নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া

সিলভিয়া আহমেদ জিনিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলো

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৪৭

কাজল অনেকক্ষণ ধরে তাদের বস্তির বাইরে পায়চারি করছে ।প্রতিদিন রাত ১০ টায় মা তাকে বাইরে পাঠিয়ে দেন, আবার এক ঘণ্টা পর মা নিয়ে যায় কাজল কে। এই সময়টা কাজল পাড় করে বস্তির বাইরের মাঠ টায় শুয়ে শুয়ে মাঠের ওপাড়েই বড় লোক দের বাড়িঘর দেখে । ৬ বছরের কাজলের খুব ভাল লাগে এই সময়টা , কারন নোংরা বস্তিটা থেকে অনেক্ষন দূরে থাকা যায় ।আরেকবার ঘণ্টার আওয়াজ হল, তার মানে ১২ টা বাজে, কাজল দেখল বড়লোকদের উঁচু উঁচু বাড়িগুলোর বাতি নিভে যাচ্ছে ! কাজল বাড়ির দিকে যাওয়া শুরু করল, আর বাড়ির কাছে পৌছাতেই দেখল অনেক মানুষের ভিড় , ভিড় ঠেলে ঘরে ঢুকতেই দেখল মায়ের সারা শরীর জুড়ে অনেক রক্ত , কাজলের গা কেমন গুলিয়ে উঠল , তার এমন সুন্দর মা কে কারা এত কষ্ট দিল? পেছন থেকে কে জানি বলল তোর বাপ কই? পাশ থেকেই আরেকজন বলল অর বাপ নাই। কাজলের মা যে মারা গিয়েছে এটা বুঝতে কাজলের বেশ কিছুদিন সময় লাগলো , আর বোঝার পর কাজল তাদের ঝুপড়ি থেকে বের হয়ে গেল, প্রথম প্রথম কাজল কাঁদত , তার পর আর কান্না আসত না, লাগত ক্ষুধা আর শীত । কাজল তাদের বস্তির কাছের একটা বড়লোকদের স্কুলের সামনে ভিক্ষা করা শুরু করলো , ভিক্ষা করতে ওর মজাই লাগত! ওর বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে কে দেখতে ভালই লাগত সবাই একি জামা পরে যাওয়া আসা করত, শুধু স্কুল ছুটির পর বাচ্চা গুলো যখন মায়ের হাত ধরে বাড়ি যেত কাজলের মন খারাপ হত, তার থেকেও বেশি মন খারাপ হত বাচ্চাদের হাতের আইস ক্রিম , চকোলেট আর নানা খাবার দেখে। একদিন কাজল খুব করুণ চোখে একটা ফাস্ট ফুড সপের বাইরে দাড়িয়ে ছিল , একটা খুব মিষ্টি মত গোল গাল একটা ছোট মেয়ে ওকে বলল ,"এই ছেলে তোমার নাম কি?", "কাজল।"মেয়ে টা ওকে একটা বার্গার কিনে দিল।
কাজল তো খুব খুশি !তার পর থেকে এই গুলুগালু মেয়েটা প্রতিদিন এই দোকান থেকে যাবার সময় ওর আধ খাওয়া বার্গার বা কেক গুলো দোকানের পাশে র গাছ তলায় রেখে যেত, সমাজের অদ্ভুত নিয়ম এই ছোট বাচ্চারাও জানতো , সমাজের ২ প্রান্তের ২ টি বাচচা কখনো প্রকাশে বন্ধু হতে পারবে না!
বেশ কিছুদিনের জন্য স্কুল ছুটি হয়ে গেল, আর কাজলের ও আয় রোজগারে পড়লো মন্দা , বাকি সব এলাকা নানা বসের আন্ডারে ! এমন সময় শুরু হল বর্ষাকাল , কাজল থাকতো লোহার বড় নল গুলোতে , বেশ কয়েকদিন বৃষ্টি তে ভিজে এক রাতে কাজলের আসলো জ্বর ,তাও সেই আকাশ পাতাল জ্বর , অনেকদিন পর মনে পড়লো মায়ের কথা , একটা লোহার পাইপের ভেতর কাজল শুয়ে শুয়ে তার মায়ের কথা ভাবতে লাগলো , খুব মনে পড়লো মায়ের নরম হাত আর মায়ের কোলের কথা, ইশ কেউ যদি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিত, বাইরে ঝুম বৃষ্টি , কাজলের জ্বর বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষুধা ! কাজল কেমন একটা ঘোরের মাঝে চলে গেল, মা বেঁচে থাকতে এমন জ্বর এসেছিলো , মা দিনে বাইরে থাকতো , কাজল থাকতো বাড়িতে , ওইদিন মা ওকে নিয়ে গেল আর শুয়ে দিল একটা নরম সোফায় , কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে কাজল উঠে গেল, আর ঘুম থেকে উঠে সে ভেজানো দরজাটা খুলে বের হয়ে গেল , চারদিকে অনেক আলো ছিল , আর একটা সুন্দর গান শুনা যাচ্ছিল , আর সবার মাঝে মা কি শুন্দর করে নাচ করছিল, মায়ের গায়ে ছিল খুব রঙ্গিন পোশাক , আর কারা জানি অনেক গুলো টাকার নোট ছুরছিল মায়ের দিকে, টাকা আহ টাকা! খুব দরকারি জিনিস যা ভাত দেয় , কাপড় দেয়!
জ্বরের প্রচণ্ড ঘোরে কাজল আবারো সেই গান শুনতে পায়, সেই সুর যে গানে মা নাচত , না না ভুল না আসলেই সেই গান ভেসে আসছে , কাজল ছুটে বের হয়ে যায় , তখন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে , কি অদ্ভুত সেই আলো যেই আলোতে মা নাচত , সেই সুর যেই সুরে মা নাচত , কাজল ছুটে যায় মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য , কিন্তু এ কি ! ভালোবাসার উষ্ণতা না রক্তে কাজলের গা ভিজে যায় , প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাজলের ছোট শরীরটা দুমরে মুচড়ে যায় ,চোখ এর কোন থেকে এক ফোঁটা জল পরে আর তার পর রাস্তায় পরে থাকে কাজলের লাশ ! কাজলের লাশ টার দিকে মাতাল লোকটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে , মাতাল লোকটি মাঝরাতে পার্টি শেষে তার পছন্দের মিউজিক ছেড়ে তার এক মেয়ে বন্ধু কে নিয়ে লং ড্রাইভ এ বেড়িয়েছিলেন , এই গাধা ছেলেটা গাড়ির সামনে ঝাঁপিয়ে পরল, এটা কোন অপরাধি চক্রের কাজ হতে পারে ভেবে তিনি তারাতারি স্থান ত্যাগ করলেন। অবশেষে স্কুল খুলে গেল এবং কাজলের সেই বান্ধবি কাজলের জন্য রোজ অপেক্ষা করত কিন্তুঁ কাজল কে আর খুজে পেত না, বিশাল এই জগতে কাজলে মনে করার মত আর কেউ ছিল না! কে জানে কাজল কি আসলেই তার জীবনে আলোর খোঁজ পেল কিনা?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.