নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সীমাহীন

হুমায়রা হারুন

এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে / আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে

হুমায়রা হারুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রফেসর চিবানীচন্দর

০৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৫



তখন সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল এক্সাম হয়ে গেছে। ল্যাব প্রাক্টিক্যাল এক্সামও হয়ে গেছে। এখন ল্যাবের ভাইভা এক্সাম শুরু হয়েছে। একে একে করে শীলাদেরকে ডাকছে। শীলারা ভাইভা-র টেবিলে যাচ্ছে। বসছে। টেবিলে ছাত্রের মুখোমুখি আছেন ইন্টারনাল। পাশে এক্সটার্নাল। এবার শীলার পালা। সেকেন্ড ইয়ারে যিনি শীলাদের ল্যাবের টিচার ছিলেন সেই ভদ্রলোক শীলার রোল ডাকলেন। শীলা গেল। ইন্টারনালের সামনে বসল। পাশে শীলাদের এক্সটারনাল ছিলেন। উনি হয়তোবা পাশের ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছিলেন। শীলা তো আর ওনাকে চিনে না। সবাই যা বললো, তা হলো, এক্সটার্নাল শীলাদের পাশের ডিপার্টমেন্টের।শুনে তার মনে হলো, তাও ভালো যে পাশের ডিপার্ট্মেন্টের, অনেক দূর থেকে আসা কেউ তো নয়।

তারপর প্রশ্ন পর্ব শুরু হলো। ইন্টার্নাল শীলাকে প্রশ্ন করা শুরু করলেন এবং প্রশ্নের উত্তর যখন শীলা দিতে পারছিল না, ইন্টারনাল খুব কটাক্ষ শুরু করলেন। ফোঁসফোঁস করে উঠলেন। চিবিয়ে চিবিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগলেন, 'এটা জানো না, তো কি জান?' তখন অপর প্রফেসার যিনি কিনা এক্সটার্নাল, মানে বাইরে থেকে আসা, তিনি শীলাকে সাপোর্ট দিয়ে বললেন যে, 'না, ও যেটা বলেছে সেটা তো এভাবে করে বলেছে.. ঠিকই আছে..।

ঘটনাটা যা হলো তা এরকম যে, শীলার এক্সটার্নাল শীলাকে সাপোর্ট দিচ্ছে আর ইন্টার্নাল তার নিজের ছাত্রীকে ভাগিয়ে দিতে চাইছে। তেড়ে মেরে আক্রমণ করতে আসছে। শীলা বিষয়টাকে বেশ অবাক হয়ে উপভোগ করছিল। প্রশ্ন উত্তর দিতে পারছিল না, কারণ সেভাবে করে বিষয়বস্তু শীলা তখনো শিখেনি বা শিখবার মতো জ্ঞানী হতে পারেনি। ইন্টার্নাল চিবিয়ে চিবিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বারে বারে বলছেন এক্সটার্নালের সামনে, 'এটা জানো না , তাহলে কি জানো? আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে, দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চোয়ালের প্রতিটা চিবানিতে, যেভাবে কথাগুলো ওনার মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল তাতে স্পষ্ট ভাবেই তার ক্রোধ, ঘৃণা ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে শীলার উপর চাবুকের মত শপাং শপাং করে পড়ছিল। স্বভাবে লোকটি একটু সাইকোপ্যাথ। ভালো কিছু ভাবতে পারেনা। চিবিয়ে চিবিয়ে মুখ থেকে কথা বের করে। আর তাতে সে খুব আরাম পায়।

