![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক কথায় ভাবুক! বহুকথায় আমি একজন স্বাধীন মানুষ, রোবট নই! তাই কারো কথায় সহজে প্রভাবিত হই না,সবার কথা শুনি, সবার লিখা পড়ি, হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি , কেন তিনি এমন করে ভাবছেন!বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গ খুব উপভোগ করি,তাদের সাথে মতের মিল হলে ভাল, না হলে আরও ভাল, গলায় জড়াজড়ি করে বলি, আসেন আপনার কাছ থেকেই নতুন কিছু শেখা যাবে!
মেজর ইস্কান্দার খান বুড়ো হয়ে গিয়েছেন, গালের চামড়া কুঁচকে ঝুলে গিয়েছে । চশমা ছাড়া চোখে কিছু দেখতে পান না । হুইল চেয়ারে বসে দিন পার করেন । নাতি নাতনীদের সাথে খুনসুটি করে, পত্রিকার পাতা উল্টিয়ে অলস সময় পার হয় এখন । মাঝে মাঝে একা বিকালে বারান্দায় বসে কি চিন্তা করেন কে জানে ? তার যা বয়স সে বয়সে পুরনো দিনের তেমন কোন কথাও বিশেষ একটা মনে পড়ার কথা না । ছোট ছেলের বউটা খুব যত্ন নেয় তার । সন্ধ্যার খবরটা রোজ দেখেন তিনি । বউটা এক কাপ কফি বানিয়ে, টিভিটা চালু করে চ্যানেল পাল্টাচ্ছে । বিবিসি আসতেই তিনি হাত ইশারা করে থামতে বললেন । ব্রেকিং নিউজ, পরপর আসছেঃ বাংলাদেশে পিকেটারদের হামলায় বিজিবি নিহত । পুলিশের গুলিতে ৩ জন পিকেটার নিহত । ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন ২১ জন নিহত । লাগাতার অবরোধের ঘোষণা বিরোধী দলের । সরকারী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা মানতে নারাজ । সারাদেশে আহত ২৩ জন।
ইস্কান্দার খান সাহেবের ছোট বউ আবাক হয়ে দেখল, তার শ্বশুর হাতে কিল দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন । হুইল চেয়ারের চাকা জোরে ঘুরিয়ে তিনি নিজের আলমারির ব্যাক্তিগত ড্রয়ার থেকে একটা ছবি বের করলেন । ছবিটা খুব বিখ্যাত ।এই ছবিটা দেখলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের গ্লানির কথা মনে পড়ে যায় তার । সেই দিন থেকে আর একটা রাতও ঠিকমত ঘুমাতে পারেন নি তিনি । মুক্তিবাহিনীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে পুরো বাহিনী নিয়ে ইন্ডিয়ার এক গোপন কারাগারে অসংখ্য বন্দী রাত কাটিয়েছেন তিনি । ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তার নাম ছিল ওপরের দিকে । আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় দেশে ফেরার পর মুক্তিবাহিনীর কাছে লাঞ্চনাকর পরাজয়ের অভিযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চাকরী হারান এই চৌকস অফিসার । লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারতেন না । অথচ সেনাবাহিনীতে মেজর খানের সাহসের বিশেষ সুনাম ছিল । সহযোদ্ধার লাশ মুক্তিবাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হতে দেখতেন নিজের চোখের সামনে , সেই লাশ মাড়িয়ে তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিতেন বাঙ্গালীর উপর । যাই হোক সেসব পুরানো ঘটনা , বর্তমানটাই আসল ! মৃত্যুর আগে তিনি দেখে যেতে পারছেন, এই জাতীর লোকেরা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ে নিজেরা নিজেদেরকে মারছে , আড়ালে দাবার গুটি চালছে সেই পুরানো মতলবী বাহিনী । যাক এটাই পরম পাওয়া । তখন তো আমরা মারতাম এখন নিজেরা নিজেদেরকে মার , বিড়বিড় করলেন তিনি । সমস্ত গ্লানিকে আজ মুক্তি দিয়ে তিনি ঠিক মাঝ বরাবর টান দিয়ে ছবিটা ছিঁড়ে ফেলে, নিজের হা হা হাসির শব্দে নিজেই চমকে উঠলেন । শেষ ১৯৭১ এর পঁচিশে মার্চে এমন করে হেসেছিলেন । আহ তৃপ্তি !
___________________
ইহা একটি স্যাটায়ার !
©somewhere in net ltd.