নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

" মানব ও মানবতা " Human

NOTHING IS IMPOSIBLE

যাযাবোর

আমি হিমাদ্রী। যাযাবর পথিক হিমাদ্রী। মানুষকে ভালবাসি আর মানবতার জন্য কাজ করি।

যাযাবোর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধু কই কই বিষ খাওয়াইলা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৩

মধু মাসের ফলে মধু নেই। আগেকার সেই রসে টইটম্বুর মধু ফল ভেসে গেছে কেমিক্যালের বেনোজলে। ব্যবসায়ীদের রাতারাতি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা পাকার আগেই পাকিয়ে দিচ্ছে আম, কাঁঠাল, আনারস কিংবা তরমুজ, লিচু, বাঙ্গিকে। শুধু তাই নয়- বিদেশি স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, নাশপাতি ও আপেলের অবস্থাও তথৈবৈচ। গাঁটের পয়সা খরচ করে বিষমাখা এসব ফলমূলই মানুষ খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছুই করার নেই, বলারও যেন নেই। তবে বিএসটিআই সহকারী পরিচালক কে এম হানিফ আজাদীকে বলেন, মধু মাসকে সামনে রেখে যেকোন দিন ফলমন্ডি এবং ফলের আড়তগুলোতে অভিযান চালানো হবে। বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ ১৯৫৯ (সংশোধিত ২০০৫) এর ৬ (ক) ধারায় জরিমানার পাশাপাশি নিয়মিত মামলার ব্যবস্থা করা হবে। একই প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন আজাদীকে বলেন, বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আমরা ফলমূলে কেমিক্যাল ব্যবহার রোধে অভিযানে নামবো। তবে কখন নামবো, তা আগেভাগেই বলতে চাইছি না।

নগরীর বিভিন্ন আড়ত, বাজার, দোকান ও ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা নানা ধরনের ফল দেখে লোভ সামলানো কঠিন। কার্বাইড, ফরমালিন, মিপসিন, মার্শাল, কার্বোফুরান, ইথরিল ও ডাই-এলড্রিন-এর ঝাঁজে দেশি-বিদেশি আম, তরমুজ, আনারস, পেঁপে, কলা, বাঙ্গি ও লিচু সময়ের আগেই লোভনীয় হয়ে উঠছে। ফিরিঙ্গিবাজারের পাইকারি ফলের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আম, তরমুজ, কলা, পেঁপে, আনারস ও বাঙ্গি সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। অধিকাংশ অপরিপক্ব ফলগুলোর জন্য নির্ধারিত পাত্রে জড়ো করে বেশি মাত্রায় ইথরিল ও কার্বাইড ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পচনের পর্যায়ে পৌঁছানো পাকা ফল গুদামঘরে বিছিয়ে ফরমালিন মিশ্রিত বিশেষ ধরনের কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

রেয়াজউদ্দিন বাজারের ফল বিক্রেতা মোহসিন জানান, বেপারিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আধাপাকা অপরিণত ফল সরবরাহ করে থাকেন। এসব ফলে রং না ধরলে বা না পাকলে ক্রেতারা কিনতে চান না। কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল বিক্রির অপরাধ স্বীকার করে তিনি আরো জানান, গাছ থেকে এসব ফল নামিয়ে বাগানে রাখা অবস্থায়ই এক দফা ইথাইনিল, ইথরি ও কার্বাইড স্প্রে করা হয়। শহরে পৌঁছানোর পর আবারও মেশানো হয় একই রাসায়নিক। পুঁজি ফিরে পাওয়ার জন্যই তারা কেমিক্যাল মিশাতে বাধ্য হন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগানের গাছে যখন আমের মুকুল আসে, তখন যে বিষাক্ত কীটনাশক স্প্রে করা হয়, এর বিষক্রিয়া থাকে কমপক্ষে ছয় মাস। আর দ্বিতীয়বার রাসায়নিক মেশালে তা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের ফলে আর্সেনিক আদলের সেঁকো বিষ তৈরি হয়। ফলের মাধ্যমে সেই বিষ প্রবেশ করে মানব শরীরে। দামে অতি সস্তা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ফল পাকানোর কাজে কার্বাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার করেন। এক কেজি ক্যালসিয়াম কার্বাইডের মূল্য মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এই এক কেজি কেমিক্যাল দিয়ে ১০ টন ফল পাকানো সম্ভব। তবে ব্যবসায়ীরা সাধারণত ৫০ কেজি ফলের জন্য ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করেন।

রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে পাকানো ফল যতোটা লোভনীয়, ততটা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা বোঝার উপায় নেই। বাজারের সকল ধরনের ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মিশানো হয়। গত ৮ মে বিকেলে ফিরিঙ্গিবাজার ফলের আড়তে গিয়ে দেখা গেছে কার্ভাইড মিশানোর বিষয়টি এখানে ওপেন সিক্রেট। যদিও আড়তের কর্মচারীরা বলছেন, দ্রুত না পচার জন্যই তারা এসব রাসায়নিক মিশায় ফলে। এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে কেউ রাজি হয়নি। কেউ কেউ আবার মালিক নাই বলে পাশ কাটিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আড়তে বেশি সময় ধরে ফল সরক্ষণের জন্য মেশানো হয় বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক। ফলমূলে রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে কী-না তা পরীক্ষার জন্য নগরীতে কোথাও কোন ব্যবস্থা নেই। কেবল মাঝে মাঝে বিএসটিআই’র অভিযানে রাসায়নিকের প্রমাণ মিললেও বৃহত্তর নগরীতে তা অপ্রতুল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ভেজাল বিরোধী অভিযানের ভয়ে অনেকে প্যাকেট বা ঝুরিভর্তি করার আগেই আমে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছে। কৌশল সম্পর্কে জানা যায়, কাঁচা আম ঝুড়ি বা কার্টনে সাজিয়ে রাখার পর মাঝখানে একটি কাগজের উপর ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড রাখা হয়। তা থেকে ইথিলিন নামে এক ধরনের গ্যাস উৎপাদিত হয়। এর তাপে আম কাঁঠাল পেকে যায়। ফল ও সবজিতে কার্বামেট জাতীয় কার্বারিল, মিপসিন, মার্শাল, কার্বোফুরান, পাদানসহ কয়েকটি কীটনাশক বেশি পরিমাণে ব্যবহূত হচ্ছে। সাধারণত ১৫ থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত এগুলোর বিষক্রিয়া থাকে। পাইরিথ্রয়েড জাতীয় রিপকর্ড, সিমবুশ, ডেসিস, সুমিসাইডিন, সুমি আলফার বিষক্রিয়া থাকে সাত থেকে ৩০ দিন। অথচ এসব বিষ প্রয়োগ করে দু’চার দিনের মধ্যেই বাজারে ফল ও সবজি নিয়ে আসা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা: এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম আজাদীকে জানান, অপরিপক্ক ফল তাড়াতাড়ি পাকানোর জন্য ইথিন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে ফল না পচার জন্য ব্যবহার করা হয় কার্বাইড। এসকরবিক এসিড, সরবিক এসিড, বেনজয়েট এসিড, ইডিটিএ ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদী প্রিজারভেটিভ। স্বাভাবিক পরিমানে ব্যবহার করলে এগুলো ক্ষতিকর নয়। তবে এগুলোর দাম বেশি। তাই এই ধরনের প্রিজারভেটিভ সচরাচর ফল ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করেন না। তারা খুব সস্তায় দীর্ঘমেয়াদী প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করেন। এগুলো হচ্ছে প্রোপাইল গেলেট, বি এইচ এ, হেপটাইল পারাবেন, বি এইচ টি, সোডিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম বেনজয়েট, সালফাইট ইত্যাদি কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। এগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ডা. চন্দন দাশ গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে বলেন, আসলে ফলমূলে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করছে সেগুলো মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে মেডিসিন ব্যবহার করলে সেগুলো অনেকদিন সংগ্রহে রাখা যায়। কিন্তু এসব খাওয়ার পর তা সহজে হজম হয় না। বিষেষ করে পাকস্থলী ও কিডনি ক্ষতিগ্রচ্চ হয়। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক আলসার ও চর্মরোগ ছাড়াও দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এর ফলে শিশুদের হার্টের রোগ দেখা দেয় ও দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা শিশুও বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি এসব ফল খাওয়ার চেয়ে না খাওয়ার উপর গুরত্বারোপ করেছেন। তবে খেতে হলেও খাওয়ার আগে ফল পানি ভর্তি বালতিতে অন্তত এক ঘন্টা চুবিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ফলের উপরে থাকা বিষাক্ত কেমিক্যাল কিছু হলেও ওয়াশ-আউট হয়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.