সে সময় শীলাদের একটা ম্যাডাম ছিলেন, 'ব্যারিস্টার কাম সাইন্টিস্ট' বলা হতো তাকে। শীলা চিনত না তখন। পরে জেনেছে যে, ব্যারিস্টার হবার সখ ছিল সেই ম্যাডামের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তিনি আজ সায়েন্টিস্ট হয়ে গেছেন!
যে প্রসংগে সেই ম্যাডামের কথার অবতারণা তা বেশ অদ্ভুত। সেই ম্যাডাম হঠাৎ-ই যেন কোথা হতে চিলের মতো এসে হাজির হলেন ভাইভা বোর্ডে। তারপর হন্তদন্ত হয়ে চেয়ারটা টেনে শীলার পাশে ধপাশ করে বসে পড়লেন।
যেন কি জানি কি হচ্ছে এখানে!
তার কিছু একটা মিস্ হয়ে যাচ্ছে! এখনই দেখতে হবে। তাই এত হন্তদন্ত।
কি মিস্ হয়ে যাচ্ছে?
কি সেটা?
আর শীলার এক্সামের সময়েই কেন?
এখানে তার কি?
কি দেখতে চায়?
শীলা কি আইন্সটাইনের লেভেলের ভাইভা দিচ্ছে?
তার এত আগ্রহ কিসের? শীলার ভাইভা এক্সামটা কেমন হচ্ছে, এটা জানার খুব ইচ্ছা হচ্ছে তার ? কিন্তু কেন?
শীলা তাকাল ওনার দিকে। আবারো মনে প্রশ্ন এলো। সে শীলাকে চিনে কিভাবে?
শীলা তো তার লেকচার ক্লাশ কখনো পায় নি। তাকে ভাল চিনেও না। স্বভাবে বদ, নাকি ভদ্র - তাও জানে না। চেহারার দিকে কোনদিন তাকায়ও নাই, যে তাকে অ্যানালাইসিস করবে। এতদিন যাবৎ এই মহিলার সংস্পর্শে শীলার কোনভাবেই আসা হয়নি। অথচ তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে শীলাকে খুব ভালভাবে চিনেন উনি।
ওরে বাবা!
তখন মোবাইল ফোনের যুগ ছিল না। সে যে কোথাও থেকে টেক্সেট ম্যাসেজ পেয়ে চলে এসেছে তা-ও না। তাহলে এই মহিলা কোথা হতে উড়ে এলো আর কেন চেয়ার টেনে বসে পড়লো শীলার ঘাড় ঘেঁষে?
তার এখনই বা আসতে হলো কেন?
পরীক্ষা চলাকালীন ল্যাবের কোনা-কানিতেও সে অবস্থান করছিল না। শীলার চোখে পড়েনি। কিছু টিচার আছেন, যারা প্রয়োজন না থাকলেও অন্যের ল্যাবে এসে বসে থাকেন, গল্প করে সময় কাটান। কিন্তু এমন অবস্থা সেদিন ছিল না। সেদিন সাধারণ ল্যাব ক্লাশ চলছিল না। সেদিন ইয়ার ফাইনালের ল্যাব -ভাইভা এক্সাম হচ্ছিল।
আবারো ভাবল শীলা তার দিকে তাকিয়ে, কোথা হতে উড়ে এলো এই মহিলা?
ভূত না তো!
আবার ধ্যার ধ্যার করে চেয়ার টেনে বসেও পড়লো। নাকি ইন্টার্নালের সাথে আত্মার যোগাযোগ আছে। দুই বিকৃত, বিকারগ্রস্ত যখন একত্র হয়, তারা মিলেমিশে প্রতিপক্ষকে একটু বেশী জোর দিয়ে বাঁশ দিতে পারে । ইনিও কি এসেছেন বাঁশ কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে? কেন প্রতিপক্ষ ভাবছে শীলাকে। কেনই বা শীলা তাদের প্রতিপক্ষ হতে যাব? তারা শীলার গুরুজন, কত বয়স্ক, অন্তত শীলার থেকে দ্বিগুণ বয়সের তো হবেই। শীলা ভাবলো পেট ভরা হিংসা এই বয়সেও থাকে নাকি ছোটদের প্রতি?
আজ এত দিন পরও এসব প্রশ্ন জাগে মনে।
শীলা ক্লাশে কোনদিন ফার্স্ট তো হয়ই নাই, বা ফার্স্ট যারা হয় তাদের মতো, টিচারদের পিছন পিছন ঘুর ঘুর করে টিচারদের ধামাও ধরে নাই। শিক্ষক, শিক্ষিকারা কে কিরকম বদ স্বভাবের তা চিন্তায়ও আনে নাই। কিন্তু তাদের নীচু মানসিকতা আর বিশ্রী কর্মকান্ড দিয়েই তারা এগুলো ভাবাতে শিখিয়েছে শীলাদের।

সালাম দিলে যে উত্তর দিতে হয় না, তুচ্ছজ্ঞান করতে হয় এও কিন্তু তাদের কাছ থেকেই তার শেখা। তাদের দেখে শিখেছে। আগে জানত না শীলা।
ম্যাডাম বসলো যখন শীলার আর এক্সটার্নালের মাঝে শীলা লক্ষ্য করলো তাকে। শীলার ভাইভা-র উত্তরগুলো টেবিলে ঝুঁকে গালে হাত রেখে, খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করছেন মহিলা। চোয়াল চিবানি ইন্টার্নালের ধমক আর বাজে মন্তব্য শুনে মাথা নাড়িয়ে স্যারকে সায়ও দিচ্ছেন। তার হাবভাব দেখে মনে হলো, সে পুরো সাবজেক্টটা যেন শিখার জন্য আর বুঝে নেবার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু ওখানে তো লেকচার ক্লাশ হচ্ছে না বা শীলা কোন বিষয় উপস্থাপন করছে না। সেদিন প্র্যাকটিকাল পরীক্ষার বিষয় ছিল ইলেকট্রনিক্স আর অপটিক্স। শীলাকে ইলেকট্রনিক্সের ওপরই প্রশ্ন করা হয়েছে বেশী তবে অপটিক্স -ও কম যায়নি ।

