| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রূপোপজীবিনী শব্দটির আভিধানিক অর্থ যিনি নিজের রূপ বা সৌন্দর্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা তাদের আকর্ষণ করার গুণাবলী প্রয়োগ করে পুরুষদের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করে থাকেন। এই শব্দটি দেহোপজীবিনী বা বেশ্যা শব্দটির তুলনায় অনেক নরম, কোমল ও সাহিত্যিক গোছের। এটি সরাসরি পতিতা শব্দটির মত অবমাননাকর নয়।
পতিতা বলতে বুঝান হয়, যে নারী নৈতিক ভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে, পতিত হয়েছে। সামাজিক ভাবে পতনের দৃষ্টিকোণ থেকে এই শব্দে নৈতিক বিচার ও অবমূল্যায়নের ধারণা থাকে। অর্থাৎ মনে করা হয় পতিতা নারীটি জীবিকা অর্জনের জন্য দেহ ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকতে পারে বা নীতি সংগত নয় এমন কোন অন্যায় কাজের সাথে লিপ্ত থাকতে পারে।
রপোজীবিনী বা পতিতা দুজনই দেহ বিকিয়ে পুরুষদের প্রলুব্ধ করে আনন্দ দান করে থাকে। এক্ষেত্রে আকর্ষণ করার জন্য রূপোপজীবিনীর শারিরীক গঠন, সৌন্দর্য এবং খদ্দেরটিকে তার সান্নিধ্যে আসার প্রবল বাসনা তৈরী করবার জন্য বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হয়। দেহপোজীবিনীর জগতে তার দেহখানা আকর্ষণীয় হওয়া একটা বিশেষ মানদন্ড হিসাবে বিবেচিত হয়।
শুধু তাদের সাজসজ্জা নয়, তাদের বাসস্থান, বাসগৃহ বা শয়নকক্ষের সাজসজ্জাও হয় চোখের পড়ার মত সুন্দর। খুব গোছানো, পরিপাটি। যেন তাদের গৃহে প্রবেশ মাত্রই মনটা ভরে উঠবে এক ভাল লাগায়। তাই তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে বাড়িঘর টিপটপ রেখে অতিথি অর্থাৎ খদ্দের আপ্যায়নের জন্য সদা প্রস্তুত থাকা।
কিন্তু এসকল বৈশিষ্ট্য যে আমার সহপাঠি রত্নার বাড়ির ক্ষেত্রেও খাটবে তা কখনো ভাবিনি। কারণ তার চাল চলনে এসবের ছাপ আমি কখনো দেখিনি, যতদিন পর্যন্ত না আমি তাদের বাড়ির ভিতর দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাড়ি তো নয় যেন ছবির মত সুন্দর কোন এক স্থানে আমি প্রবেশ করেছি। যেমন নিখুঁত, পরিপাটী করে সাজানো ঘরগুলো, মনে হয় এ জায়গাটি যেন একটি হোটেল কক্ষ, সাধারণ গৃহস্ত থাকবার জায়গা নয়।
কিন্তু সারাক্ষণ এত গুছিয়ে কেউ থাকতে পারে নাকি? আর কোন কাজ নেই কি তাদের? নাকি এক যাদুকরী ক্ষমতা আছে তাদের? হও বললেই হয়ে যায়। রত্নার এই লুক্কায়িত গুণটি আমার কখনোই চোখে পড়ে নাই। যদিও এটা ঠিক যে পোষাক পরিধানে সে যতনা সৌখিন ছিল, পাঠ্যপুস্তক কেনার বেলায় ততই উদাসীন ছিল। একপ্রকার অনীহা থেকেই বলতো, ‘কিনতেই যদি হয় বই, কিছুদিনের জন্য না হয় কিনব, পরে বিক্রি করে দেব। বই কেনা মানেই তো অর্থের অপচয়।’ অথচ কলেজে এসেছে, শিক্ষা অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেধাবী খুব। চেহারা সুশ্রী হলে অন্য কিছু ভাবা যেত তাকে নিয়ে। সিনেমার নায়িকা না হতে পারলেও মডেলিং-ও তো কম গ্ল্যামারাস নয়। কিন্তু গ্ল্যামার যেখানে এসবের মানদন্ড, সেখানে সে বেমানান হয়ে পড়েছিল। ছোট, খাটো অবয়বের অধিকারী তার চেহারায় আবেদনময়ী ভাবটা জন্মগত ভাবে ছিল না। ভগবান কেন জানি এ বিষয়ে তাকে একেবারেই কৃপা করেন নি। তার মা, মায়ের মা, মানে মাতামহীর তুলনায় খুবই তুচ্ছ। আর তারা ছিল কতই না আকর্ষণীয়।
তাদের শয়ন কক্ষে প্রবেশের পথে মনে হলো যেন এক স্বপ্নময় জগতে প্রবেশ করছি। বিশাল সাইজের শয়ন খাটের মাথার কাছে সোনালী রঙের শিকের সারি। দেখে কেন এমন মনে হলো জানি না। মনে হলো আপ্যায়নরত অতিথির জন্য এই বিশেষ সুন্দর ডিজাইনের খাট। খাটের শিক ধরে এপাশ ওপাশ করতে যেন অতিথির কোন অসুবিধে না হয় তাই এই শিকের বেড়া। পাশের লাগোয়া প্রসাধন কক্ষটিও বেশ বড়। ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়না জুড়ে অসংখ্য আলোক বাতি। মুখ পালিশের কত না সরঞ্জাম সেখানে! দোকান বললে ভুল হবে না। কিন্তু এই প্রশ্নই বারবার আমার মনে আসছিল, প্রসাধন করার মানুষটি কে এই বাড়িতে?
পসারিনী যখন পসার বিক্রিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তার পেশাসংক্রান্ত কিছু আদত্ তার মধ্যে প্রোথিত হয়ে যায়। যেমন একটা হলো মোড়ায় বা পিঁড়িতে বসার সময় পদযুগল বেশুমার দূরত্বে রেখে বসা। রত্নার মায়ের বসার এই স্টাইলে দেখে প্রথমদিকে তো আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ওরে বাবা আমি কি সত্যিই গণিকালয়ে অবস্থান করছি নাকি। একটু দূরে এক কমবয়সী কালো করে অচেনা লোক মাথার হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে ছিল সেই বসার ঘরে। রত্নাকে জিজ্ঞাসা করাতে বললো, ‘আমার মামা। তার বউ খুব অসুস্থ। হসপিটালে ভর্তি। যায় যায়।’ তৎক্ষণাত মনে প্রশ্ন এলো, 'তাহলে মামীর কাছে না থেকে মামা এখানে কি করছে? আর হাত দিয়েই বা মুখ ঢেকে আছে কেন? বেদনায় কি উনি ভারাক্রান্ত?' তবে এ প্রশ্ন করিনি।
রত্না যদিও আটা, ময়দার স্তর মেখে ক্লাশে আসতো তবে তা খুব উৎকট ছিল না। আর নিজেই বলতো ৩৫ এর আগে প্রসাধণী ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হয়। তখন গুনে দেখলাম ৩৫ হতে এখনো আমাদের আরোও ১৫ বছর বাকী। ওরে বাবা। এত জ্ঞান কোথা থেকে পায়? আরেকটা বিশেষ শাখায় খুব জ্ঞান ছিল তার। তা হলো সিনামে জগৎ। সিনেমার নায়ক,নায়িকা, শহরের কোথায় যায়, কখন যায়, কার সাথে রাত্রিযাপন করে - এ সব খবরাখবর তার কাছে থাকতো।
