নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

~ An Average, An Explorer ~

ওমর ফারুক কোমল

অজ্ঞ এক মানবসন্তান

ওমর ফারুক কোমল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকার প্রথম মসজিদ এবং আমার অভিজ্ঞতা

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৬



ছোটবেলা থেকেই ঐতিহাসিক কিংবা প্রাচীন স্থাপনার দিকে আমি বিশেষ আকর্ষণ বোধ করতাম। মসজিদ, মন্দির, দুর্গ কিংবা সাধারণ বাড়ি-ঘর, একটু পুরাতন ধাঁচের হলেই মন সেখানে ছুঁটে যেতে চাইত। তবে দুর্ভাগ্যবশত কলেজ জীবন পর্যন্তও আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি ছিল শূন্যের কোঠায়। বলা যায়, পারিবারিক সীমাবদ্ধতাই প্রধান কারণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখার পরপরই প্রেক্ষাপট বদলে যায়। আমি হয়ে যাই স্বাধীন এক ডানা মেলে ওড়া পাখি। সিদ্ধান্ত নেই, পুরো বাংলাদেশের সকল পুরাকীর্তি স্থাপনা (প্রত্নতত্ন বিভাগের তালিকা অনুযায়ী) দর্শন করে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করব। কিন্তু শুরুটা কোথা থেকে হবে? সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের জন্ম নেয়া শহর ঢাকা থেকেই শুরু করব আমার অভিযান। তবে কিবা আছে এই ব্যস্ততম নগরীতে? হ্যাঁ, আছে, অনেক আছে। এক্ষেত্রে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ওয়েবসাইট এবং গুগোল আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।

এক এক করে ঢাকার সকল প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখাই আমার শেষ হয়েছে। তাই ভাবলাম নিজের অভিজ্ঞতার খানিকটা অক্ষরে রূপান্তর করে ফেলি। এর পরিপেক্ষিতেই আমার এই লেখনীতে আমি ঢাকার প্রথম মসজিদ ‘বিনত বিবির মসজিদ’ এবং আমার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরব।

মসজিদের শহর আমাদের এই ঢাকা। পাড়া থেকে বন্দর, এ গলি থেকে সে গলি, মসজিদের কোন অন্ত নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি হয়ে আসছে এসব মসজিদ। তবে শহরের এতসব মসজিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতমটি হচ্ছে ‘বিনত বিবির মসজিদ’। এটি পুরাণ ঢাকার নারিন্দা এলাকার ৬ নং সড়কে অবস্থিত। নারিন্দা এলাকাটি ঢাকার কেন্দ্রবিন্দু গুলিস্তান হতে আনুমানিক ২ কিমি দূরুত্বে অবস্থিত। গ্রীষ্মের কোন একদিন সকালে আমি এবং আমার বন্ধু শাহারিয়ার সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে মসজিদটি পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলাম। তো প্রথমে গুলিস্তান এবং সেখান থেকে রিকশা যোগে নারিন্দা। সেখানে নেমে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। কয়েকজন বয়স্ক লোকদের জিজ্ঞাসা করতেই তারা রাস্তা দেখিয়ে দিল। মূল রাস্তার পাশ দিয়ে একটা গলিতে ঢুকে সামান্য এগিয়ে যাওয়ার পরেই দেখা মিলল প্রায় ছ’য়শ বছর পুরোনো এই ঐতিহাসিক মসজিদটির। হিজরী ৮৬১ সালে অর্থাৎ ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটি নির্মিত হয়।

তখন বাংলায় সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাষন চলছিল। পারস্য উপসাগরের লোকজন এখানে জলপথে বাণিজ্য করতে আসত। সেই সূত্রে আরকান আলি নামের এক সওদাগরও এ অঞ্চলে আসেন এবং বসবাস শুরু করেন। তখন ইবাদতের জন্যে মুসলমানদের কোন মসজিদ এ অঞ্চলে ছিল না। প্রয়োজনের তাগিদে তিনি তখন এই মসজিদ নির্মাণ করেন এবং নিজের স্নেহের কন্যা মুসাম্মাত বখত বিনত বিবির নামে মসজিদটির নামকরণ করেন ‘বিনত বিবির মসজিদ’। মসজিদটির প্রধান ফটকের দেয়ালে একটি কালো পাথরের শিলালিপি থেকেই এসব ইতিহাস জানা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, ঢাকায় এ পর্যন্ত যত প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে প্রথম মুসলিম শিলালিপি হচ্ছে এটি। ঢাকার প্রথম এই মসজিদটিই একমাত্র মসজিদ যেটি একজন নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইতিহাস ঘেঁটে আরও জানতে পারি মসজিদটি নির্মাণের কিছু দিন পরেই আরকান আলীর মেয়ে বিনত বিবির আকস্মাত মৃত্যু হয়। মসজিদের পাশেই তাকে সমাধিস্থ করা হয়। এর কিছু দিন পর আরকান আলীও ইন্তেকাল করেন। এবং তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে তার মেয়ের কবরের পাশেই দাফন করা হয়। দাফন দেয়া সেই জায়গাটা বর্তমানে তাদের মাজার হিসেবে ব্যবহিত হচ্ছে।

