নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nature

হুতুম

হুতুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথায় ধর্মের কী ক্ষতি হয়?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৭

সন্দেহ নেই, আবার শুরু হতে যাচ্ছে তাণ্ডব!! না শুরু হলে তো হাজার শুকরিয়া, কিন্তু শুরু যে হতে পারে তার আভাষ তো হুমকি-ধামকিতেই স্পষ্ট। লতিফ সিদ্দিকী হঠাৎই এক সন্ধ্যারাতে দেশে এসে হাজির হলেন, বিমানবন্দরে নামার পর থেকে দেশের টেলিভিশন মিডিয়া হৈহৈ করে এগিয়ে গেলো এবং পরের দিন প্রিন্ট মিডিয়ায় চমৎকার হেডিং হলো, “দেশে ফিরেছেন লতিফ সিদ্দিকী গ্রেফতার হননি”, যেনও মিডিয়ার অনেক বড় দায় লতিফ সিদ্দিকীকে ধরিয়ে দেওয়া

আগেও লিখেছিলাম যে, লতিফ সিদ্দিকীকে তার দুষ্কর্মের দায়ভার নিয়ে যদি সরে যেতে হতো এবং তাকে যদি সে কারণে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হতো তাহলে কোনও অসুবিধে ছিল না। কিন্তু তার মুখের কথা, কেবলমাত্র বক্তব্যের কারণে তার পেছনে রাষ্ট্র এভাবে হন্যে হয়ে লাগবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
আমাদের দেশে একদল সাদা মনের (?) মানুষ আছেন, তারা নিজেদের সাদা পোষাক বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করেন সব সময়। বিশেষ করে আমাদের জাতীয় দুঃসময়ে তাদেরকে আমরা দেখতে পাই না, তারা তখন সমাজের কোনও এক গভীরস্তরে মিলেমিশে থাকেন। যেমন ধরা যাক, দেশে স্বৈরাচারের উত্থানপর্বে কিংবা ধরুন রাজাকার, আল-বদর যখন মন্ত্রী হয়ে দেশের পতাকাকে অপমান করে তখন তাদের গলার স্বরতো যেমন তেমন, তাদের চেহারাও আমরা দেখতে পাই না। দেখতে পাই না তখন, যখন সারা দেশে একের পর এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে, এজলাস থেকে নামিয়ে বিচারককে হত্যা করা হয়। কিন্তু একজন সম্পাদক যখন অন্যায় ভাবে ধর্মের নামে মিথ্যাচার দিয়ে দেশের ভেতর চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তার পত্রিকার প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে যখন দেশের তরুণদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে মৌলবাদীরা এবং এসব কারণে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয় তখন আমাদের সম্মানিত সম্পাদকবৃন্দ তাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন। অজুহাত হিসেবে তারা বলেন যে, এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, যখন লতিফ সিদ্দিকীকে কেন্দ্র করে দেশে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তারা একাট্টা হতে চাইছে লতিফ-ছুতোয়, তখন কিন্তু আমরা কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না যে বলছেন, তার কথা বলার অধিকার রয়েছে, প্রত্যেকের কথাতেই কেউ না কেউ আঘাত পেতে পারেন কিন্তু সে জন্য তার পেছনে রাষ্ট্রকে লেলিয়ে দেয়া যাবে না। সেদিন কি খুব দূরে যেদিন একদল মানুষ বলতে শুরু করবেন যে, যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে টেলিভিশন টক শোতে কথা বলেছেন, তাদের চিহ্ণিত করতে হবে এবং তাদের ধরে ধরে শাস্তি দিতে হবে। সে শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড !! এটা উদাহরণ মাত্র, কিন্তু বাংলাদেশ কি এমন পথে এগুচ্ছে না যে, একদিন এই লতিফ সিদ্দিকীর উদাহরণ টেনেই দলে দলে মানুষ তলোয়ার নিয়ে মানুষ কাটতে বেরুবে ধর্ম রক্ষার নামে?
আজকে যদি লতিফ সিদ্দিকীর বাক স্বাধীনতার প্রতি আমরা নজর না দিই তাহলে কালকে আমাদের বাক স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার বলে আমরা বলছি এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, এদেশে জামায়াত-শিবিরের রগ কাটা রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে, এদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কেউ রাজনীতি করতে পারবে না - এসব কথা বলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, তখন?
