নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তন্দ্রাকুমারী একটি কাল্পনিক চরিত্র যার সন্ধানে আছি নিশিদিন!!
আমার নাম রাতুল। আমি একটি পুতুলের প্রেমে পড়েছি। আজই। পুতুলটার নামও পুতুল। হালকা পাতলা শরীর। রং শ্যামলা। বয়স ২২-২৩ বছর। সব সময় গোলাপী রঙের স্যালোয়ার কামিজ পড়ে। কাজল কালো চোখ। চোখের মধ্যে গভীরতা আছে। আমার উচিৎ ছিল তার আরো খোঁজ খবর করা। তার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো। কিন্তু তা আমি করলাম না। তাকে নিয়ে কল্পনায় হারিয়ে গেলাম। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে তার কথা ভাবতে ভাবতে কতটা পথ হেঁটে এসেছি মনে নেই। এলাকাটা অপরিচিত। মানুষের ভীড় নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দু-একটা চায়ের দোকান দেখা যায়। আমি একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। সিগারেট চাইলাম। এক মহিলা সিগারেট দিল। সিগারেট খেতে খেতে লোকজনের কথাবার্তায় বুঝলাম এটা একটা বেদে পল্লী। এখানে সাপ কেনা বেচা হয়। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। একটা লোককে দেখে মনে হলো, সে এই এলাকার খুব প্রভাবশালী কেউ। আমি তার সাথে পরিচিত হলাম। লোকটার নাম রতন। সে জানালো তারা বেদে। তাদের পূর্ব পুরুষ আসাম থেকে এসেছে। তারা বশীকরণ তাবিজের কারবার করে। প্রেমে ব্যর্থতা, শারিরীক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক রোগ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে থাকে। আমি তাকে বললাম 'আমার একটি তাবিজ লাগবে। একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছি আমি।' যদিও তাবিজ কবজে আমার বিশ্বাস নেই, তবুও কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে গেলাম তার সাথে।
রতন নামের লোকটি আমাকে এক আধ্যাত্মিক সাধকের কাছে নিয়ে গেল। সাধকের নাম মাহতাব দেওয়ান। আমি তার কাছে গিয়ে জড়সড় হয়ে বললাম, 'উস্তাদ আমি আপনার শিষ্য হতে চাই।' হয়তো অভিনয় করলাম। উস্তাদ মুচকি হেসে বলল, 'প্রেমে পড়েছেন নাকি বাবা?' তার প্রশ্ন শুনে আমি হা করে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, 'জ্বী উস্তাদ।' 'আপনি সঠিক লোকের কাছেই এসেছেন' এই বলে সে আমাকে একটা মাটির ঘরে নিয়ে গেলেন। তিনি বলতে শুরু করলেন। 'মেয়ে মানুষ হইলো সাপের মত। যদি তাকে দুধ কলা দিয়ে পুষতে পারেন, তাহলে সে আপনেকে তার মনিব বানিয়ে রাখবে। আপনার মিষ্টি মিষ্টি কথা হল তার দুধ কলা। আর যখনই তাকে অভাবে রাখবেন, সে আপনাকে ফোঁস করে কামড় দিয়ে অন্যের কাছে চলে যাবে। বাবা, আমি সামান্য সাপুড়িয়া। সাপের খেলা দেখাই। আপনি যদি আমার কথামত চলেন। নারী জাতি আপনার বশ হবে। আপনাকে দেবতা মানবে। আপনার পূজা করবে। আমি ল্যংটা বাবার খাদেম। কামরুপকামাক্ষায় আমি ৩০ বছর ছিলাম। আমি সাধক মানুষ। আপনাকেও প্রেমের জন্য সাধনা করতে হবে। আমি আপনার পায়ের কাছে মেয়েটাকে বান্দী বানায়া হাজির করবো, তবে আমাকে কথা দিতে হবে, মেয়েটাকে আপনি কখনো কোন কষ্ট দেবেন না।' তারপর সে আমাকে একটি মাটির ঘটি আর একটা ফুল নিয়ে পরের দিন তার কাছে যেতে বলল। আমি একটা মাটির ঘটি আর চন্দ্রমল্লিকা ফুল নিয়ে পরের দিন উস্তাদের কাছে হাজির হলাম। উস্তাদ ঘটির মধ্যে পানি নিলেন। তারপর মেয়েটার নাম মনে মনে বলে পানিতে ফু দিতে বললেন। আমি পুতুলের নাম বলে পানিতে ফু দিলাম। তারপর তিনি একটা মন্ত্র পড়ে ফুলের মধ্যে ফু দিয়ে ফুলটা পানিতে রাখলেন। ঘটির উপর আরো সাধনা