নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nature

হুতুম

হুতুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামে বিয়ের বয়স ও নারীবাদীদের যুক্তিতর্ক

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭

বিয়ের বয়স একটি আপেক্ষিক বিষয়। বয়স সীমা নিয়ে চলমান যুক্তি তর্কও আবন্তর। অনেকটা গায়ে পরে পরের রান্নায় লবন দেওয়ার মতো। কোনো তর্কেই বিষয়টার চূড়ান্ত সমাধান নেই। চূড়ান্ত সমাধান দেয়নি ইসলামসহ কোনো ধর্মেও । স্থান কাল ও অবস্থাবেধে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের। ১৮৯১ সালের ইংরেজ শাসনামলে স্ত্রীর বয়স ১২ আইন পাস করা হলে, হিন্দুসমাজে প্রচুর প্রতিবাদ ওঠে। ইংরেজরা হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাসে হস্তক্ষেপ, হিন্দু সংস্কৃতি নষ্ট কারার অভিযোগও করেন হিন্দুরা। কারণ মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, মেয়েদের আট বছর বয়সের মধ্যেই বিবাহ দিতে হবে। হিন্দুসমাজে আট বছরবয়সী মেয়েকে বলা হয় গৌরী। নয় হলে রহিনী। হিন্দু মেয়েদের এগারো বছরের আগে বিয়ে না হলে অভিভাবক নরকে যাওয়ার হুমকিও আছে।
ইসলাম তো এই বিষয়ে আরও অনুচ্চারিত। আল্লাহ তায়ালা কোরআন বলছেন, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। সুরা নিসা : ৬

নবীজি সা. হাদিস বলছেন , তোমাদের মাঝে যে নারী পুরুষযোগ্য সে যেন বিয়ে করে। মুসলিম শরিফ : ৩৪০০
উপর্যুক্ত কোরআন ও হাদিসে বিয়ের এই যোগ্যতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। ছেলেমেয়ের শারীরিক মানসিক ও আর্থিক যোগ্যতা অবশ্যই বিবেচিত হবে। বিয়ের জন্য ছেলেমেয়ের বয়স যোগ্যতা, শারীরিক অবকাঠামোগত সামর্থ্য, সাংসারিক ব্যয়ের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা অবশ্যই জরুরি। মানুষের কল্যাণেই বিধি বিধান। সুতরাং যে বয়সে বিয়ে করলে নারীর স্বাস্থ্যহানী হবে বা জরায়ু ক্যান্সার, রক্তশূন্যতা, অপুষ্ট শিশু জšে§র আশঙ্কা ইত্যাদি বাড়বে, সর্বোপরি মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়বে সে অবস্থায় অবশ্যই বিয়ে করা উচিত নয়। ইসলাম কখনই এই বিয়ে সমর্থন করে না। বরং অনুৎসাহিত করে ও নিষেধ করে। বিপরীতে সামর্থ্যবান নারীপুরুষের শরীয়ত মতো বিয়ে অধিকার হরণ করার ক্ষমতাও ইসলাম কাউকে দেয়নি। অভিভাবকের সম্মতিতে, ছেলেমেয়ের শারীরিক মানসিক ও আর্থিক যোগ্যতা বিবেচিত হলে শুধু বয়স সীমার আপত্তি তোলে বিয়ে ভেঙে দেওয়া অনধিকারচর্চা। কারও জীবনে এই অনধিকারচর্চাটা অভিশাপ হয়েও দেখা দেয়। বাস্তবতা হলো বিয়ের জন্য বয়স বাধা নয়। বাধা হলো যোগ্যতা। বয়স আটারো বা ষোল হোক বৃদ্ধ বাবা মা যদি যোগ্য ছেলেমেয়েকে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কি অধিকার আছে বাধা দেওয়ার? মেয়ের সামাজিক নিরাপত্তা, ছেলের চারিত্রিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য বৃদ্ধ বাবা মায়ের এই আয়োজন কি কল্যাণকর নয়? তাহলে বয়সের দোহাই তোলে বিয়ে বাড়িতে পুলিশি নাটক সাজিয়ে একজন উপযুক্ত ছেলে ও মেয়ের জীবনে অভিশাপের কলংক লেপন করার অধিকার সরকার সংরক্ষণ করে কি? নারীবাদী সমাজকর্মীদের আত্মচিৎকার,রাষ্ট্রের সব আইন ও ধর্মের সব বিধান যদি মানুষের কল্যাণে হয়, তাহলে স্থান কাল ও পাত্র কেন বিবেচিত হবে না ?

