নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছেঁড়াপাতা

হাসান জামাল গোলাপ

ম্যাপল

হাসান জামাল গোলাপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

টরোন্টোর গাংচিল

২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪০

টরন্টোতে হঠাৎ সঠাৎ সপ্তাহন্তে বাজারে যাই, দেশী শাকসবজি আর মাছমাংস কেনার জন্য। অনেক দিন পর পর যাই তাই বাজারও করি অনেক, আমার এক আত্মীয় চোখ বড় করে বলেন, ভাই বিয়ে বাড়ির বাজার করছেন নাকি! ছোট্ট শহর গুয়েলফে থাকি, টরন্টো থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। গত মঙ্গলবার অফিসের কাজে টরন্টোতে ছিলাম, তাই ফেরার পথে বাজারটা সেরে ফেলতে চাইলাম। বিকাল ৬টা, গেলাম ড্যানফোর্থ রোডের একটা দেশী দোকানে। ভিড় খুব সামান্যই, তবু মাছমাংসের লাইনে দশ/পনের মিনিট পার হয়ে গেল, এরপর দোকানি জিজ্ঞাসা করলেন, কি লাগবে?
২০ পাউন্ড বনলেস ভীল দিন।
তারপর নিচে ট্রেতে দেখলেন সেই পরিমাণ হবে না তাই ফ্রিজের ভিতর থেকে আনতে গেলেন, এরপর মিনিট কয়েক পরে কাঁধে করে আনলেন, কাঁটলেন, মাপলেন এবং লিস্টে দাম লিখলেন।
বললেন, আর কি লাগবে?
২০ পাউন্ড বনসহ ভীল দেন।
তারপর নিচে ট্রেতে দেখলেন সেই পরিমাণ হবে না তাই ফ্রিজের ভিতর থেকে আনতে গেলেন, এরপর মিনিট কয়েক পরে কাঁধে করে আনলেন, জিজ্ঞেস করলেন
কোন দিকটার দিব?
কাঁধের অংশ থেকে দেন।
তিনি কেঁটে কাঁধের অংশ ওজন করলেন।
বললেন, আর কি লাগবে?
পাঁচটা হার্ড চিকেন।
8 টা ট্রে তে ছিল, আরেকটি বড় ফ্রিজ থেকে আনলেন। তিনি ফ্রিজার রুমে ঢুকলেন এবং বেশ খানিক্ষন পরে বললেন, আর কি লাগবে?
২৫ পিস্ ড্রাম স্টিক।
সেটি ট্রে থেকে উঠিয়ে ওজন করতে দেবেন এমন সময় আমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাক্তির ধর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল, তিনি আর থামতে পারলেন না, খিচিয়ে বলে উঠলেন -
এই যে ভাই আমারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি!
দোকানি থতমত খেয়ে আমাকে বাদ দিয়ে তখন আমার পেছনের ব্যক্তির খেদমত করা শুরু করলেন এবং তার মুরগি, মাংস, মাছ সব অর্ডারই নিলেন। আমিও তাঁকে কিছু বলতে পারলাম না, মফস্বল থেকে রাজধানীতে গেছি এরকম ভাব নিয়ে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকলাম, ভিতু প্রকৃতির মানুষ আমি, লোকটির চোখের দিকেও তাকালাম না, আঁড় চোখে পাশ থেকে দেখলাম- ফুল হাতা শার্ট, টেট্রন প্যান্ট। শার্ট প্যান্টের ইস্ত্রি মলিন, হয়ত কেনার পর আর কোনোদিন স্ত্রী করেননি। মাঝ বয়সী, চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা - দেখলে জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব, আসলে বেটা ভন্ড, জ্ঞানপাপী। কথায় আছে, While in Rome be a Roman, কিন্তু বাংলাদেশের বাঙালীরা পারলে রোমানদেরকে বাঙালী বানাবে, লাইন ভেঙে নিজে আগে যাবে, বুঝাবে নিজে বাঁচলে বাপের নাম, ফ্রী আলকাতরা খাওয়া শিখাবে। মনে মনে লোকটাকে ইতর মনে করে গালি দিলাম, সব শেষে নায়াগ্রার জলপ্রপাতের চূড়া থেকে বার কয়েক ছুঁড়ে মারলাম। লোকটা ১৭৬ ফিট নিচে চ্যাং দোলা হয়ে পড়ছে, দৃশ্য মনে মনে ভেবে এক ধরনের প্রশান্তি পেলাম।