আছে। সেটা উস্তাদ নিজেই করবেন। এরপর তিনি আমকে একটি গাছের শেকড় খেতে বললেন, যা খেতে ছিল খুব ঝাল ও তিক্ত। তারপর তিনি আমাকে সপ্তাহে দুই দিন সরিষার তেল দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুতুলের নাম বলতে বলতে দুধ দিয়ে ওই আগুন নেভাতে বলেন। এই সাধনা চলে ৪ সপ্তাহ। এরপর চল্লিশ জন ল্যাংটা ছেলেকে পেট ভরে খাওয়াতে বলেন। এরকম মোট উনিশ-বিশটি কঠিন সাধনা প্রায় ছয় মাসের ব্যবধানে সম্পন্ন করে হাতের বাহুতে আমি একটি তাবিজ ধারণ করলাম।
পুতুল একটা লেকের পাড়ে একা বসে ছিল। আমি বহুদিন যাবৎ তাকে অনুসরণ করছি বলেই আমি জানি, এখানে সে একা একা বসে থাকে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সে এখানে বসে থাকবে। পুতুলের সামনে গিয়ে বললাম, 'আমি আপনাকে ভালোবাসি।' পুতুল আমাকে চেনে না। তাই সে অবাক হয়ে বলল, 'আপনি কে?' আমি বললাম, 'আমি রাতুল। আমি আপনার প্রেমিক।' তাবিজের জোরেই কিনা জানি না, আমার মুখ দিয়ে হরবর করে কথা বেরুচ্ছে। পরিচিতির এক পর্যায়ে আমি তাকে জানালাম, আমি পেশায় একজন রিকশা চালক। প্রতিদিন ভোর হলে রিকশা নিয়ে শুরু হয় আমার পথচলা। যদিও আমি একজন সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। ইংরেজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করা আছে। কিন্তু পুতুল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ৩য় বর্ষের ছাত্রী, আমি সেখানেই রিকশা চালাই। আমি তাকে বুঝালাম, তাকে আমি কতটা ভালবাসি। সে আমার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলো এবং আমাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বলল, 'তোমার এখন কেমন লাগছে?' আমি বরফের মতো জমে গেছি ততক্ষণে। আমি বললাম, 'এই প্রথম বারের মতো মনে হচ্ছে, আমি বেঁচে আছি। আমার জীবন এতকাল কতটা বিভৎস কেটেছে, একে একে সবই তোমাকে বলব। তোমাকে কতবার রিকশায় করে ডিপার্টমেন্টে পৌঁছে দিয়েছি, ডিপার্টমেন্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে পৌঁছে দিয়েছি। কতবার আড়চোখে তোমাকে তোমায় দেখেছি। স্বপ্ন দেখেছি, তার কোন হিসেব নেই।' পুতুল বললো, 'আমি এখন চলে যাব, এবং আমি চলে যাওয়ার পর তুমি আমাকে পেছন ফিরে দেখবে না। এখানেই আমাদের প্রেমের সমাপ্তি হবে।' এরপর পুতুল তার গন্তব্যে চলে গেল। আমিও আমার গন্তব্যে। পুতুল আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো। সত্যিই পুতুল হারিয়ে গেল।
পরদিন ভোরে পুতুল কখন আমার রিকশায় চেপে বসেছে, আমি লক্ষ্য করিনি। হঠৎ সে বলে উঠলো, কাজি অফিস চলো। আমরা আজ বিয়ে করব। বিয়ে করতে গিয়ে জানতে পারলাম, পুতুল মাহতাব দেওয়ানের মেয়ে। রতন নামের সেই লোকটি পুতুলের ভাই।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৩৮
অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: কাহিনী কাল্পনিক। বাস্তব থেকে কিছুট অনুপ্রেরণা নেয়া হয়েছে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লিখছি। কিন্তু নিজের সেরাটা দেখানো এখনো বাকি। জানিনা কবে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব, যেখানে পৌঁছাতে চাই।
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ তার অভিজ্ঞতার বাইরে লিখতে পারে না।
সুন্দর লেখা। পড়ে ভালো লেগেছে।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:২২
বিজন রয় বলেছেন: এটি কি বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে লেখা?
সাদামাটা কিন্তু আকর্ষন আছে।
লিখতে থাকুন।