তাছাড়া, আমরা কেন দাক্তারদের পরামর্শ নেই না? আমিত একদিন এক টিভি প্রোগ্রামে এক ডাক্তার কে বলতে শুনলাম যে, মেয়েদের বয়স ২৪ পার হলে বাচ্চা নেয়ার ঝুঁকির সময় শুরু হয় ।

বাস্তবে আমি ঢাকার কাম্ব্রিয়ান স্কুল ও কলেজে, বিভিন্ন আইটি ফার্ম ও ব্যাংকে চাকুরীর সুবাদে যত নারীর সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে বা অন্যর মাধ্যমে জানতে পেড়েছি তারা সবাই কোন কোন ভাবে বয়েসের কারনে (বেশিরভাগ) বাচ্চা নিতে সমস্যায় সম্মক্ষিন হয়েছে।
এমনকি উনাদের কন্সিভের বাচ্চা অটোমেটিক নষ্ট হয়েছে।


বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, বিয়ের জন্য বয়স সীমার নির্ধারণ করে আইন নয়; বরং নারীপুরুষের সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে সরকারি নীতিমালা বা সুপারিশ থাকতে পারে।



মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ইনিয়ে বিনিয়ে বায়বীয় যুক্তি দিয়ে কি ঘোড়ার ডিম বুঝাতে চাইলেন, নিজেই বুঝেছেন কিছু?

বাঙালীর সব যুক্তি তর্ক উচ্চারিত বা অনুচ্চারিতভাবে শেষ হয় গিয়ে মেয়েদের ওড়নায় আর সতীপর্দায়! পর্দাবাদী তিমিরবিদারী পুরুষ সব। দুনিয়াতে যেন তাদের আর কোন টপিক্স নাই, এটাই যেন জীবন মরণ একটা বিষয়। ৮ বছর ১৪ বছরের মেয়েদের বিয়ে না করতে পারলে / দিতে পারলে তাদের যেন জন্মটাই ব্যার্থ হয়ে যাবে। আহা রুচি! আহা আমাদের চিন্তাভাবনা! এই কারনেই তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিগুলোর মধ্যে বাঙালীদের নাম এখনও আছে, কেননা এরকম মানুষের সংখ্যা আমাদের সমাজে ৯০% এরও বেশী।

ইসালামে বিয়ের বয়স স্পষ্ট করে বলা নেই! আর ভালো লাগে না এই বিষয় নিয়ে কচকচ করতে। ইসালামে তো ব্লগ ব্যাবহারের কথাও স্পষ্ট করে বলা নেই। ব্লগে লেখেন কেন?

নতুন ভার্সনে লাল পতাকা উড়ানোর ব্যাবস্থা আছে। এখনো দেই নি কাউকে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫

হুতুম বলেছেন: পৃথিবীতে মাবতাবাদী কাজ গুলোর মধ্যে সুস্থ সন্তান জন্ম দেয়াটা প্রধান । এই যে আজ আপনি এত বড় হয়েছেন, সুস্থভাবে বেচে থাকতে পারছেন এর পেছেনে আপনার মায়ের সুস্থতার অবদান ৯০% ।

মেয়েদের সতীত্ব অবশ্যই প্রয়োজন নিষ্পাপ থাকার জন্য, জারজ সন্তান না হবার আবশিকতার জন্য, সর্বোপরি মানব জাতিকে সুস্থভাবে বেচে, টিকে থাকার জন্য।

আসলে আপনার উত্তর দেয়ার আগে আমাকে জানতে হবে- আপনি কততুকু জানেন---------- জর্জ বারনারড শ' এর ম্যান ও সুপারম্যান - এ ওয়মেন'স নাচারালিজম, জারজ সন্তানের জীবন কাথা, বহুগামিতার উপকারিতা, নারীদের স্বাধীনতার নামে বস্তূবাদিদের ভোগের বস্তু করা--------- ইত্যাদি আরও অনেক ।-------------------

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: @ অপূর্ণ, আপনার আশেপাশে যেসব মেয়েদের দেখতে পাচ্ছেন, তাদের সবাই সামাজিক নিরাপত্তার চাদরে আচ্ছাদিত বলে এখানে মেয়েরা অনেকটাই নিরাপদ। তারা নিরাপদে স্কুল/কলেজে যেতে পারছে, নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারছে। কিন্তু মফস্বল এবং গ্রামাঞ্চলে দৃশ্যপট এরকম নয়। মেয়ে শিশু থেকে কিশোরী হলেই মা-বাবার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায়। একবার যদি প্রভাবশালী কারো বখাটে ছেলের নজরে পরে যায়, তো জীবন-মান-ইজ্জত সব হারানোর ভয় তাদেরকে জীবন থাকতেও তিলে তিলে শেষ করে ফেলে। কিন্তু তারপরেও আইনের ভয়ে অনেকেই মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেনা। সরকার আইন করে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া বন্ধ করতে পারে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ করে বখাটেদের উৎপাত কি বন্ধ করতে আদৌ পেরেছে? কোন মেয়ে হয়রানির শিকার হয়ে থানায় গিয়ে যদি মামলা করে, এই নিশ্চয়তা কি দেওয়া যাবে যে, অপরাধী গ্রেফতার হবে অথবা হলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে বের হয়ে আসবেনা?