পসারিণী যেমন লক্ষ্য রাখে তার পসারখানা কোন খদ্দেরের কাছে গেল, সেরকম এই জগতের পসারিণীরাও খোঁজ রাখতো শহরের কোন সুন্দরী আজ কোন খদ্দের জুটালো। রত্নার মা স্বামী পরিত্যক্তা। তৃতীয় কন্যা সন্তানটি জন্ম হয়েছিল হয়তো স্বামীর সাথে সম্পর্ক টিকাবার নিমিত্তে। কিন্তু সফলতা আসেনি। রত্না এভাবে কখনো বলেনি। শুধু বলতো তার বাবা ব্যবসার কাজে আজ সিংগাপুর কাল ব্যাংকক করে বেড়ায়, তার মায়ের কোন খেয়ালই রাখতে পারে না। ধনাঢ্য পাড়ায় বাসা ভাড়া নিতে গেলেও এই গল্পটিই তারা সবসময় চালু রাখতো। উচ্চবিত্তদের মত সমান সমান ঠাঁট দেখাতে পারলে বড় বোনটির জন্য ভাল প্রস্তাব আসবে এই ভেবে তাদের টোপ সবসময় কথার ফুলঝুরিতে পরিপূর্ণ থাকতো। যদিও আসল কথা না বললেও আমি অন্যদের কাছে শুনেছি রত্নার বাবার পাটের ব্যাবসা ছিল আদুপট্টিতে। কিন্তু পট্টি থেকে দূরে সরে এসে তারা নতুন পরিচয়ে এখন আবির্ভুত হতে চাইছে । সমাজের সেই সকল লোকদের সাথে উঠতে বসতে চায়, যাদেরকে তারা অধিকতর অভিজাত ও সভ্য মনে করে। কথাবার্তা, চাল চলন আর কথার চাকচিক্যে বাড়িওয়ালারা তাদের সমাদর করেই বাড়ি ভাড়া দিত। প্রতিবেশীরাও মাথা ঘামাতো না । অভিজাত পাড়ায় তো আবার কেউ কারো খবর রাখে না।
তার সবচেয়ে বড় বোনটির নাম মালা। মালা আপার ভাল প্রস্তাব এলো একদিন। গৃহকর্মে মালা আপা সুনিপুণা। আংটি পরানোর দিনে মালা আপার জন্য একটা বিশাল বড় সিংহাসনে কিনে আনা হলো। রাণীর মত বসানো হবে তাকে যখন আংটি পরাবে পাত্রপক্ষ। এটাই তার মায়ের ইচ্ছা। বাড়ির বড় মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন। কত না উতকন্ঠা মায়ের। বাবার অনুপস্থিতি সবসময়ই পীড়া দিচ্ছে পুরো পরিবারকে। কিন্তু সমস্যা হলোনা তেমন একটা। ডাকসাইটে মামারা আছে পাশে। খরচপাতি থেকে শুরু করে যা লাগে সব দিবেন তারা।
গায়ে হলুদে আমরা বাড়ির সকলেই আমন্ত্রিত হলাম। কারণ স্বর্ণা নাম তাদের খুব জানা । একসংগে চলাফেরা করি বলেই বাড়ির সকলে চেনে আমার নামটি। একবার মালা আপা আমাকে দেখতে চেয়ে বাড়িতে এনেওছিল । উনি একটু বড় তো আমাদের থেকে । বুঝে অনেক কিছু বেশী। তাই কি বুঝেছিল কে জানে। আমায় দেখে তার বোনটিকে বলেছিল, ‘তোমার বন্ধু, এই স্বর্ণা মেয়েটি কিন্তু দেখতে সুন্দর আছে।’
ওরে বাবা!
যাই হোক গায়ে হলুদের দিনে তাদের বাড়ীতে যেয়ে দেখলাম, মালা আপার পরিবারের বয়োঃজেষ্ঠ্যা মাতামহী অর্থাৎ তার নানী বসে আছে অন্দর মহলে। দেখেই মনে হলো চারিদিকে যেন দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ছে তার শরীর থেকে। কি সুন্দর হাসিমুখ। ঘরটা যেন আলোয় ভরা। দুধে আলতা গায়ের রঙ। আজও যেন সমগ্র শরীর ভয়ংকর ভাবে কামনায় ভরপুর ।
এই ব্যক্তিত্ব যেন খুব চেনা।
কিন্তু কিভাবে?
