![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে এখন আর কোর্ট বিচারের প্রয়োজন নেই। এ কথা রাস্তার কোনো সাধারণ মানুষের মুখে উচ্চারিত হলে সেটাকে ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারত। কিন্তু এটি বলেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বয়োজ্যেষ্ঠ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। তিনি একাই যে এ কথা বলছেন তা নয়, সরকারের দায়িত্ববান প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে এ ধরনের বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকার আরো কঠোর পদপে নেয়ার ঘোষণা আসার পরই এখন তা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে অন্যান্য মন্ত্রী এবং মতাসীন দলের নেতার মুখ থেকে। ইতোমধ্যে পুলিশ-র্যাব-বিজিবিসহ নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ এবং তাদের প্রধানদের বক্তব্যে সরকারের নির্দেশনার প্রতিধ্বনি দেখতে পাচ্ছে দেশের মানুষ, যা আগে কখনোই এ দেশে দেখা যায়নি। এতে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। অন্তরালে হয়তো বা রাজনীতির আরেকটি শক্ত পরে উত্থান ঘটছে। এতে রাজনীতি হয়তো বা চলে যেতে পারে রাজনীতিবিদদের নাগালের বাইরে। আজ যারা ক্ষমতায় যেতে বা থেকে যাওয়ার নগদ লাভের আশায় এসব করছেন, তারাই তির মুখে পড়বেন বেশি। তারা দেখছেন সব কিছু, কিন্তু উপলব্ধি করতে পারছেন না এর মাধ্যমে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশকে।
অন্তর্ঘাত নিয়ে রহস্য
বিরোধী জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি গড়িয়েছে তৃতীয় সপ্তাহে। এই অবরোধ চলাকালে বাসে আগুন, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, বিক্ষোভকারীদের বুকে গুলি, যৌথ অভিযানে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট আর হত্যা, গুম, অপহরণÑ সবই ঘটছে। পুলিশ, র্যাব বা বিজিবি যা করছে তার বড় অংশই দৃশ্যমান। বাসাবাড়ি বা অন্য স্থান থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে হত্যা করার ঘটনার একটি অংশ মানুষ দেখেন, বাকি ক্ষেত্রে কী ঘটছে তা সহজে অনুমান করা যায়। অন্য দিকে সারা দেশে যে অবরোধ-হরতাল বা এ ধরনের অন্য কর্মসূচি পালন হচ্ছে, তার একটি অংশ দৃশ্যমান হলেও অনেক কিছু এখন লোকচুর অন্তরালে চলে গেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য সভা, বিক্ষোভ, পিকেটিং অহিংসতা অতিক্রম না করলে তা সহনীয় মনে করা হতো সব সময়। এখন সারা দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে রাস্তায় নামলেই ধরে নেয়া হয় তারা নাশকতা করবে, গাড়িতে আগুন দেবে, বোমা মারবে। ফলে রাস্তায় নামলেই করা হয় গুলি, লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস বা পিপার ¯েপ্র নিক্ষেপ। উপনিবেশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান সময় পর্যন্ত এ দৃশ্য কল্পনা করা ছিল কঠিন। এমনকি আওয়ামী লীগের আগের দুই আমলেও এটি সাধারণভাবে দেখা যেত না।
প্রশ্ন হলো, অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে অন্তর্ঘাতী কাজ কারা করছে? কারা ট্রেনের ফিশপ্লেট খুলে নিচ্ছে। অথবা রাজনৈতিক নেতাদের গাড়ি-বাড়িতে বোমা মারছে। পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ করছে যাত্রীদের। এসব ঘটনায় চার দিকে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এ কথা সত্যি। এর ফলে স্বেচ্ছার পাশাপাশি ভীত হয়েও অনেকে সাড়া দেয় অবরোধ-হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। কিন্তু এর রয়েছে আরো একটি দিক।
অহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিও জনপ্রিয়তা হারানো সরকারের জন্য নানাভাবে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে বিুব্ধ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দিলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এক সময় উত্তাল রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকে। এর বিপদ থেকে রক্ষার জন্য বিশ্বের দেশে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলো অহিংস প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করে দেয়। শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে সৃষ্টি করে বাধা। গুলি, লাঠি, টিয়ারগ্যাস এমনকি ভেতরে অন্তর্ঘাতী ঢুকিয়ে দিয়ে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হয়ে ওঠে অশান্ত। বিরোধী পক্ষকে দমনের জন্য বা তাদের কর্মসূচি পালনে বাধা সৃষ্টির জন্য যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয় এটাকে।
