নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শঙ্খনীল কারাগার

ভালো থেকো সবুজ পাতা

ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।

ভালো থেকো সবুজ পাতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটুখানি অভিনয় আর অনেকখানি প্রেম

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০০


হল থেকে বের হয়ে একটু হাঁটার পর, সুমনার মনে পড়লো চশমাটা সে আনেনী।দাঁড়ালো সে। প্রচণ্ড জেদ হচ্ছে নিজের প্রতি।অলরেডি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আবার যে ব্যাক করবে সে সময়ও নেই। সে হাঁটা ধরল।ইদানিং কিযে হল বুঝে উঠতে পারছে না।একটা সেমিস্টার শেষ হলো।হল লাইফটা যা একটু গুচিয়ে উঠেছে এখন আবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব।আবারও থমকে দাঁড়াতে হলো তাকে।সামনে জাহাঙ্গীর ভাই দাঁড়িয়ে।সুমনার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।তারপরও ঠোঁট এর মধ্যে একটা কৃত্তিম হাসি ধরিয়ে কাঁপা গলায় বলল ভাইয়া কেমন আছেন?এক গাল হাসি হেঁসে জাহাঙ্গীর বলল ভালো। তুমি কেমন আছো?এইতো ভালো।ভাইয়া আমার ক্লাস শুরু হলে গেছে, এখন যাই।এই বলে সুমনা পাশকেটে চলে আসলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় ভাবছিল ক্লাস হয়তো পাবে না।কিন্তু উপরে উঠে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গল্প করছে।রিয়াকে দেখে সে জিজ্ঞেস করল,হ্যারে রিয়া ক্লাস হচ্ছেনা কেনো,স্যার আসেনি?এসেছে তোকে না দেখে চলে গেছে। ফাজলাম করিস না সত্যি করে বল।সত্যি স্যার এসে জিজ্ঞাস করলো তোমাদের মিস ওয়ার্ল্ড কোথায়।তারপর তোকে নাদেখে চলে যায়।রিয়া হেঁসে উঠলো।যাহ,সুমনা বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে চলে গেলো। আরিফকে দেখে কাছে এসে জিজ্ঞাস করলো,আরিফ ক্লাস হচ্ছেনা কেনো। আরিফ হালকা কণ্ঠে বলল স্যার আসেনী, অসুস্থ। তোর চশমা কই আরিফ জিজ্ঞেস করল।ফেলে এসেছি হলে।তুই বুঝলি কিভাবে?বুঝা যায় যারা নিয়মিত চশমা পরে তাদের চশমা ছাড়া অস্বাভাবিক লাগে।তবে তোকে সুন্দর লাগছে তোর চোখ দুটো সুন্দর।হাফাচ্ছিস কেনো?ক্লাস করার জন্য দৌড়ে এসেছিস মনে হয়। হ্যারে অনেকটা দৌড়েই এসেছি। সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। কেনো কি হয়েছে?তেমন কিছু না আবার অনেক কিছু।আমাকে বলা যায়?আতেল জাহাঙ্গীর আমার পিছে লেগেছে।বেশ কয়েক দিন ধরে বেশ জ্বালাচ্ছে ।কিভাবে যে এরা ভার্সিটিতে চাঞ্ছ পায় আমি বুঝিনা। আরিফ হেঁসে উঠে বলল ভালোইতো আমাদের প্রান প্রিয় ভাই যে এতদিন ধর্য্য ধরছে সেটাও তোর ভাগ্য।ক্যাম্পাসে হাঁটাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। যে খানে যাই পথের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আবার এমন একটা ভাব করে মনে হয় হঠাৎ দেখা।না পারছি লিগাল কোনো একশানে যেতে না পারছি এড়িয়ে যেতে।