আমার জীবনের গন্ডী তো খুব সংকীর্ণ। কলেজ থেকে বাড়ি আর বাড়ী থেকে কলেজ। বাস্তবতার সাথে তেমন ক্রিয়া বিক্রিয়া নাই। বড় পরিবারে থেকে বিভিন্ন কিসিমের মানুষ দেখেও বড় হয়নি। সেই ১৯/২০ বছর বয়সে আমি এত কিছু জানবো কিভাবে? বিশেষ করে গণিকাদের কথা, তাদের বাড়িঘরের সাজসজ্জার কথা। মালা আপার মাতামহীর বসার ভঙ্গিমা, বিশেষ করে আসন পেতে বসার ভঙ্গিমা যেন বলে দিচ্ছে রংমহলের সর্দারনি বসে আছেন মধ্যমণি হয়ে। তার মাংশল শরীরের প্রতিটি কণা যেন কামনার আবেগে ভরপুর । শরীর থেকে যৌন আবেগের তীরগুলো ছিটকে ছিটকে পড়ছে কোন এক রাজ দরবারের অন্দর মহলের জলসাঘরে। সেই পুরো রঙ্গমহল আজ তার চ্ছ্বটায় আলোকিত।
সর্দারনী,তার চোখের ইশারায় যেমন পুরো জলসাঘর পরিচালনা করেন, বাঈজীদের একতাবদ্ধ হয়ে নৃত্য, গীত পরিবেশনায় অংশগ্রহন করার নির্দেশ দেন, কোন অতিথিকে কিভাবে তীরবিদ্ধ করতে হবে তার বুদ্ধি, পরামর্শ সময়মতো চালান করেন - এসকল গুণ নিয়েই যেন মাতামহী তার ব্যক্তিত্বের চ্ছ্বটায় সেস্থানে উপবিষ্ট হয়ে আছেন। এ ঘর যেন মাতামহীর উপস্থিতিতে, মোহময়তার আবেশে আবিষ্ট হয়ে এক স্বপ্নপুরী হয়ে উঠেছে। এ কামময় ভাব, তার অন্তর্নিহিত। প্রকৃতি প্রদত্ত। আর তাই শারিরীক মোহময়তা স্বাভাবিক ভাবেই এভাবের সৃষ্টি করেছে।
আবার এও শুনেছিলাম মাতামহীর কন্যা মানে রত্নার মা-ও তার এই মধ্যবয়সে একজন আনন্দ বিকানোতে পারদর্শী কাম - পসারিণী। সেদিন বুঝলাম তার ময়ের এই খাসিয়াৎ বা বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মাতামহীর থেকেই উত্তরাধিকার সূত্র প্রাপ্ত। তাই তীব্র চাহিদার সামনে বোধহয় রত্নার মায়ের স্বামী প্রবরটি টিকতে পারেন নি। ধূলিসাৎ হয়েই স্বামীই গৃহত্যাগ করেছেন।
রত্নার মা তার শারিরীক সৌন্দর্য আর মনোরঞ্জন করবার শক্তি দিয়ে বহু মানুষের একাকীত্ব ঘুচিয়ে থাকেন বিনিময়ে নিজের একাকীত্বও পূর্ণ করেন। তাই মালা, রত্নার মা আর মাতামহীকে দেখে সেদিন উপলব্ধি করলাম, শুধু অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণেই দেহ পসারিণীর কাজে নারীরা লিপ্ত হয়না। তারা এ কর্মে লিপ্ত হতে পারে তাদের ব্যক্তিত্বের মাঝে লুক্কায়িত যে কামনা শক্তি বিশেষ ভাবে সদা জাগ্রতমান এবং সর্বদাই অপরকে আকর্ষণে ক্রিয়াশীল, তারই অনুরণন, আবেগ আর ইচ্ছার ফলে। দেহকে পসার বানাতে তারা বাধ্য করেনা, দেহ নিজেই পসারে রূপান্তরিত হয়। নারীরা যখন সেই তীব্র কাম শক্তিতে ভাবায়িত হয়, খদ্দেররা তখনই সেই নারীর প্রতি লালায়িত হয়। সেই নারী বারবণিতা নয়, সে তখন রূপোপজীবিনী নয়, সে দেহপসারিণী নয়; সে শুধু নিজেকে পরিতৃপ্ত করা, আর অপরকে সন্তুষ্ট করার এক মাধ্যম মাত্র।
