নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হুসাইন বিন জিয়া (হুসাইন আহমাদ)

হুসাইন বিন জিয়া (হুসাইন আহমাদ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

{{{ ফেসবুক নিয়ে বিশদ আলোচনা }}}

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৯


ফেসবুক একটি আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পৃথিবীর সবদেশেই ফেসবুক সমান জনপ্রিয়। ফেসবুকের জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ- এর নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশনস যা অন্য কোনো সামাজিক সাইটে একত্রে পাওয়া যায় না। ব্যবহারবিধিও অপেক্ষাকৃত সহজ ও শৈল্পিক। বর্তমানে এটি প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তারুণ্যের নতুন জানালা এবং স্বাধীন মত প্রকাশের একটি প্রযুক্তি মাধ্যম। একটি সৃজনশীল মুক্তচিন্তা বিকাশের যোগসূত্র। এ সৃজনশীলতার পাশাপাশি আবার অনেক নোংরামি, অশ্লীলতা, ভাষার বিকৃতি, অপপ্রচার, সময় ও মেধার অপপ্রয়োগসহ বিভিন্ন পোস্ট, স্ট্যাটাস, মন্তব্য, টুইট, অসংলগ্ন আলাপ, বিকৃত ভাষার ব্যবহার; ব্যাংক, অনলাইন মিডিয়ায় আইডি হ্যাকসহ বন্ধুদের দীর্ঘ তালিকা তরুণীদের মূল্যবোধকে সহজেই পরাস্ত করে প্রতারণার সুযোগ গ্রহণ করছে বুঝে না বুঝে অনেক ব্যবহারকারী।

ফেসবুকের শুরুর কথা

ফেসবুক পৃথিবীর জননন্দিত একটি নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্র“য়ারিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট একটি রুমে ফেসবুকের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানকার শিক্ষার্র্থী মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরিতে বসে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। তখন বিষয়টি কেবল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই সীমিত ছিল। ইন্টারনেটভিত্তিক এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে, চালু হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি ছাত্র-ছাত্রী এর সদস্য হয়। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে আশেপাশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরাও সদস্য হতে শুরু করলে সদস্য সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর শুধুমাত্র আমেরিকায় বসবাসরত ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০০৬ সালে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সারা বিশ্বের জন্য। এভাবেই ইতি-নেতির ভাবনার ডানায় ফেসবুক দশদিগন্তে উড়াল দিতে সমর্থ হয়েছে।

