নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমার চোখের তারায় আমার হাজার মৃত্যু!

অতন্দ্র সাখাওয়াত

তন্দ্রাকুমারী একটি কাল্পনিক চরিত্র যার সন্ধানে আছি নিশিদিন!!

অতন্দ্র সাখাওয়াত › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মপ্রতিকৃতি

১০ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪৭

আমি হতে পারতাম একটি বট পাতা
এক মৌসুম শেষ হলেই আমাকে ঝরতে হতো
আমার সোনালী দেহ মাটিকে চুম্বন করতো
আমার ঠোঁটে হয়তো কোন লাল ফল এসে আঘাত করতো
কিংবা একদল লাল পিঁপড়া আমার বুকে
হেঁটে যেতো সারি বেঁধে-
আমি বোধ করতাম স্নেহ আর বর্ষার কোমলতা,
মাটিতে শুয়ে শুয়ে ভাবতাম আমার সবুজ অতীত
মনের ভিতর সজীবতা আসতো-
যখন আমি বিচ্ছিন্ন নই সেই সময়কে ভেবে
আঁকতাম জীবনের ছবি জোছনার ছবি
যে ছবি দর্শকের চোখে একদিন আগুন ধরাতো।
আর পাখিদের গান শুনে জেগে উঠতাম ভোরে
অথবা কোন সাপের স্পর্শ আমাকে শীতল করতো।
আমার নীচে তখন বিপুল পৃথিবী-
ব্যাপক আমার কর্মযজ্ঞ!
আমার পাশে অনেক ভাইবোন
কেউ হাসতো কাঁদতো ঝগড়া করতো শিরায় উপশিরায়
কিন্তু হায়- আমি হয়েছি মানুষ!
বিপন্ন মানুষ, পাপী মানুষ, ক্লান্ত মানুষ!
হয়তো মানুষ নই আমি,
আজও হতে পারিনি একটি বট পাতার মতো
হতে পারি নি গুরুত্ববহ।
একটি পাতার চেয়েও তুচ্ছ
আমার চোখের কোণে ঝলমল করে না আলোকগুচ্ছ
আজও আমি অন্ধকার মুখে করে আলো তাড়াই দিবানিশি
আলো আমার কাছে অসহ্য লাগে
আলোকের শ্লোগান বাজাই না পশমে পশমে
আমার ঠোঁটে ও বুকে কোন মধু নেই
আমি আজও একটি না বলা কথা
কিংবা একটি না লেখা কবিতা
কিংবা একটি নিরব চিৎকার।

আমি হতে পারতাম একবিন্দু জল
হাজার নদীর স্রোতের মধ্যে মিশে যেতাম
অসংখ্য ভাইবোন আমাকে জাপটে ধরতো
আমাকে ছুঁয়ে ওরা উষ্ণ হতো, পবিত্র হতো, শান্ত হতো-
অনেকগুলো মাছের ঝাঁক এসে আমাকে আঘাত করতো
আমি ওদের স্পর্শ পেয়ে মাতাল হতাম, বিদ্রোহী হতাম
নতুন নতুন তালরক্তে ছুটতে থাকতাম, ডুবতে থাকতাম।
কিন্তু একবিন্দু জল আমি হতে পারি নি
হতে পারি নি একটি স্বাধীন দেশের পতাকা
ছুঁতে পারি নি কারো একটিও আঙ্গুল
ছুঁতে পারি নি কোন হৃদয়!
অথচ আমি মৃত্যুকে চিনি
ভয়ংকর রাত আর আঘাতকে চিনি
লাল-সাদা-হলুদ শব্দগুচ্ছ চিনি
বাতাস আমার শরীরে কাঁপন ধরায়-
আপন ভেবে আমার অধর স্পর্শ করে সময়ে অসময়ে
কিন্তু আমি কাউকে স্পর্শ করতে পারি না,
আমার স্পর্শ পেয়ে ওরা যদি গলে যায় অথবা পচে যায়!
এই ভেবে আমাকে দেখলেই ওরা পালিয়ে বেড়ায়।

আমি হতে পারতাম একটি পাথর
অনেকগুলো খন্ড থাকতো আমার ভিতরে
যারা আমার আকৃতির জন্য দায়ী-
যদিও আমি সম্পূর্ণ গোলাকার নই তখনো
কিংবা কখনোই আমি গোলাকার ছিলাম না।
আমার রঙ যখন দুধ কিংবা বরফের মতো শুভ্র কুয়াশা বর্ণের
তখন আমার বুক কর্তিত এবং পবিত্র আর আমার শুয়ে থাকাটা অর্থবহ
আমার অবস্থান অতি আবশ্যক শুয়োরের মতো
এবং আমার আঘাত যে কারও জন্য বেদনাদায়ক
আমার কয়েক বিলিয়ন ভাইবোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে সবখানে
যারা পরস্পর ঠোকাঠুকিতে লেলিহান আগুন ধরিয়ে দেয়
দগ্ধ করতে পারে ওরা শহর-গ্রাম সবকিছুকে
ওরা সৃষ্টি করতে পারে বজ্র-বিদ্যুৎ।
তখন আমি সভ্যতা বা অসভ্যতার অংশ
বিশাল এক মহাসড়কের একটি অংশ
যে সৃষ্টিশীল, পরিবর্তনশীল, ভীষণ শক্তিশালী।
অথচ আমি পাথরও নই-
আমি ভাঙ্গা মানুষ
বাঁশ কিংবা শশার মতো ভাঙ্গা
কবি আর কবিতার মতো ভাঙ্গা আমি নই
আমি নিজেকে আর ভাঙতে পারি না
কারণে-অকারণে ভাঙতে পারি না
সকালে-বিকালে ভাঙতে পারি না
অণু-পরমাণুতে বিশ্লিষ্ট করতে পারি না নিজেকে
ভাঙন আর আমার জন্য নয়
কেন ভাঙন আমার জন্য নয়?












মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:১৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: কবিতা ভালো লেগেছে।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৩৪

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: কবিতা পাঠ করি আর ভাবি আমি কেন কবিতা লিখতে পারি না!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:৩৫

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: পারবেন না কেন? নিশ্চই পারবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.