নারী অধিকার, নারী মক্তির বড় বড় কথা বলে মেয়েদেরকে দলে টানা যায় ঠিকই, কিন্তু এভাবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়না। ৮ থেকে ১৪ বছরের মেয়ে বিয়ে করার ক্ষেত্রে পুরুষ জাতির লোলুপ দৃষ্টিভঙ্গি যতোটা দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী এসব মেয়ের সামাজিক নিরাপত্তার ইস্যুটি। যেসব অঞ্চলে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে, সেখানে কোন আইনের দরকার হবেনা। বাবা-মা যদি সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে, তবে কোন মা-বাবাই তার সন্তানকে প্রি-ম্যাচিওর অবস্থায় বিয়ে দেবেনা - আর্থিক অবস্থা যতই খারাপ হোক। এই গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: লেখকে বলছি, আপনি নিজেই বলেছেন,"বাধা হলো যোগ্যতা।" তাহলে সেখানে বয়স নিয়ে এত টানাহেঁচড়া কেন? আর ৮/১৪ বছরের একটা মেয়ের শারীর মা হওয়ার জন্য বা তার মা হওয়ার মন-মানসিকতা কতটুকু প্রস্তুত সেটা নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে বৈ কি! মেয়েদেরকে বাচ্চা জন্ম দেয়ার মেশিন না ভেবে "মানুষ" ভাবুন, অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাকে নিজে থেকে বিয়ের সিন্ধান্ত নিতে দিন। অকারণে ধর্ম টেনে আনার কোন দরকার দেখিনা।

@অপূর্ণ রায়হান: ভাই সাহেব, উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা বা সমালোচনা করুন। আর নিকৃষ্ট জাতিগুলোর তালিকার কোন রেফারেন্স পেলে ভালো হতো। আর অধিকার থাকার মানেই সেটার অপব্যবহার নয়।

ধন্যবাদ।

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

জেকলেট বলেছেন: @নীল আকাশ ২০১৪: আপনার সাথে সম্পুর্ন একমত।
আর নরীবাদিরা শুধু বয়সনিয়েই কথা বলেন কিন্তু তাদের সামাজিক নিরাপত্তার কথা একবার ও বলেননা। এমন ও দেখা গেছে প্রভাবশালীর ছেলে ব নিজের আত্বীয় হলে নিযাতিতা মেয়েটাকে চরিত্রহীন করার জন্য উনারাই উটেপড়ে লাগেন। এই ক্ষেত্রে পুলিশ পরযন্ত অশায় হয়ে যায়।

৫| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: @নীল আকাশ, আমারই এই ইস্যুতে লেখা ''বাঙালীর সুইট সিক্সটিন অভিলাষ' পোষ্টে আলোচনা হয়েছে? আমি মনে করতে পারছি না। হলে তো ভালো , না হলে দেখে নেওয়ার অনুরোধ রইল।

সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলছেন, আইন ছাড়া! অসাধারণ বলেছেন!

মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবেন, আর যারা দোষী ( পুরুষরা ) তাদের জন্য কোন আইন রাখবেন না!

মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো পাগল আপনারা, একটা ১৪ বছরের বা ৮ বছরের ছেলেকে আপনারা বিয়ের কথা বলেন না! আপনার নিজের যদি ছেলে সন্তান হয় আপনি তাকে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দিবেন?

@ইফতেখার ভূইয়া, DO YOU REALLY NEED A REFERENCE ? দেশপ্রেমিক হওয়া ভালো, অন্ধ চেতনাবাদী হওয়া ভালো না।


@লেখক, সিনিয়ার অনেক ব্লগারই আমাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, আপনাদের মতো অবুঝদের সাথে তর্ক বিতর্ক না করতে। কিন্তু তারপরেও কেন যে করি বুঝি না। আপনাদের এভোয়েড করাই যে উত্তম তা তারা ভুল বলেন নি।

সুতরাং, বিদায়।।

৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: @হুতুম ঐ যে প্রথম মন্তব্যে বলেছি, দেশের ৯০% মানুষ আপনাদের মতো। আমি কতোটুকু জানি তা তো আপনার মতো দুই একটা উধৃতি দিয়ে পাল্লা বাটখারা দিয়ে মেপে বলতে পারবো না, তবে এই একই বিষয়ে আপনার বা আপনাদের মতো যারা আছেন তাদের যত ধ্রুপদী যুক্তি মনে বা মগজে আসতে পারে তা নিয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি খুব সহজ সরল ভাষায়। বিয়ের নতুন বয়সসীমাঃ যৌক্তিকতা বনাম বাঙালীর ‘সুইট সিক্সটিন’ অভিলাষ । এখানে।

আপনার মহা মূল্যবান যুক্তিগুলো এসে দিয়ে যাবেন এখানে, অবশ্য পোস্ট পড়ার পরেও যদি আপনার থলিতে যুক্তি অবশিষ্ট থেকে থাকে আর কি! আর না আসলে তো বুঝলামই আপনার দৌড় কতোটুকু! বিব্রত হওয়ার কিছু নেই।

ভালো থাকবেন :)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

হুতুম বলেছেন: @অপূর্ণ রায়হান, দয়া করে, "ক্ষতিগ্রস্থ" এর কমেন্টটা পড়ুন । সব উত্তর পেয়ে যাবেন ঃ


ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আমার একটা পোস্ট নিচে কপি+পেস্ট করলাম -

