নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯

আজকের আকাশটা অনেক বেশি সুন্দর। নীলা মুগ্ধ হয়ে আকাশ দেখছে -নীল শাড়িতে তাকে দেখাচ্ছে একটা নীল পরীর মত।এখান থেকে পাশ করেছিল প্রায়্ ৭ বছর আগে! আজকে এসেছে শেষ বারের মত একবার ক্লাস রুম গুলো দেখে যাবার জন্য।আজ ছুটির দিন , অল্প কয়েকজন স্টাফ ছাড়া কেউ নেই-শাড়ি পড়ার কারনে মনে হয় কেউ চিনতে পারছে না।অনেক বছর আগে যখন 1st ইয়ারে পড়ত তখন একজন সিনিয়র ভাইয়া বলেছিল নীলা তুমি কি একদিন আমার সামনে নীল শাড়ি পড়ে আমার সাথে দেখা করতে আসবে, আমার হাতে থাকবে কদম ফুল!! ভাইয়ার নাম ছিল অরূপ ।
নীলা একটু অদভুত , সাধারণ মানুষ মিস করে মানুষ , নিলা স্কুল কলেজ আর ইউনিভার্সিটি ছাড়বার পর শুধু এই ক্লাস রুম, করিডোর আর ওর হেঁটে যাওয়া পথ , আর চারুকলা র পথটাকে খুব মিস করত, আসলে মানুষ বদলে যায় , নির্জীব প্রকৃতি আর এই ইট পাঁথরগুলো বদলায় না। নীলা ওদের 1st ইয়ারের ক্লাস এর সামনে দাঁড়িয়ে পরল, প্রথম বন্ধু ছিল নিরব আর পূজা , নিরব তাও আবার একটা মেয়ের নাম !!! এই ২ টা মেয়ের সাথে খিল খিল করে গল্প করত, আর মাঝে মাঝে চারুকলা ছেড়ে এই কঠিন বিষয়ে পড়তে আসার আফসোস করত !!! নীলা ছিল ফেলু স্টুডেন্ট , কিন্তু ওর বন্ধুগুলো ছিল আতেল, পাশ করত সজীবের নোট পরে, নীলা সবার বন্ধু ছিল , কিন্তু নিলার কোন বন্ধু ছিল না, সবার মাঝে থেকেও কেমন একা !
বসন্ত আসলো , নীলা আনমনে কাউকে খুঁজত ,অরুপ ভাইয়া তখন পরে masters , নীলা কে দেখার জন্য অরুপ নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতো , মেঘ কাল করে যখন বৃষ্টি আসতো তখন অরূপ ভাইয়ার মায়াবী চোখে হাড়িয়ে যেতে ইচ্ছা হতো , ঠিক এমন সময় নিলার জন্ডিস হোল , আর ২ মাস পর ক্লাসে আসার পর দেখল অরুপ ভাইয়া মুনা নামে নিলার এক ক্লাস মেটের সাথে খুব বেশি ঘুরাঘুরি করছে, নীলার তখন কেমন জানি লাগত, কিছু একটা হারিয়ে গিয়েছে , কিছু একটা তার জিবনে নেই, পুরনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে নিলা হাসে , সত্যি যদি হারিয়ে জেত !!!
