নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nature

হুতুম

হুতুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা এমন ষাঁড়ের লড়াই দেখতে চাই না

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

পুরান বছর শেষ আর নতুন বছর শুরু হরতাল দিয়ে। বছরটা কেমন যাবে আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। মারাত্দক এক দুশ্চিন্তায় মানুষ দিশাহারা। ৪ জানুয়ারি, ১২ রবিউল আউয়াল ছিল নবী করিম (সা.)-এর জন্মদিন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন-প্রাণ উজাড় করে এবার ইবাদত-বন্দেগিও করতে পারেনি। অশান্তিতে ছেয়ে আছে দেশ। ৩ তারিখ গভীর রাত থেকে প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে বন্দী, সরকার বলছে এও এক নাটক, কার কথা বিশ্বাস করব?


অনেক স্বামী স্ত্রী ছাড়া থাকতে পারে, ছেলেমেয়ে বাবা-মাকে ছাড়া থাকতে পারে কিন্তু মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্ত পারে না। আমি আবার অন্য ধাতুর মানুষ, মোবাইল ফোনের কোনো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করি না। কথা বলা ছাড়া আমার কাছে মোবাইলের আর কোনো প্রয়োজন নেই। তাও খাবার সময় স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে ছাড়া আর কারও ফোন ধরি না। বাবা-মা থাকতে, তাদের ফোন ধরতাম। হঠাৎ ছেলেবেলার বন্ধু মানবজমিনের সহ-সম্পাদক কবি সায্যাদ কাদিরের ক'টি কল দেখে তাকে রিং করেছিলাম। কাতর কণ্ঠে বলল, 'শরীরটা খারাপ। বারডেমে যাচ্ছি।' আসলে টাকা-পয়সার হাসপাতালের প্রতি আমার আগ্রহ নেই। তবু ডায়াবেটিসের রোগীদের বারডেমে যেতে হয়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কী হয়েছে? 'বুকে ব্যথা। বারডেমের কার্ডিয়াক বিভাগে ভর্তি হব।' আমার বাসার আশপাশে হাসপাতালের হাট, সামনেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। ধনবানরা যে যাই বলুন, সেখানকার সেবা-যত্ন-চিকিৎসা আমার খুবই পছন্দ। তাই বলেছিলাম, বুকের ব্যাপার হলে হৃদরোগে ভর্তি হতে পার। আমার কথায় সে হৃদরোগে এসেছিল। আমার এক চির সেবক তুহিন সিদ্দিকী সবসময় হাসপাতালে ঘোরাফেরা করে রোগীদের সেবা করে, কাউকে ভর্তির ব্যাপারটা সেই দেখে। সায্যাদ কাদির যেতে বলছিল। মনে হয় তখন রাত সাড়ে ১০টা। ছেলেবেলার বন্ধুর আবদার ফেলি কী করে? তাই হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলাম। সায্যাদ কাদির যত বড় লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক হোক কথাবার্তায় অতি সাধারণ। দেহ গড়নে খুবই ছোট। ডিউটি ডাক্তারের সামনে প্রায় ১০-১৫ মিনিট বসে থেকে তাকে খুব একটা সাবলীল মনে হয়নি। তাই প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর নাজির আহমেদ রঞ্জুকে ফোন করেছিলাম। প্রতি শুক্রবার সে টাঙ্গাইল যায়। যখন ডাক্তারকে বললাম রঞ্জুর সঙ্গে একটু কথা বলুন। তখনো তার মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখিনি। কিন্তু কথা বলে তিনি যখন বুঝতে পারলেন একজন প্রফেসর, তখন তিনি খুবই তৎপর হলেন এবং সায্যাদ কাদিরকে সিসিইউ-২-তে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। পরদিন সেখান থেকে কেবিনে। হৃদরোগ ইনস্টিটিউট সম্পর্কে আমার বহুদিনের ধারণা, কোনো রোগী সেখানে অনাদর পায় না, সায্যাদ কাদিরও যে পাবে না, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সে এখন ২২ নম্বর কেবিনে মোটামুটি ভালোই আছে। দয়াময় আল্লাহ তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করুন, সেই প্রার্থনাই করি।