মালা আপা এই লাইনে আসতে পারেনি সেই একই কারণ। রত্নার আদলে তার শরীর গড়া। খদ্দের আকৃষ্ট করার ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলী কোনটিই নেই। কিন্তু একটা কথা সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম যে, কামাতুর ব্যক্তিত্বের চ্ছ্বটা যার চোখে পড়ার পড়বেই। খদ্দের আপনা আপনি সেখানে আবির্ভুত হবে। কামিনীর বাস্তবতা তার জীবনে এরূপেই স্পষ্ট হবে। সে হবে কাম- বিকানি। অভাবের তাড়নায় তাকে রাস্তায় নামতে হবে না। না হবে কোন অর্থকড়ির লেনদেন। পেশা নয়, শুধু শখ। এ শখ থেকেই দেহ দানের কাজে লিপ্ত হবে সেই সকল পসারিণীগণ। তারা বেশ্যা নয়, রূপোপজীবিনী। তাদের ব্যতিক্রমী ও অস্বাভাবিক কামে ভরা শারিরীক আবেদন, মারাত্মক সৌন্দর্যের তীব্র আবহ তাদের চারপাশে যে ভাবনার নিঃসরণ ঘটাবে, তাই- ই তাদের নিজেদেরকে বেশ্যবৃত্তিতে সমর্পণ করাবে।
প্রকৃতিই নির্ধারিত করে দেয় কে সেই নারী, যার শরীরর প্রতিটি কণা কামনার তীর দিয়ে ছিটকে পড়ার জন্য ভরা থাকে। মালা আপার অশীতিপর মাতামহীও প্রকৃতির এ নির্বাচন থেকে বাদ যান নি। তার অঙ্গভঙ্গী, বসার ভঙ্গিমা, মন ভরানো হাসি জানান দিয়েছে তার ফেলে আসা যৌবনের কাম জাগানিয়া শক্তি আজও তার মাঝে জাগ্রত। জন্ম জন্মান্তরে এরা কাম বিকোবে। ক্লান্তিহীন ভাবে।

২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৯
হুমায়রা হারুন বলেছেন: আপনার সাইন্স ফিকশান দুর্দান্ত।
২|
২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: নারীর শারিরীক গঠন বলে দেয়
সে পুরুষ আকৃষ্ট করার জন্য তৈরী থাকে,
বা যাদের এই গুন নাই ,তাহারা কৃত্রিম সাজ সজ্জা করে
পুরুষকে আকৃষ্ট করার খেলায় নামে ।
................................................................................
প্রকৃত অর্থে,
সব নারী যেমন এই পথে হাঁটেনা
তেমনি বহু পুরুষ নারীর এই কার্যক্রম পসন্দ করেনা ।
................................................................................
যে নারী নৈতিক ভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে সমাজ তাকে পতিতা বলে
কি ন্ত যে নারী শুধূ তার স্বামীর অধি কার সমূহ রক্ষা করে না
তাকে আমরা কি বলব ???
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪১
হুমায়রা হারুন বলেছেন: @ স্বপ্নের শংখচিল 'যে নারী নৈতিক ভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে সমাজ তাকে পতিতা বলে কিন্তু যে নারী শুধু তার স্বামীর অধিকার সমূহ রক্ষা করে না তাকে আমরা কি বলব ???'
