নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মৌমাছি

TOMORROW>>>>>>>>>>>

হারুনূর

প্রয়োজন নাই ।

হারুনূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতিসত্তার দায়

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫

ব্রিটিশের লাল পেন্সিলের নীল নকশা সাতষট্টি বছরেও বুঝেনি এই অভাগা বাঙ্গালী। আর কত কালক্ষেপন করলে বোধোদয় হবে এদের? আমি লিখতে পারি না, কিন্তু জাতিসত্তার দায়মুক্তির জন্যে হলেও বাধ্য হয়ে আমাকে লিখতে হচ্ছে।



বাঙ্গালী জাতিসত্তার কুঠোরে বোধ হয় সবচেয়ে বড় আঘাতটি করেছিল ব্রিটিশরাই। শত সহস্র বছরে যে বিশ্বাস আর ভাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠেছিল এই জনপদে, তাকে দমিয়ে রেখে আফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বারকে রুদ্ধ করে দিতে এর চেয়ে কুৎসিত ও জঘন্য পরিকল্পনা মনে হয় আর দ্বিতীয়টি করা সম্ভব ছিল না। ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভক্ত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জিবীত এক জাতিসত্তার মাঝে সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ সাতচল্লিশে রোপিত হয়েছিল তার কুফল আজ আমরা ভোগ করছি।



যে জাতিসত্তাকে আমাদের পূর্বপূরুষরা লালন করেছিল শত প্রতিকূলতা আর বৈরী পরিবেশের মাঝে, আমি সেই জাতিসত্তাকে একবিংশ শতাব্দির ঊষালগ্নে এসেও কলংকিত হতে দেখছি। ব্রিটিশের দেয়া মাত্র পঁচিশ বছরের পাকিস্তানি জাতিসত্তার আবরণে আমরা এখনো মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছি। পাকিস্তানি বেজন্মা জাতিসত্তার আবরনকে ধুয়ে মুছে সাফ করে ফেলেছিলাম আজ থেকে প্রায় বিয়াল্লিশ বছর আগে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু পরিত্যক্ত আবর্জনা আজও আমাদের চোখে মরিচীকা সৃষ্টি করে চলেছে। গোটি কয়েক বছরের মোহে আমরা এত সহজেই ভূলে গেলাম আমাদের পূর্বপূরুষের শত সহস্র বছরের পরিক্রমায় আর্জিত মহিমান্বিত এক জাতিসত্তাকে? বড়ই আকৃতজ্ঞ আমরা!



সারা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কত প্রাণের স্রোত এসে মিশেছে এই জনপদে, তার কোন হিসাব আমার জানা নাই। কত বড় এই জাতিসত্তার আধার! এত প্রাণের স্রোতকে জায়গা করে দিয়েছে কিন্তু নিজেকে কখনো বিকিয়ে দেয় নি। নিজের মৌলিকতা আর আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়েছে সবার মাঝে। আমার পূর্বপূরুষের কি মহান সেই দর্শন!



আজকে আমার বড় দুঃখ হয় যখন দেখি যে এক দল আরেক দলকে বিজাতির দালাল হিসাবে আখ্যা দেয়। একবারও কি ভেবে দেখেছে যে, বিজাতিরা নিজেদের মধ্যে বাঙ্গালীর দালাল বলে কাদা ছুড়াছুড়ি করে কিনা? কি নির্মম ভাবে আমরা আমাদের পূর্বপূরুষদের সত্তাকে অপমান করে চলেছি! কি নিষ্ঠুরভাবে নিজের জাতি সত্তাকে বিকিয়ে দিচ্ছি!



শেকড়কে পেছনে ফেলে বেশি উচুতে উঠতে গেলে প্রকৃতি সুযোগ বুঝে তার ঘাড় মটকে দেয়। আর শেকড়কে আগলে রেখে নিজেকে বিকশিত করলে প্রকৃতি তাকে টিকিয়ে রাখে। আমরা আজ আমাদের শেকড়কে অবহেলা করে সাফল্যের সন্ধানে মরিচীকার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি। কি নির্বোধ আমরা!



মাইকেল মধুসুদন তার স্বীয় জাতিসত্তাকে অস্বীকার করতে গিয়ে টিকে থাকতে পারে নি। তাকে বাধ্য হয়ে শেকড়ের কাছে ফিরে আসতে হয়েছে টিকে থাকার জন্যে। নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার জন্যে হলেও স্বীয় জাতিসত্তাকে বুকে ধারন করতে হয়েছে। এই পৃথিবীতে স্রষ্টার দেয়া সবচেয়ে বড় উপহার আমার এই গৌরবময় ও মহিমান্বিত বাঙ্গালী জাতিস্বত্তা।



আমি আজ গর্বিত এই মহিমান্বিত জাতিসত্তার একজন হয়ে জন্মেছি বলে। আমি ধন্য অমৃতসম বাংলা ভাষায় কথা বলতে পেরে। অকৃত্রিম স্বর্গীয় আনন্দের উৎস এই নির্মল বায়ূতে নিঃশাস নিতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আজ এই জাতিসত্তার কাছে দায়বদ্ধ কারণ এই সুফলা মাটির শস্য খেয়ে আমি বড় হয়েছি। এই জাতিসত্তাকে বুকে ধারণ করি বলেই, কান পাতলে আমার পূর্বপূরুষের অযুত লক্ষ নিযুত প্রাণের স্পন্দন শুনতে পাই। নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করার চেয়ে বড় প্রশান্তি আর কি হতে পারে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.