছে।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: জীবনের সমীকরণ কেমন হঠাৎ মিলে গেল! এরকম সত্যি হলে খারাপ হত না। ভাল লাগল গল্প।

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

ডরোথী সুমী বলেছেন: খুব ভাল লাগলো। সবাই এতো স্বাভাবিক ভাবতে খুব ভাল লাগে, বাস্তবতা যাই হোক না কেন।

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

ভবঘুরের ঠিকানা বলেছেন: শুভকামনা জানিয়ে গেলাম, রাতে সময় করে পড়ে দেখব।

৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

জনাব মাহাবুব বলেছেন: ইয়াহু! ভাই এই মাত্র সেফ (জেনারেল) হইলাম। এখন মন ভরে লিখতে পারবো। !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P

সবাইকে শুভেচ্ছা। !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P !:#P

৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: বাস্তবে রিকশাঅলার ছেলেরা আমেরিকায় পড়তে যায় না, ভার্সিটি তো দূর অস্ত। আর মেয়েরা তাদের প্রেমেও পড়ে না। অতি নাটকীয় হয়ে গেছে গল্পটা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.