তুই জানিস কয়েকদিন থেকে আমি চা খেতে পারছি না। কেন কি হয়েছে? আর বলিস না ঐদিন কেন্টিনে চা খাওয়া শেষ করে টাকা দিতে গেলাম,বলে যে টাকা দিতে হবেনা।আমি জিজ্ঞাস করলাম কেনো টাকা দিতে হবে না?বলে আফা আপনের কাছ থেকেও যদি টাকা নেই তাহলে কিআর ব্যাবসা করতে পারবো।বুঝতে পারলাম এইটা ঐ আতেলটার কাজ।ইচ্ছে করছিল টাকাটা ছুড়ে মারি। পরে মনে হল দোকানদারকে দোষ দিয়ে লাভ কি।আমি দোকান থেকে কিছু কিনলে টাকা নেয়না, ক্যাম্পাসে রিকশায় উঠলে টাকা নেয় না।আরিফ হেঁসে বলল এইতো মোহামারি অবস্থা।প্রতিদিন কতগুলো টাকা বেঁচে যাচ্ছে তুই বঝতে পারছিস।প্লিজ আরিফ সবকিছু নিয়া ফাজলামো করিস না।ওকে চল।কই যবো।তোকে চা খাওয়াবো সত্যি।হ্যা। দুজন সিঁড়ি দিয়া পাশাপাশি নামতে লাগলো। সুমনা কথা বলে যাচ্ছে। আজ কয়েকদিন থেকে পড়াটাও ঠিকমত হচ্ছেনা।কোনভাবে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছি না। কয়েকটা ক্লাস এর নোট করাও এখনো বাকি।আরিফ শান্ত হয়ে শুনে যাচ্ছে। সে লক্ষ্য করলো সুমনার গায়ের গন্ধটা খুব মিষ্টি।তার খুব ইচ্ছে করছে সুমনাকে জিজ্ঞাস করতে সে পারফিউম ইউজ করে কিনা।কিন্তু পারছে না।সুমনাকে বলার অনেক কথা আছে তার। সেই প্রথম থেকে সুমনাকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে সে।ভার্সিটির প্রথম ক্লাস।স্যার ছিল আরিফুজ্জামান।ক্লাসে ডুকে সুমনাকে দেখে বলে বাহ মা তুমি তো অনেক সুন্দর।নাম কি তোমার?সুমনা দাঁড়িয়ে নাম বলল।আজ থেকে তোমার একটা নতুন নাম দিলাম তুমি হচ্ছ এই ক্লাসের মিস ওয়ার্ল্ড।সুমনাকে নাম দিতে গিয়ে নিজের অজান্তে স্যার নিজের একটা নাম ফেল। রমিও স্যার।ক্লসের সবাই তাকে রমিও স্যার বলে ডাকে।তবে তার পিছনে।একদিন ক্লাসে রমিও স্যার বলল তোমাদের প্রথমে যেটা উচিত তা হল টার্গেট ফিক্সড করা,তোমরা কি জানো চার বছর পর কে কি করবে।কেউ কিছু বলল না।শুধু সুমনা বলল স্যার আমি এইখান থেকে স্কলারশিপ নিয়ে বাহিরে পড়তে যেতে চাই।আমি পিএইচডি করবো।আমরা সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। স্যার নিজেও খানিকটা অবাক হয়।কিছু দিন বাদে সবাই বুঝতে পারে সুমনা কথার কথা বলেনি। সুমনা সেই পথেই হাঁটছে।প্রথম সেমিস্টারে সে ফাস্ট হয়েছে।সবাই এখনি জানে আমাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সেই ফাস্ট থাকবে।

সন্ধ্যার পরই সুমনা পড়তে বসে। হটাৎ তার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর থেকে একটা কল এলো।রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ভেসে আসলো হ্যালো সুমনা আমি জাহাঙ্গীর তুমি কেমন আছো? সুমনা জানতো এমন কিছুই হবে।রাজ্যের বিরক্ত নিয়ে সে বলল ভালো, আপনি আমার নম্বর কোথায় পেলেন।আরে ইচ্ছে থাকলে নম্বর কোনো বিষয়। আচ্ছা তোমাকে একটা বিশেষ কথা বলার জন্যই কল দিলাম।আসলে অনেক দিন থেকেই ভাবছি বলবো।