নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সীমাহীন

হুমায়রা হারুন

এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে / আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে

হুমায়রা হারুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তচোষা দানব

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮


আজ যার গল্প করবো তার বৈশিষ্ট্য হল একজন রক্তচোষা দানবের মত, যার 'লাস্ট ফর ব্লাড' ছিল সাংঘাতিক।
খুব সুন্দরভাবেই শুরু হয়েছিল সবকিছু। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাব। ইউনাইটেড স্টেটসের এগ্রিকালচার এন্ড মেকানিক্যাল ইউনিভার্সিটি, টেক্সাসে অ্যাডমিশন হয়েছে। ইয়র্কশ্যায়ার -এ ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক থেকেও অফার লেটার এসেছে। প্রফেসর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মেলবর্নে অ্যাপ্লাই করেছি। তারা আবার পি-আর না থাকলে নেবে না। আবার কানাডায় ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে অ্যাাপ্লাই করেছি। পি-আর না থাকলে তারা নেবে না। তারপরও ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে অফার লেটার এসে গেল। ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটিতে। পি-আর নাই। তবুও গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ দিয়ে নিচ্ছেন প্রফেসর। তার গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট হিসেবে টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশিপ দিয়ে গবেষণার সুযোগ দিয়েছেন অ্যাস্ট্রোনমির উপরে। ইচ্ছে আছে গ্যালাক্সি এভ্যুলিউশান নিয়ে কাজ করবার। তবে এস্ট্রোফিজিক্স নয়। প্রফেসর নিজেই অ্যাপ্লাইড ম্যাথের ছাত্র। কাজ করবেন অস্ট্রোনমিতে। আমার ইচ্ছা হল যে সুযোগ যখন পেয়েছি যেহেতু, যাই-ই পেয়েছি তাই গ্রহণ করি। পি -আর না থেকেও পড়ার এই সুযোগ ভীষণভাবে গর্বের।

২০০৪ সাল। ছোট একটি শহর পিটারবোরো। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চল ঘেঁষে শহরটির প্রান্ত ঘেঁষে ঘন জঙ্গল। যিনি দান করেছিলেন জমিটুকু ক্যাম্পাসের জন্য, তার নাম পিটার গজেসকি। তার নামে একটি হস্টেলও আছে। ওরা ডরমেটরি বলে। বিশাল বনাঞ্চল জুড়ে এই ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে। সুপারভাইজর খুবই অমায়িক। আমাদের সমবয়সী প্রায় ৩৪/৩৫ বছর বয়স হবে। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর র‍্যাংক। আমাকে বলল, প্রফেসর হিসেবে তাকে সম্বোধন না করে ডাক নাম ধরে ডাকতে । মনে মনে ভাবলাম (কেন আমি এরকম ভেবেছি আমি নিজে জানি না) যে যতই আপন ভাব দেখাও না কেন, লাথি মারার সময় তো তোমরা কুন্ঠাবোধ করো না ।
তাকে রোমানিয়ান, ভিয়েতনাম, কেনেডিয়ান ছাত্রছাত্রীরা ডেভিড বা ডেভ বলে ডাকতো। আমি প্রফেসরই বলি। বললাম, কিছু সময় লাগবে, আমাদের কালচার থেকে, কালচারে শিফট করতে। কারণ আমাদের সংস্কৃতিতে তো শিক্ষকের নাম ধরে আমরা ডাকি না। প্রথম পরীক্ষায় আমি ৮৪% নম্বর পেলাম। সে খুবই খুশি। দ্বিতীয় পরীক্ষার নম্বর দিতে যদিও তারপরে গড়িমসি শুরু করল। ব্যবহার আচরণ খুব পাল্টে গেল হঠাৎ করেই। কারণ পুরো ল্যাব চালাতো যে ছাত্রটি তার নাম কেভিন। সে ল্যাব ছেড়ে চলে গেছে দীর্ঘ ছুটিতে, ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডে। ল্যাবের ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড করবার জন্য সকল ভার তখন ডেভে -এর ঘাড়ে এসে পড়েছে। আর তার তো এই দায়িত্ব গ্রহণ করবার কোনরকম সম্ভাবনাই নেই। কারণ গবেষণার জন্য কাজ কি, কাজ কিভাবে স্টুডেন্টদেরকে করাতে হয়, গাইড করতে হয় সেগুলো সে আসলে জানেই না। সুতরাং এই গ্র্যাড স্টুডেন্টদের দায়িত্ব বা আন্ডারগ্রাড স্টুডেন্টদেরই রিসার্চ বা প্রজেক্টের দায়িত্ব কে নেবে? আমি তো তার গলার কাঁটা রীতিমত।

