![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তুষার। পড়ছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে,পরিসংখ্যান বিভাগে।অত্যন্ত অলস একজন,পড়াশোনা ছাড়া সব কিছুতেই আগ্রহ। ধর্মবিশ্বাস নিরপেক্ষ ; জামাতকে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছুকেই ঘৃণা করি। হাটতে খুব পছন্দ করি। স্বপ্ন দেখি, গ্রাজুয়েশনের পর পুরা শহরটাই হেটে হেটে দেখব।তাতে যতদিন লাগে লাগুক। সামুতে প্রায় ৪ বছর। ব্লগ পড়ি, লিখি কম ।। ।। ।।
স্কুলজীবনের একটি ঘটনা। আমি তখন পড়তাম চট্টগ্রামের একটি নামকরা বেসরকারি স্কুলে। সবার মত আমিও বাসা থেকে 'টিফিন' নিয়ে আসতাম। একদিন ক্লাসে বসে আছি।পাশের বন্ধুটি বললো 'কাজ হয়ে গেসে'। ওর মুচকি মুচকি হাসি দেখে কেমন যেন সন্দেহ হল। কিন্তু তখনো বুঝি নাই। টিফিন টাইমে বক্স খুলে দেখি খাবারের ভেতর থেকে দুইটা চুল বেরিয়ে আছে। অবাক হয়ে গেলাম। চুল আসলো কই থেইকা? টান দিলাম। বাইর হইলো একটা মরা থ্যাতলানো 'তেলাপোকা'। খুবই অবাক হলাম।তাকিয়ে দেখি কয়েকজন বন্ধু তাকাই তাকাই হাসতেসে। একজনের খুশি সবচেয়ে বেশি। তাকে জিজ্ঞেস করলাম 'ঘটনা কি' ? স্বীকার করল কাজটা তারই। এবং এই কাজে আমার পাশের জন তাকে সাহায্য করেছে। আরও বলল, আমার অপরাধ 'আমি প্রতিদিন একই টিফিন আনি'। হ্যা, এটা টার কাছে অবাক করার মত ব্যাপার যে আমি সম্পূর্ণ স্কুল জীবন একই টিফিন এনেছি। ২-৩ পিস পাউরুটি, কখনো জেলি,কখন নসিলা বা মেয়নেজ দিয়ে। এই অপরাধে সেই বন্ধুটি আমার পাউরুটির দুই স্লাইসের মাঝে একটা তেলাপোকা রেখে দিয়েছে। হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম টার উত্তর শুনে। নিশ্চুপ ছিলাম কিছুক্ষণ। বলতে পারিনি, দোস্ত আমার মা তোর মার মত গৃহিণী না। তার বসে বসে আমার জন্য মুখরোচক টিফিন বানানোর মত অখণ্ড অবসর তার নেই। ৯-৫টা অফিস করার পর তার এনার্জি আর কিছুই বাকি থাকে না। বাসায় এসেই তাকে ঢুকতে হয় রান্না ঘরে। রাতের এবং পরদিন দুপুরের রান্না সেরে ফেলতে। রাত ১০ টার আগে সেদিনের পেপার তিনি পড়ার সুযোগ পান না। ১২-১২.৩০ তে ঘুমিয়েও যাকে ৫.৩০টায় উঠতে হয়। আমাদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হয়, নাস্তা বানানো আরও সহস্র টুকিটাকি । আমি ঐ বন্ধুটিকে কিছুই বলিনি। কি হবে বলে। ও বুঝবে না। ও সহ আমার বেশিরভাগ বন্ধুর মা যে গৃহিণী । ও তো দেখেনি একজন চাকরিজীবী মার সপ্তাহে ৬ দিন কিভাবে কাটে। অন্ধকে হাতি দেখিয়ে কি লাভ??