সুমনা জানে কি বলবে। সে দ্রুত ভাবতে লাগলো, কিছু একটা করতে হবে। এই ব্যাপারটা যেভাবেই হোক এখানেই শেষ করতে হবে। হ্যালো সুমনা তুমি শুনতে পারছো। জি। আসলে আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।আই লাভ ইউ।সরি ভাইয়া আমি তো অন্য আরেকজনকে পছন্দ করি। জাহাঙ্গীর রাগি গলায় বলল কাকে? সুমনা ইতস্তত হয়ে বলল ইয়ে, আরিফ। আমাদের ক্লাসের আরিফকে।কই তোমার ফেসবুকে রিলেশান স্ট্যাটাস দেখি সিঙ্গেলা।আরিফের সাথে তোমাকে তো ঘুরতেও দেখিনা। সুমনা একটু সাহস ফেলো।বলল আসলে ও খুব লাজুকতো তাই চাইছিল না আমাদের প্রেমের কথা এখনি কেউ জেনে যাক। আর আমরা তো প্রাই ঘুরি। আজকেও তো ও আমাকে ধরে নিয়ে চা খাওয়ালো। আপনি চাইলে আমারা দুজন এসে আপনার সাথে দেখা করে যাবো।আচ্ছা এখন রাখি।সুমনা সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।পাশের বেডে থাকা রিয়া বলল কিরে জাহাঙ্গীর বুঝি তোকে প্রপোজ করেছে?হু, বেটার সাহস আছে বলতে হয়।এদের প্রেম হচ্ছে একধরণের মোহ।ছয় মাস পরে নতুন একটা ব্যাচ আসবে আর দেখবি ও আবার নতুন কারো পিছে ঘুরা শুরু করে দিবে।তবে ও পাবলিক ফিগার, চাইলেও খারাপ কিছু করতে পারবে না।এখন কাজ হচ্ছে আরিফের সাথে কয়েকটা দিন প্রেমের অভিনয় করে যেতে হবে।আরিফ কি রাজি হবে।রিয়া জানতে চাইলো।যেভাবেই হোক রাজি করাতে হবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই।তুই প্লীজ এই কথাটা আর কাউকে বলিস না।
পরেরদিন ক্লাস শেষে সুমনা আরিফকে ডেকে একাডেমিক বিল্ডিং এর একপাশে নিয়ে গেল।আরিফ বলল কি হয়েছে? কাল রাতে আতেলটা আমাকে কল করে প্রপোজ করেছে।একটু হেঁসে আরিফ বলল তুই হ্যা বলে দিতি। আমি বলেছি আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। সে জানতে চাইল কে?কোন নাম পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ তোর নাম টা মাথায় আসলো। কি? আমি আতেলটা কে বলেছি আমি তোকে পছন্দ করি। কথাটা শুনে আরিফ হকচকিয়ে গেলো। সুমনা বলল এখন তোকে আমার সাথে কয়েকটা দিন প্রেমের অভিনয় করতে হবে।কি বলছিস এইসব তোর মাথা ঠিক আছে? সুমনা আরিফের একটা হাত চেপে ধরলো। প্লীজ প্লীজ একটু হেল্প কর। তুই আমাকে এখন ফিরিয়ে দিলে যে আমার ক্যারিয়ারটা ধ্বংস হয়ে যাবে।আরিফ ব্যাপার টার জন্য প্রস্তুত ছিল না। হাত ধরতেই সে কেপে উঠলো।একটু আনমনা হয়ে গেল। কিরে চুপ করে আছিস কেনো। কিছু একটা বল।আচ্ছা যা আমি তোকে মাসে মাসে এর জন্য পে করবো। আরিফ মুচকে হেঁসে বলল কত দিবি? সেটা দিলেই দেখবি। কম দিবো না, তুই চিন্তা করিস না। আমাকে কি করতে হবে। তেমন কিছু না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে আর কয়েকটা দিন আমার সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরতে হবে। আরেকটা কথা এইটা যে মিথ্যে তা এখন কাউকে বলা যাবে না। হুম। শান্ত হয়ে সাই দিল আরিফ। আচ্ছা আগামীকাল বিকেলে আমরা তাহলে দেখা করছি।ঠিক চারটায় চলে আসবি।