একদিন দুপুর ১২ টা।
ডিপার্টমেন্টে সে সবসময় যখন আসতো ১২ টার দিকে আর সন্ধ্যা সাতটায় য্তে লেকচার থিয়েটারে ক্লাশ নিতে। ফার্স্ট ইয়ার নন- ফিজিক্স ওয়ালাদের জন্য নির্ধারিত অস্ট্রোনমি ইন্ট্রোডাক্টরি কোর্সটা নিতে। তারপর সে বাড়ি চলে যেত। দিনের মধ্যে দিয়ে কিছু অফিশিয়াল ওয়ার্ক করতো। আমি তার টি-এ হিসেবে সেই সময় উপস্থিত থাকতাম সন্ধ্যা সাতটায়। একই বিল্ডিং -এ । মানে তার লেকচার থিয়েটার আর আমার হস্টেল (আমি অটোনাবিতে থাকতাম) অটোনাবি কলেজ বা অটোনাবি হস্টেল, অটনাবি নদীর নাম অনুসারে, সেই হোস্টেলের নাম। সেখানে আমি ক্লাসে উপস্থিত থেকে তারপর আমার রুমে চলে যেতাম।

তো কয়েক মাস পর থেকে তার গড়িমসি যখন শুরু হলো, সে এমনভাবে বাড়ি থেকে প্ল্যান করে আসতো যেন, সে আজকে এসে কাকে ধরবে, কাকে মারবে, এরকম একটা চিন্তা তার সারাক্ষণ মাথায় কাজ করতো। কিছুদিন সে অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিল। দেখলাম তার রুমে ফোনে তুমুল ঝগড়া করছে। চিৎকার করছে ফোনে, কারো না কারো সাথে। সেই সময়টা স্টাফরা মনে হয় কিছুদিন বিরতি দিয়েছিল তার দুর্ব্যবহারের কারণে। কারণ তখন ওয়াশ রুমগুলো অত্যন্ত অপরিষ্কার দেখতাম।

