নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Nature

হুতুম

হুতুম › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেখামাত্র গুলির নির্দেশ!

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৬

সমাজকল্যাণমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা সমাজের কল্যাণচিন্তা শুনতে চাই। কিন্তু তিনি মাঝেমধ্যেই যা বলছেন, তাতে সমাজের অকল্যাণ চিন্তাই যেন মূর্ত হয়ে উঠছে। সবশেষ তাঁর শুট অ্যাট সাইট-সংক্রান্ত বক্তব্য অনেককে শুট অন সাইট চলচ্চিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। ব্রায়ান কক্স, নাসিরুদ্দীন শাহ ও ওমপুরী অভিনীত ওই ছবির কাহিনি হলো তারিক আলী স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একজন মুসলিম পুলিশ কমান্ডার, তিনি সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। লন্ডনের পাতাল ট্রেনে ২০০৫ সালের ৭ জুলাই যে বিয়োগান্ত বোমা হামলা ঘটেছিল, সেটাই ছিল ওই ছবির আখ্যান।
ব্রিটেনে ৭/৭ হিসেবে খ্যাত ওই হামলায় চার আত্মঘাতী ‘ইসলামি’ সন্ত্রাসীসহ ৫২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং সাত শতাধিক লোক আহত হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কমান্ডার তারিক আলী আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়ার পরপরই জটিলতার মধ্যে পড়েন। কারণ, পাতাল ট্রেনযাত্রী এক নিরীহ মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করে তাঁর বাহিনী। এটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছিল। কারণ, লন্ডন পুলিশ পাতাল ট্রেনে হামলার ১৫ দিনের মাথায় ২৭ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় যুবক মেনেজেসকে হত্যা করে। তারা তাঁর গতিবিধি দেখে সন্দেহ করেছিল যে তিনি বোমা পুঁততে এসেছেন। হত্যাকাণ্ডের পরে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ও মিডিয়ার লড়াইটা অনেকটা র্যা বের গুলিতে পা হারানো লিমনের মতো হয়েছিল। নিহত মেনেজেসের পরিবার একটি সফল আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। এর ফলে চার বছর দেরিতে হলেও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নতিস্বীকারে বাধ্য হয়। তারা মেনেজেসের পরিবারকে এক লাখ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেয়, তার চেয়েও বড় কথা লন্ডন মহানগর পুলিশের কমিশনার বলেছিলেন, ‘আমরা মেনেজেসের পরিবারের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। তাঁর অসময়ে চলে যাওয়ার জন্য কোনোভাবেই তাঁকে দায়ী করা যায় না।’
আমাদের লিমনের প্রতি কেউ এ কথা বলেনি। বরং নিরাপত্তা বাহিনী দয়া করে তাদেরই দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উদারতার উদাহরণ উপহার দিয়েছিল। তাই আজও আমরা নিরাপত্তা হেফাজতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে কোনো স্থায়ী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রণয়নের কথা ভাবতে পারিনি। মাঝেমধ্যে কোনো কোনো ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা পরিবারের প্রতি সরকারপ্রধানের তরফে বিশেষ অনুগ্রহের কথা জানা যায়। কয়েক দিন আগেই সরকারের একজন নির্বাহী হাকিমসহ কয়েকজন ভুক্তভোগীর খরচ বহনের ঘোষণা পত্রিকান্তরে ছাপা হয়েছে। আমরা আসলে এ রকম কল্যাণচিন্তা করার মতো মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। কিন্তু তাই বলে আমাদের হিংসাশ্রয়ী রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখামাত্র গুলির মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনা কেবল বিরলই নয়, নেই বললেই চলে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল এরশাদের শেষ দিনগুলোতে কারফিউয়ের মধ্যে এ রকম একটি ঘোষণা এসেছিল। সাধারণত কারফিউ ছাড়া এ রকম কোনো নির্দেশ বাস্তবায়ন দুরূহ ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাশ্মীরে ও আসামে কালেভদ্রে এ রকম ঘোষণার কথা জানা যায়। বিদেশে গিয়ে ভাগ্যান্বেষণে বের হওয়া বগুড়ার শিবগঞ্জের মিজানুর রহমানের কথাই ধরা যাক। তাঁর ভাগ্য ভালো যে বাস পোড়ানোয় ঘটনার সন্দেহভাজন হিসেবে তিনি ক্ষুব্ধ জনতার কাছে প্রহৃত হওয়ার পরে সরকারনিয়ন্ত্রিত এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত (যেখানে অভিযুক্ত তঁার আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনজীবী দিতে পারেন না) তাঁকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল। মিজানুর তাই ভুল–বোঝাবুঝির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই নিরীহ মিজানুর, যার পরিবার বহুকষ্টে সঞ্চিত অর্থব্যয়ে ওমান পাঠাতে চেয়েছিল, যিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত না হলে ইতিমধ্যে ওমানে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা, তিনি ও তাঁর পরিবার এখন আফসোস করার পরিবর্তে এই রাষ্ট্রের ঔদার্যে মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞবোধ করতে পারেন। ভাগ্যকে ঈর্ষা করতে পারেন। কারণ, মিজানুর বেঁচে আছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ভীিতপ্রদ অভিপ্রায় আগেই বাস্তবায়িত হয়ে গেলে এই একজন মিজানুর ইতিমধ্যেই হয়তো দেখামাত্র গুলির নির্দেশের শিকার হতে পারতেন! ডিবির ভাষ্যমতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নুরুজ্জামানের যে বিবরণ গতকাল প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে, তা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে। কারাগারে বন্দী ছোট ভাই মনিরুজ্জামানকে কারাফটকে দেখতে যাওয়া নুরুজ্জামান (স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা) পরিবারের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ১৬টি বুলেটে ঝাঁজরা তাঁর দেহের সন্ধান মিলেছে। ডিবি মিডিয়াকে বিশেষ আগ্রহভরে বলেছে, তিনি ছয়টি ফৌজদারি মামলার আসামি ছিলেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী খবরের কাগজের শিরোনাম হতে পছন্দ করতে পারেন। তিনি জনসভার মঞ্চে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি মঞ্চে ধূমপান করেন। এ রকম কিছু ঘটনায় এই মন্ত্রী ইতিমধ্যে চটকদার ‘খবর’ হয়েছেন। গত বছরের আগস্টে সাংবাদিকদের বদমাশ ও চরিত্রহীন বলার পর তিনি মিডিয়ার বিরাগভাজন হন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে তিরস্কার করলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। এবার তাঁর ভয়ংকর মন্তব্যের পরে তাঁকে তিরস্কার করা হয়েছে বলে জানা যায়নি।
কিন্তু এবার শুট অ্যাট সাইটের বক্তব্য তিনি এমন একটি প্রেক্ষাপটে দিয়েছেন, যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেকগুলো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে চরমপন্থা অবলম্বনের হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হচ্ছে। ১৪ জানুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘বিজিবির সবই লিথ্যাল (প্রাণঘাতী) অস্ত্র। বিজিবির সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে পাঁচজন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।’ আত্মরক্ষা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদন সাপেক্ষে আমাদের প্রচলিত বিধান আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছে।
সাবেক আইজিপি এম শাহজাহান গতকাল বলেন, ফৌজদারি আইনে যেখানে আত্মরক্ষার জন্য শক্তি প্রয়োগের হুকুম দেওয়া হয়েছে, সেখানেওকিন্তু অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ রয়েছে। আইন বলছে, একেবারে যতটুকু না হলেই নয়, পরিস্থিতির নিরিখে ততটুকু শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু সরকারের এবং তাদের মিত্রদের কোনো কোনো মহল কয়েক দিন ধরে সর্বোচ্চ শক্তি প্রদর্শনের মনোভাব ব্যক্ত করে চলেছেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন নিশ্চয় প্রত্যাশিত। নাশকতা ও অপরাধমূলক তৎপরতা দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শিথিল মনোভাব দেখাবে না। কঠোরতর নিশ্চয় হবে কিন্তু তার মানে তারা সব অবস্থায় আইন মানবে। সামরিক শাসনে আমরা দেখামাত্র গুলির কথা শুনতাম, ভয় দেখানোর জন্য।
এটা উদ্বেগজনক যে অনেক মন্ত্রী প্রায় মুখস্থ বলে যাচ্ছেন, সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সংবিধান ও আইনের কোথাও কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। মানুষকে দুঃখ–কষ্ট ও অবারিত যন্ত্রণা এবং ভয়ের মধ্যে রাখা বিএনপির অবিরাম অবরোধ মোকাবিলায় আইন কোনো বিশেষ কঠোরতা আরোপ করেনি। বিএনপির নেত্রী যেভাবে নির্বিচারে নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন, আমরা তার নিন্দা জানাই।
সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ বলছে, ‘ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে বিচার পাবেন। নিজের বিরুদ্ধে তাঁকে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না। নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্ছনাকর ব্যবহার করা যাবে না।’ ৩২ অনুচ্ছেদ বলেছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। এমনকি জরুরি অবস্থার মধ্যেও ৩৫ ও ৩২ অনুচ্ছেদ স্থগিত করা যাবে না।’ এখন আমাদের সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলছেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে পাড়ায় পাড়ায় শাস্তির ব্যবস্থা করে দেব। কোর্টে বিচার করার আর দরকার নেই।’ আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু গতকাল ‘নাশকতাকারীদের’ ধরতে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ঘোষণা শুট অন সাইটের তারিক আলীর মতো কত অফিসারকে বিবেকের যন্ত্রণায় দগ্ধ করতে পারে, সেটা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংসদে বলেছেন, সরকার সাংবিধানিক শাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সেটা তিনি কেবলই মেয়াদ পূরণ অর্থে বলেছেন কি না জানি না, তবে সংবিধানের সীমার মধ্যে থেকে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করাও সরকারের জন্য সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ। জরুরি অবস্থার মধ্যেও সংবিধান ১২০ দিনের বেশি সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার কথা কল্পনা করেনি। এটা সরকারকে মনে রাখতে হবে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৮

ডি মুন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট
++++++

এটা উদ্বেগজনক যে অনেক মন্ত্রী প্রায় মুখস্থ বলে যাচ্ছেন, সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সংবিধান ও আইনের কোথাও কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। মানুষকে দুঃখ–কষ্ট ও অবারিত যন্ত্রণা এবং ভয়ের মধ্যে রাখা বিএনপির অবিরাম অবরোধ মোকাবিলায় আইন কোনো বিশেষ কঠোরতা আরোপ করেনি। বিএনপির নেত্রী যেভাবে নির্বিচারে নাশকতার জন্য সরকারকে দায়ী করছেন, আমরা তার নিন্দা জানাই।

রাজায় রাজায় লড়ায় হয়
মাঝখানে প্রজার জীবন যায়

এই অচলাবস্থার অবসান হোক। রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

নিলু বলেছেন: রাজার রাজত্তে অনেক কিছুই ঘটে থাকে ,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.