নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমার চোখের তারায় আমার হাজার মৃত্যু!

অতন্দ্র সাখাওয়াত

তন্দ্রাকুমারী একটি কাল্পনিক চরিত্র যার সন্ধানে আছি নিশিদিন!!

অতন্দ্র সাখাওয়াত › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মৌমাছি ও একজন পুরুষ মানুষ (পর্ব-৬)

১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৮:১৩

লায়লীর প্রতি আমার ধারণাগুলো নতুনভাবে তৈরী হচ্ছিল। যেহেতু আমাকে জানানো হয়েছে পূর্বে তার প্রতি আমার অন্ধ ভালোবাসা ছিল এবং এতে আমি সফল হতে পারি নি, সেহেতু নতুন আমি- লাইলীর প্রতি অযৌক্তিক আর অন্ধ আকর্ষণ অনুভব করি নি। কিংবা আমার সে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। লাইলী প্রতি রাত্রে আমার খোঁজ খবর নিতো এবং পঙ্গুত্বের কারণে নানাভাবে আমাকে সান্ত্বনা দেবার প্রচেষ্টা চালাতো, কিন্তু তা কেবল দায়িত্বের খাতিরেই। আমি তার চোখে, মুখে আত্মপ্রেম ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাই নি। সে কারণেই তার বাম গালের তিলটি তার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তার কোঁকড়ানো চুলের খোপা তাকে কাঞ্চন ফুলের কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত আমাকে দেখে সে স্নিগ্ধ হাসি হাসতো এবং সেই হাসিটি ছিল তার মুখস্ত। কর্পোরেট মায়াজালে আবদ্ধ লায়লী কখনোই শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনে নিজেকে সময় দেয়ার মত সময় খুঁজে বের করতে পারে নি। তার ক্লায়েন্টদের জন্য দেহকে মেদহীন রাখা এবং পরস্পর যুক্ত ভ্রুযুগলে নিয়ম করে কাটছাট করা হতো। তার দেহে সৌন্দর্য্য খুব বাড়াবাড়ি রকমের ছিল ঠিক, কিন্তু তারপরেও তাকে ভালবাসার মানুষ বলতে কেউ ছিল না!

ভালবাসা একটি ভিন্ন বিষয় এবং এটা যেহেতু স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হয় না, সেহেতু বেশিভাগ বালক-বালিকা, যুবক-যুবতী কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভালবাসাহীন জীবন যাপনেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। তবে আমি খুব একটা চিন্তিত ছিলাম না সেসব ভেবে। কারণ, আমি আরো মহৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি বেঁচে থাকার। সিলিং ফ্যানের ঘুর্ণন দেখলে আামার হাসি পায়, দোয়েল পাখির ডাক শুনলে আমার হাসি পায়, সূর্য উঠলে বা ডুবলে আমার হাসি পায়, কেউ কারো প্রশংসা বা নিন্দা করলে আমার হাসি পায়। কারণ, এখন আমি পৃথিবীর সব ভাল আর মন্দ জিনিসকে ভালবাসতে শিখেছি। আমার সামনে যা কিছু দেখি, তার সবকিছুকেই আমি ভালবাসতে শুরু করেছি।

লায়লী যেদিন হাল্কা বেগুনী রঙের শাড়ী পরে আমার সামনে এলো, সেদিন তাকে আমার দেবী মনে হয়েছিল। যদিও আমার শরীরে নড়াচড়ার শক্তি ছিল না তবুও সেই দেবীরূপের স্তুতি আমি করেছিলাম এবং তৎক্ষণাৎ ‘গুনগুন’ সিনেমার নায়িকার প্রতিও আমি ভালোবাসা বোধ করেছিলাম। ‘গুনগুন’ সিনেমাটি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে অনেকবার দেখেছি। ঐ সিনেমার নায়িকাও লায়লার মতই শাড়ী পরেছিল। তার সাথে লাইলীর তুলনা করতে করতে আমি সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলাম। আমার সামনে বসে আছেন জ্ঞানের পিতা সক্রেটিস। তিনি আমাকে বললেন,

