নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার ছেলেবেলা -১

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪২

পর্ব ১- আমার জন্ম ঢাকার পুরনো আমলের ২ তলা একটা বাসায়,ভাঙ্গাচোরা অথচ অপূর্ব সুন্দর একটা বাসাতে, যেই বাসাতে অনেক গাছ ছিল,আমার সবচেয়ে প্রিয় গাছ ছিল একটা গামার গাছ।এই গাছটা আমার আব্বু রাস্তার পাশ থেকে নিয়ে এসেছিল, আব্বু botany তে পড়ত আর তাই গাছ খুব ভালবাসত।আমার নামটা ও তাই ফুলের নামে রাখা।

আমি একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম, আমার এই ভাঙাচোরা বাড়িটা ছিল আমার ছোট্ট জগত, বৃষ্টির সময় আম পড়ত, ঝড়ের সময় অপু আর দুর্গার গ্রামের মত লাগত বাড়িটাকে ।মাত্র ক্লাস 3 তে আমি (পথের পাঁচালী) পড়েছিলাম।আমার বন্ধু ছিল ভাড়াটিয়া বাচ্চারা,আমি গাছ লাগাতাম,ইট দিয়ে শহিদ মিনার বানাতাম, আর হাড়ি পাতিল দিয়ে খেলতাম। আমার দাদা মারা যাবার ঠিক পর পর দাদার লাগানো অনেক গাছ মারা যায়,এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি গাছ নিয়ে একটা জগত তৈরি করতে শুরু করি আর হুমায়ুন আহমেদ এর অন্যজগত গল্পের সাথে নিজেকে মিলান শুরু করি।আমার কল্পনার এই মজাদার জগতে একটা নতুন গল্প জানতে পারি।আব্বুর নানা ধরনের collection-বই, ,dry plants ,stones এর পাশাপাশি আব্বুর preserved human brain সংগ্রহে ছিল। আব্বু আমাদের বাসার মাটিতে ওটা একসময় পুঁতে ফেলে,আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে paranormal নানা কাহিনি রচনা শুরু হয় আমাদের বাসাটাতে ,আমার আব্বু তাই গামার গাছটা ওটার উপর লাগিয়ে দেন,আর তাই গামার গাছটা আমার কাছে প্রিয় হয়ে উঠে ।আমার দাদির আদেশে পুঁতে ফেলা brain টার উপর গাছ টা লাগান হয়ে ছিল কারণ দাদু একটা সপ্ন দেখেছিলেন কোনও এক দরবেশ বলছেন যে আমার উপর দিয়ে সবাই হেঁটে বেড়ায়।এটা নিশ্চিত ভাবে অবচেতন মনের একটা প্রভাব ছিল, আব্বু চিন্তা শুরু করল এই মস্তিকটা কার, এত দিনের lab specimen টা মানুষের একটা অংশ হয়ে একটা নতুন অস্তিত্ব নিল,গাছটা লাগানোর পর দাদু শান্ত হন ।