আর অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি ডাকার পর তা বাস্তবায়নের শান্তিপূর্ণ পথÑ মিছিল, সমাবেশ, পিকেটিং বন্ধ করা হলে কর্মসূচির সাফল্য হয়ে পড়ে সহিংসতা-নির্ভর। তখন সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বল প্রয়োগ হয়ে পড়ে যুক্তিসিদ্ধ। এসব কারণে অন্তর্ঘাতী কাজ কারা করছে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ দগ্ধ করার মতো ঘটনা ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনকালেও দেখা গিয়েছিল। সরকার সমর্থক পত্রপত্রিকা ও রেডিও-টিভিতে তা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। দেশে-বিদেশে এই অমানবিক কাণ্ডের ফুটেজ তুলে পাঠানো হয় আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে মত গঠনের জন্য। এর পর একতরফা নির্বাচন হয়ে যায়। কিন্তু পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারী কাউকে হাতেনাতে ধরা যেমন যায়নি, তেমনিভাবে এর কোনো বিচারও সেভাবে দেখা যায়নি। এসব ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করে কেবল বিরোধীদলীয় নেতাদের হয়রানি করা হয়েছে।
৫ জানুয়ারির পর এক বছর বিরতি শেষে বিরোধী জোট আবার নানা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। ডাক দেয়া হয় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পালনের। এরপরই আবার ফিরে আসে এক বছর আগের সেই পেট্রলবোমার বিভীষিকা। পেট্রলবোমা মারা হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসে, পুলিশের গাড়ির ওপর। ঘটনা ঘটছে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা জোনে, কূটনৈতিক পল্লী ও রাজপথে কড়া প্রহরার মধ্যে। এ নিয়ে প্রচারণাও চলছে দ্বিগুণ গতিতে। সরকার সমর্থক গণমাধ্যমে এর দোষ চাপানো হচ্ছে বিরোধী পক্ষের ওপর। এসব ঘটনায় কাউকে ধরা যাচ্ছে না হাতেনাতে। ঘটনা ঘটছে, কিন্তু কোনো রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে মামলায় আসামি হচ্ছেন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা। সংসদে দাঁড়িয়ে বলা হচ্ছে, খুনের জন্য বিরোধী জোট নেত্রীর বিচার করা হবে। বিরোধী জোট নেত্রী সংবাদ সম্মেলনে অমানবিক অন্তর্ঘাতী কাজ সরকার তার এজেন্সি ও পেটোয়া বাহিনী দিয়ে করাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে পেট্রলবোমা মারতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে ছাত্রলীগের দুই কর্মী। আসলেই কারা এসব ঘটিয়ে চলেছে তা থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। সরকার রহস্যজনকভাবে এর তদন্ত করতে উৎসাহী হয় না। ঘটনা চাপা পড়ে যায় এক সময়। থানা পুলিশ, আদালত সব কিছুতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযুক্ত হয় বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীরা। অযাচিত প্রশাসনিক ট্রায়ালের সাথে সাথে সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের বক্তব্যে এক ধরনের মিডিয়া ট্রায়ালও হয়ে যায়। রাজনৈতিক ফায়দার সর যাদের তোলার, তারা তুলে নেয়। বিরোধী রাজনৈতিক মত দমনকে একাকার করে ফেলা হয় জঙ্গি দমনের সাথে। এর মধ্যে ভয়ঙ্কর এক গন্তব্যের কথা উঠে আসছে মন্ত্রীদের বক্তব্যে। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক কথাটি বলেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী।
কোর্ট বিচারের আর প্রয়োজন নেই
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সেখানে তিনি কী বলেছেন বেশির ভাগ দৈনিক তার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। মানবজমিনে প্রকাশিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তার বক্তব্যটি ছিল এ রকমÑ ‘আপনারা নিজেরাও অবলোকন করেছেন আমার সঙ্গে। কতটুকু পেইনফুল। কতটুকু বেদনাদায়ক। কতটুকু দুঃখজনক। মানবতার বিরুদ্ধে আমরা সবাই কথা বলি। কিন্তু যখন এই মানবতা একেবারে চরমভাবে লুণ্ঠিত হয়, মানুষ যখন কাতরাচ্ছে মৃত্যুশয্যায়, তখন আমরা আইছি দেখতে। এই দেখাটা সবাই সহ্য করতে পারে না। সরকার হিসেবে আমরা কী করে সহ্য করব। আমরা নিরাপত্তা দিতে যেভাবে ব্যর্থ হচ্ছি। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, বেদনাদায়ক। আমরা যদি এর জন্য আইন করতে যাই তখন আপনারা মানবতার কথা বলেন। আর মানবতা যে ভূলুণ্ঠিত হয়, তখন এটা নিয়ে সরকারের জন্য আপনারা কিছু বেদনা দেখান না। আজকে পার্লামেন্ট চলছে। এগুলো কিন্তু পার্লামেন্টে আমরা তুলব। আমাদের ধৈর্য সীমার বাইরে চলে গেছে। দেশ স্বাধীন করি নাই এই কুত্তা-বিলাইদের (কুকুর-বিড়াল) জন্য। আর শিয়াল-কুকুরদের জন্য, যারা আমাদেরকে এই জাতির কাছে ভূলুণ্ঠিত করছে। সারা পৃথিবীর কাছে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলবে। হোয়াই? আমরা কি মানবতা কম করছি। গণতন্ত্র আছে বলে গণতন্ত্র কি রা করব না? আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিÑ শ্যুট এট সাইট। যেভাবে হয় যুদ্ধেেত্র, সেভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছি। সরকার আর চেপে থাকতে পারে না। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এর ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং আমরা কুল ডাউন করার চেষ্টা করব জাতিকে। আমরা দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় শাস্তির ব্যবস্থা করে দেবো। দ্রুত আইনে কোর্টে বিচার আর দরকার নেই।’
ক্রসফায়ার : চলছে কোর্ট ছাড়া বিচার!
