![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'মা দুর্গা' কথাটি ভক্ত হৃদয়ের গভীর আন্তরিক সম্ভাষণ। মা দুর্গাই সাধারণের কাছে দেবী দুর্গা, মহাময়া, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী, শ্রী চন্ডী প্রভৃতি নামে পরিচিত। সর্বশক্তি স্বরূপিনী আদ্যাশক্তি হলেন এই মা দুর্গা। তাঁর দুর্গা নামটির মধ্যেই অসুর শক্তি নাশের পরিচয় বিধৃত। তিনি দুর্গ নামের এক দৈত্যকে বধ করে দুর্গা নামে খ্যাত হন। যুগে যুগে দেবতাদের কল্যাণের জন্য দেবী দুর্গা অত্যাচারী ভোগলোলুপ অসুরদের নিধন করেছিলেন। মা দুর্গা শত্রু নিধন করেছিলেন। মা দুর্গা শত্রু বিনাশে যেমন ভয়ঙ্করী, সংহাররূপিনী আবার ভক্ত বা সন্তানের কাছে তিনি তেমনি স্নেহময়ী জননী, কল্যাণপ্রদায়িনী। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-'ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে বাঁ হাত করে শঙ্কা হরণ। দুই নয়নে স্নেহের হাসি ললাট নেত্র আগুণবরণ।'
বাংলাদেশ প্রেমধর্মের দেশ। মা দুর্গার রণরঙ্গিনীরূপ দেখে বাঙালি ভক্ত যেন প্রাণে স্বস্তি পান না। তিনি চান মাকে সৌন্দর্যময়ী, প্রেমময়ী, করুণাময়ীরূপে প্রত্যক্ষ করতে। তাই তো মার্কণ্ডেয় পুরাণের কাহিনীর সঙ্গে সংগতি রেখে দেবী দুর্গার অসুর-নাশিনীরূপে প্রতিমা গড়ে পূজার আয়োজন করা হলেও বাঙালি ভক্ত যেন স্থির নিশ্চিতরূপে জানেন, আসলে ওই পূজা আর কিছু নয়, এক বছর বর উমা স্বামীগৃহ কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে এসেছেন। তিনি এখানে থাকবেন তিনি-চার দিন মাত্র। তারপর আবার ফিরে যাবেন কৈলাসে স্বামী শিবের কাছে। বাঙালি গণমানসের এই সত্যকে অবলম্বণ করে দেবীর আগমন-প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলা শাক্ত পদাবলিতে আগমী ও বিজয়া সংগীতের সৃষ্টি হয়েছে।
এখানে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষণীয়। ভক্ত ভগবানকে তাঁর আপনজন হিসেবে পেতে চান। তাই তো দেখা যায়, ভক্তিমার্গের সাধক কেউ ভগবানকে প্রভূরূপে, সন্তানরূপে, সখারূপে, প্রেমিকরূপে ভজনা করে থাকেন। বাঙালি ভক্ত কবিরা দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে যে শাক্ত পদাবলি রচনা করেছেন তাতে বাৼসলের সমধুর ভাবটি পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। কবিদের ধ্যানে দুর্গা হয়েছেন উমা আর তাঁর মা হলেন মেনকা এবং বাবা গিরিরাজ। উমার জন্য মা মেনকার উৼকণ্ঠা, আনন্দ ও বিষাদের কাহিনী নিয়ে দুর্গাসংক্রান্ত পদাবলি।
বর্ষার শেষে শরতের শোভায় প্রকৃতি সজ্জিত হয়ে উঠেছে। মেঘমুক্ত আকাশের নিচে শরতের সোনার আলোকে জলের কমল কুমুদ কহলার যেমন অবরূপ শোভা বিস্তার করেছে তেমনি স্থলের শেফালীর বর্ণ-গন্ধে হয়েছে চারদিক আমোদিত। এমন সময় মা মেনকার মনে পড়েছে স্বামীর ঘরে রয়েছেন। তাঁকে আনার জন্য মেনকা গিরিরাজকে বললেন- 'শরতের 'বায়ু যখন লাগে গায়,
উমার স্পর্শ পাই, প্রাণ রাখা দায়,
যাও যাও গিরি আনগে উমায়
উমা ছেড়ে আমি কেমন করে রই।'