আরিফ ব্যাপারটাতে খুশি হবে কি হবেনা ঠিক বুঝতে পারছেনা। সে অনেক আগ থেকেই সুমনাকে পছন্দ করে।কিন্তু সুমনার ভালবাসা পাওয়রা কোন যোগ্যতা তার আছে বলে মনে হয় না।সুমনার জন্য সে অনেক ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে শুধু তা প্রকাশ করার সাহস পায় না।তবে এই ভেবে খুসি এখন সুমনার সাথে একান্ত কথা বলার সুযোগ পাবে।সন্ধায় ফেসবুকে ডুকে দেখে অলরেডি সুমনা স্ট্যাটাস দিয়েছে।ইন এ রিলেশনসীপ উইথ আরিফ।আরিফ জানে ব্যাপারটা মিথ্যে, তারপরও সে বারবার একই লাইন পড়তে লাগল তার কাছে মনে হল এইটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম লাইন।কোনো ভাবে লাইনটা চোখের সামনে থেকে সরাতে ইচ্ছা করছে না।নিজের অজান্তে তার হাত কাঁপা শুরু হল।সারা রাত সে মেসের ছাদে বসে কাটিয়ে দিল। এই প্রথম রাতটাকে তার দীর্ঘ মনে হচ্ছে,সময় টাকে স্থির মনে হচ্ছে।তার ইচ্ছে করছে এখনি সুমনার সাথে দেখা করতে। সে মনে মনে ঘুছিয়ে নিল সুমনাকে কি বলবে। আবার মনের একটা অংশ কিছুক্ষণ পর পর জানান দিচ্ছে ব্যাপারটা মিথ্যে নিছক অভিনয়। কিন্তু মনের সক্রিয় অংশের কাছে তা ঠাই পাচ্ছে না। তার মনে হল মানুষের ট্যালপেথি ক্ষমতাটা সক্রিয় থাকলে খারাপ হত না। সে বলতে না পারলেও সুমনা বুঝে নিত তার ভালবাসা সত্য, নিদারুণ নিষ্পাপ।পরের দিন সকালে আরিফ দোকানে গিয়ে ক্লিন সেভ নিল। তিনটার দিকেই সে রেডি হয়ে গেল।সুন্দর একটা পাঞ্জাবি পরেছে। তারপর ডায়েরির ভাজ থেকে শুকনো গোলাপটা পকেটে নিল।এই পথ এই ক্যাম্পাস তার অনেক দিনের চেনা।তারপর আজ তার সবকিছু কেমন অচেনা মনে হচ্ছে।সে যেন ধিরে ধিরে কোন গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাচ্ছে যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে সুন্দর কোন অনুভূতি। তাকে দেখে সুমনা হেঁসে উঠে বলল তোকে দেখেতো মনে হচ্ছে তুই সত্যি সত্যি ডেটে এসেছিস। আরিফ ইতস্তত হয়ে পড়ল। কোন মতে বলল নাহ, আতেলটাকে বুঝাতে হবে না। তাও ঠিক। বস। আরিফ একটু দূরে সরে বসলো।সুমনা অবাক হয়ে বলল আরে তুই এতো দূরে সরে বসলি কেনো? আরও কাছে আয়।তোরকি লজ্জা লাগছে? আরিফের সত্যি লজ্জা লাগছে। তরপরও সে কাছে এসে বসলো। আচ্ছা চার্পিড ম্যাথোডটা পড়েছিস?আরিফ অবাক হয়ে বলল চার্পিড ম্যাথোড! আরে এইবারের ম্যাথ কোর্স এর টপিক, ঐ দিননা স্যার ক্লাস নিল।ও মনে পড়েছে।আচ্ছা দেখতো আমার চার্পিড ম্যাথোডটা হচ্ছে কিনা? সুমনা বলা শুরু করলো। আরিফ মুচকে হেঁসে তার দিকে তাকিয়ে রইলো।এই মেয়টার সবকিছুই তার ভালো লাগে।সবচে ভালোলাগে তার স্বপ্ন পূরণের প্রতি দৃঢ়তা।সন্ধায় ফিরার সময় আরিফ বুঝতে পারলো কয়েকজন লোক তকে ফলো করছে। বুঝতে বাকি থাকলো না এরা জাহাঙ্গীরের লোক।পরেরদিন ক্লাসে এসে সুমনা দেখে আরিফের মাথায় ব্যান্ডেজ। জিজ্ঞাস করলে সে এড়িয়ে যায়।বলে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছে।কয়েকটা দিন টানা তাদের ডেটিং চলতে থাকে। প্রত্যেক দিন একই দৃশ্য।আরিফ এসে দূরে সরে বসে আর সুমনা ডেকে কাছে বসায়। তার পর তার পড়া শুরু করে দেয়।আরিফ মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।আরিফের মাঝে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আগের মত বন্ধু আড্ডা তার এখন একটুও ভালো লাগে না।তার প্রধান কাজ সুমনা কে পড়ায় সাহায্য করা এর জন্য সে সারাদিন পড়ে। পড়তে তার এখন একটুও খারাপ লাগে না।ক্যাম্পাসে তাদের সবসময় একসাথে দেখা যায়। তারা যে প্রেম করে এই নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ রইল না।এক সময় আরিফ নিজেই ভুলে গেল এইটা মিথ্যে, নিছক অভিনয়।একদিন অনেক রিকোয়েস্ট করে আরিফ সুমনাকে নিয়ে লেকের পাড়ে বসে।আরিফ বলে দেখ লেকটা কত সুন্দর।সুর্য নামার সাথে সাথে দেখবি লেকের রুপও চেঞ্জ হতে থাকবে। আগে আমি প্রায় এইখানে আসতাম। ক্যাম্পাসে এইটা আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। সুমনা বলল প্লীজ প্লীজ আমাকে এইসব দেখাবি না। একবার ভালো লাগলে প্রত্যেক দিন আসতে মন চাইবে। আচ্ছা তুই পড়া ছাড়া আর কিছুই বুঝিস না। না বুঝিনা আর বুঝতেও চাই না। আমার বাবার অনেক দিনের স্বপ্ন তার সন্তান পি এইচ ডি ধারি হবে। আমাকে সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। তোর কি কোন ভাই বোন নেই। আছে। তাহলে তুই কেনো এই মহান দায়িত্বটা নিতে গেলি?সুমনা হেঁসে উঠলো। হাঁসি মুখে বলল কারণ আমি আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসি। সুমনার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে আরিফ হকচকিয়ে গেল। তারও খুব ইচ্ছে করছে সুমনাকে বলতে আমিও তোকে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি। এইভাবেই সময় চলতে থাকলো।আরিফের মনে হল কোনদিনই সুমনাকে তার কথা বলা হবে না।মনের কথা মনেই জমা হতে থাকবে। এরি মধ্যে তাদের ক্লাস পার্টির ডেট ঠিক হল।পার্টীতে একটা পর্যায় একজন বলল আমাদের ক্লাসের একমাত্র জুটি হচ্ছে আরিফ সুমনা। এখন আমরা তাদের মুখে তাদের প্রেমের গল্প শুনবো।প্রথমে আরিফ। আরিফ বেশ অবাক হল।আগে থেকে কিছু জানা ছিল না তার। প্রথমে ভাবল গদ বাঁধা কিছু কথা বলে দিবে।কিন্তু হঠাৎ সুমনার দিকে চোখ পড়তে এক ধরণের অনুভূতি কাজ করল। তার মনে হল তার ভালবাসাটা তো মিথ্যে না তবে কেন সে এই মিথ্যে অভিনয় বয়ে বেড়াবে।।এক ধরণের সাহাস আসলো মনে।তার মনে হল এটাই সময়।আজকে বলতে না পারলে আর কোন দিনই বলা হবে না।নিজের মধ্যে এক ধরণের দৃঢ়তা খুঁজে ফেল সে।শান্ত কন্ঠে কথা বলা শুরু করল।সবার মত আমিও ক্লাসে মুগ্ধ হয়ে সুমনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।আমারও খুব ইচ্ছে হত তাকে মিস ওয়রার্ল্ড বলে ডাকি। কিন্তু কেনো জানি পারতাম না।সবাই তার সাথে হাঁসি মুখে কথা বলতো, খুবি হিংসে হত।