এরপর দোকানী আমার অর্ডার নেওয়া শেষ করলেন।
এরপর দেখি লোকটি দোকানের এমাথা থেকে ওমাথা অনেকটা দৌড়ে জিনিস ট্রলিতে নিতে থাকলেন। অস্থির প্রকৃতির মনে হলো, পাড়ার মনু পাগলার মত, মনু পাগলার মাথা গরম হলে অনবরত পানি ভর্তি বোতল ঝাঁকাত, মনে হচ্ছে বেটাকে পানি ভর্তি বোতল দিয়ে মাথায় এক বাড়ি দিয়ে বলি, নে এটা নিয়ে ঝাঁকা।
আমিও ট্রলিতে কিছু দেশি সবজি নিলাম, কয়েক বার তাঁর পাশ দিয়ে গেলাম, লোকটি মথা নিচু করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আমি ভাব দেখালাম ভাবলেশহীন, তোকে কেয়ার করি না।
বাজার গাড়িতে তোলা প্রায় শেষ, দেখি লোকটা ট্রলি আইল্যান্ড থেকে নামানোর চেষ্টা করছে। আইল্যান্ড থেকে রাস্তার rampটা অসমান, নিচের চাকা আটকে যায়। তিনি জোরে ঠেলতে যেয়ে ট্রলিটাই কাত হয়ে পরে গেল। জিনিসপত্র সব বের হতে থাকলো, বেচারা বেসামাল একটা তুলে তো আরেকটা দৌঁড় মারে। আমি তাড়াতাড়ি যেয়ে সাধ্যমত সাহায্য করলাম। সব কিছু তোলা শেষ, একটি ধ্যবাদ পর্যন্ত দিলেন না, চলে আসছি এমন সময় উনি পেছন থেকে হাত ধরলেন। ঘুরে চোখমুখে চরম বিরক্তি প্রকাশ করলাম। উনি বললেন,
ভাই, মেয়েকে টিউটোরিং এ রেখে এসেছি তাই একটু তাড়াহুড়া করছিলাম মনে কিছু নিবেন না।
আমি হা হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। যে লোকটিকে কিছুক্ষন আগে ১৭৬ ফিট নিচে ছুঁড়ে ফেলছিলাম এখন আর তাকে ছুঁড়তে ইচ্ছা করছে না। লোকটি না থেমে বললেন,
আসেন না একদিন আমার বাসায় চা খেতে, ২৪ তলায় এপার্টমেন্ট, সমস্ত টরন্টো শহর দেখা যায়, আর এক পাশে ওন্টারিও লেক।
আমার সংক্ষুদ্ধ উত্তপ্ত মনে শীতের বরফ এসে পড়ল। ভাবলাম মন্দ কি ২৪ তলায় গাংচিল হয়ে টরোন্টো দেখা যাবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩২

ঢাকার লোক বলেছেন: ভাল লিখেছেন, অনেক সময়ই আমরা সরাসরি দেখতে পাই তা দিয়েই একজনকে বিচার করে তার সম্বন্ধে একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হই। অথচ এমন কিছু অজানা তথ্য থাকতে পারে যা আমাদের সে বিচারকে ভুল প্রমান করতে পারে।
টরোন্টো লেক? না কি লেক ওন্টারিও হবে?
ধন্যবাদ।

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: লেক ওন্টারিও, ধন্যবাদ সময় করে পরবার জন্য। আমিও অনেক সময় যে মানুষটাকে যেভাবে কল্পনায় ভাবি, বাস্তবে দেখি একদমই আলাদা।

৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।

৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৬

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়বার জন্যে, আপনার মন্তব্য উৎসাহ যোগায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.