ফেসবুকের অগ্রযাত্রা ও জয়জয়কার

ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন নেই বললেই চলে। এমনকি এখন যারা ইন্টারনেট দুনিয়ার নতুন সদস্য হচ্ছেন, তাদের সূচনাই হচ্ছে ফেসবুক রেজিস্ট্রেশনের মধ্য নিয়ে। নচেৎ মাত্র ২০০৪ সালের ফেব্র“য়ারিতে যাত্রা শুরু করে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরেই এর গ্রাহক সংখ্যা ৫৫ লাখে দাঁড়াত না। ২০০৬ সালে কৌশলগত কারণে ফেসবুকের সঙ্গে মাইক্রোসফট সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে সারাবিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে এক লাফে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখে। ২০০৭ সালে ভার্চুয়াল গিফট শপ চালুর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি এবং মাত্র একবছর পর ২০০৮ সালে ফেসবুকে জনপ্রিয় ‘চ্যাট’ সেবা চালু হয়। এ বছরই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটিতে। ২০০৯ সালে ফেসবুকে ‘লাইক’ সেবার পাশাপাশি এর গ্রাহক সংখ্যা উন্নীত হয় ১৫ কোটিতে। মাত্র এক বছর পর ২০১০ সালে ব্যবহারকারী দাঁড়ায় ৫০ কোটিতে। আর তাই প্রায় ৭০০ কোটি জনসংখ্যার এই বিশ্বে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কর ওয়েবসাইট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রতিদিন ৬১ কোটি ৮০ লাখ ব্যবহারকারী দিনে অন্তত একবার ফেসবুকে লগইন করেন। মোবাইল ফোন থেকে প্রতিদিন লগইন করেন ১৫ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারী। বাংলাদেশে ৩০ লাখেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০টিরও বেশি ভাষায় ফেসবুক ব্যবহার করা হচ্ছে। তার উপর ফেসবুকে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে প্রায় দুই লাখ নতুন ব্যবহারকারী। সম্মিলিতভাবে ব্যবহারকারীরা প্রতিমাসে ফেসবুকে সময় কাটান ৭০ হাজার কোটি মিনিট। এই অবস্থা চলতে থাকলে পৃথিবীর সব মানুষ খুব শিগগিরই হয়তো যুক্ত হয়ে যাবে ফেসবুকের রাজত্বে।
মানুষের পরস্পরের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করার পাশাপাশি সমাজনীতি, রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে এখন অর্থনীতির চূড়ায় আরোহন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পৃথিবীর সবচে বড় এই সোস্যাল মিডিয়াটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রকাশ্যেই এক সভায় বলেছিলেন, ফেসবুক আমেরিকার গর্ব। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায়ও এর ব্যাপক ব্যবহারে উপকৃত হয়েছেন। এর আগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন টাইম ম্যাগাজিন ২০১০ সালের জন্য বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচন করে জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গকে। ফেসবুকের বিপুল ব্যবহারের পাশাপাশি মানুষের জীবনে এবং বছরের ঘটনাপ্রবাহে এর প্রভাব বিবেচনা করে জুকারবার্গকে এ খেতাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় টাইম ম্যাগাজিন।

ফেসবুক নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৩ বছর। সম্প্রতি বিবিসির এক খবরে জানা গেছে, ফেসবুক ব্যবহারকারীর জন্য আর কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকছে না। অর্থাৎ ১৩ বছরের কম বয়সী শিশু থেকে শুরু করে সবার জন্যই উন্মুক্ত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তর নেটওয়ার্ক ফেসবুক। তবে এই কাজটি করতে তারা বিশেষ কিছু কাজ করছে। জানা গেছে, শিশুদের ফেসবুক প্রোফাইল তার মা-বাবার ফেসবুক প্রোফাইলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। ফলে মা-বাবা শিশুদের ফেসবুক তত্ত্বাবধান করতে পারবেন। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক খবরে জানিয়েছে, শিশুর ফেসবুক প্রোফাইলের লিংক যেন তার বাবা-মার ফেসবুক প্রোফাইলের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন ফেসবুক সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ। যদি বিষয়টি সত্যিই ঘটে তাহলে বিষয়টা এমন দাঁড়াবে যে, পৃথিবীতে একজন নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করেই ফেসবুক রেজিস্ট্রেশন করবে। এতে একসঙ্গে জন্ম সার্টিফিকেটের বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের সকল জনসংখ্যার নানা তথ্যও পাওয়া যাবে খুব সহজেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দারা তাদের দেশের জনগণের ওপর নজরদারি করতে ফেসবুকের সহযোগিতাও নিচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ।
এছাড়াও ২০১৩ সালে ফেসবুক গ্রাফ সার্চ চালুর ঘোষণা রয়েছে। চলতি বছরে ফেসবুকে ভিডিও বিজ্ঞাপন চালু হয়েছে। ফেসবুকের নিউজ ফিডে ব্যবহারকারী না চাইলেও দেখতেই হবে ১৫ সেকেন্ডের বাধ্যতামূলক বিজ্ঞাপন। এ রকম আরো অনেক নতুন সেবাই হয়তো আমরা দেখতে পাবো চলতি বছরে কিংবা অদূর ভবিষ্যতে।

