![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।
সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আশরাফ সাহেব। তার ছোট মেয়েটা খুব সুন্দর করে জুতো জোড়া মুছে দিলো,
"আব্বু, মনে আছে তো ..."
"কি রে; মা ?"
"ওমা, তোমাকে না সেহেরীর সময় বললাম... আজকে জুস আনতে হবে... "
আশরাফ সাহেব একটু থমকে দাঁড়ালেন, তার আট বছর বয়সী মেয়েটা আজ প্রথম রোজা রেখেছে। খুব কষ্ট করে রাতে উঠে সেহেরী খেয়েছে।
"আম্মু, বাচ্চাদের রোজা রাখতে হয় না...। তুমি দুপুরে লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে নিও, কেউ দেখবে না।
তাহলে হবে দুইটা রোজা, আর আমি আসার সময় জুস নিয়ে আসব..."
"না না আব্বু, আজকে আমি রোজা রাখবোই, প্লিজ প্লিজ আব্বু... একটা রোজা রাখি ?
আমার সব বন্ধুরা রেখেছে..."
"আচ্ছা মা আচ্ছা, রাখিস; আমি গেলাম।"
বের হবার সময় স্ত্রীকে বলে গেলেন
"মেয়েটাকে খাইয়ে দিও... আর আমার নবাবজাদা জমিদারপুত্রটা কোথায় ?"
"ঘুমাচ্ছে"
"হ্যা, নবাবজাদা তো ঘুমাবেই, আছে না আমার বাপের জমিদারি "
"সাবধানে যেও, একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবা..."
"আচ্ছা ঠিক আছে; তুমি কিন্তু মেয়েকে রোজা রাখতে দিও না... আমি গেলাম।"
আশরাফ সাহেব একটা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। মাস তিনেক বেতন হচ্ছে না। তার বউ যে কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন সেটা আল্লাহ মাবূদ জানেন।
আচ্ছা ফারজানাকে কি এভাবে রাখার কথা ছিলো। কত স্বপ্ন কত গান সব কোথায় হারিয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উত্তাল প্রেম। তারপর পাইলে বিয়ে, দুই পরিবারের কেউই মেনে নেয়নি প্রথমে। সেই যে নিজের সংসার... আজ বিশ বছর পর ফারজানার চোখের নিচে কালির দাগ দেখে ধক করে বুকে লাগে আশরাফ সাহেবের। আহা এমন সুন্দর একটা মেয়ের জীবন কিভবে ধ্বংস করে দিলো সে। শাহবাগের কাছে এসে জ্যামে পড়লো তার বাস।
শাহবাগের রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। জাগরণ মঞ্চের মিছিল, ক্রোধে জ্বলে ওঠে আশরাফ সাহেবের মনটা। তার ছেলেটাও এখানে আসে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত এখানে পড়ে ছিল নাওয়া খাওয়া ভুলে। আমাদের মত মানুষের কি এই সব আন্দোলন ফান্দোলনের বিলাসিতা সাজে। আবার আনমনে হয়ে পড়েন আশরাফ শাহেব। আচ্ছা তার ছাত্র জীবনেও তো জাহানারা ইমামের ডাকে ঠিকই ছুটে এসেছিলেন, স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের মিছিলে কত স্লোগান দিয়েছিলেন। এরকম এক মিছিলেই তো খুঁজে পেয়েছিলেন ফারজানা কে। ছেলেটা তো ভুল কিছু করছে না...
অফিসে এসে দেখেন তুলকালাম কাণ্ড। বোনাস তো দূরে থাক, এই মাসেও বেতন হবে না। ম্যানেজার সাহেব ডেকেছেন তাকে।
"আশরাফ, তুমি তো সব বোঝ। আমার হাতে কিচ্ছু নাই। কোম্পানি টাকা না দিলে আমি কি করতে পারি ?"
"জি স্যার সেটা ঠিক"
"তুমি একটু বোঝাও ওদের..."