-- অবাধ্য নারী বলা যায়। কারণ বাধ্য নারীর প্রতিশব্দ পতিব্রতা। কিন্তু অবাধ্য নারীর প্রতিশব্দ পাচ্ছি না ভেবে।
৩|
৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০১
হুমায়রা হারুন বলেছেন:
বাধ্য স্ত্রী
প্রাচীন পুরাণ অনুযায়ী “বাধ্য স্ত্রী” বা অনুগত স্ত্রীর ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক ছিল। হিন্দু পুরাণ, বিশেষ করে মনুস্মৃতি, রামায়ণ, মহাভারত, এবং পুরাণসমূহে এমন নারীর প্রশংসা করা হয়েছে যিনি স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত, শ্রদ্ধাশীল, ধর্মপরায়ণা ও কর্তব্যনিষ্ঠা প্রদর্শন করেন।
‘বাধ্য স্ত্রী’ মানে কী (পুরাণ অনুসারে):
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে “বাধ্য স্ত্রী” বলতে বোঝায় এমন নারী—
যিনি স্বামীকে ঈশ্বরের সমতুল্য সম্মান দেন,
তার আদেশ মান্য করেন,
এবং সংসার ও ধর্ম রক্ষার জন্য নিজের ইচ্ছা ও স্বার্থ ত্যাগ করেন।
মনুস্মৃতিতে স্ত্রীর কর্তব্যঃ
“যে নারী তার স্বামীকে দেবতার মতো সম্মান করে,
সে এই জীবনেই স্বর্গ লাভ করে।”
— (মনুস্মৃতি, অধ্যায় ৫, শ্লোক ১৫৫–১৬০)
এখানে স্ত্রীকে বলা হয়েছে, স্বামীই তার জন্য “পতি-দেবতা”।
তাকে শ্রদ্ধা করা, যত্ন নেওয়া, ও সেবা করা — স্ত্রীর ধর্ম হিসেবে ধরা হয়েছে।
রামায়ণে উদাহরণঃ
সীতা দেবী বাধ্য স্ত্রীর সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
তিনি রামচন্দ্রের আদেশে বনবাসে গিয়েছিলেন,
সব কষ্ট সহ্য করেও স্বামীর প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত ছিলেন।
তাকে বলা হয়েছিল “পতিব্রতা নায়িকা” — অর্থাৎ স্বামীভক্তা স্ত্রী।
মহাভারতে দৃষ্টান্তঃ
সত্যবতী, দময়ন্তী, সাবিত্রী প্রমুখ নারীদের কাহিনিতেও
স্ত্রীর আনুগত্য, সতীত্ব, ও আত্মত্যাগের মহান উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশেষত, সাবিত্রী তার স্বামী সত্যবানের প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য যমের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন — যা এক “আদর্শ স্ত্রী”র প্রতীক হয়ে আছে।
পুরাণে বাধ্য স্ত্রীর গুণাবলিঃ
স্বামীকে ঈশ্বররূপে মানা।
সংসার ও ধর্ম রক্ষায় নিবেদিত থাকা।
স্বামীর আনন্দ ও দুঃখে সমানভাবে পাশে থাকা।
নিজের ইচ্ছার উপরে স্বামীর কর্তব্য ও ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া।
সতীত্ব, নম্রতা ও ধৈর্য ধারণ করা।
সার সংক্ষেপঃ
প্রাচীন পুরাণে “বাধ্য স্ত্রী” হলো —
একজন সতী, পতিব্রতা ও ধর্মনিষ্ঠ নারী,
যিনি স্বামীর প্রতি অবিচল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
৪|
৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৩
হুমায়রা হারুন বলেছেন:
১.অবাধ্য স্ত্রী
২.অহল্যা দেবীর কাহিনী
১. অবাধ্য স্ত্রী
প্রাচীন পুরাণ ও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে “অবাধ্য স্ত্রী” — এমন এক নারীর প্রতীক যিনি স্বামীর আদেশ, কর্তব্য, ও ধর্মীয় নিয়ম অমান্য করেন। এই ধারণাটি প্রাচীন সমাজে গভীর নৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করত, কারণ স্ত্রীকে তখন শুধু সংসারের সহধর্মিণী নয়, বরং ধর্মরক্ষার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে দেখা হতো।