বিয়ের উপযুক্ত বয়স কত? আমাদের গ্রামীণ সমাজে বাল্যবিয়ের সমস্যা রয়ে গেছে এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের নীতি নির্ধারক ও বিজ্ঞ সমাজে তথা এনজিওদের বিশেষ সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতা রয়েছে। এই নিয়ে জাতিসঙ্ঘেরও মাথাব্যাথা কম নাই; সম্প্রতি, ইউনিসেফ-এর এক গবেষনায় বাংলাদেশকে বাল্যবিয়েতে বিশ্বের শীর্ষে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৩৩% মেয়েদের ১৫ বছরের আগে ও ৬৬% মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। সাধারণভাবে বলা যায়, এটি একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা বটে। বাল্যবিয়ে অবধারিতভাবে নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন পরিবারগুলোতে প্রচলিত; মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত পরিবারে এর উপস্থিতি খুবই নগন্য। এ কারণে ইউনিসেফের তথ্যের সঠিকতা আমাদের সমাজ বিশ্লেষনে আমার কাছে খুব সঠিক মনে হয় না। প্রায় একই সময়ে কাকতালীয়ভাবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মন্ত্রীসভার মিটিঙে আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স বর্তমানে ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের ১৮ বছর থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ১৮ ও ১৬ বছর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে; অবশ্য আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স সরকার কমাতে পারবে কি-না তা পরীক্ষা করেই তা চূড়ান্ত করা হবে (সকালের খবর, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ )। বাল্যবিয়ের বিপরীতে, অধিক বয়সে বিয়ে যে কোন সমস্যা তা নিয়ে বিস্ময়করভাবে আমাদের সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজে কোন উদ্বেগ বা দুঃশ্চিন্তা নাই। বরং ব্যাপক বিভ্রান্তি আছে, সঠিক করে বললে, গত দুই প্রজন্মে তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে পত্রপত্রিকায় বা টকশোতে এখনও কোন বিশ্লেষন চোখে পড়ে নাই, ব্লগে দুই-একটা পোস্ট পড়েছে, মতামত এসেছে আশানুরূপ কম। আমি এই বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে চাই। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে কতগুলো ফ্যাক্ট (সূত্র: উইকিপিডিয়া) জানা যাক:

১) পিউবার্টি বা বালেগ হওয়ার বয়স মেয়েদের জন্য ১০-১১ বছর, ছেলেদের জন্য ১১-১২ বছর। মেয়েদের মেনুস্ট্রেশন বা মাসিক শুরুর সময় ১২-১৩ বছর।

২) কনসেন্ট এজ বা যৌন কর্মকান্ডে সম্মতিমূলক অংশগ্রহণের বয়স বিশ্বব্যাপী ১৩ বছর (স্পেন) থেকে ১৮ বছর (তুরস্ক) পর্যন্ত। ইয়েমেনে যে কোন বয়সে বিয়ে হওয়াকেই কনসেন্ট এজ হিসাবে ধরে। বাংলাদেশে পেনাল কোড অনুসারে এই কনসেন্ট এজ হল ১৪ বছর।

৩) বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সরকারিভাবে বিয়ের বয়স নির্ধারিত নাই, বাংলাদেশে আছে, সেটা মেয়েদের জন্য ১৮ বছর ও ছেলেদের জন্য ২১ বছর। অতি সম্প্রতি এই বয়স কমানোর প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় গৃহীত হয়েছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪) মাতৃত্বের জন্য শারীরীকভাবে সবচে উপযুক্ত বয়স ১৮ বছর থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। ২৭ বছরের পর থেকে মাতৃত্বে উপযুক্ততায় ভাটা পরতে থাকে এবং ৩৫ বছর থেকে মাতৃত্বের উপযুক্ততা ব্যপকভাবে হ্রাস পেতে থাকে (এই তথ্য পশ্চিমা দেশগুলোর, আমাদের ক্ষেত্রে ধারণা করি বয়সের এই চক্র আরও আগে শুরু ও শেষ হয়)।