- তোমার চোখে বিরহের ছায়া দেখতে পাচ্ছি। বলোতো বিরহ মানে কী?
- বিরহ মানে বিচ্ছিন্নতা, বিচ্ছেদ, অপূর্ণতা।
- বিরহ মানে তুমি যা বুঝেছ তা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি কি সত্যিই এই মহাবিশ্বের কোন কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন? তুমি কি কোন সত্ত্বা, যে তোমার মধ্যে পূর্ণতা থাকবে? জগৎ সবকিছু নিয়েই পূর্ণ। এ জগতের কোন কিছুই পূর্ণাঙ্গ নয়। তুমি তোমার ইন্দ্রিয়ের দ্বারা এখনো পূর্ণাঙ্গের কোন ধারণা লাভ করতে পার নি- যে নিজেকে তার সাপেক্ষে অপূর্ণাঙ্গ ভাবতে পার! তুমি মানুষের কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়াও না, সে জন্যই তোমার মধ্যে অপূর্ণতার অনুভূতি কাজ করে। আজ থেকে তোমার অতিরিক্ত যা কিছু সম্পদ- তা অন্যকে দান করবে। দেখবে তোমার মধ্যে পূর্ণতার অনুভূতি কাজ করবে।

এইসব বলে তিনি যখন অদৃশ্য হয়ে গেলেন, তখন আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার মধ্যে নতুন চিন্তার উদয় হলো। আমি কি আমার পুরুষ সত্ত্বার প্রতি যুলুম করছি না? আমার মধ্যে যে অবদমিত পৌরষত্ত্ব আছে, তা কি আমার জন্য অতিরিক্ত কিছু নয়? এই পৌরুষ দান করা উচিৎ যে কোন একজন নারীকে। এমন নারীসত্ত্বাকে পৌরুষ দান করা উচিৎ- পুরুষের প্রেম পেতে যার আঁখি ছলছল করছে। যেহেতু মৃত্যু সবারই সন্নিকটে, সেহেতু আমাদের বিবেচনা করা উচিৎ কোন বস্তু থেকে আমরা সৃজিত হয়েছি? যে বস্তু সমষ্টি থেকে আমরা অস্তিত্ব লাভ করেছি সেই একই বস্তু আমরা ধারণ করছি আমাদের দেহের ভান্ডে! এই ভাণ্ড একদিন শুকিয়ে যাবে। তখন আর দান করার মতো আমাদের কাছে কিছুই থাকবে না।

আমি মৌমাছিটির দিকে তাকালাম। সে আমার ভেতরে থাকা চিন্তাগুলোকে উপলব্ধি করছে। হুট করে সে আমার ঠোঁটে এসে বসল। খুব অল্প পরিমাণ মধু সে সেখানে স্থাপন করলো। আমার ঠোঁট আঁঠালো হয়ে গেল। জিভ দিয়ে চেটে মধুটুকু পান করলাম। শরীরের মধ্যে কিছুটা স্থিরতার অনুভূতি এলো। নাক দিয়ে বৈশাখী ঝড়ের মতো প্রশ্বাস প্রবেশ করলো। আমার দেহে চনমনে একটা ভাব এলো। আমি সুস্থ হবার পরে কি কি করবো তার একটা ছক আঁকতে শুরু করলাম। আমার পৌরুষ দান করতে হবে নারীত্বের কাছে। অনেক অনেক মধুময় স্মৃতি তৈরী করতে হবে। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরে নিজের জন্য তৈরী করা স্থান ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। আমি নিজের প্রতি গভীর আস্থা বোধ করলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আগেও পড়েছি এখনো পড়লাম। খাঁটি মধু খাওয়া ভালো

১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৭

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। হুম, খাঁটি মধু পাওয়া আজকাল ভাগ্যের ব্যাপার!

২| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: খাটি মধু কোথাও পাওয়া যায় না। যেখানেই লেখা দেখেছি সুন্দবনের খাটি মধু পাওয়া যায়। কিনেছি। কিছুদিন পর বুঝতে পারি মধুটা খাটি না। নকল।

১৫ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:২১

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: কবে যে সব ভুলগুলো ঠিক হয়ে যাবে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.