আমি ভাবতাম হয়ত কোন দিনই সুমনার সাথে কথা বলা হবেনা।আমার ভাগ্য ভালো ঐ সময় আমি ম্যাথ ভালো পারতাম। আমার এখনও মনে আছে একদিন ম্যাথ ক্লাস শেষে সুমনা আমার কাছে এসে বলল আচ্ছা তুমিতো ম্যাথ ভালো পারো,আগামী কাল ক্লাস শেষে আমাকে একটু বুঝিয়ে দিতে পারবে। আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি।শুধু হ্যা সুচক মাথা নাড়ি। সেদিন সারা রাত আমি ম্যাথ করি।চ্যাপ্টারের সব গুলো প্রবলেম দুইবার করে শেষ করি।আনন্দ উত্তেজনায় রাতে আমার ঘুম ধরেনী। সে এক অন্য রকম অনুভূতি ছিল।সুমনার সাথে আমার ভাব হল, তারপরও মনের কথাটা বলার সাহস পাইনি। এরপর সুমনার জন্মদিন আসলো।সবাই উইশ করলো গিফট দিলো।আমিও একটা লাল গোলাপ কিনেছিলাম। আমার কেনা জীবনের প্রথম গোলাপ।কিন্তু দিতে পারিনি। গোলাপটা এখনো আমার ডায়রির ভাজে পড়ে আছে।অনেকদিন চেষ্টা করেও যে কথাটা আমার এতদিনেও বলা হয়নি, আজকে আমি সে কথাটাই বলবো।সুমনা আমি তোকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। সবাই চুপ ছিল।আরিফ শান্ত হওয়াতে সবাই একসাথে তালি দিয়ে উঠল। শুধু সুমনা হকচকিয়ে গেল। প্রতিটি কোথায় সে হকচকিয়ে গেল। সবাই ধরল তাকে কিছু বলার জন্য, তার হাত পা কাঁপছে। এত বড় ধাক্কা সে আগে কখন খায়নী। কি বলবে গুচিয়ে উঠতে পারছে না।অনেকটা জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ল সে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আরিফের সাথে আমার প্রেমটা মিথ্যে, যাস্ট অভিনয়। নিজেকে সেভ করার জন্যই এইটা করতে হল।এর জন্য আরিফকে আমি পে করি। প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা। সবাই অবাক হল।রাজ্যের কৌতুহল নিয়ে আরিফের দিকে তাকালো। আরিফ জানতো এমন কিছুই হবে।তারপরও সে কষ্ট পেল, বিষণ কষ্ট পেল।ফাংশান চলতে থাকলো।একজন সুন্দর একটা গান ধরলো।
কয়েক দিন বাদে সবকিছু ঠিক হয়ে গেল।শুধু আরিফ ক্লাস থেকে উধাও।সন্ধ্যায় পড়তে বসে সুমনা দেখল তার পড়ায় মন বসছেনা।অথচ কাল একটা ক্লাস টেস্ট আছে।হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠল, ওহ! আর পারছিনা। মরে যেতে ইচ্ছে করছে।ওপাশের বেড থেকে রিয়া বলল মরে যা, বাধা দিয়েছে কে।আচ্ছা আরিফ কেনো ক্লাসে আসেনা তুই কিছু জানিস? তুই সবার সামনে তাকে যে অপমানটা করলি, তারপরও কি ক্লাসে আসতে পারে। ঐদিন আমার মাথা ঠিক ছিলনা।ওর মোবাইলটাও অফ, নাইলে কল করে সরি বলে দিতাম।দেখ সুমনা সব কিছু সরি দিয়ে শেষ হয়না। আরিফের যে একবার মাথা ফেটেছিল, তুই জানিস কেন?সুমনা বলল হ্যা।গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে। কচু জানিস। জাহাঙ্গীরের লোকেরা তাকে মেরেছিল।মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়।এ কথাটা আরিফ তোকে বলেনি কারণ সে তোর কাছ থেকে করুণা চায়না। ভালোবাসা চায়। তুই যদি ভালোবাসতে নাই পারিস সরি বলারও দরকার নেই, কয়দিন বাদে দেখবি এমনি ঠিক হয়ে যবে।সুমনা চুপ হয়ে যায়। রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখল চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,তার নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে।