ফেসবুকের নেতিবাচক দিক
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ফেসবুক-ভীতি তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, ফেসবুক যতটা না সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে তারচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে অশ্লীলতা চর্চার মাধ্যম হিসেবে। এতে করে অনেক পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের নেট ব্যবহারে নিরুৎসাহী দেখা যায়। তার পরেও সারাবিশ্বে ৫৬ লাখ শিশু তা ব্যবহার করছে। এদিকে বর্তমান যুগে অধিকাংশ মা-বাবাই তাদের সন্তানের ইন্টারনেট কার্যকলাপ নিয়ে চিন্তিত। সন্তানরা কি করছে সে বিষয়ে নজর রাখার জন্য প্রায় ৭২ শতাংশ অভিভাবকই তাদের টিনএজ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ফেসবুকে ‘বন্ধু’ হিসেবে যুক্ত আছেন। এদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ছয়জনই স্বীকার করেছেন, তারা তাদের সন্তানের অজান্তেই তাদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি করেন। এভিজির তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২১ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানের ফেসবুক প্রোফাইলে অবমাননাকর বার্তা বা অ্যাবিউজিভ মেসেজ পেয়েছেন। এসবই কিন্তু নেতিবাচক সংকেত।
ইদানীং ফেসবুকে যে ভাষার আধিক্য দেখা যায়, তা অশ্লীলতাকেও হার মানায়। ফেসবুকে পরকীয়া সম্পর্কটি খুব সহজেই বেড়ে যাচ্ছে। এটা রীতিমতো ভয়ঙ্কর। যাকে বলা হয় ‘ফেসবুক অ্যাবিউস’। সেখানে নৈতিকতা ব্যাকরণে ধূলির আস্তরণ পড়ে অনৈতিক আর সস্তা শব্দ-সমন্ধ স্থান করে নিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরকে তার স্বামী সাঈদ ফেসবুকের কারণেই মানসিক অশান্তিতে থেকে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল। রামুতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ফেসবুকেরই উস্কানিতে সংঘটিত। আবার ফেসবুকের মাধ্যমে ভালোলাগা, ভালোবাসা, প্রেম, প্রেমের পর দেখা-সাক্ষাত, অতঃপর...। এখানে ‘অতঃপর’-এর পর এমনকিছু ঘটনা ঘটছেÑ যা খোলামেলা না বলাটা শালীনতার অন্তর্ভুক্ত।
ভিন্নধারার অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যসেঞ্জ বলেছেন, ফেসবুক মানুষের ইতিহাসে গুপ্তচর বৃত্তির কাজে নিয়োজিত সবচেয়ে ঘৃণাব্যঞ্জক হাতিয়ার। যারাই নিজ বন্ধুদের নাম ও তাদের জীবনের নানা দিক বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্য এই চ্যানেলকে সরবরাহ করছেন তাদের জানা উচিত যে, তারা আসলে বিনা অর্থে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। অন্য কথায় ফেসবুক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্য তথ্যের বিশাল এক ভাণ্ডার। মার্কিন গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো তথ্যের এইসব ভাণ্ডার বা উৎস ব্যবহার করছে। তথ্য পাচারের অভিযোগ ছাড়াও অতিমাত্রায় ফেসবুক ব্যবহারের ফলে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে।
খোদ যুক্তরাষ্ট্রের একদল আইনজীবী জানিয়েছেন, দেশটির শতকরা ২৫ ভাগ তালাকের ঘটনা বা মোট তালাকের এক পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী ফেসবুক। বাংলাদেশেও ফেসবুক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে প্রতারণার আওয়াজ আসছে চারিদিক থেকে। সম্প্রতি ব্যাংক জব্দ, আইডি হ্যাকসহ নানা ক্ষতিকর সাইড প্রত্যক্ষিত। ফেসবুক নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশের স্বনামধন্য তারকা শিল্পী-অভিনেত্রীরা। কে বা কারা তাদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে রেখেছে। শুধু তাই নয়, ওগুলোর বরাত দিয়ে অশ্লীলতার সয়লাব বয়ে দিচ্ছে। ফাসিয়ে দিচ্ছে ভদ্র মহাজনকেও। এমন ঘটনা খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে আজ। অহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক জানান, যারা নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করে তারা পরীক্ষায় খারাপ করে। এটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য করা হলেও স্কুল-মাদরাসার জন্যও তা প্রযোজ্য। ওই সংস্থার একজন গবেষক আরিন বলেছেন, প্রতিটি প্রজন্মেই থাকে ধ্বংসাত্মক একটি কালযন্ত্র। বর্তমান সময়ে ফেসবুক নামে এসেছে সে ধ্বংসাত্মক যন্ত্রটি।

