![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
JeSuisCharlie হ্যাশট্যাগ আমাদের সবাইকে একটি দলভুক্ত হতে বাধ্য করার চেষ্টা। হয় আপনি শার্লি এবদো হত্যাকান্ডের বিপক্ষে থাকবেন, আপনাকে তারা বাধ্য করে বলাতে চায় যে এই একটি বা একাধিক ধর্মকে নিয়ে কৌতুক ও বিদ্রুপ করা এবং কোটি কোটি মানষের ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ও মহাপুরূষদেরকে নিয়ে ক্যারিকেচার ও কার্টুন আঁকা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। হয় সবাই এই তথাকথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকবে, আর আপনি এটা মেনে না নিলে, আপনি প্রগতিবিরোধী, মত ও বাকস্বাধীনতার বিরোধী, আপনি বিচ্ছিন্ন
এটা নিজেই একধরনের ফ্যাসিবাদী আচরন। কারন যে দেশে বসে এই কার্টুনিস্টরা ধর্ম ও নবী রাসুলদের নিয়ে ব্যঙ্গ করতো সেই একই দেশে মাথায় কাপড় দেয়া কিংবা প্রকাশ্যে নামাজ পড়া বেআইনী। আপনার জাঙ্গিয়া পরে রাস্তায় চলার অধিকারকে তারা স্বীকৃতি দেয়, প্যারিস ফ্যাশন শো গুলিতে প্রায় নগ্ন মানুষদের হাঁটতে দেয় কিন্তু কেউ শরীর তার ইচ্ছা অনুযায়ী ঢাকতে চাইলে সেটায় বাঁধা দেয়। পৃথিবীর কোন দেশে যদি হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়, সেটা যেমন স্বাধীন চিন্তায় হস্তক্ষেপ, হিজাবে বাঁধা দেয়াও কিন্তু স্বাধীন চিন্তায় হস্তক্ষেপ।
যারা শার্লি এবদো হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গোটা মুসলিম সমাজেকে দায়ী করে তাদের মুর্খ, প্রগতিহীন, কুপমন্ডুক, মৌলবাদি বলে গালাগাল করছেন এই তারাই কিন্তু বলেন আমেরিকান সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করে পাকিস্তানকে অস্ত্র দিলে কি হবে, আমেরিকান জনগণ কিন্তু আমাদের সাথে ছিল। তার মানে একদল লোক গণতন্ত্রের নামে বোমাবাজী, অস্ত্রবাজী কিংবা গুয়ানতানামো বে তে অত্যাচার করলে কিন্তু গোটা আমেরিকানরা দোষী না। অথচ সেই একই লোকেরা একদল লোক সন্ত্রাস করলে তার জন্য গোটা মুসলিম সমাজকে ও ধর্মকে গালাগাল করেন।
এই লোকেরা কিন্তু আমেরিকান ইচ্ছাকৃত মিসাইল আক্রমনে আল জাজিরা ও রয়টারের সাংবাদিক মরে গেলে, সেটাকে ভুল বলে উড়িয়ে দেন। আফগানিস্তানে আল জাজিরার অফিস উড়িয়ে দিলে সেটাকে বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর আক্রমন বলে জে সুই জাজিরা বলে হ্যাশট্যাগ দেন না। গত গ্রীষ্মে প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলীরা ১৭ জন সাংবাদিক মারলে সেটা সাংবাদিকতা ও মুক্তচিন্তার উপর আক্রমন বলে বিবেচিত হয় না।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ শোষণের জন্য সেখানে রাজবংশগুলিকে দাসানুদাস বানিয়ে গনতন্ত্রহীন রেখে তাদের হাতে ইসলামকে ব্যবহার করার সব দায় তুলে দিয়ে, প্রায় ১০০ বছর যাবত যেভাবে মুসলিমদের দমিয়ে রাখা হয়েছে, তারই এক ফলাফল হলো এই হত্যা ও জিঘাংসার রাজনীতি। এই রাষ্ট্রগুলি সৌদি আরবে ও কুয়েতে, বাহরাইন, ওমান ও আমীরাতে গণতন্ত্র চায় না, গণতন্ত্র চায় ইরান ও সিরিয়াতে। কারন ওখানে শাসকগোষ্ঠী তাদের দাস নয়। আফগানিস্তানে জেহাদী জোশ পয়দা করে তালিবান বানিয়ে পুরো অঞ্চলটিকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা এখন কারজাইকে বসিয়ে রাখে পাইপ লাইন তদারকে।
এই সন্ত্রাসীরা অস্ত্র বানায় না, কারন সেই প্রকৌশল জ্ঞান তাদের নেই। তারা অস্ত্র পায় কোথা থেকে? নকল বোমা বানানোর কথা বলে এক বাংলাদেশীকে ছাত্রকে জেলে দেয় আমেরিকা অথচ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সে দাগী আসামীদের অস্ত্র নিয়ে হত্যার সুযোগ দিতে তাদের নামে মামলা থাকার পরেও প্যারোলে বা নানাভাবে এরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আমরা ভুলে যাই গোটা দুনিয়াটাকে একটা বিরাট যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়েছে যারা তারা মুসলিম না। দুনিয়ার বড় বড় সামরিক ঘাঁটিগুলি মুসলিমদের নয়। বছরের পর বছর আরব দেশগুলি ও এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলিকে ধামাধরা শাসক দিয়ে লুটপাট করিয়ে দারিদ্র ও বঞ্চনার বিস্তার ঘটিয়েছে যারা, তারা মুসলিম না। ইন্দোনেশিয়াতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরে কমিউনিজম ঠেকানোর নামে সুকর্ণ কিংবা ব্রাদারহুড ইলেকশন জিতবার পরেও তাদের জোর করে সামরিক বাহিনী দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা শক্তি, মুসলিম শক্তি না।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে, সেটাই এখন ঘটছে। এই শার্লি এবদো পত্রিকাতেই এক কার্টুনিস্টের চাকুরী গিয়েছিল ইহুদি ধর্মকে ব্যাঙ্গ করার জন্য। তখন বাক স্বাধীনতা কোথায় ছিল?
