নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nature

হুতুম

হুতুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

'গণতান্ত্রিক' বাংলাদেশে জন্মানোই অপরাধ

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সরকারের বর্ষপূর্তি হয়, কিন্তু নির্বাচনের বর্ষপূর্তি আগে কখনও পালিত হয়েছে বলে শুনিনি। পালনের ধুমধাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন। এটা ঠিক, বাংলাদেশের সংসদের মধ্যে অন্যরকম হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদের নির্বাচন। দিবসটি আওয়ামী লীগ পালন করেছে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে। আর বিএনপি পালন করছে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে।

একই দিনে কিভাবে গণতন্ত্র ‌'রক্ষা' এবং 'হত্যা' করা সম্ভব? আমার মাথায় ঢোকে না। ৫ জানুয়ারি কী হয়েছিল, দেশের সবাই জানে, সবাই দেখেছে। তারপরও দুই রকম দিবস পালন করা হচ্ছে। এরপর আমার কাছে মনে হয়, সত্য বলে আসলে কিছু নেই। সবই আপেক্ষিক। যেটা আওয়ামী লীগের কাছে সত্য, সেটা বিএনপির কাছে সত্য নয়। তাই আপনি আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক হলে বলবেন, নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। আর বিএনপিপন্থি হলে বলবেন, এটা কোনও নির্বাচনই হয়নি। এখানে নিরপেক্ষতার কোনও জায়গা নেই।

আপনি যাই বলুন, যার যার সুবিধামতো আপনাকে দলীয় সিল দিয়ে দেবে। আমাকে যে যেই ট্যাগই দেন, বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ১০ নম্বরটিই। এই নিয়ে অবশ্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত জয় হবে দশম নির্বাচনেরই। নির্বাচনের আগেই একটি দল সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যাওয়ার ঘটনা বিশ্বের গণতান্ত্রিক ইতিহাসেই বিরল। প্রায় একতরফা এ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের ব্যর্থ চেষ্টায় প্রাণ গেছে শ'দেড়েক মানুষের। আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে এই নির্বাচনের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের দলের সঙ্গে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠিক যায় না। আমি সবসময় বলি, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ‘গ্রেট লেভেলার’। জাতীয় পার্টির যেমন ৮৬’র নির্বাচন, বিএনপির যেমন ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, আওয়ামী লীগের তেমন কিছু ছিল না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আওয়ামী লীগকেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাতারে নামিয়ে এনেছে।

আশঙ্কা করে আগে থেকেই সমাবেশ আটকে দেওয়া তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অতি প্রতিক্রিয়া দেখে আমার একটা কথাই মনে পড়েছে। ভয় পেলে মানুষ, খালি মাঠেও জোরে জোরে গান গায়, বাতাসে তলোয়ার চালায়।



আওয়ামী লীগের এমন দগদগে ঘায়ে বিএনপি একটু খোঁচাখুচি করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিএনপি ৫ জানুয়ারি ঢাকায় একটি সমাবেশ ছাড়া আর কোনও পরিকল্পনা করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ আক্রমণকেই শ্রেষ্ঠ প্রতিরক্ষা- এই কৌশলে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সমাবেশ মানে সারাদেশে ৩০০টি সমাবেশ আর ঢাকায় ১৬টি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশি নিষেধাজ্ঞায় কেউই সে অর্থে সমাবেশ করতে পারেনি। অনুগত বিরোধী দল বিএনপি নিষেধাজ্ঞা মেনে সমাবেশ করা থেকে বিরত থাকে। আর আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজপথ দখল করে রাখে। ৫ জানুয়ারিকে পণ্ড করতে নানা কৌশল করেছে সরকার।

বিএনপির আবাসিক নেতা রুহুল কবির রিজভীকে নয়াপল্টন থেকে তুলে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ (যদিও হাসপাতালের বিল দিতে হয়েছে রিজভীকেই), বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে তার গুলশান অফিসে, মির্জা ফখরুল একরাত প্রেসক্লাবে কাটানোর পর বেরোতে গিয়ে ধরা পড়লেন। নাটক আর নাটক। জানা গেছে, রিজভীর অসুস্থতা রাজনৈতিক। পরিকল্পনা ছিল এমন, বেগম জিয়া অসুস্থ রিজভীকে দেখতে গিয়ে নয়াপল্টনে থেকে যাবেন, যাতে ৫ তারিখের সমাবেশ করতে পারেন। কিন্তু টের পেয়ে পুলিশ রিজভীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আর বেগম জিয়াকে আটকে দেয় গুলশান অফিসে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, বেগম জিয়া তার অফিসে গেলে বা রাতে থাকলে পুলিশের কী সমস্যা?