অবাধ্য স্ত্রীর সংজ্ঞা (পুরাণ অনুসারে)
“অবাধ্য স্ত্রী” বা “অপতিব্রতা” স্ত্রী বলতে বোঝানো হয়েছে সেই নারীকে —
যিনি স্বামীকে ঈশ্বররূপে মানেন না,
তার প্রতি অবিশ্বস্ত বা অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করেন, এবং
ধর্ম,সংসার বা সতীত্বের পথ থেকে বিচ্যুত হন।
মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে —
“যে নারী স্বামীর আদেশ অমান্য করে,
যে স্বামীর ধর্ম অনুসরণ করে না,
সে এ জন্মে লাঞ্ছিত হয় এবং পরজন্মে নরকে পতিত হয়।”
— মনুস্মৃতি ৫/১৬৪
অবাধ্য স্ত্রীর বৈশিষ্ট্যঃ
পুরাণ ও স্মৃতিশাস্ত্রে অবাধ্য স্ত্রীর কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, যেমনঃ
স্বামীকে অসম্মান করা বা তার আদেশ অমান্য করা।
অপর পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা অবিশ্বাসী হওয়া।
সংসারের কাজ ও কর্তব্যে উদাসীন থাকা।
ধর্মীয় আচরণে অবহেলা করা।
রাগ, অহংকার ও অলসতায় ভোগা।
পুরাণে অবাধ্য স্ত্রীর উদাহরণ
১. অহল্যা (রামায়ণ):
অহল্যা ঋষি গৌতমের স্ত্রী ছিলেন। ইন্দ্র দেবতার প্ররোচনায় তিনি প্রতারিত হন। এর ফলে গৌতম ঋষি তাকে অভিশাপ দেন — তিনি পাথরে পরিণত হন। এই কাহিনির মাধ্যমে সতীত্ব ভঙ্গ ও অবাধ্যতার ফল হিসেবে অপমান ও অভিশাপের দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
২. পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী (মহাভারতে):
যদিও দ্রৌপদী ছিলেন মহীয়সী ও ধর্মনিষ্ঠা নারী, তবুও কখনো কখনো স্বামীর আদেশ অমান্য করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা প্রাচীন ব্যাখ্যায় “নারীর অতিরিক্ত যুক্তিবাদিতা বা অবাধ্যতা” হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে দ্রৌপদীর চরিত্রকে সাধারণত ন্যায় ও ধর্মের পক্ষে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
৩. সুরভি ও চিত্রাঙ্গদার মতো উদাহরণ (বিভিন্ন পুরাণে):
কিছু কাহিনিতে দেব বা রাজাদের স্ত্রীরা অহংকার বা কামনায় বিভ্রান্ত হয়ে স্বামীকে অবমাননা করেন, ফলে তারা অভিশপ্ত হন বা স্বর্গ থেকে পতিত হন — যা “অবাধ্য স্ত্রীর ফল” হিসেবে বর্ণিত।
ধর্মীয় ও সামাজিক বার্তা
প্রাচীন পুরাণের উদ্দেশ্য ছিল নারীদের দমন নয়, বরং সংসার ও ধর্মের ভারসাম্য রক্ষা করা। এখানে “অবাধ্য স্ত্রী”র কাহিনিগুলো ছিল সতর্কবাণীস্বরূপ — যাতে পরিবারে ধর্ম, সতীত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্য অক্ষুণ্ণ থাকে।
সার সংক্ষেপ
বাধ্য স্ত্রী চরিত্রঃ অনুগত, সতী, পতিব্রতা
অবাধ্য স্ত্রী চরিত্রঃ অহংকারী, অবিশ্বস্ত, স্বামীর আদেশ অমান্যকারী
ফলাফলঃ স্বর্গলাভ, সম্মান,লজ্জা, অভিশাপ, নরকগমন
উদাহরণঃ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী অহল্যা, চিত্রাঙ্গদা
২.অহল্যা দেবীর কাহিনি
— অবাধ্যতার প্রতীক থেকে মুক্তির প্রতীক পর্যন্ত
অহল্যার পরিচয়ঃ
অহল্যা ছিলেন মহর্ষি গৌতম ঋষির পত্নী — এক অতুল সুন্দর, বুদ্ধিমতী ও তপস্বিনী নারী। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা নিজে তাকে সৃষ্টি করেছিলেন দেবতাদের মধ্যেও অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে। ব্রহ্মা অহল্যাকে গৌতম ঋষির সঙ্গে বিবাহ দেন, কারণ গৌতম ছিলেন একান্ত ধার্মিক, তপস্যাশীল ও পবিত্রচিত্ত ঋষি।