গতকাল একদিকে গণতন্ত্রের বিজয়, অন্যদিকে হত্যা দিবস পালিত হয়েছে। মানে শিল-পাটায় ঘষাঘষি মরিচের জান ক্ষয়, সেই প্রবাদের মতো। দুই ষাঁড়ের লড়াইয়ের মাঝে পড়ার মতো মানুষের অবস্থা। সরকার চিৎকার করছে, তারা গণতন্ত্র মুক্ত করেছে বা রক্ষা করেছে। তাদের কথা ধোপে টিকত যদি অন্য কোনো সরকার থাকত। এ সরকারের আগেও তাদের সরকারই ছিল। সেখানে আর যা কিছুই হোক নির্বাচনকে কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি। পৃথিবীর কোথাও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোট পর্বকে কলঙ্কিত করা হয়নি। দুর্বল বিরোধী দলের কারণে ভোটের কলঙ্ক জগদ্বাসীর কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। তাই সরকারদলীয় লোকজন এখনো কথা বলছে। কৌশলী নেতৃত্ব থাকলে ২০১৪ সালের নির্বাচনী কলঙ্কে আওয়ামী সরকার পৃথিবীর কোথাও মুখ দেখাতে পারত না। ৩০০ আসনের ১৫৪ জন যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন অনির্বাচিত, সেখানে নির্বাচন বা ভোট হয়েছে এসব বলার সুযোগ কোথায়? বাকি ১৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া নিজেরা নিজেরা। একটি জোট, তারা একতরফা নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। এমন প্রহসন পৃথিবীর আর কোথাও কখনো কোনো দিন হয়নি। সরকার এবং সরকারি লোকজনরা এখনো ভাবছে, তারা লাভবান হয়েছে। এক বছর তো নিরুপদ্রবে চলেছে, তাই আরও ২-৪-১০-২০ বছর চলতে কোনো অসুবিধা হবে না। ভাবতে অসুবিধা কী? হাত-পা ছোড়ে আকাশে উড়ার চিন্তা করা যায় কিন্তু উড়া যায় না। এখন যেভাবে সরকার চলছে তাতে পরবর্তী ঠিকানা কী? ভয়াবহ এক বিপর্যয়। রাজনৈতিক আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দারোগা-পুলিশ দিয়ে মোকাবিলা করতে গেলে কখনো দারোগা-পুলিশ হাত-পা গুটিয়ে নিলে আর সরকার থাকে না।

মনে হয় সরকার নিজেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গাড়ি-ঘোড়া, লঞ্চ বন্ধ করে এভাবে কতদিন চালাবে? সরকারকে রাষ্ট্র চালাতে হয়, বিরোধী দলকে নয়। বিরোধী দলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এটা কোনো ভাষা নয়, পদ্ধতিও নয়। বিরোধী দলের নেতাকে গৃহবন্দী রেখে আন্দোলন দমানো যায় না। সরকার এবং প্রধান বিরোধী দল কারও উপরেই মানুষের আস্থা নেই, তাই এমনটা হচ্ছে। যে মুহূর্তে মানুষ বিরক্ত হয়ে রাস্তায় নামবে, সেই মুহূর্তেই সরকারি দারোগা-পুলিশ অচল। সেদিন ভারতীয় জনতা পার্টির এক নেতা বিজেপির সমর্থনের কথা যেভাবে ব্যক্ত করেছেন তাতে সরকারের লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ ভারতের দালাল হতে চায় না, বন্ধু হতে চায়। ভদ্রলোক বলেছেন, বাংলাদেশের সব হিন্দুর আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা উচিত। স্বাধীনতার পর এমন উলঙ্গভাবে কেউ বলতে পারেনি। ভারতীয় নেতার এ কথা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হবে। সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, দেশের সমৃদ্ধি চায়, তারা ষাঁড়ের লড়াই চায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশবাসী না চাইলেও আমরা ষাঁড়ের লড়াইয়ের মাঝে পড়েছি। এখান থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ পাচ্ছি না।