একজন সম্পাদক যখন অন্যায় ভাবে ধর্মের নামে মিথ্যাচার দিয়ে দেশের ভেতর চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তার পত্রিকার প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে যখন দেশের তরুণদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে মৌলবাদীরা এবং এসব কারণে যখন তাকে গ্রেফতার করা হয় তখন আমাদের সম্মানিত সম্পাদকবৃন্দ তাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন। অজুহাত হিসেবে তারা বলেন যে, এর মাধ্যমে মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।
লতিফ সিদ্দিকী কী বলেছেন, কেন বলেছেন, তা নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে, তার কথায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে আঘাতও লাগতেই পারে কিন্তু তার জন্য ধর্মের কী ক্ষতিটা হয়েছে, কেউ কি একবার সে ব্যাখ্যাটি দেবেন? হেফাজত ইসলাম ইতোমধ্যেই হরতাল ডেকে বসে আছে, কিন্তু কেউ কি হেফাজতের পক্ষ থেকে একথাটি একবারও জাতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, একজন ব্যক্তি লতিফ সিদ্দিকীর কথায় ইসলাম ধর্মের মতো একটি ক্রমবর্ধমান ও বিশাল ধর্মের কতটুকু ক্ষতি-বৃদ্ধি হয়েছে?
নাহ, সে বিষয়ে গিয়ে তাদের প্রয়োজন নেই। তারা লতিফ সিদ্দিকীকে ধরবেন, মারবেন এবং মেরেও শান্তি হবে কি না সন্দেহ, যতক্ষণ না লতিফ সিদ্দিকীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো না যাচ্ছে। আসলে মূল কথাটি সেখানেই। এখানে লতিফ সিদ্দিকী একটি ইস্যু মাত্র। আমার বিশ্বাস, আমাদের সাদামনের(?) মানুষদের সমস্যাও সেখানেই। আজকে যদি শেখ হাাসিনা ক্ষমতায় না থাকতেন, যদি লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মন্ত্রী না হতেন তাহলে হয়তো এতোটা নিশ্চুপ তারাও থাকতেন না, তারাও তখন বাক্ স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মের ক্ষতি-বৃদ্ধি ইত্যাদির চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে পড়তেন। কিন্তু লতিফ-ইস্যু দিয়ে যদি কোনো ভাবে শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করা যায় তাহলে তো কেল্লা ফতে!!
কেন যেনও মনে হচ্ছে, লতিফ-ইস্যুকে ঘিরে জল আরও ঘোলা হতে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এরই মধ্যে হেফাজতকে মাঠে ছেড়ে দেয়ার সেই পুরোনো চাল শুরু হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেই গত বছরের হেফাজত-হত্যাকাণ্ডের(!) ভূয়া চিত্র সংগ্রাহককে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশাল মানবাধিকার পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারকে নিয়ে ইউরোপের মাথাব্যাথা যতো কমছে, স্যাম চাচার মাথাব্যাথা সিদ্দকীর ততোই চিন চিন করে বাড়ছে, যদিও তা এখনও জানান দিচ্ছেন না তারা।
এদেশে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার আগেই যে মন্তব্য নতুন মাতাহারি করেছেন তাতে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে, সামনের দিনগুলি নানা যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হবে সরকারকে। এখনও যে এদেশে, বড় হাতের আঙুল-নাচন ছাড়া রাজনৈতিক ঝড় ওঠে না, তা আবারও হয়তো প্রমাণিত হতে যাচ্ছে।
২০১৩-কে কোনও মতে সামাল দেয়া গেছে, কিন্তু ২০১৫-কে সামাল দেয়াটা মুস্কিল হলেও হতে পারে যদি না, দেশের ভেতরটাকে বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনাকে আরও গতিশীল করা না যায়। লতিফ সিদ্দিকীর মতো আরও কিছু ইস্যু তৈরি না হলে সন্দেহাতীত ভাবে ২০১৫-তেও সুবিধে করতে পারবে না বড় কোনও আঙুল-নাচন।
