![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি হিমাদ্রী। যাযাবর পথিক হিমাদ্রী। মানুষকে ভালবাসি আর মানবতার জন্য কাজ করি।
চট্রগ্রাম টু ঢাকা বাই ট্রেন
জে,পি,এইচ
বাসা থেকে রাত ৮ টায় বের হলাম, চট্রগ্রাম নতুন ষ্টেশন এর উদ্দেশে কারণ ট্রেন এর টিকিট নিতে হবে। রাত ১১ টার ট্রেন। ঢাকা একটা কাজে যেতে হবে।
গাড়িতে উঠলাম কিন্তু রাস্তায় যে যানজট বিরক্তিকর,তার উপর বৃষ্টি । সব মিলে মারাত্তক অবস্থা। যাক শেষ পর্যন্ত ষ্টেশন পৌছালাম । ৯.৩০ মিনিটে উপস্থিত হলাম কাউনটারে।
কাউনটারে এক ৪০-৫০ বছরের ভদ্র লোক বসে আচ্ছেন।
আমিঃ ভাই একটা টিকিট লাগবে
লোক ঃ কোথায় যাবেন?
আমি ঃ ঢাকা
লোক ঃ কোন দিনের টিকিট?
আমি ঃ আজকের
লোক ঃ কওন ট্রেন?
আমি ঃ তূর্ণা নিশিতা
লোক ঃ দুঃখিত কোনও টিকিট নাই।
আমি ঃ ভাই খুব জরুরি
লোক ঃ কিছু করার নাই।
আমি ঃ একটু দেখেন দয়াকরে
লোক ঃ ( একটু চিন্তা করে ) টিকিট দিতে পারি কিন্তু দাড়িয়ে যেতে হবে।
কি আর করব দিয়ে দিন।
রাত ১১.৩০ মিনিটে তূর্ণা নিশিতা চট্রগ্রাম নতুন ষ্টেশন এর ৫ নং প্লাটফারম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হল। ৩২০ টাকা দিয়ে ও সীট বিহীন টিকিট পেলাম।কি অবাক কাণ্ড রেল প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দেখায় আর টিকিট যেন সোনার হরিণ। আমার সোনার বাংলা......আমি তুমায় ভালবাসি। ট্রেন তার গতিতে ছুটে চলছে অন্ধকারে। এখন কেবল ঢাকা পৌছার পালা। ৭ ঘণ্টা তো লাগবেই ।
রাত ১২.৫০ মিনিটে ফেনী পৌছালাম। ট্রেন জার্নি বরাবর আমার ভাল লাগে কারণ ট্রেন জার্নি নিরাপদ। সীট না পাওয়ার কারনে একটু কষ্ট হচ্ছে, হোটেল বয় থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে বসার জন্য একটা টুল পাওয়া গেল। যাক একটু স্বস্তি পেলাম কিন্তু কত মানুষ যে দাড়িয়ে আছে
বলার মত না। কি আর করা টুলটা নিয়ে দরজার পাশে বসে পড়লাম ।
রাত ২.১০মিনিটে হঠাৎ কোনও জায়গায় ট্রেন থেমে গেল কিছু বুঝতে পারি নাই। জায়গার নাম কি ,কারণ চার দিক অন্ধকার। একটু ঘুমিয়েও গিয়াছিলাম।কিছু আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল । দেখি এক মহিলা চিৎকার করছে, আমারে বসার সীট দে... নইলে আমার তেহা (টাকা) দে । পরে জানলাম চেকার ঐ মহিলা কে ৪ টা বসার সীট দেওয়ার নাম করে ৮০০ টাকা নিসে,কিন্তু বসার সীট দিতে পারে নাই।মহিলা সহ তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে, মহিলা তো সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে। চেকার বহু কষ্টে পরবর্তী ষ্টেশনে সীট দেয়া হবে বলে শান্ত করল।
এরি মধ্যে আমার প্রচণ্ড খিদা লাগল কারণ টিকিট এর কারনে ইফতার এর পর আর কিছু খাওয়া হয়নি। তাই ট্রেন এর হোটেল থেকে হালকা নাস্তা নিলাম। যাক একটু শান্তি পেলাম। দরজার পাশে বসার কারনে কিছু ক্ষণ পর পর মানুষের যাওয়া আসা এক বিরক্তিকর অবস্থা।বাইরে প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে যা অনুভব করছি কারণ অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। অন্ধকারে হঠাৎ হঠাৎ মিটি মিটি আলো দেখা যাচ্ছে। গ্রামের বাড়ির বাত্তি, যা এক অপূর্ব দৃশ্য যেন কয়লার মাঝে মুক্তা জ্বলছে।
রাত ২.২৬ মিনিট কুমিল্লা এসে পৌছালাম। এই কুমিল্লার সাথে আমার অনেক সৃতি জরিয়ে আছে। যা এই মুহূর্তে সৃতির পাতা থেকে উকি দিতে শুরু করেছে। ঢাকা পৌছাতে আরও প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগবে। পথি মধ্যে আখাউড়া, বি-বাড়িয়া, ভৈরব, নরসিংদী ষ্টেশন পারি দিবে। ট্রেনের চলার আওয়াজ কান ঝালা- পালা করে দেয়।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি, এখনও বৃষ্টি পড়ছে আর দূর- দুরান্তে মিটি মিটি আলোর ঝলক দেখা যাচ্ছে। যে মহিলার কথা বলে ছিলাম সে তার স্বামী কে মোবাইল এ খুব করে গালি দিচ্ছে। সে যে কি অবস্থা তার জোরে জোরে কথা বলা আর ট্রেন এর আওয়াজে সকলের অবস্থা খারাপ। এক পরজায়ে মহিলাটি সব মেনে নিয়ে চুপ হয়ে গেল। মহিলাটির ছোট ছেলেটা তার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়ল । সারা ট্রেন এর মানুষ গভির ঘুমে তলিয়ে আছে। আর কিছু ক্ষণের মধ্যে সাহেরির সময় শুরু হবে।
ট্রেনে তো অনেক বার যাতায়েত করেছি কিন্তু কেনও আজ এই যাত্রার অনুভুতি লিখতে মন চাইল, সাথে ডায়রী ও ছিল তাই লিখতে বসে পড়লাম । আসে পাশের কিছু যাত্রী এমন ভাবে দেখছে যেন যেনও কি ??