গত কয়েক দিন বিএনপির নেতানেত্রীরা বার বার যোগাযোগ করছেন। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর যোগাযোগটা আরও বাড়ছে। তারা বলার চেষ্টা করছেন, বিরোধী দলের সবার এক হয়ে কাজ করা উচিত। এই স্বৈরশাসককে প্রথমে উৎখাত করা উচিত। বেগম খালেদা জিয়াকে যে অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, এর প্রতিবাদ করা উচিত। আমারও তেমনই মনে হয়, আমাদের সবার মিলেমিশে প্রথম অগণতান্ত্রিক শক্তিকে শাসন করা উচিত। কিন্তু গত এক বছর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কারও সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে, তেমন নজির নেই। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই যারা ক্ষমতা দেখায় তাদের নিয়ে মানুষের বড় বেশি ভয়। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, বিকল্পধারার সভাপতি, প্রবীণ নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। আমিও নিশ্চয়ই যেতাম। কিন্তু আমার সমস্ত হৃদয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ফেটে পড়তে চাইলেও কেন যেন পা চলছে না। যে দলের নেতা আমার স্বাধীনতাকে রাজাকার বলে, বাংলাদেশকে রাজাকারী বলে, সেই দলের সমর্থনে পা বাড়াই কী করে? মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনো কাজ মুক্তিযোদ্ধা হয়ে করতে পারি না। যে যাই বলুন, আমি বিএনপিকেও মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে মনে করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের বন্ধু, রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধে তার কোনো ভূমিকা নেই- এসব যারা বলে তাদের পাকিস্তানের দোসর ছাড়া আর কী বলা যায়? তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করতে পারি না, দাঁতে দাঁত কামড়ে সহ্য করি। সরকার সবসময়ই তার কাজ করবে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। বিরোধী দলের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে হবে। সরকারের শক্তি অর্থবিত্ত সরকারি কর্মচারী, দারোগা-পুলিশ-মিলিটারি। কিন্তু বিরোধী দলের একমাত্র শক্তি জনসমর্থন বা জনগণ। বিরোধী দলও যদি জনগণকে তোয়াক্কা না করে, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য না দেয়, তাহলে সরকার আর বিরোধী দলের পার্থক্য কোথায়? বর্তমান বাংলাদেশে দুই প্রধান দলের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না, এটাই হচ্ছে নির্মম সত্য।

যখন লিখছিলাম, তখনো প্রধান বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। সারা দেশ জ্বলছে। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন পাকিস্তানিদের হাতে জ্বলেছি, তেমনটা আমরা দেখতে চাই না। গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া মোটেই অবরুদ্ধ নন। তিনি ইচ্ছা করেই তার গুলশানের কার্যালয় থেকে বাইরে বেরুননি। আমি তার কথা বিশ্বাস করে প্রচার মাধ্যমকে বলেছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা অবিশ্বাস করতে পারি না। এটা ছিল এখন থেকে ১৪-১৫ ঘণ্টা আগের কথা। এখন গুলশানে পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা জেলে থাকতে সন্ধ্যায় যেমন গেটে তালা দেওয়া হতো, ঠিক তেমনি পুলিশ গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের গেটে তালা দিয়েছে। তারপরও যদি বলা হয় তিনি অবরুদ্ধ নন, কাকের মতো চোখ বন্ধ করে ঠোঁট মুছে সরকার এবং আওয়ামী লীগ তা বলতে পারে, কিন্তু দেশবাসী তেমনটা মনে করে না। আর এ কথা মানতেই হবে, জনসমর্থনহীন কোনো সরকার বেশিদিন টিকে থাকে না। জনপ্রিয় সরকারকেই অনেক দিন টিকে থাকতে কষ্ট করতে হয়। ইরাকে বোমা মেরে সরকারের পতন করা হয়েছে কিন্তু মিসরের জনগণই সে দেশের সরকারের পতন ঘটিয়েছে, লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী বিষয় হচ্ছে সরকার। এটাকে সেভাবে বিবেচনা করে পা ফেললে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না। কোনো দিনই পা পিছলাবে না, এটা মনে করে ঘরে বসে থাকা যেতে পারে কিন্তু রাস্তায় নামা চলে না। অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয় এবং বাসভবনসহ গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর থেকে সব বাধা-নিষেধ প্রত্যাহার করে নিন। ইট, পাথর, বালুর ট্রাক দিয়ে কোনো গণদাবি স্তব্ধ করা যায় না। তাই সময় থাকতে সবাই আলাপ-আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করুন। এটা আমার কথা নয়, এটা দেশবাসীর মনের কথা।

প্রিয় ভগ্নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একটু পিছু ফিরে দেখবেন। এবার পিএসসি, জিএসসিতে পরীক্ষা না দিয়েও জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাই কর্মচারীদের ওপর বেশি ভরসা করবেন না
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

- See more at: Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন বলেছেন।

++

অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয় এবং বাসভবনসহ গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর থেকে সব বাধা-নিষেধ প্রত্যাহার করে নিন। ইট, পাথর, বালুর ট্রাক দিয়ে কোনো গণদাবি স্তব্ধ করা যায় না। তাই সময় থাকতে সবাই আলাপ-আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করুন। এটা আমার কথা নয়, এটা দেশবাসীর মনের কথা।

গণতন্ত্রের নাম করে চেতনার বিকৃত চর্চায় সাময়িক টিকে থাকা গেলেও আখেরে কলংকই রইবে শুধু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.