আমি রিসার্চ স্টুডেন্ট হওয়াতে আসলে তার কর্মকাণ্ড একটু কাছ থেকেই দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। তো তেমনি একদিন গ্রাফ নিয়ে তার রুমে গিয়েছি তাকে দেখাবার জন্য আমার কাজটা। তার মুদ্রাদোষ ছিল। সে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নখ চিবাতো। সে মুখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মনিটরের দিকে ঠাঁয় তাকিয়ে থাকতো। কিছু একটা ভাবতো বা চিন্তা করত। আর দাঁত দিয়ে তার আঙ্গুলটা চিবাতে থাকতো বা কামড় দিতে থাকতো। অলওয়েজ।
আমাকে দেখে সে সেদিন ঘুরে টেবিলের দিকে ফিরল। হাই বলল। বললাম না, খুবই মিষ্টি অমায়িক হাসি, গলা উঁচু করতে পারে- এরকম আমি ভাবতেই পারতাম না যদি, আমি টেলিফোনে তার বাৎচিত, চিৎকার করা আমার নিজের কানে না শুনতাম।
এখানে আসার পর তার বাড়িতে দাওয়াতও দিয়েছিল। তার স্ত্রীর অমায়িক আন্তরিক ব্যবহারে মনোমুগ্ধকর পরিবেশও তৈরি হয়েছিল। টেবিলে বসে হাসছিল সেদিন আমাদের সকলের দিকে তাকিয়ে। ওই প্রথম দিনই আমার তাকে দেখে মনে হয়েছিল যে, হি ইজ অ্যাান ইম্বেসাইল। কিন্তু আসলে কি সে ইম্বেসাইল নাকি ইম্বেসাইলের আড়ালে সে একজন শেইপ - শিফটার, অত্যন্ত ধূর্ত মানুষ, সেটা আমি তখনও বুঝতে পারিনি। আর শেইপ শিফটারদেরকে সহজে বোঝাও যায় না। শেইপ শিফটিং সম্বন্ধে আমি জেনেছিও যদিও অনেক পরে ২০০৮- এ।
তো এভাবে এসব মানুষরা যারা আসলে মানুষরূপী রক্তচোষা দানব ,তারা যে তাজা রক্ত খেতে পারে বা ভ্যাম্পায়ারের মত আচরণ করতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা আমার এখান থেকেই শুরু ও দেখা।
সেদিন গ্রাফ নিয়ে টেবিলেরর সামনে দাঁড়িয়েছি।
গ্রাফ দেখছে।
ডান হাতে কলম ধরা। প্রায়ই কলম নেওয়ার সময় সে আমার পুরো হাতটা তার হাতে পুরে ফেলত। আর এ ব্যাপারে সে খুবই সচেতনভাবে কাজটা করতো যেন আমার হাতটা সে তার হাতের মুঠোয় নিতে পারে । আমিও সচেতন ছিলাম। তাকে সুযোগ দিতাম না । ব্যাপারটা তার মোটেও পছন্দ হতো না। আসলে টুকটাক এসব সুযোগ না দিলে বস্‌ -রা মনে হয় সবসময় নারাজ হয়। সেদিন অবশ্য অন্যরকম। আমি পাশে দাঁড়ানো। তার বাঁ হাতটা টেবিলের উপর। বুড়ো আঙ্গুলটা দেখলাম নখের গোড়া পর্যন্ত খাওয়া। নখের গোড়ার অংশ, যা কিনা চামড়ার সাথে লেগে থাকে- হাতের চামড়ার সাথে, সেখান থেকে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে। অর্থাৎ সে এতক্ষণ চুষে চুষে তার নিজের রক্ত সে খাচ্ছিল। এ দৃশ্য দেখার পর আমার আর ভাবতে একটুও দেরি হয়নি যে আমি সাক্ষাৎ ভ্যাম্পায়ারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
যেই না আমি তা লক্ষ্য করেছি, তার হাতের আঙ্গুলের সেই গলগল করে রক্ত বের হওয়ার দৃশ্য, আর সে তৎক্ষণাৎ সেটা টের পেয়ে গেছে। যেহেতু -তারা অত্যন্ত টেলিপ্যাথিক হয়, তারপর সে ঠাস করে তার আঙ্গুলটা টেবিল থেকে সরিয়ে টেবিলের সাইড বরাবর নিচে লুকিয়ে ফেলল। আমরা হিউমেনরা কিন্তু ওদের মাইন্ড রিড করতে পারি না। কিন্তু ওরা হিউম্যানদের মাইন্ড রিড করতে পারে এবং মাইন্ড কন্ট্রোলও করতে পারে। তার এই ভ্যাম্পায়ার সুলভ বৈশিষ্ট্য আমার নজরে যখনই পড়লো সেদিনই আমি ডিসিশন নিলাম -এই জায়গা আমাকে ছাড়তে হবে। এই স্থান আমার নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কী ভয়ঙ্কর বাপরে

এমন করে যে তার আংগুল সে নিজেই কামড়ায় ব্যথা পায় না

১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৪

হুমায়রা হারুন বলেছেন: এরা তো মানুষের রূপে থাকে। আসলে ভ্যাম্পায়ার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.