মসজিদটি যখন প্রথম নির্মিত হয় তখন তাতে একটি মাত্র গম্বুজ থাকলেও পরবর্তীতে বাংলা ১৩৩৭ সনে মসজিদটিতে পুনঃসংস্করণ করে দ্বিতীয় গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। দুটি গম্বুজের গায়েই তাদের সংস্করণ-সাল লেখা রয়েছে। বর্তমানে মূলভবনের গা ঘেঁষে তিন তলা নতুন ভবনও তৈরি করা হয়েছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজনেরাই একটি কমিটির মাধ্যমে মসজিদটির ভালোমন্দ দেখভাল করছেন।





বিভিন্ন প্রয়োজনে মসজিদটিতে বেশ কয়েকবার সংস্করণ করা হয়েছে। তবে আমার কাছে অবশ্য একে সংস্করণ নয় ধ্বংসযজ্ঞ বলে মনে হয়েছে। কারণ মসজিদটির মূলভবনের প্রাক-মুঘল যুগের সেই স্থাপত্য শৈলী এখন আর নেই বললেই চলে। মূলভবনের পাশের দেয়ালগুলোর অবস্থাও নাজেহাল। বাংলাদেশের সংবিধানে পুরাকীর্তি সংরক্ষণের যে আইন রয়েছে তা না মেনেই মসজিদটির বিভিন্ন সংস্করণ হয়েছে বলে আমার মনে হয়।





মসজিদটি যখন আগাগোড়া দর্শন করা শেষ হল সময় তখন বেলা আড়াইটার মতন। মসজিদটি দেখা হলেও বাকি আছে সেই বিখ্যাত আরকান আলি ও তার মেয়ে বিনত বিবির মাজার শরীফ দেখা। মনে করেছিলাম একটু বড়-সড় কোন জায়গা নিয়ে হয়ত হবে মাজারটা কিন্তু মসজিদ থেকে বের হয়ে কয়েক কদম এগিয়ে যাবার পরই যা দেখলাম তাতে আমি রীতিমত হতবাক। দেখলাম, চারপাশে ঘিঞ্জি দোকান-পাট আর অনেক দোকানের মাঝেই একটি দোকানের মত জায়গা নিয়ে পরে আছে ঢাকার প্রথম মসজিদের নির্মাতা আরকান আলি ও তার মেয়ের সমাধি। ভিতরে ঢুকে দেখার কোনো প্রয়োজনই বোধ করলাম না। বাহির থেকেই বেশ ভালোভাবে সব দেখা যাচ্ছিল। খুব সাধারণ ভাবে পাশাপাশি দুটি কবর রয়েছে, কবরের উপর চাঁদরে মোড়ানো, আশে পাশে কিছু মোমবাতি এবং জানালার গিরিলে তাবিজ জাতীয় কিছু গিঁঠ দেয়া রয়েছে।



প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। মধ্যাহ্নভোজের কথা ভুলে গিয়েছি। দুই বন্ধু মাজারের পাশের একটি দোকান থেকে পুরাতন ঢাকার বিখ্যাত বাখরখানি খেয়ে নিলাম। অতঃপর নিজেদের চক্ষুগুলোকে সার্থক করে এক ঝুড়ি অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের বাসস্থানের দিকে রওনা হলাম।

প্রাচীন এইসব মসজিদের গাঁ ঘেঁষেই রয়ে গেছে ঢাকার ইতিহাস। জনবহুল এই নগরীতে আমাদের আশেপাশেই অতি সাধারণ অবস্থাতে পরেরয়েছে অসংখ্য অসাধারণ স্থাপত্য। যা নিয়ে আমরা ভাবিনা কখনই। হয়তো কিছুকাল পরে এই ‘বিনত বিবির মসজিদ’_এর কিছুই থাকবে না। এরকম আরও অনেক স্থাপত্যের নামই হয়ে থাকবে শুধু ইতিহাস। তাই আসুন, সকলে মিলে আমাদের এসব প্রাচীন স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। কারণ, এগুলো আমার, আপনার, আমাদের সকলের।


-১১/০১/২০১৬ ইং, ঢাকা

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৪৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: দারুন ব্যপার প্রশংসনীয়...
অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য :)

০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন।

২| ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৭

বিজন রয় বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।
++++

০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন।

৩| ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৪৫

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন।

৪| ০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ১:১৬

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। আসলে বিষয়টা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের দেশের প্রত্নতাত্বিক বিভাগ এই বিষয়গুলোতে পরিপূর্ন ধারনা রাখে না। অনেক অনেক স্থান তারা নষ্ট করেছে। এই বিষয়ে যে কার দৃষ্টি আকর্ষন করব, সেটাই বুঝতে পারি না।

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৪

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে এক বুক হতাশা ছাড়া আমরা আর কিছুই রেখে যেতে পারছি না..।

৫| ০১ লা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:১৩

সুমন কর বলেছেন: অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ।

০১ লা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৬

ওমর ফারুক কোমল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.