ফেসবুকের ইতিবাচক দিক
প্রত্যেকটি জিনিসই তৈরি হয় ইতিবাচক চিন্তা থেকে। ফেসবুকও সে চিন্তারই ফসল। কেউ যদি ফেসবুকের অপব্যবহার করে তবে সে-ই তার প্রায়শ্চিত্য করবে। তাছাড়া ফেসবুকে সবাই অশ্লীলতা, অপরের ইজ্জত হনন, অর্থনৈতিক ধ্বংস সাধন ও বন্ধুত্বের পরিচর্চাতেই ব্যস্ত নয়। ইদানীং ফেসবুকে একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য চর্চা, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নেয়া মহতী উদ্যোগও চলছে। ফেসবুকের হরেক স্ট্যাটাস আপডেটের মাধ্যমে নিজের প্রতি মুহূর্তের হাল জানিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। কেবল কি তাই! যেই বন্ধু এই স্ট্যাটাসে লাইক কিংবা কমেন্ট করছেন তার বন্ধুদের টিকারে ভেসে উঠছে আপনার মনের কথা! ‘টিকার’ ফেসবুকের মোটামুটি নতুন সংযোজিত অংশ। অনেকেই সোশ্যাল অ্যাওয়ার্নেস কথা, সুসংবাদ, কোনোও দুর্লভ ছবি, গান, মজার কিংবা সাম্প্রতিক ঘটনা বন্ধুকে ট্যাগ করে দেয়া যায়, যা খুব সহজেই তার নজরে আসে এবং তার মতামত পাওয়া যায়। ইদানীং ফেসবুকের পাতায় পাতায় বাজারের দেখা মিলে, কাপড়, গহনা, আসবাব, বই নানা যন্ত্রপাতিসহ অন্যসব পণ্যের সমাহার ছাড়াও ঈদ, বিয়ে, সভা-সেমিনার, মাহফিল, দলীয় কর্মকাণ্ডসহ নানা দুর্লভ তথ্য পাওয়া যায়। যা এত সহজেই পাব বলে ধারণাও করা যেত না।
বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলোকে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছেন। ফেসবুক-জাতীয় ওয়েবসাইটগুলোকে কল্যাণকর কাজেই বেশি ব্যবহার করা সম্ভব। যেমন, আরব বিশ্বে স্বৈরশাসন বিরোধী ইসলামি গণজাগরণে জনগণ ও বিশেষ করে যুবসমাজ ফেসবুকে প্রতিবাদ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমনকি বৃটেনসহ ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও সরকার-বিরোধী গণপ্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করতে ফেসবুক-এর মতো চ্যানেলগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
এ ফেসবুকে অনেক সৃজনশীল পোস্ট দেখে অভিভূত হতে হয়। কি অসাধারণ সংগ্রহ এবং আইডিয়া তাদের! মুহূর্তে যেন ফিরে যাই দুরন্ত শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অলিগলিতে। আমাদের বোধ এবং ভাবনার দরজায় যেন কড়া নাড়ে একেকটি ছবি। কখনও একটি ছোট্ট কথা অনেক কথার মালা হয়ে অনেক চেনা বিষয়কে নতুন করে চিনিয়ে দেয়। যেমন এক বন্ধু লেখেছিলেন, ‘মা তখনও কাঁদে যখন সন্তান খাবার খায় না। আবার মা তখনও কাঁদে যখন সন্তান খাবার দেয় না’। আরেকটি স্ট্যাটাস, ‘এক বছরে একটি গাছ আমাদের জন্য কত উপকার করে জানেন? শুনুন, ৭৫০ গ্যালন বৃষ্টির পানি শোষণ করে। ১০টি এয়ার কন্ডিশনারের সমপরিমাণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬০ পাউন্ডের বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেয়। এবার আপনিই ঠিক করুন কেন গাছ কাটবেন এবং কেন গাছ লাগাবেন না।’ এসব স্ট্যাটাস মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে অতুলনীয়। আমাদের বোধের শেকড়ে নাড়া দেয়ার জন্য এমন পোস্ট মাইলফলক ভূমিকা রাখবে।

