নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~ An Average, An Explorer ~

ওমর ফারুক কোমল

অজ্ঞ এক মানবসন্তান

ওমর ফারুক কোমল › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিতাস নদীর বুকে সেই এক ঘণ্টা

১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২১

আমি কোন নদী-প্রেমী নই, নদীর সাথে কোন সখ্যতাও আমার নেই। তবে যেহেতু আমি এই বঙ্গমায়ের সন্তান, নদীর বুকে আমাকে চড়তে হয়েছে (এবং হচ্ছে) বারংবার; কখনও অর্থ সংকটে, কখনও সহযোদ্ধাদের চাপে আবার কখনও বাধ্য হয়েই।

এইতো সেদিন, ঈদুল আযহার ছুটিতে পাঁচ বন্ধু মিলে ঘুরে এলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। নিঃসন্দেহে সুন্দর একটি জেলা। সেখানে আমার বন্ধু শাহারিয়ারের পরিবারের বসবাস। তো প্রথম দুদিন শাহারিয়ারের নিজেদের বাড়িতে থেকে আমরা যাচ্ছিলাম ওর কোন এক ফুফুর বাসায়। সিএনজি এবং রিক্সার সাহায্যে আমরা চলে আসলাম আনন্দবাজার ঘাট নামের একটি জায়গায়। ঘাটে যখন নেমেছি সময় তখন বেলা ১টা। বাতাসে আযানের ধ্বনি, চারিদিকে প্রচণ্ড রোদ আর হরেক রকম মানুষের গিজগিজ। এখান থেকেই নদী পথে আমাদের যেতে হবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। হ্যাঁ, এটাই কিন্তু সেই নদী; মায়াবতী-প্রেমময়ী তিতাস নদী।



তিতাস নদীর উৎপত্তি হয়েছে ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়। সেখানকার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি প্রবেশ করে শাহবাজপুর টাউন অঞ্চলের সীমানা ঘেঁষে এটি আরো দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে মেঘনা নদীর সাথে একীভূত হয়ে যায়। হয়তো তাই লোকে তিতাস নদীকে মেঘনা নদীর কন্যা বলে থাকে।

তা-যাহোক, আমি সামান্য বিরক্তিভরা মুখমণ্ডল নিয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। নদীর সৌন্দর্য মাপার একটা চেষ্টা করছিলাম আরকি। হটাত করেই আমি কেমন যেন উতলা হয়ে উঠলাম। আমার সেই বিরক্তভাবটা ইতিমধ্যেই চলে গেছে। আমি ব্যস্ত হয়ে উঠলাম কখন ট্রলারে উঠব, কখন মাঝি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে নদীর এই পাড় থেকে অন্য কোন পাড়ে। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পর আমরা পাঁচজন ট্রলারে উঠলাম। আমাদের গন্তব্য চম্পনগর ঘাট, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০ টাকা। জুতা খুলে বাহিরের দিকে রেখে ট্রলারের খোপরের ভেতর ঢুকে পরলাম। তারপর আরও ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষার পর আমাদের যাত্রা শুরু..


প্রথম দিকে একটু ধীরগতিতে এগুতে লাগল ট্রলারটি পরে ঘাট থেকে বেশ খানিকটা দূর যাওয়ার পর এর গতি বেড়ে গেল। ট্রলারটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে। রংবেরঙের মানুষের রংবেরঙের কারবারও হচ্ছে। আমার তিন বন্ধু শাহারিয়ার, ইমরান আর রাকিব গল্পে নিমগ্ন হয়েছে। আরেকদিকে বন্ধু আরাফাত ব্যস্ত ক্যামেরা নিয়ে। আমি আমার কাজে মন দিলাম। নদীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলাম এবং বাদাম খেতে খেতে নদী দর্শন শুরু করলাম।