আপনি যদি এখন নারীবাদের ক্যারিক্যাচার আঁকেন তবে আপনি নারী বিদ্বেষী, আপনি যদি ইহুদিদের নিয়ে আঁকেন, আপনি অ্যান্টি সেমেটিক, আপনি যদি পিগমীদের নিয়ে আঁকেন, তবে আপনি বর্ণবাদী, আপনি যদি হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মকে ক্যারিকেচার করেন, আপনি সাম্প্রদায়িক, কিন্তু আপনি পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ মানুষের ধর্ম ও এর সবচাইতে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে নিয়ে যদি তামাশা করেন, তবে সেটা আপনার বাক স্বাধীনতা। এটা কেমন বিচার?
যদি গারো সাঁওতালরা পিছিয়ে পড়ে তখন আমরা তাদের প্রতি সদয় হই, তাদের অধিকারের জন্য কোটা সহ নানারকম সুবিধা দেই। অথচ ফ্রান্সের মতো দেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নেই , এমনকি মাথায় স্কার্ফ পরতে দেই না। বলেন তো বাংলাদেশে যদি এমন একটা আইন হত যে আমরা পাহাড়ীদের তাদের পোষাক পরতে দেব না। সেটা কি মানবিক হতো? সুবিচার হতো? তাহলে টুপির উপরে, স্কার্ফের উপরে নিষেধাজ্ঞা কি করে সুবিচার হয়?আপনি একজন রাষ্ট্রনেতার মানহানী করলে, তাকে জুতা নিক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি আছে, অথচ মহানবী মোহাম্মদ সা: আা: কিংবা ঈসা আ: কে নিয়ে কার্টুন করলে সেটা বাকস্বাধীনতা কি করে হয়?
আমরা ভুলে যাই এখানে শুধু শার্লি এবদো না, আহমেদও ভিক্টিম বা আক্রান্ত। কারন এখানে আহমেদ মাইনরিটি, এখানে আহমেদ ভুলভাবে চিত্রিত, এখানে সকল আহমেদই সন্ত্রাসী, আহমেদ এর বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা এখানে আক্রান্ত।
তাই আমি শার্লি না, আমি আহমেদ। আমি সেই ৩ বছর বয়সী সিরিয়ার শিশু আহমেদ, যার মৃত্যু হয়েছে এই অর্থ ও ক্ষমতালোভীদের সৃষ্ট যুদ্ধে, আমি ইরাকের লক্ষ লক্ষ শিশূ আহমেদ, যারা মারা গেছে ম্যাডেলিন অলব্রাইটের দেয়া অবরোধে, আমি আফগানিস্তানের এতিমখানার আহমেদ যে মারা গেছে মিসাইলে, আমি পেশোয়ারের শিশু আহমেদ, যে তার দাদীর সাথে খেলতে খেলতে মারা গেছে ড্রোন হামলায়, আমি প্যালেস্টাইনের ১০ বছরের শিশু আহমেদ, যাকে সন্ত্রাসী বানিয়ে মাথায় গুলি করে মেরেছে ইসরায়েলী সৈনিক, আমি কাশ্মিরের আহমেদ, যার মৃত্যু হয়েছে বোনের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে, আমি ৪২ বছর বয়সী ফরাসী পুলিশ আহমেদ যে শার্লি এবদোর নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতার অধিকার বাঁচাতে গিয়ে নিহত হয়েছে, সেই শার্লি এবদো পত্রিকা যা তার পূর্ব পুরূষ ও তার নিজের ধর্ম, সংস্কুতি ও শ্রদ্ধাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো।
আমি শুধু আহমেদ নই্, আমি মুসলিম এবং আমি যেমন সকল ধর্মের নবী ও রাসুলদের সম্মান করি, আমি যেমন লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালইয়াদীন এ বিশ্বাস করি , আমি আমার ধর্মের প্রতিও অন্যের সম্মান প্রত্যাশা করি।
আমি আহমেদ, আমি মানুষ, আমি মুসলিম।
আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে নিয়ে তামাশা করার, আমারো অধিকার নেই আপনাকে নিয়ে তামাশা করার।
আমি হত্যাকারী নই, আমি হ্ত্যাকে সমর্থন করি না।
আমাকে হত্যা করার, নিহত করার, মিসাইল ও ড্রোন হামলায় আমার সন্তান হত্যা করার অধিকার আপনার নেই।
inspired by the writing of Che Brandes-Tuka , adapted a part of it from Azfar Hussain status
আব্দুন নূর তুষারের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত
©somewhere in net ltd.