ভালো-মন্দের দোলাচলে ফেসবুক
আজকের সময়ে ফেসবুকে ভালো-মন্দ নিয়ে জানার আগ্রহ প্রায় সবার। তাই বিষয়টি আরো ভালো করে জানার জন্য বিভিন্ন শ্রেণির ফেসবুক ব্যবহারকারীর দ্বারস্ত হতে হয়েছে আমাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্টবিজ্ঞানের ছাত্র আনোয়ার হোসেন সাগর বলেন, ফেসবুক বর্তমান সময়ে যাদুকরী একটি প্রযুক্তি। ফেসবুকের কল্যাণে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। অবশ্য একটি শ্রেণি এর অপব্যবহারও করছে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। অনুরূপ বক্তব্য ইডেনের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী নাসরিন সুলতানারও। তবে নাসরিন আরেকটু বাড়িয়ে বলে যে, যদি ফেসবুক নিয়ে কর্তৃপক্ষের আরেকটু সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি থাকত তবে অনেক ভালো হত। তিতুমীর সরকারী কলেজের মেথম্যাটিক্সের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম জানান, ফেসবুকের কল্যাণে লাভবান হওয়ার চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। যে সময় ফেসবুক ছিল না, সে সময় আমরা ফেসবুকের ঘাটতিও উপলব্ধি করিনি। আজ ফেসবুকের কারণে বহুলাংশে মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে একেকটিতে একেক রকম মুখোশ উন্মোচন করছে। কাওরান বাজারের ভেতরে একটি গোদামে ব্যবসায়ী আব্দুল হাশিমকে দেখলাম কম্পিউটারে ফেসবুক খুলে টিপাটিপি করতে। কেন ফেসবুক ব্যবহার করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কাজে ফেসবুকের প্রয়োজন হয়। এই যেমন আমার দোকানের বিভিন্ন পণ্যের এ্যাড দিয়ে দিতে পারছি। আমাদের ঘরানার সবাই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারছে। অনেকেই ফেসবুকে দেখে এসে পণ্য চাচ্ছে। ফেসবুকে খারাপ কী আছে জানতে চাইলে তিনি সাফ বলে ফেললেন, একটা অপরাধ অবশ্য করি তাহলো, একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে বা বন্ধু-বান্ধবদের বলে নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ‘লাইক’ মেরে অনেক সময় ভূয়া জনপ্রিয়তা বাড়াতে হয়। এতে একটি বিজ্ঞাপন হয়ে যায়। এ ছাড়াও খারাপ আছে বলে শুনে থাকলেও ব্যবসায়িক চাপে সেদিকে নজর দেয়ার সময় থাকে না। জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীর আদবের ছাত্র মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন জানান, আমরা ফেসবুকের অপব্যবহার করি না। আমরা জানি, ফেসবুকে অনেক জরুরি খবর খুব স্বল্প সময়ে শেয়ার করা যায়। ফেসবুকের কল্যাণে ইসলামের বহু নিদর্শন তথা কুরআন-সুন্নাহ ও শরিয়তের মাসলা-মাসায়েল বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা সহজ হয়। অনেকে নিজের প্রকাশিত বই বা অন্য যে কোনো পণ্যের খুব সহজেই বিজ্ঞাপন দিতে পারে। তবে মাঝে-মধ্যে কিছুসংখ্যক আননোন ফ্রেন্ডের কারণে কিছু বিপত্তিকর পোস্টের ঝামেলাও পোহাতে হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.