আশরাফ সাহেব সবাইকে শান্ত করলেন। সারাদিনে আর তেমন ঝামেলা হল না।
অফিস ছুটি হল, নিচে আসতেই ফের ম্যানেজার সাহেবের সাথে দেখা।
"তুমি আজ অনেক উপকার করলা, আসো তোমাকে নামিয়ে দেই।
তোমার বাসার কি খবর... ভাবি বাচ্চারা সব কেমন আছে ?"
"জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ ভালো"
সেই মুহূর্তে ফোন এলো বাসা থেকে
"আব্বু তাড়াতাড়ি আসো না; জুস আনবা কিন্তু মনে করে..."
"মা... তুমি রোজা ভাঙো নাই ? আম্মুকে দাও..."
"দিচ্ছি ধর''
"কি ব্যাপার তুমি মেয়েটারে রোজা রাখতে দিলা কেন ? আমি এতবার নিষেধ করলাম..."
আশরাফ সাহেব কিছুক্ষণ উত্তপ্ত কথাবার্তা বলে ফোনটা কেটে দিলেন।
কি ব্যাপার আশরাফ ঘটনা কি ?
"স্যার আমার ছোট মেয়েটা, প্রথম রোজা রেখেছে। ওর মা কে এতবার নিষেধ করলাম..."
"আরে বাচ্চা মানুষ রেখেছে ভালো করেছে, তুমি একদিন এসো বাসায় ভাবি আর বাচ্চাদের নিয়ে...
আর ভাই আজকে তুমি বড় বাঁচা বাচাইলা।
বাসার কাছাকাছি এসে জুসের কথা মনে পড়ল আশরাফ সাহেবের। পকেটে হাত দিয়ে দেখেন সাকুল্যে সাত টাকা আছে।
পাড়ার দোকানে একুশশো টাকা বাই এখনও।
"মুহিব, একটা এক লিটারের জুস দে বাবা, টাকাটা লিখে রাখ..."
"চাচা, খালুজান বাকি দিতে নিষেধ করসেন, ঈদের আগে বাকি নাই।"
আশরাফ সাহেবের গলাটা ধরে এলো, তিনি বাড়ি গেলেন না। সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করলেন মসজিদের ওজুখানার পানি খেয়ে।
ইফতারের ঘণ্টা খানেক পর ধীরে ধীরে বাড়ি আসলেন...
"আব্বু, তুমি এত দেরি করলা..."
"আনতে পারি নাই রে মা... এদিকে আয়..."
"দেখ... ভাইয়া কি আনসে... আমার জন্য..."
ঘরের এককোণায় দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে শোভন
"তোমার ছেলের কাণ্ড দেখস ? গত মাসে একটা পার্ট টাইম চাকরি পাইসে কাউকে বলেও নাই।
বেতন পেয়ে সবার জন্য জিনিসপত্র কিনে একাকার...
এই দেখ তোমার পাঞ্জাবিটা পছন্দ হয় কি না..."
আশরাফ সাহেবের চোখ ভিজে এলো।
বহুদিন তিনি কাঁদেন না...
২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:০৪
ইখতিয়াক ইবনে আহসান ইফাত বলেছেন: valo hoyeche, chaliye jan
৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪১
বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন:
সুন্দর, গোছানো লেখা...
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
শূন্য পথিক বলেছেন: দারুণ
৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৩
পরিবেশক বলেছেন: দারুণ
৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৪
বাঙলি বলেছেন: ভালো লাগল.........................
৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭
ড. জেকিল বলেছেন: সুন্দর গল্প।
৮| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: মোটামুটি। আপনি কমেন্টের রিপ্লাই দেন না কেন?
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৭
হিসলা সিবা বলেছেন: এখন থেকে আপনার সব কমেন্টের রিপ্লাই দেবো, কথা দিলাম
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৪
মানবতার ভাই বলেছেন: bah... oshadharon