ট্রেন এর দরজা খুলতে হবে বলে পুলিশ আমাকে জায়গাটা ছাড়তে বলল । কি আর করা টুল টা নিয়ে অন্য জায়গা খুজতে লাগলাম।
অন্য এক বগিতে পেলাম দুই জনের মাঝখানে। সে দুই ভদ্র লোক গভির ঘুমে , একজন টয়লেট এর পাশে আর এক জন দরজার পাশে আর আমি টুল নিয়ে বসলাম তাদের মাঝখানে। উহ ঃ কি যে দুর্গন্ধ বুঝাতে পারব না। কিন্তু ঐ দুই জন এমন ভাবে ঘুমাচ্ছে যেন স্বপ্নপুরিতে মখমলের খাটে ফুলের সুবাস নিয়ে ঘুমাচ্ছে । এরই মধ্যে সাহেরির সময় হয়ে গেল। ট্রেন এর হোটেল থেকে খাবার বিক্রি করছে কিন্তু আমার চার পাশের যে অবস্থা, কি করব বুঝতে পারছি না কারণ রোজা রাখতে হবে তাই সিদ্ধ ডিম আর আমের জুসে সাহেরি সেরে নিলাম। কিছুক্ষণ আগেও সারা ট্রেন ছিল নীরব যেন মৃত্যুর কুপ আর এখন সবার মাঝে সাহেরি খাওয়ার ধুম । সে এক জটিল অবস্থা। না দেখলে বুঝার উপায় নাই।
আখাউড়া জংশন ৩.৫২ মিনিটে যখন আখাউড়া এসে পৌছালাম তখন সবার সাহেরি প্রায় শেষ । আখাউড়া তে আছে বাবা কল্লা শাহ (রাহ) এর মাযার শরীফ। আল্লাহ ও তার হাবিবের রাহমাতে আমার এই মহান অলির দারবার যিয়ারাত করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
এদিকে আমার পা খুব ব্যথা করতেসে আর সিগারেটের দুর্গন্ধে মাথা ও খুব ব্যথা করছে।
এখন ভোর ৪.১৬ বি-বাড়িয়া এসে থেমেছে ট্রেন। কিছু যাত্রী নামছে ভাবলাম যাক মানুষ কমে গেলে কোথাও একটা সীট পাব।
কিন্তু দেখলাম যত যাত্রী নামলো তার চেয়ে বেশি উঠল । ট্রেন এর জানালা দিয়ে বি-বাড়িয়া বিখ্যাত অমৃত মিষ্টান্ন এর দোকান দেখা যাচ্ছে। এই দকানের মিষ্টি খুব মজাদার।
আমি যখন এই লাইন টা লিখছি তখন ট্রেনটা ভৈরব ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কার বুক ভেদ করে ট্রেন যাচ্ছে আর তার আর্তনাদে সারা আকাশ, বাতাস কেঁপে উঠছে। আকাশ একটু একটু পরিষ্কার হচ্ছে কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে।
৪.৪২ মিনিটে ট্রেন যখন ভৈরব ষ্টেশন পৌছাল, ষ্টেশনের দোকান পাঠ তখন ও খোলা, সারা ষ্টেশনে আলো জ্বলছে। কয়েকটি ফলের দোকান এখনও খোলা। অনেক মানুষ ষ্টেশনের প্লাটফারমে সারিবদ্ধ ভাবে গভির ঘুমে ঘুমিয়ে আছে । নির্বিকার ভাবে পড়ে আছে যেন তাদের কোনও কিছুর চিন্তা নাই। পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষ তারা।
ট্রেন আবার চলতে শুরু করল । চার দিক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, ভোর এর দৃশ্য যে কত সুন্দর, কত মনরম হয় না দেখলে বুঝার উপায় নাই।চার পাশ সবুজ গাছ পালা, ক্ষেত, ডোবা ,পুকুর , ছোট ছোট ঘর বাড়ি, শিশির ভেজা শীতের মত দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে।
ভোর তখন ৫.০৩ মিনিট প্রকৃতি যেন আজ নুতুন রুপে সেজেছে।
৫.২০ মিনিটে ট্রেন কলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদী শহর অতিক্রম করছে । শহর টা ও খুব সুন্দর । যে দিকে তাকাই কেবল কলা গাছের বাগান।
আমার গাড়িতে খুব ঘুম পায় কিন্তু আমি কোনও ভাবে ঘুমাতে পারলাম না। আমার পাশের সেই দুই ভদ্র মহাশয় এখনও ঘুমাচ্ছেন।
৬.০৫ মিনিটে গাজীপুর ও টুঙ্গি অতিক্রম করার পর শেষ পর্যন্ত ৬.১৬ মিনিটে বিমান বন্দর ষ্টেশনে থামল। আমাকে যেহেতু বারিধারা যেতে হবে তাই আমি আমার ট্রেন যাত্রার ইতি টানলাম ।
ধন্যবাদ
হিমাদ্রী
©somewhere in net ltd.