কিন্তু ইস্যু তৈরি হতে তো এদেশে সময় লাগে না, নইলে কে জানতো যে, ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎই লতিফ সিদ্দিকী এসে নামবেন ঢাকা বিমানবন্দরে? জল ঘোলা হচ্ছে কোথাও না কোথাও, এটা যেমন সত্য তেমনই সেই ঘোলা জলে মাছ শিকারে আগ্রহী শিকারীরাও তৈরি হচ্ছেন, জাল, গামছা, ট্যাঁটা সমেত। দেখা যাক, জল কতোটা ঘোলা হয় আর এই শিকারীরা এতোদিনে শিকারে কতোটা পটু হয়েছেন!!
ছোট্ট একটা কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা নিয়ে আমরা সকলেই কমবেশি লাফালাফি করি। কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে, উভয় পক্ষের বিশ্বাসই এক ধরনের চেতনা থেকে উৎসরিত, সন্দেহ নেই। লতিফ সিদ্দিকী একজন চিহ্নিত মুক্তিযোদ্ধা, যেমনটি ছিলেন তার ভাই কাদের সিদ্দিকীও। কাদের সিদ্দিকী’র চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ কারণ তিনি নিজস্ব অবস্থান থেকেই বার বার বিচ্যুত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং আরও হবেন বলে মনে হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের আইকনদের এই অবস্থা দেখলে একথা মনে হতেই পারে যে, একদিন হয়তো এদেশে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি একটি গালি হিসেবেও উল্লেখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকী শত দোষের পরেও তিনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে কোনও ধরণের বেঈমানি করেছেন বলে প্রমাণ নেই। তিনি ব্যক্তি জীবনে অসৎ হয়েছেন কি হননি সে বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার অবস্থান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। তিনি চেতনা বলতে নিশ্চয়ই বুঝতেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে, যেখানে বাক্ স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা। কিন্তু আজকে তাকেও তার “কথার বলি” হতে হচ্ছে, যদিও তিনি দেখতে পাচ্ছেন যে, এদেশে ধর্মের নামে অজস্র মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়েছে, সংখ্যাগুরুত্ব দিয়ে সংখ্যালঘুকে আঘাত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে, এদেশে গজিয়ে উঠেছে উগ্র ধর্মবাদী বিষবৃক্ষ, যারা কথায় কথায় ধর্মের মানুষকে হত্যা করতে পিছপা হয় না এবং অদূর ভবিষ্যতে এদেশে ধর্মের নামে একটি বড় ধরনের অন্যায্য কাটাকাটির পদধ্বনিও হয়তো তিনি শুনতে পাচ্ছেন।
কিন্তু ইস্যু তৈরি হতে তো এদেশে সময় লাগে না, নইলে কে জানতো যে, ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎই লতিফ সিদ্দিকী এসে নামবেন ঢাকা বিমানবন্দরে? জল ঘোলা হচ্ছে কোথাও না কোথাও, এটা যেমন সত্য তেমনই সেই ঘোলা জলে মাছ শিকারে আগ্রহী শিকারীরাও তৈরি হচ্ছেন, জাল, গামছা, ট্যাঁটা সমেত। দেখা যাক, জল কতোটা ঘোলা হয় আর এই শিকারীরা এতোদিনে শিকারে কতোটা পটু হয়েছেন!!
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি এখন কতোটুকু লজ্জিত আমি বলতে পারবো না, কিন্তু নিঃসন্দেহে তিনি এ জন্য নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছেন। কারণ, এই বেয়াড়া বাংলাদেশের জন্যতো তিনি যুদ্ধ করেননি, করেছেন কি? যেখানে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সাধারণ বক্তব্যকেও কারণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে? একদিন যখন এই দেশে আইএস-এর মতো জঙ্গিরা ধর্মের নামে আরও আরও হত্যায় উদ্যত হবে তখন আমাদের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষেরা বুঝতে পারবো, লতিফ সিদ্দিকীর কথাকে কেন্দ্র করে এদেশে ঘটা ঘটনায় চোখ বুজে থেকে আমরা কত বড় ভুলটাই না করেছি। কিন্তু ততদিনে, যা ঘটার সব ঘটে যাবে, ততোদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে বোধোদয় ঘটার!!

সংগৃহীত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.