স্বামী-স্ত্রীর সহযোগিতায় যেমন বাস্তব সংসারজীবন সুখের হয়ে ওঠে, তেমনি উমা ও শিবের সংসার কল্পনার মধ্যেও কবি দেখিয়েছেন তাঁদের পরস্পর নির্ভরশীলতার চিত্র। দেবতাদের উপকার করতে গিয়ে শিব বিষ পান করে বিষের স্পর্শে তিনি সে যন্ত্রণা ভুলে যান। তাই শিব গৌরীকে কখনো ছেড়ে থাকতে চান না। এ কথাটি গিরিরাজ ভালোই জানেন, তিনি বললেন-
'বারে বারে কহ রাণী গৌরী আনিবারে
জান তো জামাতা রীত অশেষ প্রকারে।
রাখি অমরের মান হরের গরল পান
দারুণ বিষে জ্বালা না সহে শরীরে।
উমার অঙ্গের ছায়া শীতলে শঙ্কর কায়া
সে অবধি শিব জায়া বিচ্ছেদ না করে।'
মায়ের আগমনে মেনকার গৃহে যেন আনন্দের মেলা বসে গেছে। পাঁড়ার যত জ্ঞানী-গুণী, যতসব স্ত্রী পুরুষ, বালক বৃদ্ধ সবাই এসে মায়ের গুণকীর্তন করছেন, কত মহিমার কথা বলছেন, কত মঙ্গলবাণী আশী?বাণী উচ্চারণ করছেন। দেবীর উপস্থিতিতে যেন আঁধার ঘরে জ্বলে উঠেছে আলো, মানুষ সব অন্তরে পেয়েছে আনন্দ ও প্রশান্তি। চারধার হয়ে উঠেছে উৼসব মুখরিত। এমন আনন্দঘন পরিবেশে মা মেনকা বলছেন-
'গিরিরাজকে ডেকে দে গো আমার গৃহে গৌরী এল
নাশিতে আঁধার রাশি, উমা-শশী প্রকাশিল।
এই নগরে, লোক ছিল ঘরে ঘরে
না ডাকিতে আমার ঘরে, কেবা কবে এসেছিল।
কেবল উমার আগমনে, সানন্দ মনে
গিরি পুরবাসীগণে গিরিপুর আজ পুরে গেল
যতনেতে দ্বিজগণ, চন্ডী পড়ে অনুক্ষণ
ভক্তি ভাবে ঘটস্থাপন, চন্ডী পড়ে সফল হলো।
এক বছর পর মা-বাবার কাছে এসেছেন উমা। স্বামীগৃহের বাধা-ধরা জীবনের অবকাশ এখানে। তাই তিনি একটু বেশী সময় ঘুমিয়ে নিচ্ছেন। মা মেনকা তাঁকে ডেকে তুলছেন, খাবারের কথা বলছেন-
'উঠ মা সর্বমঙ্গলে প্রভাতা হ'ল যামিনী
পথ শ্রান্তে কত নিদ্রা যাত গো বিধুবদনী
কর্পূর বাসিত বারি, প্রক্ষালন করি
খাও কিছু প্রাণ কুমারী করি আয়োজন।
এভাবে মা মেনকার স্নেহ-আদরে তিন দিন কেটে গেলে উমা কৈলাসে ফিরে যাওয়ার কথা বললেন। মা তাঁকে ছাড়তে চান না। কিন্ত্ত উমার গরজ বেশি, কারণ স্বামী তাঁর কড়া মেজাজের। কখন কী রূপ ধারণ করে তার ঠিক নেই।শিবে নিতে না এলেও উমা নিজের গরজেই যাবেন।
মা মেনকা বলেছেন-
'কাল এস আজ উমা আমার যেতে চায়
তোমরা বল গো কি করি মা
আম কোন পরাণে উমাধনে মা হয়ে দিব বিধায়।'
উমা চলে যাবে, এ কথা ভাবতেই মা মেনকা অস্থির হয়ে পড়েন। তিনি ভাবেন নবমী রজনী যদি প্রভাত না হয়, তবে বিজয়া দশমীতে মা কেমন করে যাবেন? তাই তিনি ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করেন-
'ওরে নবমী-নিশি না হইও রে অবসান
রজনী, জননী, তুমি পোহায়ো না ধরি পায়
তুমি না সদয় হলে উমা মোরে ছেড়ে যায়।'
চোখের জল মুছতে মুছতে মা মেনকা বললেন-
'এস মা, এস মা, উমা, বলো না 'যাই যাই'
মায়ের কাছে হৈমবতী ও কথা মা বোলতে নাই।'
দেবী দুর্গা বাঙালি ভক্তের কাছে 'দেবী হয়ে মানবী, আবার মানবী হয়ে দেবী'। আশ্চার্য তাঁর রূপ দেবীতে আর মানবীতে স্বরূপে আর রূপে।'
২| ২০ শে জুন, ২০১১ রাত ১১:১৬
নষ্ট কবি বলেছেন: +++++++++++++++
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ ভোর ৪:৫৩
নিবিড় অভ্র বলেছেন: কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-'ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে বাঁ হাত করে শঙ্কা হরণ। দুই নয়নে স্নেহের হাসি ললাট নেত্র আগুণবরণ।'
ভাল লেগেছে!