নদীর পাশ দিয়েই ঘেঁষে গেছে গ্রাম-বন্দর। ট্রলারে বসেই অনেক জায়গায় মাঠঘাট, দোকানপাট, লোকজনের স্বরাগম দেখা যাচ্ছিল। আকাশে প্রচুর রোদের কারণে নদীর পানি একদম হীরের মোট চিকচিক করছিল। আমিতো সইতে না পেরে নদীর পানির সাথে খেলাই শুরু করে দিয়েছিলাম। আহা! সেকি মুহূর্ত ছিল।




নদীর খানিকটা অদূরেই দেখতে পাচ্ছিলাম ইটের ভাঁটা। শহর গড়ার বস্তু উৎপাদনে সে যেন বিশাল ব্যস্ত।


আরও খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পেলাম একটি অসম্পূর্ণ ছোট ব্রীজ। দেখে মনে হচ্ছিল এদিকটায় আগে নদী ছিল না। মানুষ পায়ে হেঁটেই পারাপার হত। নদী খেয়ে ফেলাতেই হয়ত সেই ব্রীজ আর সম্পূর্ণ হয়নি।


এর মধ্যে ট্রলারটি একটি ঘাটে এসে থেমেছে, এখানে কিছু যাত্রী নামিয়ে আবার ছুটবে। এদিকে আমিও খানিকটা ঘুরে বসে বন্ধুদের সাথে গল্পে যোগ দিলাম। নানান বিষয়ে গল্প; কখনও তিতাস নদীর সৌন্দর্য,কখনও আশেপাশের মানুষের আজব আজব কিছু কাজকারবার আবার কখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েছেলের আচার-ব্যাবহার।




মনের মধ্যে আনন্দের তুফান বইছিল। একপর্যায়ে তো আমি জোরগলায় গান গাইতে শুরু করেছিলাম, যদিও ট্রলারের শব্দে আমার গান আমি ব্যতীত আর কারও কানেই পৌঁছায়নি তবে আমার বন্ধু আরাফাতের ক্যামেরায় সেটা ধরা পরেছিল।



দেখতে দেখতে আরও একটি ঘাটে এসে পৌঁছেছি। ঘাটে ভিড়াবার খানিকটা আগে দেখতে পাচ্ছিলাম নদীর বুকে ছোট ছোট বাচ্চাদের লাফালাফি। বেশ ভালো লাগছিল। তাকিয়েই ছিলাম। এ দৃশ্য যে আমি পৃথিবীর আর কোথাও পাব না!






অবশেষে আমরা চম্পনগর ঘাটে পৌছালাম। নামতে হবে, চলে যেতে হবে। এইযে নদীর সাথে প্রেম হল এই প্রেমের মায়া ছেড়েই উঠতে হবে। নামতে গিয়ে দেখি আমার আর আরাফাতের কেডস-এর নাজেহাল অবস্থা। ভারী কোন মাল জুতোর উপরে রেখে একেবারে চিরে-চ্যাপ্টা কারবার। কি আর করার, হাসিমুখে বরণ করে ঘাটে নেমে পরলাম।

প্রায় এক ঘণ্টা আমরা এই ট্রলারে ছিলাম আর এই এক ঘণ্টাই আমার ভ্রমণ জীবনের অন্যতম সেরা এক ঘণ্টায় রুপ নিল। তবে আমি তিতাসকে কথা দিয়ে এসেছি। আবার যাবো, ওর প্রেমে আমি বার বার ছুঁটে যাব। হ্যাঁ, তিতাস একটি নদীর নাম, তিতাস আমার প্রেমের নাম।


-১৭/০৩/২০১৬ ইং

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২০

জাজাবর পৃথিবী বলেছেন: দারুন লিখনি !!

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪২

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। :)

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:১৬

সাগর মাঝি বলেছেন: আহঃ....কতদিন হয়ে গেলো নদীর বুকে ঘুরিনা।

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: জাস্ট ছুঁটে চলে যান...

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সাগর মাঝি বলেছেন: চাইলেও পারিনা,, সময় লাগবে,, অপেক্ষায় আছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.