আমার আপত্তি আমাদের দেশের বৈধ বিয়েতে ইউনিসেফের দুঃখ, দুঃশ্চিন্তা উতলে উঠায়। ১৮ বছরের আগে বিয়ে করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় আর ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করে সেক্স করলে মানবজাতি উন্নতির চূড়াঁয় উঠে যায়! আমি আফ্রিকাতে শতশত কোলে-শিশু বালিকা-কিশোরী মাতা দেখেছি। ইউনিসেফের সেসবে আপত্তি নাই, আপত্তি শুধু বিয়ে করলে! পাশ্চাত্যে টিনএজ গর্ভধারণ ও টিনএজ মাতৃত্ব একটা যারপরনাই সামাজিক সমস্যা, কিন্তু বিয়ের মাধ্যমে নয় বলে ঐগুলো সমস্যা না, ইউনিসেফের তাতে কোন দুঃশ্চিন্তা নাই। আফ্রিকা বা পাশ্চাত্যে টিনএজ প্রেগনেন্সি বিয়েবহির্ভূত বলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে সেসব সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কম মাত্রায় উপস্থিত। পাশ্চাত্যে টিনএজ গর্ভধারণ ও মাতৃত্ব প্রায় শতভাগ অপরিকল্পিত এবং এর কারণে একটি মেয়ে সামাজিকভাবে অসহায় ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখী হয়, লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যৌনরোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং আবগগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের বাস্তবতায় অন্যান্য ঝুঁকি অনেক কম এবং এটিও পারিবারিক পরিকল্পনার আওতায় হয়ে থাকে। সুতরাং, টিনএজ গর্ভধারণ ও মাতৃত্বের সমস্যা আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের তুলনায় অনেকখানি কম। অবশ্য, ১৩-১৪ বছরের মাতৃত্বের শরীরবৃত্তীয় সমস্যা সবখানে একই হলেও পুষ্টি ও চিকিৎসাগত দিক থেকে পাশ্চাত্য অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে টিনএজ মাতৃত্ব একটি বৈধ বৈবাহিক পরিবেশে হওয়ায় টিনএজ মার পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি সাধ্যমত যত্ন এবং শারীরীক ও মানসিক সহযোগীতা পায়, যার খুবই অভাব একটি পাশ্চাত্যের টিনএজ মার ক্ষেত্রে। অথচ এই নিয়েই ইউনিসেফের ভাবনার অন্ত নাই। আমাদের আবাল ইন্টেলেকচুয়াল, আবাল সাংবাদিকরা সেইটা নিয়ে হুক্কাহুয়া করে খুব লাফায়। এই ইস্যুতে এনজিও ব্যবসাও রমরমা, বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে দাতারাতো বসেই আছে! এই নিয়ে বিজ্ঞাপন বানাতেও মিথ্যা তথ্য দেয় যে ১৬-১৭ বছরে মা হলে নাকি শিশু পুষ্টিহীন এবং শারীরীক, মানসিক প্রতিবন্ধি হবে... আবালগুলা ইন্টারনেট ঘেঁটেও এই সামান্য তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারে না, তাদের দৌড় বলিউডের নায়িকাদের নষ্ট দিনলিপি গোগলানো পর্যন্তই। স্পেনের ১৩ বছরের বা বাংলাদেশের ১৪ বছরের মেয়েদের (এবং ছেলেদের) যদি যৌনকর্মে অংশগ্রহণে সমস্যা না থাকে, তবে বিয়েতে আপত্তি কেন? যার মাতৃত্বের গড় উপযুক্ত বয়সের শুরু ১৮ বছরে, তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে তা ১৬ হতেই পারে, এমনকি ১৫ও খুব ব্যতিক্রম হবে না। আর কনসেন্ট এজ ১৪ হলে যদি বিয়ের বয়স ১৮ হয় তবে তা বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে ৪ বছরের জন্য আইনত স্বীকৃতি দেয় যা সমাজ ও ধর্ম এখানে দেয় না। এই অসঙ্গতি একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে অবশ্যই সহায়ক না। বৈবাহিক বয়স কমানোর ইস্যুতে সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। আমাদের দেশে রাজনীতি ও ধর্ম সংক্রান্ত কোন বিষয়ে পান থেকে চুন খসলে ব্যাপক আলোচনা হয়; অন্য বিষয়ে না জনগণ, না মিডিয়া, না টকশো-তে তেমন কোন আলোচনা, বিশ্লেষন হয়! এই বিষয়টি তেমনই একটা।

বেশি বয়সে বিয়ে করার আইডিয়া আমাদের সমাজ এত বেশি খেয়েছে যে, ছেলেদের ৩০-এর আগে এবং মেয়েদের ২৩-২৪ এর আগে বিয়ে মধ্যবিত্ত সমাজ গোনার বাইরে রেখেছে। আমাদের আঁতলামি টিভি নাটকগুলোতে (ও কিছু কিছু সিনেমাতে) ইঁচড়ে পাঁকা, ত্যাড়া-ঢংগী নায়িকা বা তাদের মা-বাবারা আইবুড়োদের নিয়ে নিয়মিত ঢং করে ডায়লগ দেয়, 'লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে নিয়ে ভাবছি না'। বিয়েতে যত আপত্তি, বিয়ে বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কে নয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা দুই প্রজন্ম আগের মত উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে পারছে না, আর সামাজিক-ধর্মীয় কারণে পাশ্চাত্য বা আফ্রিকান তরিকায় অবাধে জৈবিক চাহিদাও মেটাতে পারছে না; এতে অনৈতিকতা থেমে থাকছেনা, থাকার কথাও না; বাড়ছে লুকোচুরি সম্পর্ক, বাড়ছে পাপাচার এবং ব্যক্তি ও সামাজিক অবক্ষয়। সমাজে ধর্ষণ ও যৌননির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আমার মতে এই বিলম্ব বিয়ে (অন্যান্য প্রধান কারণগুলো – মাদক ও পর্ণগ্রাফির বিস্তার, হিন্দি ছবি ও সিরিয়ালের নেতিবাচক প্রভাব, ক্রবর্ধমান পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়, আইনের শাসনের অভাব, ধর্মীয় ও নৈতিক মটিভেশনের অভাব)। যার মাতৃত্বের গড় উপযুক্ত বয়সের শেষ ২৭ বছরে (এটা পশ্চিমা হিসাবে, আমাদের দেশে তা আরও আগে হওয়ার কথা), তাকে লেখাপড়া শেষ (মাস্টার্স) করে ২৫-২৬ বছরে বিয়ে করার নসিহত কী পরিমাণ গর্হিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বাস্তব পরিস্থিতি হল, পড়ালেখা শেষ করেই সে বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসবে, এমনটা খুবই কম ঘটে। ততদিনে আইবুড়ো হয়ে নিজ ও পরিবারের জন্য হতাশা, কোন কোন ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি নিয়ে আসে।