সকালে বন্ধুরা জোর করে ঘুম থেকে উঠালো আরিফকে।বলল ক্লাস করিস না ভালো কথা ক্লাস টেস্টটা তো দিবি। তোর প্রিয় রমিও স্যারের ক্লাস।আরিফ বিরক্ত হয়ে বলল আমি যবোনা কিছু পারিনা। তোকে পারতে হবেনা গেলেই হবে।আরিফ আসলো। বসলো সবার পিছে,কোণায়। স্যার প্রশ্ন খাতা দিলেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন পিছনের টেবিলে একজন ঘুমাচ্ছে। কিরে বাবা ঘুমাচ্ছো কেনো, রাতেকি বেশি পড়েছো? আরিফ দাঁড়িয়ে বলল না স্যার।আরিফকে দেখে চেনার উপায় নেই চুল দাড়ি গজিয়ে মহামারি অবস্থা। রাত ভর কি করলে? স্যার একটায় ঘুমানোর সময় একটা সিডাক্সিন খেলাম ঘুম আসে না। তিনটায় আরও দুইটা খেলাম তারপরও ঘুম আসেনা।অথচ রাজ্যের ঘুম আসছে এখন। আরিফের কণ্ঠ এলোমেলো।স্যার বলল যা বাবা তোমার পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না, বাসায় গিয়ে ঘুমাও।একটু পর স্যার লক্ষ্য করলো আরেকজন বসে বসে অনবরত চোখ মুচে যাচ্ছে। স্যার বলল কিরে মা তোমার আবার কি হল, সুমনা দাঁড়িয়ে বলল স্যার আমার কষ্ট হচ্ছে।বিষণ কষ্ট হচ্ছে।যা মা এক্সম দেওয়া লাগবে না, বাসায় চলে যাও। রমিও স্যার তেমন অবাক হননী ,এগার বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি এমন অনেক দেখেছেন। বাহিরে এসে সুমনা দেখে আরিফ এলোমেলো হয়ে হাটছে। সে আরিফের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল, এরপর হঠাৎ আরিফকে জড়িয়ে ধরে বলল আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ।আরিফ চারপাশে তাকিয়ে বলল, আশেপাশে কোথায় কি আতেলটা আছে? সুমন চোখ মুচতে মুচতে বলল যাহ বোকা।আরিফ বলল আচ্ছা তুই কি ফারফিউম ইউজ করিস? সুমনা বলল না। কেন? তোর গায়ের স্মেলটা অনেক মিষ্টি।সুমনা বেশ লজ্জা ফেল, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল, কিসব এলোমেলো কথা হচ্ছে। তোরতো দেখি সত্যি ঘুমের প্রয়োজন।আচ্ছা কালকে কি আমারা আবার ডেটে যাবো। সুমনা হেঁসে উঠে মাথা নাড়লো।
অতঃপর তাদের সত্যিকারের ডেটিং শুরু হল। সুমনা লক্ষ্য করলো আগের মত আরিফকে কাছে এসে বসতে বলতে তার লজ্জা লাগছে, বরং সে নিজেও একটু দূরে সরে বসেছে।কিন্তু সে মনে মনে বিষণ চাইচে আরিফ তার কাছে এসে বসুক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:০৭

সাইফুল মনোয়ার নিশাদ বলেছেন: দুর্দান্ত গল্প দাদা, প্রেম কখন যে আসে মানুষ টেরই পায়না। ভাললাগা রইল +++

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫৯

ভালো থেকো সবুজ পাতা বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.