৪ তারিখ প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন, বেগম জিয়া নাটক করছেন। তাকে আটকে রাখা হয়নি। কিন্তু পরদিন প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগলো পুলিশ। ইটের ট্রাক, বালুর ট্রাক, জলকামান দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলো গুলশান অফিস। এমনকি তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো গুলশান অফিসে। বিকেলে বেরুনোর চেষ্টা করেও পারলেন না বেগম জিয়া। একটা বিষয় আমার মাথায় ঢোকে না, এই অবরোধ আর ধরপাকড়ে কার লাভ? বিএনপি সমাবেশ করতে পারলে কাভারেজ হতো একদিনের। আর অবরোধ সৃষ্টির ফলে বিএনপি কাভারেজ পাচ্ছে টানা পাঁচদিন ধরে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে একটি গণতান্ত্রিক দল সমাবেশ করতে চাইলে বাধা দিতে হবে কেন? বিশৃঙ্খলা হলে পুলিশ বাধা দেবে। কিন্তু আশঙ্কা করে আগে থেকেই সমাবেশ আটকে দেওয়া তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অতি প্রতিক্রিয়া দেখে আমার একটা কথাই মনে পড়েছে। ভয় পেলে মানুষ, খালি মাঠেও জোরে জোরে গান গায়, বাতাসে তলোয়ার চালায়। ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা হয়েছে না হত্যা হয়েছে, সে বিবেচনা জনগণের। তবে দিনটি ইতিহাসে ভালোভাবে লেখা থাকবে না।



ছবিটি দেখার পর থেকে আসলে আমি ঘুমাতে পারছি না। অনিক আমার ছেলে প্রসূনের চেয়ে বছর তিনেকের বড়। এই বয়সের সব শিশুর মধ্যে আমি প্রসূনকে দেখি। আমি খালি অনিকের জায়গায় প্রসূনকে ভাবি, আর আমার দুনিয়া কেঁপে ওঠে।



আমি আসলে ৫ জানুয়ারির দিনলিপি লিখতে বসিনি। একটি গল্প শোনাতে চাই। অনিক আর হৃদয় দুই বন্ধু ফেনী পাইলট হাইস্কুলে পড়ে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তাদের এসএসসি পরীক্ষা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। টেনশনের শেষ নেই। রাজনীতি নিয়ে ভাবার সময় নেই। স্কুল বন্ধ, কিন্তু পড়াশোনায় দম ফেলার সময় নেই। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থাকলেও ঢাকার বাইরে মানে ফেনীতে কিছুই ছিল না। তারা গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছিল। পরীক্ষা নিয়ে টেনশন, পরীক্ষা নিয়ে স্বপ্ন, প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা। হঠাৎ আঁধার নেমে এলো পৃথিবীতে। আক্ষরিক অর্থেই আঁধার। বিএনপি-জামায়াতের মিছিল থেকে ছোঁড়া ককটেল বিস্ফোরিত হলো অনিকের কপালে। লুটিয়ে পড়লো দুই বন্ধু। স্কুল ব্যাগ কাঁধে রাস্তায় বসে আছে রক্তস্নাত অনিক।

ছবিটি দেখার পর থেকে আসলে আমি ঘুমাতে পারছি না। অনিক আমার ছেলে প্রসূনের চেয়ে বছর তিনেকের বড়। এই বয়সের সব শিশুর মধ্যে আমি প্রসূনকে দেখি। আমি খালি অনিকের জায়গায় প্রসূনকে ভাবি, আর আমার দুনিয়া কেঁপে ওঠে। অনিকের জন্য মমতায় আমার হৃদয় আর্দ্র হয়। অনিকের বাবা-মায়ের জন্য গভীর বেদনায় নীল হয়ে যাই। পরীক্ষার স্বপ্ন তো অনেক আগেই দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। এখন জীবন বাঁচানোই দায়। জীবন বাঁচলেও চোখ বাঁচবে কিনা এখনও নিশ্চিত নয়। অনিকের মা সাংবাদিকদের পেয়ে অনেক ক্ষোভের কথা বলেছেন। রাজনীতিবিদদের বলেছেন, অনিকের জায়গায় তাদের সন্তানকে বসিয়ে ভেবে দেখতে কেমন লাগে। কিন্তু উত্তরও দিয়ে দিয়েছেন তিনিই, তাদের সন্তানেরা তো লন্ডন-আমেরিকায় থাকে। তিনি বিচার চান না। কারণ জানেন বিচার পাবেন না। অসহায় সেই মা বিচার দিয়েছেন উপরওয়ালার কাছে। তার কথা শুনতে শুনতে বিষাদ ভর করে মনে, চোখ জলে ভরে আসে। সহকর্মীরা কেউ দেখে ফেলবে এই ভয়ে চোখ লুকাই।

কী অপরাধ অনিকের? এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন অনিকের মা, গণতান্ত্রিক এই দেশে জন্মানোটাই আমাদের অপরাধ।

লেখক: সাংবাদিক ও অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৭

নাহিনরানা বলেছেন: গণতান্ত্রিক এই দেশে জন্মানোটাই আমাদের অপরাধ।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২১

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: গণতান্ত্রিক এই দেশে জন্মানোটাই আমাদের অপরাধ।

ঠিক বলেছেন।

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৫

নিলু বলেছেন: তাহলে কি সমাজতান্ত্রিক দেশে জন্মালেই কি ভালো হতো ? হত্যার রাজনীতি বা অরাজকতার রাজনীতি তো অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে , তাই যখন যার হয় সেই তার ব্যথা বোঝে , জন্মানো মনে হয় পাপ নয় , আসলে আমরাই পাপী বোধ হয় ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.