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী যখন এ কথা সাংবাদিকদের বলছিলেন তার আগেই তার কথার আমল শুরু হয়ে যায়। খিলগাঁও থানা ছাত্রদল নেতাকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়। চুয়াডাঙ্গার জামায়াত সমর্থক ওয়ার্ড কমিশনারকে ঢাকায় ক্রসফায়ার করা হয়। বন্ধুকযুদ্ধের নামে হত্যার খবর আসে আরো দুইজনের। সারা দেশে হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে করা হচ্ছে গ্রেফতার। তাদের অনেকের পাওয়া যাচ্ছে না খোঁজখবর। তাদের মধ্যে কারা কারা সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কোর্ট ছাড়া বিচারের আওতায় পড়েছেন, সে ব্যাপারে স্বজনেরা নিশ্চিত হতে পারছেন না। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সময় সাম্য, ন্যায়বিচার ও শোষণমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। আদালত ছাড়া ন্যায়বিচার হয় না। আর আদালতেই যেখানে ন্যায়বিচার দুর্লভ হয়ে পড়ছে, সেখানে আদালতের বাইরে যখন বিচার হবে তার রূপ কী দাঁড়াবে অনুমান করা যায়। এ ধরনের বিচার মানে নিশ্চয়ই হবেÑ ‘দেখামাত্র গুলি’। এই দেখামাত্র গুলি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই হয় বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী তার বক্তব্যে ‘সন্ত্রাসী কুত্তা-বিলাইদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বোমাবাজদের যে দেখতে পায় না তার প্রমাণ হলো এ পর্যন্ত পেট্রলবোমা হামলাকারী একজনকেও হাতেনাতে ধরতে পারেনি। তারা দেখে রাস্তায় নেমে যারা মিছিল করে তাদের। গুলিও করে তাদেরকে। এর বাইরে যে অঞ্চলে বিরোধী জোটের সমর্থকেরা থাকেন, সেখানেও যৌথ অভিযান চালিয়ে গুলি করেন তারা। তাহলে মন্ত্রীর যুদ্ধ ঘোষণা কি তাদের বিরুদ্ধে? তাদেরই কি দেখামাত্র গুলি করে হত্যা করা হবে?
সংবিধান কী বলে?
বাংলাদেশের সংবিধান হলো সর্বোচ্চ আইন। এর সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু রাষ্ট্রসীমানার মধ্যে বলবৎযোগ্য নয়। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছেÑ ‘সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ শাসনতন্ত্রের ৩১ ও ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করা হয়েছে। ৩১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’ ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’
সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, দেখামাত্র গুলি করা, আক্রান্ত হলে প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগ, অন্তর্ঘাতের পরিকল্পনাকারীদের ‘শিকার’ করার জন্য যৌথ অভিযান চালানোর সাথে সংবিধানের এই বিধানের কতটা সাযুজ্য রয়েছে বিবেচনার অবকাশ রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী জোট নেত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে খুনিদের সাথে যে আচরণ করা হয় সে আচরণের যে ঘোষণা প্রকাশ্যে দিয়েছেন সে অধিকার তাকে সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ দিয়েছে কি না সেটি বিবেচনায় আসতে পারে। এভাবে সংবিধান বা আইন লঙ্ঘনের বিপদ হলো এটি যারা করেন পরে তারাই আবার এর শিকার হন। অতীতের অনেক দাপটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রাজপথে পুলিশের নির্দয় লাঠিপেটা খেতে দেখা গেছে।
গন্তব্য কোথায়?
