নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমার চোখের তারায় আমার হাজার মৃত্যু!

অতন্দ্র সাখাওয়াত

তন্দ্রাকুমারী একটি কাল্পনিক চরিত্র যার সন্ধানে আছি নিশিদিন!!

অতন্দ্র সাখাওয়াত › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মৌমাছি ও একজন পুরুষ মানুষ (পর্ব-৫)

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৭

যখন চেতনা ফিরে এলো, তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটি হাসপাতালের বেডে। আমার মন খুব বিক্ষিপ্ত ছিল এবং পুরানো কোন কথা মনে করতে পারছিলাম না। আমি চেখের সামনে একজন সুন্দরী ডাক্তারকে দেখতে পেয়েছিলাম। মূলত ডাক্তারটি ছিল লায়লা। তাকে আমার খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিল, কিন্তু কোনভাবেই স্মৃতির আঁকড় দিয়ে লেখা পুরাতন বেধের চিহ্ন আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। যেহেতু সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম, সেহেতু ঐ রাতের পরের জীবন ছিল আগের জীবন থেকে একদম আলাদা। আমার বন্ধু-বান্ধবী এবং আত্মীয়-স্বজনেরা একের পর এক নতুনভাবে পরিচিত হতে লাগলো। এদের মধ্যে কে আমার বেশি ঘনিষ্ট আর কে আমার অপছন্দের- সে সম্পর্কে যেহেতু আমার কোন ধারণা নেই, সেজন্য পরিচিত, অপরিচিত কারো সাথেই আমি বেশিক্ষণ সময় কাটাতে চাইতাম না। আমি চোখ দিয়ে ভাবের আদান প্রদান করতাম। আমি সে সময় কোন কাজ করতে পারতাম না, সারাক্ষণ হাসপাতালের বেডেই শুয়ে থাকতাম। দীর্ঘ এক বছর আমাকে শুয়ে কাটাতে হয়েছিল।

মৌমাছিটি সে রাতের পর থেকে আমার মাথার সামনে উড়াউড়ি করতো এবং আমার পায়ের সামনে পিঁপড়াটি হাঁটতো। আমি শত চেষ্টা করেও কাউকে বোঝাতে পারি নি ব্যাপারটা। প্রাণী দুটিকে দূরে সরাতে পারি নি। এরপর থেকে সকালে, দুপুরে রাতে মৌমাছিটি আমকে কামড়াতে লাগলো। মৌমাছিটি ছিল অদৃশ্য; অর্থাৎ আমি ছাড়া আর কোন মানুষ ওটাকে দেখতে পেত না। অপর দিকে প্রথম কামড়ের পরে পিঁপড়াটি আর কোন কামড় আমাকে দেয় নি। পিঁপড়াটিও ছিল শুধু আমার জন্য দৃশ্যমান।

মৌমাছিটি আমার সাথে কথাও বলতো। প্রথম যেদিন কথা বললো, সে দিনটি ছিল আমার দিন বদলের দিন। আমি তখন খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। উঠে বসতে পারতাম না, নিজে নিজে খেতে পারতাম না- তার ওপর আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গিয়েছিল, শুধুমাত্র শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি আর ঘ্রাণশক্তি ছিল। আমাকে হুইল চেয়োরে করে টয়লেটে যেতে হতো। মৌমাছিটি এবং পিঁপড়াটি আমার সাথে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সব সময় থাকতো। লায়লীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আমার চিকিৎসা এগিয়ে যেতে থাকলো। যেখানে আমার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল, সেখানে আমার মতই আরো অনেক প্যারালাইসড রোগী ছিল। আমি কিছু বলতে পারতাম না, তবে চিন্তা করতে পারতাম। মৌমাছিটি আমার চিন্তাগুলো বুঝতে পারতো এবং সে ভাবেই আমাদের কথপোকথন হতো। প্রথম দিন সে এসে আমার কপালে বসলো, যেখানে সে আমাকে প্রতিনিয়ত কামড় দিয়ে যাচ্ছে। তারপর সে বলতে শুরু করলো।

- তোমার সব কষ্টের ভার নিতে এসেছি আমি। আমি এবং তোমার পায়ের কাছের পিঁপড়াটি ফব্লিও নামক নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত টোমেগা নামক গ্রহ থেকে এসেছি। লাইলীর প্রতি তোমার গভীর ভালোবাসা এক মহাজাগতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে আমাদের মহাবিশ্বে। আমি যদি তোমার জীবনকে হাসি আনন্দে ভরিয়ে তুলতে ব্যর্থ হই তবে আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে।
- লাইলী কে? আমিতো লাইলী নামে কাউকে চিনি না!
- যে ডাক্তার তোমার চিকিৎসা করছে তার নাম লায়লী। তাকে তুমি ভালবেসেছ দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে। তাই আমি তোমাকে তার সংস্পর্শে এনেছি।
- আমার কিছুই মনে পড়ছে না।
- আমি তোমকে ওর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছি। এখন আর কোন দিন তুমি বুঝতে পারবে না, কত ভাল তুমি তাকে বাসতে।
- ও কি আমাকে চিনতে পেরেছে?
- না, ও তোমার বাল্যকালে তোমায় চিনতো। এখন আর ও তোমায় চেনে না।
- তুমি আমাকে কেন সাহায্য করছো?
- কারণ, তোমাকে সাহায্য না করলে তুমি মারা যেতে। আর যেহেতু আমি তোমাকে ভালবাসি, সেহেতু আমি তোমাকে মরতে দিতে পারি না।
- কেন তুমি আমাকে ভালবাসো?
- কারণ, একমাত্র তুমিই আমার গ্রহকে বাঁচাতে পার । আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। তবে তার জন্য আরো ১০বছর সময় লাগবে। তারপর তুমি আমার সাথে আমার মহাবিশ্বে চলে যাবে।

আজ সেই ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে। আজকের তারিখ হলো ২১ জুন, ২০২০। গত ১০ বছরে অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের কাছে এক একে বলে যেতে চাই। আমার জীবনে গভীর সংকট থেকে কিভাবে আমি মুক্তি পেলাম, কিভাবে আমি প্রতিটি মুহূর্ত হাসতে হাসতে কাটালাম, সেসব অবিজ্ঞতা আমি আপনাদের জানাবো।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৭

শায়মা বলেছেন: শেষ হয়ে গেলো!! :(

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৩

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: আপনি কি চান মিল্টন স্মৃতি ফিরে পাক? আমিতো তা চাই না!!

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪৪

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: ভাগ্য সহায় থাকলে লেখা চালিয়ে যাব, এ ব্যাপারে কথা দিতে পারি।।

২| ১১ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: মিল্টন সাহেব কি ওয়ালটোনে চাকরি করেন?

একটি মৌমাছি ও একজন পুরুষ মানুষ লিখে আপনি কতটূকু আনন্দ পেয়েছেন? শান্তি পেয়েছেন?

আমি প্রথম থেকেই পড়েছি, মনে হলো আপনি নিজের সমস্ত রাগ, ক্ষোভ আর জমে থাকা সব দুঃখ কষ্ট পাওয়া না পাওয়া লেখায় ঢেলে দিয়েছেন।

১১ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:১৬

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: মিল্টন সাহেবের কথা আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন।
লেখালেখিতে আনন্দ বা শান্তি পাওয়ার চেয়ে, দায়বদ্ধতা দরকার বেশি করে। যদি লেখার মধ্যে কোন ভুল ভ্রান্তি থেকে থাকে তার জন্য দুঃখিত। সেটা কাঁচা হাতের লেখা মনে করে ইগনোর করতে পারেন।
তবে জেনে রাখুন, আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.