# ১ম নারী ঃ আমার মা
আমার নানি বেশ সৌভাগ্যবতী। তিনি তার ৬ মেয়ে কেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। দুই খালা শিক্ষক , দুই খালা ডাক্তার ( একজন চমেক,আরেকজন পিজি)আর আমার মা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরিজীবী। আমার মা ঢা.বি. থেকে মাস্টার্স। বাবার সাথে পরিচয় ও সেখানেই, দুজনেই ইতিহাস বিভাগে।মার কথা বেশি কিছু বলব না, কারণ সব মা-ই
একই রকম।
#২য় নারী ঃ আমার বোন
আমার বড় বোন। আই.ই.আর (ঢা.বি.) থেকে মাস্টার্স করে কিছুদিন চাকরি করেছিল।এখন নরওয়েতে এম.ফিল. করছে। কেউ যখন এই কথা শোনে , তখন একটা কথাই আগে জিজ্ঞেস করে,' বিয়ে হয়েছে?' আমি হেসে বলি, না। তখন সরাসরি, অথবা ঘুরিয়ে পেচিয়ে জানতে চায় বয়স কত ? আমি বলি ২৮। সেই সঙ্গে অবধারিত যে প্রশ্ন আসে তা হল এখনো ক্যান করছে না? কবে করবে? সত্যি বলতে কি আগামি ২বছরের মধ্যে সেই সম্ভাবনা নাই। ও পি.এইচ.ডি শেষ না করে বিয়ে করবে না। আগে সেটেল হবে তারপর বিয়ে। কারণ যদিও বলা হয় বিয়ের পড়ে অনেক মেয়েই পড়ালেখা করে, বাস্তুবতা হল বিয়ের পর সংসার সামলিয়ে পি.এইচ.ডি করা অনেক কঠিন । আমার বাবা-মার ওকে এখনি বিয়ে দেবার কোনো ইচ্ছে নেই। আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক তারপর।
#৩য় নারীঃ আমার নানী
আমার মা - খালারা ছয় বোন । দুই খালা সরকারি মেডিক্যাল এর প্রফেসর , আমার মা ও আর এক খালা ঢা.বি.র মাস্টার্স , দুই খালা চ. বি.র মাস্টার্স ।ব্যক্তিগত জীবনে তারা সকলেই সফল। কিন্তু তাদের এই সফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার নানির। যিনি অনেক কষ্টে তার ৬ মেয়ে কে সফল বানিয়েছেন।
তিনটি কথাঃ
১.আমি বয়েজ বা গার্লস স্কুল পছন্দ করি না। আমার কাছে মনে হয় তারা আবদ্ধ জীবন যাপন করে। গার্লস এর কথা বলতে পারি না, তবে বয়েজ এর ক্ষেত্রে এটা অনেকাংশে সত্যি। (২-৪ টা ব্যতিক্রম সবখানেই থাকে,তারা বাদে) অনেক বয়েজ স্কুলের ছেলেদের দেখেছি তারা মেয়েদের শুধু মেয়ে হিসেবেই দেখে,মানুষ নয়। ভাবখানা এমন,'ছেলেরা মানুষ, মেয়েরা মেয়ে মানুষ।' অধিকাংশের চোখেই মেয়েরা শুধুই মাল , সুন্দর জিনিস, প্রেম করার আইটেম। কো-এড এ যে এমন নেই,তা নয়; তবে কম। অবশ্য তাদের দোষ দেই না।আমার মনে হয়,তাদের মা- বোনরা যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতেন; তবে তাদের আত্মসম্মানবোধ তো বাড়তই;সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই সন্তান-ভাইটির ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেত।কো-এড আর কিছু না শেখাক, মেয়েদের বন্ধু ভাবতে শেখায়। তারাও যে মানুষ,তারাও যে ভাল বন্ধু হতে পারে, এইটা বয়েজ এর ছেলেরা খুব কমই বোঝে।
২.আমার আরেকটি অপছন্দ হল শিক্ষিত মেয়ের ঘরে বসে থাকা। অনেকেই হয়ত বলবেন, শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য কি চাকরি করা নাকি? শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য নিজেকে জাগ্রত করা,মননশীলতা কে জাগিয়ে তোলা;মানুষের মত মানুষ হওয়া .....হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান।
ভাই, থামেন। আমাদের দেশের মত দেশে ৯০% শিক্ষিত মানুষের শিক্ষা গ্রহণের মুল উদ্দেশ্য একটা ভাল চাকরি,খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মত নিশ্চয়তা। ২০০১ সালের পরিসংখ্যান মতে দেশের ৩% মানুষ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। লেটেস্টটা জানি না,নিশ্চিত আগের থেকে বেড়েছে ; কিন্তু বাড়লেও কতটা ? ধরলাম সর্বোচ্চ ১০%(যদিও এত হবে না)। তাহলে এই যে ১০% এর মধ্যে আপনি আছেন, আপনি কি এইটা গ্রহণ করেছেন শুধু রান্নার কাজে(সোজা কথায় 'ড্যাগ মিনিস্টার' হইতে) ? রান্না করতে কি মাস্টার্স ডিগ্রি লাগে?