পশ্চিমা বিশ্ব ও আমাদের দেশে প্রচলিত তাদের শিক্ষাব্যবস্থা পারলে মাতৃত্বের শরীরবৃত্তীয় চক্রকে ১৮-২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৫-৩৫ বছর করে দেয়! পারলে সেটাই হত, কিন্তু স্রষ্টার ইচ্ছাকে কে রদ করবে? আমাদের আধুনিক সমাজব্যবস্থা এই প্রাকৃতিক নিয়মকে তুচ্ছ করতে চাইছে, সেটা হবার নয়। প্রকৃতির নিয়মকে ধারণ করে জীবন সাজানোই সমস্যার সবচে সেরা সমাধান।




৭| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:০৩

rakhal rajib বলেছেন: সমাজের দুই শ্রেণির মানুষ মেয়েদের বয়স নিয়ে হৈচৈ করেন: এক-অতি প্রগতিশীল। এরা ধর্মীয় বিধি-বিধানের ধার ধারে না। কুকুর-বিড়ালের মতো যখন খুশি তখন রতিক্রিয়াই লিপ্ত হতে পছন্দ করেন। এরা বিয়ে নামক বস্তুটাকে তামাশা মনে করেন। যদিও সামাজিকতার জন্য বিয়ে করেন। এরা মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে নিয়ে উচ্চবাচ্য করবেন। আবার তারাই কম বয়সী মেয়েদের সাথে যৌন মিলনে অধিক উৎসাহী। এরা হলেন: কবি, সাহিত্যিক, উচ্চমার্গের সুশীল, পত্রিকার সম্পাদক,সাংবাদিক, পন্ডিত ব্লগার, নব্য ধনী ইত্যাদি,আরো অনেকে। দুই-অতি ধার্মিক। এরা অতি প্রগতিশীলের বিপরীত মেরুর। এরা বেশি বয়সী মেয়েদের নিয়ে চিৎকার করবেন। অাবার কচি জিনিসের প্রতি অালাদা একটা টান অনুভব করেন। আপনারা জানেন এরা কারা। বক ধার্মিক, এরশাদ ইত্যাদি।
কিন্তু কেউ মেয়েদের সামজিক সুরক্ষার কথা বলবেন না। গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বয়ঃসন্ধির পর কি দুঃসহ জীবন-যাপন করে। চারিদিকে কত বাধা-বিপত্তি। ভুক্তভুগী মেয়েরাই শুধু জানে তারা কতটা অসহায়। আমাদের কে আগে এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। তারপর মেয়েদেরর উপরই ভার থাকুক তারা কোন বয়সে বিয়ে করতে চায়।

৮| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৫

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: আমার একটা পোস্ট নিচে কপি+পেস্ট করলাম -

বিয়ের উপযুক্ত বয়স কত? আমাদের গ্রামীণ সমাজে বাল্যবিয়ের সমস্যা রয়ে গেছে এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের নীতি নির্ধারক ও বিজ্ঞ সমাজে তথা এনজিওদের বিশেষ সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতা রয়েছে। এই নিয়ে জাতিসঙ্ঘেরও মাথাব্যাথা কম নাই; সম্প্রতি, ইউনিসেফ-এর এক গবেষনায় বাংলাদেশকে বাল্যবিয়েতে বিশ্বের শীর্ষে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৩৩% মেয়েদের ১৫ বছরের আগে ও ৬৬% মেয়েদের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। সাধারণভাবে বলা যায়, এটি একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা বটে। বাল্যবিয়ে অবধারিতভাবে নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীন পরিবারগুলোতে প্রচলিত; মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত পরিবারে এর উপস্থিতি খুবই নগন্য। এ কারণে ইউনিসেফের তথ্যের সঠিকতা আমাদের সমাজ বিশ্লেষনে আমার কাছে খুব সঠিক মনে হয় না। প্রায় একই সময়ে কাকতালীয়ভাবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মন্ত্রীসভার মিটিঙে আইন অনুযায়ী বিয়ের ন্যূনতম বয়স বর্তমানে ছেলেদের ২১ এবং মেয়েদের ১৮ বছর থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ১৮ ও ১৬ বছর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে; অবশ্য আন্তর্জাতিক শিশু সনদ অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স সরকার কমাতে পারবে কি-না তা পরীক্ষা করেই তা চূড়ান্ত করা হবে (সকালের খবর, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ )। বাল্যবিয়ের বিপরীতে, অধিক বয়সে বিয়ে যে কোন সমস্যা তা নিয়ে বিস্ময়করভাবে আমাদের সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজে কোন উদ্বেগ বা দুঃশ্চিন্তা নাই। বরং ব্যাপক বিভ্রান্তি আছে, সঠিক করে বললে, গত দুই প্রজন্মে তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে পত্রপত্রিকায় বা টকশোতে এখনও কোন বিশ্লেষন চোখে পড়ে নাই, ব্লগে দুই-একটা পোস্ট পড়েছে, মতামত এসেছে আশানুরূপ কম। আমি এই বিষয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে চাই। মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে কতগুলো ফ্যাক্ট (সূত্র: উইকিপিডিয়া) জানা যাক:

১) পিউবার্টি বা বালেগ হওয়ার বয়স মেয়েদের জন্য ১০-১১ বছর, ছেলেদের জন্য ১১-১২ বছর। মেয়েদের মেনুস্ট্রেশন বা মাসিক শুরুর সময় ১২-১৩ বছর।

২) কনসেন্ট এজ বা যৌন কর্মকান্ডে সম্মতিমূলক অংশগ্রহণের বয়স বিশ্বব্যাপী ১৩ বছর (স্পেন) থেকে ১৮ বছর (তুরস্ক) পর্যন্ত। ইয়েমেনে যে কোন বয়সে বিয়ে হওয়াকেই কনসেন্ট এজ হিসাবে ধরে। বাংলাদেশে পেনাল কোড অনুসারে এই কনসেন্ট এজ হল ১৪ বছর।

৩) বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সরকারিভাবে বিয়ের বয়স নির্ধারিত নাই, বাংলাদেশে আছে, সেটা মেয়েদের জন্য ১৮ বছর ও ছেলেদের জন্য ২১ বছর। অতি সম্প্রতি এই বয়স কমানোর প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় গৃহীত হয়েছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

৪) মাতৃত্বের জন্য শারীরীকভাবে সবচে উপযুক্ত বয়স ১৮ বছর থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। ২৭ বছরের পর থেকে মাতৃত্বে উপযুক্ততায় ভাটা পরতে থাকে এবং ৩৫ বছর থেকে মাতৃত্বের উপযুক্ততা ব্যপকভাবে হ্রাস পেতে থাকে (এই তথ্য পশ্চিমা দেশগুলোর, আমাদের ক্ষেত্রে ধারণা করি বয়সের এই চক্র আরও আগে শুরু ও শেষ হয়)।

আমার আপত্তি আমাদের দেশের বৈধ বিয়েতে ইউনিসেফের দুঃখ, দুঃশ্চিন্তা উতলে উঠায়। ১৮ বছরের আগে বিয়ে করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় আর ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করে সেক্স করলে মানবজাতি উন্নতির চূড়াঁয় উঠে যায়! আমি আফ্রিকাতে শতশত কোলে-শিশু বালিকা-কিশোরী মাতা দেখেছি। ইউনিসেফের সেসবে আপত্তি নাই, আপত্তি শুধু বিয়ে করলে! পাশ্চাত্যে টিনএজ গর্ভধারণ ও টিনএজ মাতৃত্ব একটা যারপরনাই সামাজিক সমস্যা, কিন্তু বিয়ের মাধ্যমে নয় বলে ঐগুলো সমস্যা না, ইউনিসেফের তাতে কোন দুঃশ্চিন্তা নাই। আফ্রিকা বা পাশ্চাত্যে টিনএজ প্রেগনেন্সি বিয়েবহির্ভূত বলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে সেসব সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কম মাত্রায় উপস্থিত। পাশ্চাত্যে টিনএজ গর্ভধারণ ও মাতৃত্ব প্রায় শতভাগ অপরিকল্পিত এবং এর কারণে একটি মেয়ে সামাজিকভাবে অসহায় ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখী হয়, লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যৌনরোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং আবগগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লেখাপড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের বাস্তবতায় অন্যান্য ঝুঁকি অনেক কম এবং এটিও পারিবারিক পরিকল্পনার আওতায় হয়ে থাকে। সুতরাং, টিনএজ গর্ভধারণ ও মাতৃত্বের সমস্যা আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের তুলনায় অনেকখানি কম। অবশ্য, ১৩-১৪ বছরের মাতৃত্বের শরীরবৃত্তীয় সমস্যা সবখানে একই হলেও পুষ্টি ও চিকিৎসাগত দিক থেকে পাশ্চাত্য অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে টিনএজ মাতৃত্ব একটি বৈধ বৈবাহিক পরিবেশে হওয়ায় টিনএজ মার পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি সাধ্যমত যত্ন এবং শারীরীক ও মানসিক সহযোগীতা পায়, যার খুবই অভাব একটি পাশ্চাত্যের টিনএজ মার ক্ষেত্রে। অথচ এই নিয়েই ইউনিসেফের ভাবনার অন্ত নাই। আমাদের আবাল ইন্টেলেকচুয়াল, আবাল সাংবাদিকরা সেইটা নিয়ে হুক্কাহুয়া করে খুব লাফায়। এই ইস্যুতে এনজিও ব্যবসাও রমরমা, বাল্যবিয়ে ঠেকাতে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে দাতারাতো বসেই আছে! এই নিয়ে বিজ্ঞাপন বানাতেও মিথ্যা তথ্য দেয় যে ১৬-১৭ বছরে মা হলে নাকি শিশু পুষ্টিহীন এবং শারীরীক, মানসিক প্রতিবন্ধি হবে... আবালগুলা ইন্টারনেট ঘেঁটেও এই সামান্য তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারে না, তাদের দৌড় বলিউডের নায়িকাদের নষ্ট দিনলিপি গোগলানো পর্যন্তই। স্পেনের ১৩ বছরের বা বাংলাদেশের ১৪ বছরের মেয়েদের (এবং ছেলেদের) যদি যৌনকর্মে অংশগ্রহণে সমস্যা না থাকে, তবে বিয়েতে আপত্তি কেন? যার মাতৃত্বের গড় উপযুক্ত বয়সের শুরু ১৮ বছরে, তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে তা ১৬ হতেই পারে, এমনকি ১৫ও খুব ব্যতিক্রম হবে না। আর কনসেন্ট এজ ১৪ হলে যদি বিয়ের বয়স ১৮ হয় তবে তা বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ককে ৪ বছরের জন্য আইনত স্বীকৃতি দেয় যা সমাজ ও ধর্ম এখানে দেয় না। এই অসঙ্গতি একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে অবশ্যই সহায়ক না। বৈবাহিক বয়স কমানোর ইস্যুতে সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। আমাদের দেশে রাজনীতি ও ধর্ম সংক্রান্ত কোন বিষয়ে পান থেকে চুন খসলে ব্যাপক আলোচনা হয়; অন্য বিষয়ে না জনগণ, না মিডিয়া, না টকশো-তে তেমন কোন আলোচনা, বিশ্লেষন হয়! এই বিষয়টি তেমনই একটা।