বর্তমান অবস্থার গন্তব্য নিয়ে নানা মূল্যায়ন ইতোমধ্যে বিভিন্ন লেখায় এসেছে। এর মধ্যে ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক আমেরিকান রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক আমির খসরু ভিন্নভাবে এ পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেছেন। কিন্তু এ তিনজনের লেখার দৃষ্টিকোণ আলাদা হলেও মূল সুরের অভিন্নতা ধরা পড়ে স্পষ্টভাবে।
কুলদীপ নায়ার ‘দি ট্র্যাজেডি অব বাংলাদেশ’ শিরোনামের লেখার অনুসিদ্ধান্তে বলেছেন, ‘সমস্যা সমাধানের চাবি শেখ হাসিনার কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নতুন নির্বাচনের ঘোষণার প্রত্যাশা করা হয়তো অনেক বেশি চাওয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়মের মধ্যে থেকে ভাগ্য যাচাইয়ে বিএনপিকে একটা সুযোগ দেয়া উচিত। চরম বিভক্ত এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত একটি দেশে মনে হচ্ছে এটাই একমাত্র সমাধানের উপায়। ন্যায়সঙ্গত স্বাভাবিক পরিস্থিতি না আসা পর্যন্ত দেশের মানুষের দারিদ্র্য ঘুচানো সম্ভব নয়, যেটা করার প্রতিশ্রুতি উভয় দলই দিয়েছে। রাজনৈতিক েেত্র নতুন সূচনা ব্যতীত এটা সম্ভব নয়, ঘটবেও না।’
‘পুব থেকে একটি রুগ্ণ বাতাস বইছে’ শিরোনামে মাইলামের লেখাটির অনুসিদ্ধান্তটি টানা হয়েছে এভাবে, ‘আমার অনুমান, সুশীলসমাজের গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গ এবং বিরোধী দল লড়াই ব্যতিরেকে নতি স্বীকার করবে না। শিগগিরই কিংবা পরে শান্তিপূর্ণভাবে একটি সরকারের পালাবদলের অনুপস্থিতিতে সহিংসতা হবে এবং তা যথেষ্ট মারাত্মক হতে পারে। আমরা আমাদের ভাবলেশহীনতার জন্য অনুশোচনা করতে পারি। সহিংসতার পরিণামে যেসব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে তার মধ্যে সাধারণত সেনাবাহিনীর মতা দখল অন্যতম।’
অন্য দিকে ‘ছায়া থেকে কায়া’ শিরোনামে লেখা পর্যবেক্ষণে আমির খসরু বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতি বিপজ্জনক, ভয়াবহ এবং ভয়ঙ্কর কয়েকটি কারণে। এক. ছায়া এক না একাধিক, এক দলেরÑ না তার সাথে অন্য আরো কেউ যোগ দিয়েছে, তা বোধ করি কারো জানা নেই। দুই. ছায়া শক্তিটি কি শুধুই রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায় এবং এ পর্যন্তই ান্ত দেবে। তিন. ছায়া-কায়াহীন এই শক্তির মূল শক্তিদাতা কারাÑ সরকার যাদের কথা বলছে তারা, যারা আগে ছিল তারা, না নতুন কেউ যোগ হয়েছে। চার. ছায়াশক্তি দৃশ্যমান নয়। অদৃশ্য শক্তির সাথে লড়াই এবং তাদের নির্মূল খুবই কঠিন। পাঁচ. ছায়াকে অবলম্বন করে দেশে যে উগ্রবাদ-মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ সক্রিয় হচ্ছে না বা হবে না কিংবা তাদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে না স্বাভাবিক রাজনীতিতে বাধাবিঘœ সৃষ্টি করেÑ তার নিশ্চয়তা কোথায়? কাজেই হুঙ্কার-হুমকি দিয়ে রাজনীতির স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে দিলে অস্বাভাবিক অর্থাৎ সেই ছায়াশক্তি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবেই। এর একমাত্র সমাধান রাজনীতিকে সুস্থ রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করা। আর গণতান্ত্রিক প্রথা-প্রতিষ্ঠানসহ সব পন্থাকে বাধাবিঘœহীন করে বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে, সংবাদমাধ্যম দলীয়করণ বন্ধ করে, এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করে একটি সুস্থ স্বাভাবিক পথ উন্মুক্ত করা। তা না হলে ছায়ার সাথে কতকাল লড়তে হবেÑ তার দিনণ কেউই যেমন নির্ধারণ করে দিতে পারে না, তেমনি অনিবার্য তি ও বিপর্যয়ের পরিমাণ ও মাত্রা কেমন হবে তাও নির্ণয় করা অসম্ভব।’
তিন দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকের বক্তব্যে বাংলাদেশের অনাগত গন্তব্যের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এখন কেবল আমাদের ঘটনাপরম্পরার জন্যই হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। কখন আবহাওয়া পাল্টাতে শুরু করে চূড়ান্তভাবে।
সংগৃহীত
২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৭
মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেছেন: এখন কিন্তু আদালত অবমাননা হচ্ছে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গন্তব্য: বাকশাল !!!!!!!!!!!!!!!!