ইন্দ্রের প্রলোভন ও অহল্যার পরীক্ষাঃ
একদিন ইন্দ্র দেবতা অহল্যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রলুব্ধ করার ইচ্ছা করেন। গৌতম ঋষি প্রতিদিন ভোরে নদীতে স্নান করতে যেতেন। ইন্দ্র সেই সুযোগে গৌতমের রূপ ধারণ করে অহল্যার কুটিরে প্রবেশ করেন।অহল্যা প্রথমে কিছুটা সন্দেহ করলেও, ইন্দ্রের চতুর কৌশলে তিনি প্রতারিত হন। কিছু পুরাণ মতে, অহল্যা বুঝতে পেরেছিলেন এটি ইন্দ্র, কিন্তু কৌতূহল ও অহংকারবশত নীরব থাকেন — এই জায়গাটিতেই তাঁর “অবাধ্যতা” বা “নুশূজ” প্রকাশ পায়, কারণ তিনি স্বামীর প্রতি সতীত্বের নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন।
গৌতম ঋষির অভিশাপঃ
গৌতম ঋষি তপস্যা শেষে ফিরে এসে সত্য জানতে পারেন। তিনি ক্রোধে ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন — “তোমার পুরুষত্ব নষ্ট হোক!” এবং অহল্যাকে বলেন — “তুমি মায়া ও কামনায় বিভ্রান্ত হয়েছ। তাই তুমি পাথরে পরিণত হবে, যতদিন না রামচন্দ্র তোমার উপর পদার্পণ করবেন।” অহল্যা তৎক্ষণাৎ পাথরে পরিণত হন এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধৈর্যসহ সেই শাস্তি ভোগ করেন।
রামচন্দ্রের আগমন ও মুক্তিঃ
অনেক যুগ পরে রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণ ঋষি বিশ্বামিত্রের সঙ্গে তপোবনে প্রবেশ করেন। তারা সেই স্থানে পৌঁছান যেখানে অহল্যা পাথর হয়ে ছিলেন। রামচন্দ্র তাঁর পায়ের স্পর্শে অহল্যাকে পুনর্জীবিত করেন। তখন অহল্যা গভীর অনুতাপ প্রকাশ করে বলেন — “আমি কামনা ও বিভ্রান্তির কারণে স্বামীর কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়েছিলাম, প্রভু, আপনি আমাকে মুক্ত করেছেন।”
এভাবে অহল্যা অবাধ্যতার প্রতীক থেকে ক্ষমা, শুদ্ধতা ও মুক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন।
ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাঃ
১. অহংকার ও প্রলোভন থেকে সাবধান থাকা উচিত।
২. ভুল স্বীকার ও অনুতাপ মানুষকে মুক্তির পথ দেখায়।
৩. নারী বা পুরুষ — উভয়ের জন্য সতীত্ব, সংযম ও ধর্মনিষ্ঠা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ঈশ্বরের করুণা ও অনুতাপের শক্তি পাপ থেকেও পরিশুদ্ধি এনে দেয়।
অহল্যাঃ এক বহুমাত্রিক প্রতীক
দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যাঃ
নৈতিক দৃষ্টিতে অবাধ্য স্ত্রীর উদাহরণঃ যিনি প্রলোভনে পরাজিত হন।
আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে অবাধ্য স্ত্রীর উদাহরণঃ পাপের পর শুদ্ধতার প্রতীক; অনুতাপ ও ক্ষমার বার্তা।
নারীবাদী ব্যাখ্যায় (আধুনিক দৃষ্টিকোণ)অবাধ্য স্ত্রীর উদাহরণঃ তিনি সমাজের শাস্তির শিকার, যিনি শেষে নিজের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেন।
উপসংহার
অহল্যার কাহিনি কেবল “অবাধ্য স্ত্রীর শাস্তি” নয়, বরং মানবীয় ভুল, অনুতাপ ও ঈশ্বরের করুণার এক চিরন্তন শিক্ষা।
তিনি একদিকে সতর্কবার্তা — আবার অন্যদিকে মুক্তির আলোকবর্তিকা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৭
জায়েদ হোসাইন লাকী বলেছেন: চমৎকার একটি লেখা। লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।