বেশি বয়সে বিয়ে করার আইডিয়া আমাদের সমাজ এত বেশি খেয়েছে যে, ছেলেদের ৩০-এর আগে এবং মেয়েদের ২৩-২৪ এর আগে বিয়ে মধ্যবিত্ত সমাজ গোনার বাইরে রেখেছে। আমাদের আঁতলামি টিভি নাটকগুলোতে (ও কিছু কিছু সিনেমাতে) ইঁচড়ে পাঁকা, ত্যাড়া-ঢংগী নায়িকা বা তাদের মা-বাবারা আইবুড়োদের নিয়ে নিয়মিত ঢং করে ডায়লগ দেয়, 'লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে নিয়ে ভাবছি না'। বিয়েতে যত আপত্তি, বিয়ে বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কে নয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা দুই প্রজন্ম আগের মত উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে পারছে না, আর সামাজিক-ধর্মীয় কারণে পাশ্চাত্য বা আফ্রিকান তরিকায় অবাধে জৈবিক চাহিদাও মেটাতে পারছে না; এতে অনৈতিকতা থেমে থাকছেনা, থাকার কথাও না; বাড়ছে লুকোচুরি সম্পর্ক, বাড়ছে পাপাচার এবং ব্যক্তি ও সামাজিক অবক্ষয়। সমাজে ধর্ষণ ও যৌননির্যাতন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আমার মতে এই বিলম্ব বিয়ে (অন্যান্য প্রধান কারণগুলো – মাদক ও পর্ণগ্রাফির বিস্তার, হিন্দি ছবি ও সিরিয়ালের নেতিবাচক প্রভাব, ক্রবর্ধমান পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়, আইনের শাসনের অভাব, ধর্মীয় ও নৈতিক মটিভেশনের অভাব)। যার মাতৃত্বের গড় উপযুক্ত বয়সের শেষ ২৭ বছরে (এটা পশ্চিমা হিসাবে, আমাদের দেশে তা আরও আগে হওয়ার কথা), তাকে লেখাপড়া শেষ (মাস্টার্স) করে ২৫-২৬ বছরে বিয়ে করার নসিহত কী পরিমাণ গর্হিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বাস্তব পরিস্থিতি হল, পড়ালেখা শেষ করেই সে বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসবে, এমনটা খুবই কম ঘটে। ততদিনে আইবুড়ো হয়ে নিজ ও পরিবারের জন্য হতাশা, কোন কোন ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারি নিয়ে আসে।

পশ্চিমা বিশ্ব ও আমাদের দেশে প্রচলিত তাদের শিক্ষাব্যবস্থা পারলে মাতৃত্বের শরীরবৃত্তীয় চক্রকে ১৮-২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ২৫-৩৫ বছর করে দেয়! পারলে সেটাই হত, কিন্তু স্রষ্টার ইচ্ছাকে কে রদ করবে? আমাদের আধুনিক সমাজব্যবস্থা এই প্রাকৃতিক নিয়মকে তুচ্ছ করতে চাইছে, সেটা হবার নয়। প্রকৃতির নিয়মকে ধারণ করে জীবন সাজানোই সমস্যার সবচে সেরা সমাধান।

বাল্যবিয়ে বনাম আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে বিলম্ব বিয়ে

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০০

হুতুম বলেছেন: ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে তথ্যবহুল একটা পোস্ট দেয়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.