ইন্টারনাল তো চিবাতে চিবাতে তার কুতসিৎ অভিব্যক্তি দিয়ে শীলাকে শেষে আরেকবার ধমক দিল। মনে হয় তার সব ঘৃণার বোঝা ঝেড়ে ফেলে চোয়াল চিবিয়ে একটু হালকা হলো। সাথে সাথে একটা বিকৃত ধরণের তৃপ্তি অনুভব করলো।
শীলার ভাইভা শেষ হয়ে গেল। শীলা ল্যাবের বাইরে এসে দাঁড়াল। ভাবল, ইন্টার্নাল যেরকম ধমক দিয়েছে, হয়তোবা এই ভাইভাতে সে পাশ করবো না। ফেল নিশ্চিত। আর তা হলে গোটা ইয়ার -ফাইনাল ফেল হয়ে যাবে।

যেহেতু সেকেন্ড ইয়ার ল্যাব অনেক উন্মুক্ত স্থান জুড়ে নির্মিত আর ওই সাইডে বিশাল বড় উন্মুক্ত বারান্দা, শীলা সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। গালি হজম নয়, শিক্ষকদের ভাব হজম করতে।
দাঁড়িয়ে থেকে ভাইভা টেবিলের সামনের আসনগুলোতে, যেখানে বয়স্ক বয়স্ক শীলাদের গুরুজনেরা উপবিষ্ট ছিলেন, সেইদিকে তাকিয়ে তাদের দেখছিল আর ভাবছিলঃ
-এমন কেন এরা?
-এভাবে আচরণ করে কেন?
কিছুই সে বুঝে উঠতে পারছিল না।
কেন তার সাথে এরা দুর্ব্যবহার করল, শীলা বারবার প্রশ্ন করছিলা নিজেকে। বারবার। যেহেতু বিষয়বস্তু শীলা ঠিকমত উত্তর দিতে পারেনি সেজন্য কাউকে এত অবমাননা করতে হয় নাকি? চরম দুর্ব্যবহার করলে কি কেউ বিষয়বস্তু জেনে ফেলতে পারে? নাকি, না জানলে তার দিকে এভাবে তেড়ে আসতে হয়?
কত ইনোসেন্ট প্রশ্ন!
কত সরল চিন্তা!
ছোট ছিল বলেই তো?
শীলা বুঝে নাই যে সে সাপের ঝাঁপিতে পড়েছিল। মাত্র উদ্ধার পেয়েছে। আসলে বস্তির কালচার এর আগ পর্যন্ত সে দেখিনি কোথাও। ডিপার্টমেন্টেও ও না, বাইরেও না । অত কম বয়সের কারণে শীলা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না তার শিক্ষকদের ব্যবহারের মাথামন্ডু। তাদের ব্যবহারে শীলা যত না আহত হয়েছে, তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে ! এবং এখন পর্যন্ত ভাবলে শীলা অবাক হয়।

কয়েকবছর পর শীলাদের সেই ইন্টার্নাল, প্রফেসর চিবানীচন্দর -এর লেকচার ক্লাশ পেল। তখন সিনিয়র হয়েছে তারা। অনার্স শেষ।
খেয়াল করে দেখল, লেকচার দেবার সময়েও তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে শব্দগুলোকে দাঁতে দাঁত দিয়ে পিষে পিষে কথা বলতে পছন্দ করেন। সূক্ষ্ম একটা বিকৃত ভাব তার চোখেমুখে প্রকাশ পায় প্রতিটা চিবানিতে। আর তাতেই যেন তার অদ্ভুত এক পরিতৃপ্তি মিলে। হয়তোবা এটা তার পারিপার্শ্বিক সিচুয়েশনকে কন্ট্রোলে নেওয়ার টেকনিক। সে ভাল বোধ করে এতে।

আরো পরের দিকে যখন আরোও সিনিয়ার হল, রিসার্চ ছাত্র ছাত্রীদের কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য ইন্টারভিউ-এর ডাক আসলো। সেই সিলেকশানে কমনওয়েলথ্ স্কলারশিপ দিবে ছেলেমেয়েদেরকে। শীলা যেয়ে দেখে, সেই সিলেকশান বোর্ডে চোয়াল চিবানী কিভাবে যেন ঢুকে বসে আছে। জানে না তাকে কেন রাখা হয়েছিল। এ এক বিস্ময়! কারণ তিনি অনার্স পাশ করেন নি কখনো। তিনি ডিগ্রী পাস কোর্স থেকে পাশ করে এসেছে। তিনি কিভাবে পিএইচডি - র জন্য স্কলার নির্বাচন করবে সে এক বিস্ময় বটে!