কিন্তু অরুপ কয়েক বছর পর ডিপার্টমেন্টে ফেরত আসলো তাও টিচার হয়ে, ততদিনে মুনার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অন্য কারো সাথে, ঘুরে ফিরে অরুপের একটা ল্যাব ক্লাস পড়লো মাস্টার্সের সাথে মানে নিলার সাথে, যেদিন অরুপ ভাই অরুপ স্যার হল সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছে !!! আবারো সেই মায়াবী চোখ জিবনে ফিরে এল! নিলা কাজল ভালোবাসতো না, কাজল পড়া শুরু করল , অরুপ ফেসবুক এ নীলাকে একদিন নক দিল, তারপর ফোনে আর চ্যাট এ কথা শুরু হল আর নীলা যখন করিডোরে অরুপ কে দেখত ওর অসম্ভব ভাল লাগত, এক সময় ক্লাস শেষ হয়ে গেল, নীলার মনটা এলোমেলো , সেদিন শেষ পরীক্ষা , কার্জন এর বিশাল ভৌতিক সেই রুম থেকে বেড়িয়ে নীলা দেখল আজকের আকাশ টা খুব সুন্দর , সন্ধ্যা ৬ টা বাজে, নীলা একা বসে রইল , অনেকক্ষণ , আস্তে আস্তে সবাই চলে গেল, নীলার চোখে অনেক পানি!!! হঠাৎ নীলার কাঁধে কে জানি হাত রাখল! অরূপ স্যার !!!!! কি ব্যাপার কাঁদছ কেন নীলা পরীক্ষা খারাপ হয়েছে? না স্যার এমনি , versity life শেষ তো !!! আমাকে এখন স্যার না ডাকলেও হবে ভাইয়া ডাকতে পারো , একটা বাঁকা হাসি দিয়ে অরূপ বলে একসময় তো ভাইয়া ছিলাম !!! স্যার আমি হলে যাই , বলে নীলা চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়, অরূপ সামনে এসে আটকায় , আর নীলাকে একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বলে হল থেকে পড়ে এসো , আর হ্যাঁ কিছুক্ষণ পর নীলাকে সুন্দর সেই নীল শাড়িতে দেখা যায় আর অরূপ এর হাতে এক গোছা কদম ফুল।
আজ এত বছর পর নীলা আবার সেই শাড়িটা পড়ল ,নীলা ভাবলও কার্জনে যাবে, সিঁড়ি দিয়ে নেমে কার্জনের দিকে হাঁটা শুরু করল, আবার অতীতে হারিয়ে যায় নীলা , কয়েক মাস পর অরুপ বিদেশ চলে যায় , নীলা ফিরে যায় তার বিষণ্ণ জীবন এ, ঠিক ৬ মাস পর অরুপ আসে দেশে, নীলা অরুপ কে আবারো কাছে পায়, এরকম এক দিন এ , অরূপ ওর একটা ট্যাব ফেলে যায় নীলার কাছে, নীলা ট্যাবটা খুলে, আর খুলে যায় কিছু ছবি, খুব সুন্দর একটা মেয়ে অরুপ কে জড়িয়ে ধরে আছে, নীলা পাথর হয়ে যায় , কোন কথা বলে না, অরুপ কে কিছুই বলে না, খুব স্বাভাবিক ভাবে নিলা ট্যাব তা ওকে ফেরত দেয়, অরুপ নিজে থেকেই নানা সাফাই দিতে শুরু করে, নীলা তখন বলল যদি সত্যি ভালবেসে থাকো তাহলে আজ এই মুহূর্তে বিয়ে করবে! নীলা ভেবেছিল অরুপ হেসে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিত, এত কঠিন মুহূর্তে অরূপ বেশ হাসি হাসি মুখে কথা বলছিল। অরুপ আর নীলার সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর ২ জন একসাথে পড়তে চলে গেল, কি অদ্ভুত নীলা কেন জানি অরূপ কে ঘৃণা শুরু করল, অরূপ ও ঝুঁকে পড়ত বার বার অন্য কারও প্রতি, একসময় আলাদা হয়ে গেল ওরা আর তারপর অনেকটা পথ পাড়ি দেয়া বিষণ্ণ আর কঠিন পথ!
পুরনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে নীলা কার্জনে চলে আসলো । আজ থেকে অনেক বছর আগে যদি গল্পটা শুরু না করত , জীবনটা অনেক বেশি অন্যরকম হতে পারতো , নীলা বসে পড়ল ঘাসের ওপর , পুকুর ঘাটে একটা জুটি দেখা যাচ্ছে , ছেলেটার হাতে কদম ফুল , না আফসোস টা কমে আসলো নীলার , যতই দুঃখ কষ্ট হোক জিবনের ওই অতটুকু সুখের সময় টাই কম কিসে , মানুষ এর মন বদলে যায় , কিন্তু মনের পাতায় সুন্দর মুহূর্ত গুলো কখনো হারিয়ে যায় না, নীলা ঘাসের ওপর শুয়ে পরে, এক ফোঁটা চোখের পানি পরে , নীলা জানে এই কান্না থামাতে কেউ আসবে না, কেউ না!!!!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.