আব্বুরা ছোটবেলা তে যখন এই বাড়ীতে থাকতেন, তখন একজন দরবেশ আসতেন আর আব্বুকে বলেছিলেন তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে। এই ২ গল্পের যোগসূত্র ধরে আমাদের বাসার নানা মানুষ বিভিন্ন ভৌতিক গল্প রচনা শুরু করল।আমি অবশ্য বিষয়টাতে এক ধরনের মজা পেতাম,ইটের ফাঁকে জমে থাকা শ্যাওলা ,২ তলার উপর থেকে নেমে আসা ঝুলন্ত গাছ, সব কিছু ভাল লাগত। অতিরিক্ত পানি জমা হলে tank থেকে পানি পড়ত, আর ওখানে ছিল অনেক শামুক, এই শামুক গুলোর দিকে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতাম।
আমাদের বাসায় অনেক পাখি ছিল-দোয়েল ,শালিক,চড়ুই। একদিন একটা কাঠঠোকরা পাখি দেখলাম নারিকেল গাছে ।ওইদিনের পর আর দেখা পেলাম না,কি যে মন খারাপ হল! তারপর একদিন কার পোষা একটা ম্যাকাও পাখি আমাদের বাসায় উড়ে আসলো ,পাখিটা খুবি অলস ছিল,আম গাছে ২ দিন বসে ছিল কোনও নড়াচড়া করে নাই,মালিকপক্ষ ২ দিন পর উদ্ধার করে নিয়ে গেল।আমি খুব অপেক্ষা করে ছিলাম আবারো কোনও পাখি বন্দি খাঁচা ভেঙ্গে আসবে আমার এই স্বপ্নপুরিতে!
আমার স্বপ্ন পূরণ হল তবে একটু অন্য ভাবে। একটা বানর কোঁথ থেকে জানি পালিয়ে আসলো ,আর আমাদের বাসায় একটা বাচ্চাকে কামড়ে দিয়ে আহত করে গেল। আব্বুর বিড়াল খুব পছন্দ ছিল,আম্মুর সাথে বিয়ের পর এই শখটা ছাড়তে হল।আম্মু ঘরে না থাকলে বিড়ালগুল আব্বুর সাথে শুয়ে থাকতো ,আর আম্মু আসলেই বের হয়ে যেত।
আব্বুর প্রিয় বিদেশি কুকুর Robbert কে কারা যেন বিষ খাইয়ে মেরে ফেলছিল। তারপরও অবশ্য আমাদের বাসাতে অনেক বিড়াল ছিল, বিড়াল আমি পছন্দ করতাম না,আমার একটা কাল বিড়াল পছন্দ ছিল, আমি ওঁটার নাম দেই আমিনুল, কাকতালীয় ভাবে আমার school এ এই নামে একজন teacher ছিল।এই সময়ই আমি পরছিলাম লরা ইঙ্গলাসের নদীর তিরে ফুলের মেলা আর নিজেকে ভাবতাম লরা।
আমার গাছের আম ,ডাব,কলা,আতা সবকিছু অনেক বেশি মজার ছিল।২০০৩ বা এরকম সময় একান্নবর্তী নাটকটা খুব জনপ্রিয় ছিল,গল্পের শেষ পর্ব ছিল তাদের বাড়িটাকে developer দের দিয়ে দেয়। এই সময়ই আমার একটা পোষা মুরগির বাচ্চা ছিল।তখন স্কুলের সবাই ৫ টাকা দিয়ে হলুদ খুদে মুরগির বাচ্চা কিনছিল, আমি আমারটার নাম দিয়েছিলাম কিট কিট ,ওঁকে আমার সামনে একটা বিড়াল মেরে ফেলেছিল। স্কুলের সবার নানা সপ্তাহে তাদের মুরগিছানারা মারা যাচ্ছিল সবাই নানা সপ্তাহে কান্নাকাটি করত,একটা মেয়ে শুধু মুরগিটা রান্না করে খেয়ে ফলেছিল (বড় হবার পর)। কিট কিট আমার পায়ে পায়ে ঘুরত, আম্মু একবার ভুলে ওকে আঘাত দাওয়াতে আমি কষ্ট পেয়েছিলাম,আর আমার সামনে একটা বিড়াল ওকে মুখে করে নিয়ে যায়।
২০০২ থেকে আমি লেখালেখি শুরু করি।আমার বড় বোন আর আমি পরস্পরকে নানা গল্প দিয়ে ভয় দেখাতাম আর একটা সময় নিজেরাই ভয় পেয়ে যেতাম ।একদিন আমরা এভাবে ভয় দেখাছিলাম,এমন সময় লুবনা(আমার বোন) আমার রুমের দরজাটা খোলে আর একটা আঁতকে উঠর আওয়াজ শুনে ,আওয়াজটা ছিল এমন যে দরজার পাশে কেউ আছে আর দরজা হঠাৎ খোলাতে ভয় পেয়েছে।আওয়াজটা আমিও শুনতে পেয়েছিলাম এবং এটি আমার জীবনের একমাত্র Paranormal গল্প আর এতে আমি আর আমার বোন ২ জনি খুব অবাক হয়েছিলাম।
সময়ের সাথে আমাদের বাসা টা পুরনো হচ্ছিল,দরজা জানালা দুর্বল হচ্ছিল, আর তাই আমাদের বাড়ী ও ডেভেলপার দের দেয়া হল,আমি বাড়ীর ছোট মেয়ে ছিলাম, আমার cousins আর ভাই বোনেরা অনেক বড়।তাদের কষ্ট ছিল আরও অনেক বেশি, একান্নবর্তী নাটক টার মত আমাদের ইতি হল। পাখি , বিড়াল , গাছ, আমার স্বপ্নের বাড়ী , আমার শৈশব সবকিছু ফেলে আমি ২০০৬ সালে আমার জীবনের প্রথম পর্ব শেষ করলাম।শুরু হল এক যান্ত্রিক জীবন। গল্পের লরা নতুন এক চরিত্রে পা দিল. (আমি এখনো সেই বাড়ীতেই থাকি, তবে ডেভেলপার রা বাড়িটাকে আগের মত প্রাণবন্ত করতে পারে নি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৩

বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য বলেছেন: অনবদ্য

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল স্মৃতি কথন। লিখে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.