তিনি নিজে কি করে ফুল প্রফেসর হয়েছেন তা শীলা জানে না। কিন্তু খুব শক্তিধর না হলে তো আর সব জায়গায় পিছলে-পুছলে ঢুকে পড়া যায় না। নির্ঘাৎ খুব শক্তি ছিল তার। সাপ যখন ফণা তোলে, তার মেরুদন্ডে শক্তি না থাকলে, সে কি মাথা উঁচু করে ফোঁস ফোঁস করতে পারে?

তার ফোঁসফোঁসের রেডিয়াস অনেক বেশী বলেই হয়তোবা তার কন্টাক্ট -ও বেশী। আর জানাশোনা বেশি বলে হয়তো বা সকল প্রতিষ্ঠান তার সাথেই যোগাযোগ করে। তিনি সব কর্মকান্ডে সর্বদা উপস্থিত থাকেন। এ জাতীয় লোক, যাদের সামাজিক লিংক বেশী তারা 'সর্বত্রই বিরাজমান' থাকে মানে অ্যাক্টিভ থাকে। তিনিও তাদের একজন।
স্কলারশিপের জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলে চোয়াল-চিবানী শীলাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'এখন কি করছো?'
শীলা বললঃ এখন রিসার্চ করছি। নেক্সট পিএইচডি- প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগের অপেক্ষায়। রিসার্চটুকু শেষ হলে সে ইংল্যান্ডে পিএইচডি-র জন্য অ্যাপ্লাই করতে চায় । এই স্কলারশিপ শীলার জন্য খুবই সাহায্যকারী হবে।'
কমনওয়েলথ স্কলারশিপের ফান্ডিং ভীষণ ভালো। সেটা চোয়াল চন্দরের ডিপার্টমেন্টের কেউ পেতেই পারে।
কিন্ত শীলা কেন, তাইতো?
তাই, তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে শীলাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি পাবলিকেশন আছে?'
শীলা বলল, 'পাবলিকেশন করবো।' ফার্স্ট ইয়ারের থিওরিটুকু শেষ করেছে। থিওরি শেষ করে রিসার্চের কাজ মাত্র শুরু হয়েছে।
শুনেই ফোঁস করে উঠলো চোয়াল চন্দর। চোখগুলো ঠিকরে ক্রোধ, ঘৃণা ছিটকাতে থাকলো। সাইকোপ্যাথ হলে যা হয়! কারো ভাল কিছু হোক, কারো উপকার হয়ে যাক তাকে দিয়ে এসব বিষয়ে তারা সহ্য করতে পারে না।
বললো,'পাবলিকেশন যদি না থাকে, তাহলে যাও।'
গলার চাপা ফ্যাসফ্যাসে স্বরটা আরো চড়া করে মেজাজী ভাব দেখিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, 'এখন যাও। যাও এখন। পাবলিকেশন করে এসো।'
ওরে বাবা !
এভাবে যখন তিনি মাথা ঝাঁকিয়ে, চোখ গরম করে, মুখের কথাগুলোকে একটা একটা করে চিবিয়ে চিবিয়ে বের করে বললেন, 'যাও এখান থেকে', তখন শীলা আরেক দফা অবাক হল ।
তার যে রাগান্বিত রূপটা শীলা সেকেন্ড ইয়ারে দেখেছিল সেই ল্যাবে, শীলা যেন সেই সময়ে ফিরে গেল। মনে হলো যে, সত্যি মানুষের পরিবর্তন হয় না। বিকৃতি থাকলে স্থান, কাল নির্বিশেষে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। বিকৃত রুচির মানুষটি সব জায়গায়, সব সময় তা দেখাতে থাকবে।
মনে পড়লো শেষের দিকে মাস্টার্সের সময় শীলাদের একটা সাবজেক্ট -এ লেকচার দেবার দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছিল। ক্লাস এর সময় শেষ হলে সময়টাকে লেকচার দিয়ে এমনভাবে দীর্ঘায়িত করত, যেন ঠিক পরের ক্লাসটা শীলারা সময়মত ধরতে না পারে।