৩.আমি মিথুন রাশির জাতক, সহজাত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দ্বি-মুখীতা বেশি। কেউ কিছু বললে তার বিরোধিতা করবই। কিছুদিন আগে এক বান্ধবির সাথে রিকশায় ফিরছি। কথা প্রসঙ্গে ও বলল ওর ক্যারিয়ার প্ল্যান সম্পর্কে । বলে বসলাম, গৃহিণী হয়ে যা। ও তো ক্ষেপে উঠলো । আমি গৃহিণীদের পক্ষে যুক্তি (!) দিচ্ছি, ও বিপক্ষে। হঠাত বলে বসলো, তুই কি আন্টির চাকরি করাটাকে অপছন্দ করতি? আমি থেমে গেলাম। কি বলব? হ্যা, এটা ঠিক ছোটবেলায় আমি মা কে অনেক মিস করেছি। ছোট ছোট ঘটনায়, (উপরেরটার মত) মনে হয়েছে মা ঘরে থাকলে হয়ত অনেক ভাল হত। তারপরই মনে হল, না। আমার মা গৃহিণী হলে হয়তো আমার টিফিনের চেঞ্জ ভাল হত, কিন্তু আমি যে আত্মসম্মানবোধ পেয়েছি তা পেতাম না। আমি আমার সেই বন্ধুদের বলতে পারি, আমার মা কর্মজীবী; তোদের মত ঘরে বসে হাড়ি ঠেলে না। পাশের বন্ধুটির কাছে হার মেনে নিলাম। বললাম, দোস্ত,আমার মা,বোন কর্মজিবি।এতখন হুদাই তর্ক করতেসিলাম। (আসলেই, তর্কের খাতিরে তর্ক এক জিনিস; কিন্তু সত্য সবসময়ই সত্য। আর যে মত আমি নিজেই সমর্থন করি না, সেই মতের পক্ষে তর্ক করা আরও কঠিন ।)
সকল পত্রিকাতেই 'পাত্রি চাই' অংশে বিয়ের কন্যার কয়েকটি গুণ চাওয়া হয়। যেমনঃ নম্র,ভদ্র, সুলক্ষণা, শিক্ষিতা, 'সুগৃহিণী' । আমার কথা হইলো, সুগৃহিণী হইতে শিক্ষিতা হইবার দরকার কি? নাকি এইটা একটা স্ট্যাটাস! যারা এরকম সুগৃহিণী খোঁজেন, তারা কি নিজের মৃত্যুর কথা ভেবেছেন? ধরা যাক, একটি অতন্ত্য সুপাত্র এমন একজন সুগৃহিণী বউ পেলেন। বিয়ের ৩-৪ বছর পর তাদের সন্তান ও হল। পাত্র ভালই ইঙ্কাম করেন, তাদের চলে যায়। স্ত্রী সুগৃহিণী, ঘরে বসে সন্তান ও পতি পালন করছেন। খোদা না করুক, হঠাত যদি সেই ছেলেটি জান্নাতবাসী হয় তবে সেই মেয়েটির কি হবে? সন্তান নিয়ে তিনি কোথায় দাড়াবেন? চাকরি যে করবেন, চাকরি নিয়ে কি সবাই বসে আছে? পেতেও তো সময় লাগে।
এটা অনেক ছোট আঙ্গিকে দেখা। ধরা যাক, আরও বড় আঙ্গিকে। যেখানে মহিলার ৩-৪ টি সন্তান। হাজবেন্ড ৪৫, মহিলাও ৪০। তখন??
এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করা নয়। খারাপ লাগে যখন এই দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন অসঙ্গতি দেখি। যেই ছেলেটি সারা বছর মেয়েকে আইটেম হিসেবেই দেখেছে, এই দিবসে তার লাফালাফি দেখে মজাই লাগে। এমন ছেলেও দেখেছি, মেয়েদের সাথে কথা বলতে দেখলেই,সেইটা নিয়ে খোঁচায়;মেয়েদের পাত্তা দেয় না বলে গর্ব করে;অথচ নিজেই মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে, গার্লফ্রেন্ড নাই বলে আফসোস করে। কি আর বলব? এদের কিছুই বলার নাই। আশা করবো শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
এই লেখায় হয়তো অনেকেই আমাকে নারীবাদী বলবে। বলবে, মেয়েদের তেলানোর জন্য লেখা। যে যাই বলুক, সত্য সত্যই থাকবে।এই দিনে
কামনা করি বেগম রোকেয়ার চাওয়া মত ডান হাত বাম হাত দুইটাই সমান হোক। লেখাটা পড়ে কারো কারো মনে হতে পারে যে আমি এটাতে গৃহিণী মা-দের অসম্মান করছি। আমি এখানে কাউকে অসম্মান করছি না। আমি শুধু এটাই বলতে চাচ্ছি যে একজন কর্মজীবী মা কে দ্বিগুণ কাজ করতে হয়। একজন গৃহিণী কে যেখানে শুধু ঘরের কাজ দেখতে হয়, সেখানে তাকে ঘর-বাহির দুইটারই খেয়াল রাখতে হয়। শুধু তাই নয়, তারা যখন কর্মস্থলে থাকেন তখনো তাদের সংসার-সন্তানের কথা ভাবতে হয়। এতো ত্যাগ,এত চাপ সত্ত্বেও তারা তাদের কাজের প্রাপ্য সম্মান পান না। এই দিনে এটাই চাওয়া নারীরা তাদের প্রকৃত সম্মান পাক।সকল নারীকে সালাম।
(উৎসর্গঃ আমার চিন প্রবাসি বান্ধবী এশাকে।যে আমাকে শিখিয়েছিল বন্ধুদের প্রকৃত মর্ম। কে বলে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না? দোস্ত,তুই যেখানেই থাক,ভাল থাক। )
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৯
htusar বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার লেখা অনেক ভাল লাগে।
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
অনীনদিতা বলেছেন: হুম
লেখা খুবই ভালো লাগলো
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০
htusar বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:২৯
শামীম আরা সনি বলেছেন: ভালো লাগলো !! নিজেকে মানুষ ভাবি, কারন ছোটবেলা থেকে আমি জানিনি জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন কি, ফ্যামিলির ওপরে ব্যাপারটা ডিপেন্ড করে।
তবে চাকরি করা না করাটা নিয়ে আমার কিছু মনে হয়না, আমার কাছে মনে হয় এভরিথিং ইজ ওকে যার লাইফ তার যেটা ভালো লাগে সেটাই যদি সে পায় তবে তাই ভালো। যদিও আমি নিজে জব করি কিন্তু শুধুমাত্র হাউজওয়াইফ হলেও অনেক কিছু করতে পারার আছে, জীবনে অনেক মজা আছে বলেই আমার মনে হয় যদি লাইফপার্টনার ভালো হয়। মেয়েরা একটা সময় এসে আসলে লাইফ নিয়ে উদাসীন হয়ে যায় ছেলেদের উদাসীনতার কারনেই। সে আরেক আলোচনা! আজ নাহয় থাক
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮
htusar বলেছেন: আপা, আপনার সাথে একমত। যে যেভাবে লাইফটা কাটাতে চায়, সে সেভাবেই করবে। আমার আপত্তি অন্য যায়গায়। আমি অনেক আপুকে দেখেছি স্বামীর চাপে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছে। এটা তাদের উদ্দেশ্য করে লেখা। কাউকে খাটো করা নয়।
৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩২
সপ্নময় নীলাকাশ বলেছেন: ভালো বলেছেন । আমার বন্ধুর মা প্রতিদিন আমার জন্য টিফিন দিয়ে দিতেন, কারন আমারও টিফিন ছিলো জেলী, ব্রেড বা নুডুলস । একটু বিপরীত তাই না?
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩
মাক্স বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন!+++++