এতে তার কেমন যেন বিকৃত এক আনন্দ যে হতো যা, চোখে মুখে তখন প্রকাশ পেত। সে সময়টাতে তার ভাবখানা এরকম হতো যে কিছু একটা সে জয় করেছে। ছাত্রদের এবার চুবাতে পেরেছে। সাথে সেই কোর্স টিচারকেও চিপতে পেরেছে। কারণ দেরী করে ছাড়ার ফলে অর্ধেক ছাত্রই তার ক্লাস পাবে না। বেশি পড়াচ্ছে, বেশি বুঝাচ্ছে এরকম ভাব দেখিয়ে ছাত্রদের পরের ক্লাসে যেতে না দিয়ে ক্ষতি করতে পারলেই তার সফলতা।
তাই শীলাদের অসুবিধা তাকে জানালেও সে প্রতিবার ক্লাসটা দেরি করে শেষ করত। তার কিলবিলে স্বভাবটা বার বার ফণা মেলতো। চেষ্টা করতো এভাবেই সব জায়গায় ইতিহাস স্থাপন করতে। পরবর্তীতে যখন ফাইনাল পরীক্ষার কোশ্চেন সেট করল, কোশ্চেনের মধ্যে প্রথম সারির কিছু প্রশ্ন যেগুলো খুবই কমন, আসবেই, সেগুলো সেট A-তে যায়। তারপরে নেক্সট ইম্পর্টেন্ট কোয়েশ্চেনগুলো সেট B-তে যায়। তিনি সব বাদ দিয়ে শীলাদের পরীক্ষাপত্র সাজালেন সেট -C এর কোয়েশ্চেন দিয়ে। প্রিপারেশন নেবার সময় তো ছাত্ররা মোস্ট ইম্পর্টেন্ট বা ইম্পর্টেন্ট এরকম কোশ্চেন বাদ রেখে আন-ইম্পর্টেন্ট কোশ্চেনের প্রিপারেশন নেয় না। সময় কোথায় ?
পরীক্ষা বলে কথা। পড়েই তো সব শেষ হয় না!
রিভিশান ও দেবার সময় পাওয়া যায় না ।
সেবার সেট -C মার্কা প্রশ্ন পত্রের কারণে পরীক্ষায় শীলাদের সকলের পরীক্ষায় খারাপ নাম্বার উঠেছিল। সবসময় আগে থেকে কিছু কিছু ছাত্র তাদের চ্যানেল দিয়ে কিছু পরিচিত টিচারদের বদৌলতে প্রশ্ন পেয়ে যায়। তাদের কথা বাদ দিলে, শীলাদের সকলের রেজাল্ট তখন খারাপ হলো। শীলারা কেউই খুব ভালো একটা নাম্বার পাইনি। তখন ডিপার্টমেন্ট থেকে তাকে তলব করা হলো। তাকে জবাবদিহি করতে হয়েছিল –তার বিষয়ে ছাত্রদের এরকম বেহাল দশা কেন? সেখানে ফোঁসফোঁসানি দেখিয়েছে কি না শীলা জানে না। এরকম লোকেরা তো আবার খুব চতুর ও ধূর্ত হয়। ওখানে তারা প্রয়োজনে মাফ চেয়ে পা ধরতেও দ্বিধা করে না। এরা যে shape shifter reptilian.
ওনার সবসময় এরকম একটা বাঁকা চিন্তা, বাঁকা মনোভাব এবং বাঁকা কাজ করবার প্রবৃত্তি ছিল বলেই, সে একবার শীলার খুব কাছের এক বন্ধুকে শীলার বিষয় নিয়ে কিছু বলেছিল। শীলার সেই বন্ধু সরাসরি শীলাকে খুলে বলেনি কি বিষয়ে চিবানী চন্দর শীলাকে নিয়ে কথা তুলেছিল। কিন্তু শীলার ওই বন্ধুটি শীলাকে এটুকু জানিয়েছিল যে, 'সে স্যারকে শাট্ (shut) করে দিয়েছি। এবং স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, শীলাকে নিয়ে কোন কথা হবে না।'

এই শাট্ (shut) শব্দটিই উচ্চারণ করেছে শীলার বন্ধুটি। সে শীলাকে বুঝাতে চেয়েছে যে, শীলাকে নিয়ে প্রসঙ্গ উঠানো মাত্রই ওই চোয়াল চন্দরকে সে থামিয়ে দিয়েছিল। তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিল সেদিন, যেন আর একটি কথাও লোকটি শীলাকে নিয়ে বেশি না বলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.